রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 24

0
1882

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_২৪(বিয়ে স্পেশাল)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
পরের দিন সকাল বেলা। রুহি আসলো আয়ানকে ঘুৃম থেকে ডেকে তোলার জন্য।আয়ানের রুমে এসে দেখে আয়ান কপালে হাত দিয়ে,চোখ ঢেকে সুয়ে আছে।
–আয়ান…বলে রুহি ডাক দিতেই, আয়ান রুহির দিকে তাকালো।নিজের ভাই এর এমন করুন অবস্থা দেখা বোন হয়ে সত্যি খুব কষ্ট কর।রুহি আয়ানকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।চোখ মুখ ফুলে আছে।চোখ লাল হয়ে আছে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারারাত ঘুমোয় নাই। কান্না করছে।
–ভাই তোর খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না রে।এখনো সময় আছে তুই বিয়েটা ভেঙে দিতে পারিস।শখকে বড্ড বেশি ভালোবাসিস তাই না রে।আমি কি মাকে বলবো।বিয়েটা ভেঙে দেওয়ার জন্য।
–না আপু থাক তার আর দরকার নেই।যা হচ্ছে হতে দাও।তাকেই বোঝাতে পারি নাই, তাকে আমি কতটা ভালোবাসি। কতটা চাই আমি তাকে সে বুঝে না।কালকে রাতে গিয়েছিলাম ওর কাছে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। আর যাই হোক জোর করে কারো ভালোবাসা পাওয়া যায় না।শখ আমাকে ভালোবাসে না আপু।প্লিজ তুমি চলে যাও।আমি একটু ঘুমাবো।সারারাত ঘুমোতে পারি নাই।
নিজের প্রান প্রিয় আদরের ভাইয়ের এমন অবস্থা রুহি কলিজায় গিয়ে লাগছে।আমার রাগী ভাই টা এতটা শান্ত হয়ে যাবে। আমি কখনো ভাবতে’ও পারি নাই। সবকিছুর জন্য দ্বায়ী শখ,আমার ভাইয়ের যদি কিছু হয়,তাহলে আমি শখকে কোনোদিন ক্ষমা করবো না।আমি’ও কি বাচ্চা হয়ে গেলাম শখ তো বাচ্চা মেয়ে ওকে ভালো করে বুঝিয়ে বললে,হয়তো শুনতো আমরা তো বুঝানোর চেষ্টা-ই করি নাই। নিজেকে সামলে নিয়ে রুহি বলল।
–বলছিলাম কি ভাই শখ তো বাচ্চা মেয়ে।ও ভুল করতে-ই পারে।আমরা তো বড় ওকে যদি বুঝিয়ে বলি,তাহলে…
–আর কাউকে কিছু বলতে হবে না।তুমি যা-ও আমি ঘুমবো।
–কতো ঘুমাবি আমার ভালো করে জানা আছে। এখন বসে বসে কান্না করবি আমি বুজি না,মনে করছিস।শোন আমি তোর বড় বোন ছোট থেকে তোকে মানুষ করছি।তাই তোর মনে কখন কি চলে সব আমি জানি।
আয়ান মাথা নিচু করে ফেললো।রুহি আর কোনো কথা না বলে চলে গেলো।
আর কতো সময় লাগবে বাংলাদেশে পৌঁছাতে। আমার আর সয্য হচ্ছে না।তাড়াতাড়ি যেতে বলো।না হলে সবকিছু শেষ করে দিব।
–স্যার এটা আমাদের গাড়ি না।যে আপনি যেভাবে বলবেন সে ভাবে যাবে।আর বেশি সময় লাগবে না।সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছে যাব।
শুভ লোকটির কলার ধরে বললো,
–তোদের জন্য যদি আমি আমার মুনতাহা’কে হারিয়ে ফেলি,সব কয়টার লাশ ফেলে দিব।তোরা আমার খেয়ে আমার সাথে বেইমানি করিস।আগে বিয়ে’টা বন্ধ করি। তারপরে তোদের দেখছি।
–স্যার আমার কোনো দোষ নেই। আপনার বাবা-ই তো আমাদের নিষেধ করছে।যেনো আমরা খবর-টা আপনার কাছে না পৌঁছে দেই।
–বাবাকে তো আমি পরে দেখে নিব।রাগে ভয়ে ছটফট করছে শুভ।নিজের প্রিয় মানুষ টা অন্য কারো হয়ে যাবে।ভাবলে-ই কলিজা কেঁপে উঠছে শুভর।
–এখন কেমন লাগে আহনাফ সাহেব। আমার নিজের ছেলেকে,তুৃমি নিজের ছেলের পরিচয় দিয়ে,পাপ কাজ করাচ্ছো।আর না আমি আর আমার ছেলেকে পাপ কাজ করতে দিব না।তোমার মেয়ে-ই পারবে আমার ছেলেকে সঠিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে।সেজন্য-ই শুভকে কল করে সবটা বলে দিলাম।
–তুমি এই কাজ করছো জানতে পারলে তোমাকে মেরে ফেলবে উনি।এত গুলো বছর চুপচাপ ওনার কথা শুনেছি,শুধু মাত্র তোমাকে বাঁচানোর জন্য। আহনাফ সাহেব এর লোক তোমাকে পাগলের মতো খুঁজছে। তোমাকে পেলে মেরেই ফেলবে।
–মরে গেলে যাব।তবু্ও আমার ছেলেকে আর পাপ কাজ করতে দিব না।
–আচ্ছা আজ থাকো।আমি আসি।না হলে ধরা পরে যাব।বলেই চলে গেলেন।
বাবা এভাবে আর কতদিন। আমি তোমার নিজের সন্তান হয়ে’ও আমাকে অনাথ হয়ে ঘুরে বেড়াতে হায়। আর ঐ ফিয়াজ শখের নিজের ভাই। ওকে তুমি নিজের ছেলের পরিচয় দিয়ে রাখছো।তাহলে আমার কি কোনো গুরুত্ব আছে।তোমাদের কাছে।আমি না থাকলে-ও তোমাদের কোনো যায় আসে না।
–চুপ কর আয়াশ।একদম বাজে কথা বলবে না।এতকিছু কার জন্য করছি।সবকিছু তোমার জন্য-ই করছি তোমার ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে করছি।
–এক কথা আর কত জনরে বলবে বাবা।শুভর নিজের বাবা না হয়ে ওকে নিজের বাবার পরিচয় দিয়ে একই কথা বলো।নিজের সন্তান থাকতে,নিজের ভাই এর ছেলেকে নিজের ছেলের পরিচয়ে বড় করেছ।আমি এখানে কি পেলাম বাবা বলো তো।আমার ছোট বেলা,বাবা মায়ের ভালোবাসা সবকিছু হারিয়ে ফেলছি, কিছু পাই নাই আমি।আর সয্য করতে পারছি না আমি।এবার সত্যি টা সবার সামনে আসার দরকার।বাবা।
–দেখো আয়াশ।এতগুলো দিন ধৈর্য ধরতে পারছো।আর কয়টা দিন বাবা।তারপরে সবকিছু সামনে নিয়ে আসবো।সবটা তোমার মায়ের জন্য হয়েছে। আমি শখের সাথে আয়ানের বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তোমার মা সবটা নষ্ট করে দিলো।মুনতাহাকে আয়ানের সাথে বিয়ে করাতে রাজি করিয়ে ফেললো।যার ফলে কাজটা কঠিন হয়ে গেছে।
–হয়েছে তোমার নাটক বন্ধ করো।কয়েক বছর ধরে তোমার নাটক দেখছি।
বলেই রেগে চলে গেলো আয়াশ।
এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে মিহু।নিজের দেশে এসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো মিহু।আমার এত বছরের অপেক্ষার ফল আজ সফল হলো।এবার আয়ান আর আমাকে না করতে পারবে না।আমাকে বিয়ে না করে কোথায় যাবে আয়ান সোনা।বলেই মিহু লজ্জা দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো।
কি ব্যাপার এতক্ষণ হলে দাঁড়িয়ে আছি।আয়াশের কোনো খবর নেই। ও তো বলেছিলো,আমাকে নিতে আসবে।একটা কাজ ছেলেটাকে দিয়ে হয় না।
–টুকি,তুমি আমার কথা মনে করছিলে।আর আমি তোমার কাছে চলে আসলাম। দেখছো ভালোবাসার কতো টান।
–দেখো আয়াশ তোমাকে,আমি আগেই বলেছি তুমি আমাকে পাওয়ার স্বপ্ন ভুলে যা-ও। আমি শুধু আয়ানকে ভালোবাসি।তাই আমি চাই না তুমি শুধু শুধু আমাকে ভালোবেসে কষ্ট পা-ও।
–ওরে বাবা মহারাণী রেগে গেলো যে,আমি মজা করছিলাম চলেন মহারাণী, আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেই।
–সব কথা পরে হবে। আগে আয়ানের কথা বলো।ওর ধারে কোনো মেয়েকে আসতে দাও নাই তো।আমার আয়ান আবার অন্য কাউকে ভালোবাসে ফেলে নাই তো।
এবার মিহুর কথায় আয়াশের মুখ কালো হয়ে গেলো।এবার সে কি করে বলবে তার-ই বোনের সাথে আয়ানের বিয়ে।তার কথা মতো শখকে আয়ানের জীবন থেকে দূরে সারতে চাইলে’ও তার আয়ান শখকে নিজের থেকে-ও বেশি ভালোবাসে।সবসময় শখকে চোখে চোখে রাখে সে মিহুকে কি করে এসব কথা বলবে।যদি মিহু আমাকে ভুল বোঝে।না থাক এখন কিছু বলবো না।বিয়েটা হ’য়ে যাক। তারপরে কিছু একটা বলা যাবে।
–সবকিছু ঠিক আছে। তুমি কোনো চিন্তা করো না মিহুরাণী।এখন চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেই। বলেই বাসায় উদ্দেশ্য রওনা হলো,আয়াশ ও মিহু।
সারাদিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আয়ানের বাসায় সবাই চলে এসেছে। মুনতাহাকে বউ সাজানো হয়ে গেছে। এবার কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর জন্য বউকে নিয়ে আসতে বলা হলো।
আয়ান কে কবুল বলতে বললে আয়ান তিন বার কবুল বলে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দিল।মুনতাহাকে বললে মুনতাহা তাই করলো।
আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে সম্পূর্ন হলো,আজ থেকে আপনার স্বামী,স্ত্রী।সবাই নতুন দম্পতির জন্য দোয়া করুন।তারা যেনো সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে থাকতে পারে,এবং সারাজীবন সুখে সংসার করতে পারে।
নাহ ঘুম থেকে লাফ দিয়ে ধর ফরিয়ে উঠলো শখ।ভয়ে হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে শখ।
–তার মানে এটা স্বপ্ন ছিলো।আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। আয়ান স্যার অন্য কারো হয়ে গেছে।ভাবতে-ই বুকের ভেতর টা মোচর দিয়ে,উঠছে।কিন্তু স্যার তো সত্যি সত্যি আজ অন্য কারো হয়ে যাবে।শখ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা ছয়টা বাজে।কাল রাতের কথা মনে পড়তে-ই শখের মনে হলো কেউ ওর মুখ চেপে ধরেছিল আর কিছু মনে নেই। কিন্তু আমি সারাদিন এত কি করে ঘুমালাম। মাথা কাজ করছে না।মাথায় ধরে বসে আছে শখ।ঠিক সেই সময়ে রুমে আসে মুনতাহা।
–কিরে তোর ঘুম ভাংলো কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।আম্মু বলল তুই নাকি অসুস্থ। তাই আসতে পারছি না।দেখতো আমাকে কেমন লাগছে।অনেক মানুষ বাসায়। অসয্য লাগছে।তুই তো জানিস আমি বেশি মানুষ পছন্দ করি নাহ।তাই তোর রুমে আসলাম। যাহ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।
শখ আর কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।শখ চলে যাওয়ার সাথে সাথে মুনতাহা আবার শুভকে কল করলো একটি লোক ধরে বললো।
–এই মেয়ে তোমার লজ্জা সরম নেই। দেখছো শুভ তোমাকে ইগনোর করছে।তবু্ও তুমি বিরক্ত করেই যাচ্ছো।শুভ তোমার সাথে কথা বলতে চাই না। তুৃমি আর এখানে ফোন বা মেসেজ দিবে না।বলেই লোকটি কল কেটে দিল।
–শুনুন আমার কথা’টা একবার শুনুন। একটা বার শুভর কাছে ফোনটা দিন।আমি শুধু কয়টা কথা বলবো।শুভকে।হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা। ওপাশ থেকে আর কোনো উওর এলো না।মুনতাহা বুঝতে পারলো কলটি কেটে দেওয়া হয়েছে।
কেনো করলে শুভ এরকম। কি দোষ ছিল আমার। আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই নাই।তবে কেনো এসেছিলে আমার জীবনে।আর এখন আমার সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে আমাকে অবহেলা করছো।আমি যে আর পারছি না শুভ।বলেই কান্না করতে লাগলো মুনতাহা।
শখ ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলো তার হাত ভর্তি মেহেদী। হাতের মাঝখানে এ লিখা।তার যতদূর মনে আছে,সে তো মেহেদী দেই নাই। তাহলে মেহেদী দিয়ে দিলো কে।শখ সাওয়ার নিয়ে চুল ঝারতে ঝারতে বের হলো।
–একি আপু গেলো কোথায়।এখানেই তো ছিলো।শখ একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে বাহিরে গেলো।
বর এসেছে বর এসেছে বলে সবাই চিৎকার করছে।শখের আর বুজতে বাকি রইলো না।যে,আয়ান’রা চলে এসেছে।
–আল্লাহ আমাকে ধৈর্য দাও। আর পারছি না।এমন কপাল যেনো শত্রুর’ও না হয়।নিজের চোখের সামনে নিজের কাছের মানুষ’টা অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে।
মুনতাহাকে আয়ানের পাশে নিয়ে গিয়ে বসালো হলো।কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।দূর থেকে সবকিছু দেখছে শখ।
মুনতাহা ও আয়ান দুটি মানুষ যেনো পাথর হয়ে গেছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই। যেনো মাটির পুতুল, যার যেভাবে খুশি ব্যবহার করছে।সবার খুশির জন্য চুপচাপ সবকিছু সয্য করে নিচ্ছে।
কাজী সাহেব মুনতাহাকে কবুল বলতে বললে মুনতাহা কিছু বলার আগেই……
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here