#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_১৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–তুমি একা একা ফুলের মধু খাবে,তাই কখনো হয়।বলল একটি লোক।
আয়াশ শখকে নিয়ে যাচ্ছিলো ঠিক সেই সময়ে কিছু লোক এসে হাজির হয়,ওদের সামনে,এসেই বাজে কথা বলা শুরু করলো।
–কি সব যা-তা বলছেন।আমাদের সামনে থেকে সরুন।
–সরতে পারি,তোমার মধু খাওয়া শেষ হলে আমাদের’ও একটু মধু খেতে দিতে হবে।বলে-ই একটি চাকু বেড় করলো লোকটি।
–আয়াশ ভয়ে শখের পেছনে লুকিয়ে পড়লো।
–উফ মামনির কি সুন্দর সাদা ধবধবে পেট।ইচ্ছে করছে এখনি ঝাঁপিয়ে পড়ি।এত সুন্দর জিনিস সামনে পেয়ে না খেয়ে তাই থাকা যায়।
লোকটির কথা শুনে শখ নিজের দিকে একবার তাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে কোনো রকম নিজেকে ঠিক করে নিলো।
–আপনাদের ঘরে মা,বোন নেই। অসভ্য লোক কোথাকার। যান গিয়ে নিজের মা বোনদের গিয়ে এসব কথা বলেন।
এই কথা বলার সাথে সাথে আয়ান এসে শখকে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
–তুমি ওদের দেখিয়ে বেড়াবে।তাতে সমস্যা নেই। আর ওরা বললে-ই দোষ তাই না। তোমাকে এসব কে পড়তে বলেছে।
–স্যার আপনি’ও,এটা কোনো স্যারের ব্যবহার হতে পারে।
–এই মামু তুমি একদম ঠিক কথা বলেছো।চলো আজ আমরা সবাই মিলে মধু খাব।কথাটা শেষ হবার আগেই আয়ান লোকটির নাক বরাবর ঘুসি মারলো।সাথে সাথে লোকটির নাক ফেটে রক্ত ঝরছে।
–তোর সাহস কি করে হয়,আমার গায়ে হাত দেওয়ার তুই জানিস আমি কে।
–তুই কে তা জানার প্রয়োজন আয়ান করে না।তুই ওকে যে খারাপ কথা বলছিস।তার শাস্তি তোকে পেতেই হবে।
–তুই ওকে কতো গুলো কথা বললি তার বেলা।
–ওকে,সবকিছু বলার অধিকার আমার আছে তোদের নেই। আমি ওকে ভালোর জন্য বলছি।তোরা কি ওর সাথে ভালো কিছু করবি নাকি।মা বোন সবারি আছে।তাই বলছি ভালোই ভালোই চলে যাহ।
–যাব না কি করবি।গেলে পাখিকে নিয়ে-ই যাব।আমাদের কাজে বাধা দেওয়ার তুই কে।
আয়ান লোকটিকে মারতে মারাতে মাটিতে শুয়িয়ে ফেলছে। আয়াশ অবস্থা খারাপ বুঁজে আগেই পালিয়েছে। শখ দৌড়ে এসে আয়ানকে থামানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু আয়ানকে থামানো যাচ্ছে না।আয়ান নিজেকে শান্ত করে কাকে জানি কল করলো তারপরে শখের হাত ধরে টানতে টানতে একটি রুমে নিয়ে গেলো।
–কি হলো আমাকে এই রুমে নিয়ে আসলেন কেনো।
আয়ান চুপ
–কথা বলছেন না কেনো।আমার ভালো লাগছে না।খুব অসস্তি লাগছে।
–কোথায় গেলো আয়াশ।আমি তোমাকে নাচ দিতে নিষেধ করছিলাম তা-ও কেনো দিলে(শান্ত হয়ে বললো আয়ান)
আয়ানের প্রতিটা কথা শখের গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে।সত্যি তো আয়াশ কোথায় গেলো ওর জন্য আজ আমি এত অসন্মানিত হয়েছি।আজ যদি স্যার ঠিক সময়ে না আসতো তাহলে কি হতো কে জানে,আয়াশ ঠিকি পালিয়ে যেতে এটা বোঝা গেলো আয়াশ একটা স্বর্থপর ছেলে।
–কি হলো কথা বলছো না কেনো আমি কিছু বলছি আর আমি এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না।(ধমক দিয়ে চিৎকার করে উঠলো)
হঠাৎ করে ধমক দেওয়াতে শখ ভয়ে চমকে উঠলো।
–আসলে স্যার…
–আসলে নিজেকে খুব সুন্দর মনে হয় তাই না।শরীল দেখাতে খুব ভালো লাগে।শরীল দেখিয়ে আকৃষ্ট করতে চাও।সবাই কে নিজের দিকে টানতে চাও তাই না।
–স্যার…
–হুসসস(শখের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো আয়ান।)
আয়ান শখের এতটা কাছে আসায় শখ কথা বলার শক্তি টুকু পাচ্ছে না।আয়ানের গরম নিশ্বাস বারবার শখের মুখে পড়ায় শখ চোখ বন্ধ করে আছে।বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে।
–তোমাকে আমি নিষেধ করলাম নাচ দিও না,তবু্ও তুমি দিলে।তা আমার তো তোমার ওপরে কোনো অধিকার নেই আয়াশের তো আছে।সে কোথায় গেলো তোমাকে রেখে। যাহ তোমার বিপদ জেনেও পালিয়ে গেলো কেমন আপন মানুষ তোমার।
–স্যার আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো। আপনি আয়াশের সাথে নিজের তুলনা করছেন।কোথায় আপনি আর কোথায় আয়াশ।(স্যার কি পাগল হয়ে গেলো নাকি এমন ঘোর লাগা কণ্ঠে কথা বলছে কেনো।উনি কি বুঝতে পারছে না ওনার এমন কন্ঠে যে আমার কলিজা কেঁপে উঠছে।তা কি উনি শুনতে পাচ্ছে না।)
আয়ান কিছু একটা ভেবে শখকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে ফেলে দিলো।
–তুমি শখ শরীল দেখিয়ে বাকি সবাইকে,পাগল করতে পরালে’ও আমার মনে কোনোদিন জায়গা করে নিতে পারবে না।মনে থাকে যেনো আর নেক্সট টাইম আমার সামনে তোমাকে বোরকা ছাড়া অন্য পোশাকে না দেখি এর পরিনাম খুব খারাপ হবে।তোমার একার জন্য বাকি ছেলেমেয়ে গুলো’ও নষ্ট হয়ে যাবে। বলেই আয়ান রুম থেকে গটগট করে চেলো গেলো।
শখ বসে কান্না করতে লাগলো।আমি সত্যি কি এতটা খারাপ,আমি তো এমন মনোভাব নিয়ে সাজি নাই। তাহলে স্যার আমাকে এভাবে কেনো বললো কথা গুলো।শখ আর এক মুহূর্ত দেরি না করে বাড়ি চলো গেলো।
এভাবে’ই কাটছিলো দিনগুলো কেটে গেলো ছয়টি মাস আজ শখের আঠারো তম জন্মদিন।শখদের বাসায় কি বিশাল আয়োজন। এই কয়দিন শখ আর আয়ানের প্রয়োজন ছাড়া কথা হয় নাই। শখ এখন নিয়মিত বোরকা পড়ে চলাফেরা করে।এতে শখের বেশ ভালো লাগে।বোরকা পড়ার কারণে এখন অনেক সন্মান পায় শখ।শুভ মুনতাহাকে জ্বালানোর পরিমান টা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এখনো মুনতাহার মনে নিজের জায়গা করে নিতে পারে নাই। সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। আয়ানদের’ও দাওয়াত করেছে আহনাফ সাহেব। কিছুক্ষনের মধ্যে-ই সবাই চলে আসবে।
–হাই বেবি,
–এই কোন শালা রে,আমাকে দেখে ছোট বাচ্চা মনে হয়। বেবি বলছিস।বলল মুনতাহা।
–তুমি আমার কাছে বেবি,ছোট বাচ্চা রাগে ভরা একটা মেয়ে।বলল শুভ।
–আপনাকে এখানে আসতে দিলো কে,লজ্জা করে না।বিনা দাওয়াতে খেতে আসছেন।
–বউ এর বাসায় খেতে আসবো আবার দাওয়াত লাগে নাকি।
–ঐ ব্যাডা কে বউ কিসের বউ।থাপ্পড় খেতে না চাইলে সরেন।
–চলে যাচ্ছি,কিন্তু মনে রাখবে ভুলে’ও যেনো কোনো ছেলের সাথে কথা বলবে না।আমি জানতে পারলে তুমি শেষ। আমি এক মাসের জন্য বাহিরে যাচ্ছি।ভালোভাবে লক্ষি মেয়ের মতো থাকবে।আমি এসে কোনো ভুল যেনো না পাই।আসি।বলেই শুভ চলে গেলো।
মুনতাহা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।আপদটা বিদায় হয়েছে বেঁচে গেছি।
আজ তো শখের আঠারো বছর পূর্ণ হলো,আর অপেক্ষা কিসের মেরে দেওয়া যাক।
–এই বাচ্চা মেয়েকে মেরে আমাদের কি লাভ হবে বলতো।আমাদের কোনো লাভ-ই হবে না।আমরা উনাকে ভালোভাবে বলে বুঝিয়ে বলতে পারি।
–উনি কথা শোনার মানুষ-ই না।উনি ওনার কাজে সফল না হওয়া পর্যন্ত আমাকে আমার ছেলে ফিরিয়ে দিবে না।আমি তো এমনি নিজের ছেলেকে কাছে পাই না।উনি আমার ছেলেকে নিজের ছেলে বলে পাপ কাজ করিয়ে যাচ্ছে দিন এর পরে দিন।আমার ছেলে না বুঝে কত পাপ করছে।হয়েছে অনেক হয়েছে। আমি আর পারছি না।আমি এমনিতেই আমার ছেলেকে কাছে পাই নাই। তাহলে আমি উনাকে’ও সফল হতে দিব না।আমি আজ-ই শখকে মেরে ফেলবো।
–বাবা আজ শখের আঠারো বছর পূর্ণ হলো চলো আমাদের কাজ’টা করে ফেলি।
–আমার সোনা ছেলে।এত পাগল হচ্ছো কেনো তুমি।বাবা আছে না।সবকিছু সামলে নিবে।আমাদের কাজ হয়ে গেলো।শখকে মারার দায়িত্ব টা তোমার। বাকিটা বাবা দেখে নিবে।
–আজ তো শখকে একা পাব না তাহলে কখন।
–এত গুলো বছর ধৈর্য ধরতে পারছি আর কয়টা দিন পারবো না সোনা।দুইটা দিন যাক বাকিটা আমি করে নিব।
বলেই উনি চলে গেলেন।
আমার এত দিনের আশা আজ পূর্ণ হতে চলেছে।আমি আসছি আয়ান।তোমাকে নিজের করে নিব এবার।আমাদের আর কেউ আলাদা করতে পারবে না।বলেই মেয়েটি হাঁসলো।
সবাই চলে আসছে।এখন শখ কেক কাটবে সবাই শখের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।শখের একপাশে রুহি আপু আরেক পাশে মুনতাহা দাঁড়িয়ে আছে। রুহি কেনো জানি মুনতাহার সয্য হয় না।হয়তো শখ রুহিকে একটু বেশি ভালোবাসে তাই।
শখ কালো রং এর গ্রাউন পড়েছে। আজকে শখকে খুব সুন্দর লাগছে।আয়ান বারবার আড়চোখে শখকে দেখছে।শখ অবশ্য একবার’ও আয়ানের দিকে তাকাই নাই। হতো অভিমান এখনো জমে আছে মনের এক কোনে।অভিমান জিনিস টা বড্ড খারাপ।
শখ একে একে সবাই’কে কেক খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সবাই যে যার মতো বাসায় চলে গেলো।থেকে গেলো শুধু আয়ানের পরিবার।
ড্রয়িং রুমে বসে আছে আহনাফ সাহেব ও মিসেস রাহেলা বেগম।সাথে আয়ানের পরিবার। নীরবতা কাটিয়ে রুহি বললো।
–স্যার যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।
চলবে…..