#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_২১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–কি’রে তুই এখানে মাথায় হাত দিয়ে বসে,আছিস কেনো।বলল আয়েশা।
আয়েশা কে দেখে শখ তাড়াতাড়ি করে নিজের চোখের পানিটুকু মুছে আড়াল করে নিলো।
–কি হলো কথা বলছিস না,কেনো কান্না করছিস কেনো,কি হয়েছে বলতো।কয়টা দিন হলো দেখছি কেমন চুপচাপ হয়ে আছিস।কারো সাথে কোনো কথা বলিস না।কেমন জানি সবার থেকে দূরে দূরে থাকিস।কি হয়েছে শখ তোর,বল তো আমাকে।
–কিছু হয় নাই রে।এমনি চল ক্লাসে যা-ই, এখন কোন স্যারের ক্লাস।
–আয়ান স্যারের ক্লাস,তাড়াতাড়ি চল না হলে খবর করে দিবে স্যার।বলল মেধা।
আয়ান নামটা শুনে বুকের ভেতর কেমন জানি করে উঠলো শখের।
–ক্লাসে পরে যাব আগে বল শখ তোর কি হয়েছে,কয়টা দিন হলো খেয়াল করছি,তুই কেমন জানি একটা হয়ে গেছিস।বলল আমান।
–ওমা হব না,আমার আপুর বিয়ে বলে কথা, আমার তো কলেজে আসতে ইচ্ছে করে না।বাসায় সবাই কতো মজা করে।বাসায় এত আনন্দ রেখে কলেজে কি আসতে ইচ্ছে করে।
–তাহলে কলেজে আসিস কেনো। বলল স্নেহা।
–ও কলেজে আসে শুধু মাত্র আয়ান স্যারকে একটা পলক দেখান জন্য। তাই না রে শখ আমি যদি ভুল না হয়।বলল আয়েশা।
–যাহ কি সব যাতা বলছিস,উনি আমার বড় বোনের হবু বর, আমি কেনো ওনাকে দেখতে আসবো।আমি তো ক্লাস করতে আসি।
–হয়েছে আর নাটক করতে হবে না।তুই যে আয়ান স্যারকে ভালোবাসিস,সেটা আমরা বুঝি না।নাকি,কি মনে করিস আমাদের ফিডার খাই।রেগে বলল আয়েশা।
–তোরা আমাকে ভুল ভাবছিস….
–দেখ এখনো সময় আছে।আয়ান স্যারের কাছে যা,আর তোর মনের কথা বলে দে,সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
–তোরা পাগল হয়ে,গেছিস তোদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। তোদের ইচ্ছে এখানে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাক, আমি ক্লাসে গেলাম।বলেই রেগে চলে গেলো শখ।
সবাই ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। প্রথম শখ ওদের সাথে এমন ব্যবহার করলো।
ক্লাস রুমে শখ অন্য দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছিলো,কখন যে আয়ান সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। সেদিকে খেয়াল-ই নেই শখের।
–শখ এটা ক্লাস রুম,আপনার বাসা না,যা ইচ্ছে খুশি করবেন।আমার ক্লাস করতে হলে মনযোগ নিয়ে ক্লাসে রুমে প্রবেশ করতে হবে।যদি তা করতে না পরেন,তাহলে ক্লাস রুমে প্রবেশ করার দরকার নেই।
শখ মাথা নিচু করে বললো।
–স্যরি স্যার।
–বেড়িয়ে যান।
–আর হবে না।
–আমি কি বলছি আপনার কথা কানে যা-ই নাই। আমি এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না।এখনি বেড়িয়ে যান।আমার ক্লাস থেকে।রেগে গিয়ে ধমকে বললো কথাগুলো।
শখ আর কোনো কথা না বলে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে আসলো।কলেজের মাঠে বসে কান্না করছে শখ।নিজের চোখের পানি’ও আজ শত্রুতা শুরু করছে।কিছুতেই থামতে চাইছে না।
একদল মেয়ে এসে শখ কে বললো।
–তুৃমি এখানে বসে আছো।যাবে না।
শখ নিজের চোখের পানি মুছে বললো।
–কোথায় যাব।
–আজ স্যারের জন্মদিন।তাই আজ আমরা ছোট একটা আয়োজন করছি।ছোট বড় সবাই থাকবে।তুমি’ও চলো।
স্যারের নাম উল্লেখ না করার কারনে শখ ভাবছে অন্য কোনো স্যারের হবে।তাই ভেবে ওদের সাথে গেলো।
তুমি ঐ রুম টাই যা-ও আমরা সবাইকে ডেকে নিয়ে আসি।
–আচ্ছা ঠিক আছে আপু।শখ ভেতরে গিয়ে অবাক সেই সাথে কষ্টের পরিমাণ টা আরো বেড়ে গেলো।মুনতাহা আয়ানের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
–এই মেয়ে কারো রুমে প্রবেশ করতে হলে তার অনুমতি নিতে হয়।তুমি জানো না,কেউ তোমাকে শেখায় নাই কিছু। বলল আয়ান।
–স্যরি স্যার আমি মনে হয় ভুল করে এসে পড়েছি।একটা আপু বলল স্যারের জন্মদিন,সবাইকে থাকতে হবে তাই আসছিলাম। আপনারা এই রুমে আছেন জানলে কখনো আসতাম না।
বলেই শখ চলে যেতে লাগলে মুনতাহা এসে শখের হাত ধরে ফেললো।
–কোথায় পালাচ্ছিস।আমার জীবন টা শেষ করে দিয়ে।তা তুই যা করছিস ভালোই করছিস,আয়ান স্যারের মতো ছেলেকে না করে দিয়ে।এখম বুঝি তোর হিংসা হচ্ছে।
–এসব কি বলছো আপু তুৃমি,আমি তো খুব খুশি। নিজের বোনকে হিংসা করবো এমন মন মানসিকতা আমার নেই।
–তা-ও ঠিক তোর মতো মেয়ে আয়ান স্যারের যোগ্য না।
–একটা কথা ভুলে যাবে না আপু।তুমি কিন্তু আমার দয়াতেই আয়ান স্যারকে বিয়ে করতে পারছো।আমি যদি না করতাম তাহলে তো আর তোমাদের বিয়েটা হতো না।
–আহারে এখন সেজন্য বুঝি তোর আফসোস হচ্ছে। থাক তোর কোথাও যাওয়া লাগবে না।এখানে থাক আজ আয়ানের-ই জন্মদিন।
–ওও আচ্ছা আমি জানতাম না।
–তুই ওর কে রে যে তুই জানবি।আর তোর কোনো অধিকার নেই আয়ানের ওপরে।তাই জানিস না। আমার আছে।তাই আমি জানি।
–ভালো।
এর মধ্যে সবাই চলে আসলো।সবাই আয়ান কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।কেউ কেউ দামি দামি উপহার দিচ্ছে। শখ রুমে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।
–তোমাদের বলেছিলাম এসব কিছু করার দরকার নেই। সবাই কি মনে করবে বলতো।কলেজে এ-সব জন্মদিন পালন করার কোনো নিয়ম নেই।
–প্লিজ স্যার রাগ করবেন না।একটা দিন-ই তো।আমরা কি প্রতিদিন কলেজে অনুষ্ঠান করি নাকি।এটাই প্রথম একটা শেষ।
আয়ান আর কিছু বলতে পারলো না।
মুনতাহা শখকে দূর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো।
–তুই দূর দাঁড়িয়ে আসিস কেনো,আয় এদিকে আয়।
–এই মেয়ে যদি এখানে থাকে তাহলে আমি চলে যাব।সরি আমি এখানে থাকতে পারলাম না। বলেই আয়ান চলে যেতে লাগলে সবাই মিলে আটকালো।
–স্যার আপনাকে যেতে হবে না।আমার জন্য যদি আপমার সমস্যা হয়।তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
–স্যার ও থাকলে সমস্যা কি।আমারি তো বোন।বলল মুনতাহা।
–তোমার বোন হয়েছে তো কি হয়েছে। বলল একটি মেয়ে।আসলে মুনতাহা আর আয়ানের বিয়ের কথা কেউ জানে না।
–আমি এত কথা শুনতে চাচ্ছি না।এই মেয়ে তুমি এখনো যা-ও নি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রং দেখছো।বলেই আয়ান শখে দিকে এগিয়ে গেলো। শখের কাছে গিয়ে শখের হাত ধরে শখকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
শখ এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান এমনটা করবে কখনো ভাবতে পারে নাই। মানুষ কিভাবে এতটা পরিবর্তন হতে পারে।আর আমি তো এটাই চেয়েছিলাম।তাহলে এখন কেনো কষ্ট পাচ্ছি।
সেদিনের পর থেকে আর শখ কলেজে যা-ই নাই।
বিয়ের আর মাত্র সাতদিন আছে।সবাই খুব ব্যস্ত।সবার মুখে হাঁসি।সবাই কতো খুশি।ভালো নেই শুধু শখ,আয়ান মুনতাহা।
সন্ধ্যা বেলা,
–শখ আমার সাথে একটু যাবি রে।আমি একটু বাহিরে যাব।বলল মুনতাহা।
–আমার ভালো লাগছে না আপু।তুমি যা-ও আমি ঘুমোবো।
–এই সন্ধ্যা বেলা কিসের ঘুম। পাঁচ মিনিট সময় দিলাম রেডি হ’য়ে নে।আমি নিচে অপেক্ষা করছি।
কি আর করার বড় বোনের আদেশ অমান্য করা তো আর যায় না।রেডি হয়ে নিচে চলে আসলো।
–বাবা এত ফ্রাস্ট রেডি হয়ে গেলি।কি সব সারাদিন খেত মার্কা হয়ে চলিস।বোরকা পড়ার ভূত তোর মাথায় কে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তুই দিন দিন এত শুকিয়ে যাচ্ছিস কেনো রে।আমার বাবা মা কি তোকে খেতে কম দেয় নাকি।তোর চেহারা এই অবস্থা কেনো রাতে ঠিক মতো ঘুমাস না নাকি।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ছে কেনো।বলল মুনতাহা।
–আপু তুমি এমন ভাবে বলছো।যেনো আমি চোর কিছু চুরি করছি।পুলিশের মতো জেরা করছো।
–আচ্ছা কথা কম বল আর চল।বলেই বেড়িয়ে গলো শখ আর মুনতাহা।
–আপু আমরা পার্কে এসেছি কেনো।
–তোকে বিক্রি করে দিব।তাই তোকে নিয়ে আসছি।
–সত্যি আপু।
–দেব এক থাপ্পড়। চল আমার সাথে চল।
কিছুদূর যেতে শখ দেখতে পেলো পার্কের এক কোণায় আয়ান বসে আছে।
–আপু আমি যাব না।
–বেয়াদব মেয়ে আমার মুখের ওপরে কথা বলিস।বলেই হাত ধরে নিয়ে গেলো।
–সরি স্যার আপনাকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করালাম।
–আচ্ছা সমস্যা…বলতে গিয়ে’ও শখে দেখে রেগে বললো তুমি এই মেয়েটাকে নিয়ে আসছো কেনো।
–কি করবো বলেন স্যার সারাদিন বাসায় থাকে,কোথাও যায় না।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াত করে না।সারাক্ষণ একা একা থাকে। তাই ভাবলাম একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
— আচ্ছা কি বলতে বলো।আমার একটা কাজ আছে।
–শখ তুই একটু ঐ দিকে যা।স্যারের সাথে আমার কথা আছে।শখ কোনো কথা না বলে চলে গেলো।
–এখন বলো কি বলবে।
–আসলে স্যার আপনাকে আমার অনেক কিছু বলার আছে।সেদিন বলতে গিয়েছিলাম কিন্তু শখের জন্য বলতে পারি নাই। আমি আসলে…আর কি বলতে পারলো না।তার আগেই শখে দৌড়ে এসে মুনতাহাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
–আপু আমাকে বাঁচা’ও মেরে ফেললো আমাকে।
–কে মেরে ফেলবে আমি থাকতে কার এত সাহস তোর গায়ে হাত দিবে।কই দেখি কে।
–ঐ দেখো আপু তিন’টা কুকুর।আমার পেছনে পেছনে দৌড়ে আসছে।
মুনতাহা শখের গালে হালকা করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
–তুই আমার বোন হয়ে কুকুর দেখে ভয় পাস বেয়াদব মেয়ে।যা এখান থেকে দেখছিস না।বড়রা কথা বলছে।
থাপ্পড় টা শখের গালে পড়লে’ও কলিজাতে গিয়ে লাগছে আয়ানের।আয়ানর আর সেখানে থাকতে পারলো না।
–আমার কাজ আছে পড়ে কথা বলে নিব।বলেই চলে গেলো।
দূর আজ’ও বলতে পারলাম না। এখন বলতে না পারলে দেরি হয়ে যাবে।সেদিন’ও বলতে পারি নাই। আজ-ও বলতে পারলাম না। (আসলে সেদিন মুনতাহা আয়ানকে কিছু বলতে চেয়েছিল তাই অনুরোধ করে আয়ানের হাত ধরছিলো,ঠিক সে সময়ে শখ চলে আসে যার কারনে বলা হয় নাই। আজকে’ও শখের জন্য বলা হলো না)
দেখতে দেখতে তিন টা কেটে গেলো। আজ সবাই মিলে বিয়ের শপিং করতে বের হবে।সবাই যে যার মতো রেডি হতে ব্যস্ত।
–স্যার মুনতাহা ম্যামের তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
–কি বলছিস এসব। কবে বিয়ে কখন বিয়ে।আর তোরা আমাকে এখন জানাচ্ছিস কেনো।মুনতাহা যদি অন্য কারো হয়ে যায়। মুনতাহা সহ তোদের সবার লাশ ফেলে দিব আমি।
–স্যার আজকের দিন বাদ দিয়ে তিন দিন আছে।আমরা আপনাকে জানানোর অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু আপনার ফোন বন্ধ ছিলো।
–ওহ শিট,এটা তোরা কি করলি এখন যে করে-ই হোক আমাকে বাংলাদেশে ফিরতে হবে।আমার কথা তুমি অমান্য করেছো মুনতাহা। এর শাস্তি কি ভয়াবহ হতে পারে তুমি নিজে’ও জানো না।আমি আসছি তৈরী থেকো।
চলবে…..