রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 27

0
1618

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_২৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
রাত বাজে বারোটা,শখ সেই কখন থেকে বসে আছে।আয়ানের জন্য।কিন্তু আয়ানের আসার নামে কোনো খোঁজ-ই নেই।হঠাৎ করে দরজা খোলার আওয়াজ পেলো শখ।তারমানে মহারাজ এসেছেন। এতক্ষণে মহারাজের আসার সময় হলো।
–শখ উঠে গিয়ে আয়ান’কে সালাম করতে যাবে।আয়ান তাতে বাঁধ দিলো।
–এসব তোমাকে কে শিখিয়েছে।তুমি জানো না,আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে মাথা নত করতে নেই।
–আমাকে সবাই যাহ শিখিয়ে দিয়েছে।আমি তাই করছি।এই নিন দুধ আর মিষ্টি খান।রুহি আপু আপনাকে খাওয়াই-তে বলছে।
আয়ান রেগে দুধের গ্লাস টা ফেলে দিলো।
–তোমাকে বলছি আমি দুধ খাব।কেনো এসব ফালতু নামক করছো।আমার এসব একদম ভালো লাগে না।দেখি সরো।আমি ঘুমবো। আমার ঘুম পেয়েছে। বলেই আয়ান বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
শখ এখনো আগের মতো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।
এদিকে আয়ান মনে মনে ভাবছে।কি মেয়ে রে বাবা।একটা বার আমার অভিমান টা ভাঙানোর চেষ্টা করলো না।আমি বা ওর থেকে এতকিছু আশা করছি কেনো।ও’তো আমাকে ভালোবাসে নাই। আমি ওকে ভালোবেসেছি।সে কি করে আমাকে বুজবে।বলে’ই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে। চোখ বন্ধ করলো।
ঠিক তখনি শখ বিছানার ওপরে উঠে বসলো।তা দেখে আয়ান রেগে বললো।
–তোমার তো সাহস কম না।কোন অধিকারে আমার বিছানায় বসেছ।
–কেনো,আপনার দশ-টা না পাঁচ-টা,একটা মাত্র বউ এর অধিকারে।
–গরুর মতো চিৎকার করছেন কেনো।
–তোমার খুব সাহস হ’য়ে গেছে।তাই না তুমি এখনি আমার বেড থেকে নামো।আমি আমার বেড শেয়ার করতে পছন্দ করি না।
–কিন্তু স্যার আপনাকে তো বেড শেয়ার করতে-ই হবে।ভুলে গেলেন ঘরে একটা কতো সুন্দর লাল টুকটুকে,বউ নিয়ে এসেছেন।এখন আপনার সবকিছুর ওপরে সমান সমান অধিকার আছে।
–শখ…রাগ দেখিয়ে।
–তেলাপোকার পিঁয়াজি খাবেন।এভাবে চিৎকার করছেন কেনো।
–তেলাপোকার পিঁয়াজি খেতে কেমন।বলে-ই জিব্বা-ই কামড় দিলো,আয়ান।
–তারমানে স্যার আপনি খাবেন।আপনাদের বাসায় কি তেলাপোকা আছে।তাহলে কালকে রান্না করে খাওয়াবো।
আয়ান আর কোনো উওর করলো না।আয়ানকে চুপ থাকতে দেখে।শখ আয়ানের কাছে গিয়ে। আয়ানের দু’হাত ধরে বললো।
–স্যার সরি।আমার ভুল হয়ে গেছে। আপনি কি এখনো আমার ওপরে রাগ করে আছেন।
আয়ান কোনো কথা না ব’লে উঠে চলে যেতে লাগলে।শখ আয়ান’কে পেছনে থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
–কোথায় যাচ্ছেন।আপনি যতোক্ষণ না বলছেন।আপনি আমাকে মাফ করছেন।ততক্ষণ আমি আপনাকে ছাড়ব না।
–শখ আমাকে ছাড়ো।না হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।লজ্জা করে না অন্য একটা ছেলে’কে জড়িয়ে ধরে আছো।
–আপনার মাথা পুরো টাই গেছে স্যার,নিজের স্বামীকে জড়িয়ে ধরবো না-তে কাকে ধরবো,ঐ আয়াশ’কে।
আয়াশের কথা শুনে আয়ান আর চুপ থাকতে পারলো না।রেগে শখের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। নিমিষে-ই আয়ানের চোখ লাল হয়ে গেলো।
–খুব সাহস হয়ে গেছে।তাই না।কিছু বলছি না তার সুযোগ নিচ্ছ।তাহলে ঐ আয়াশের কাছে-ই চলে যা-ও না।আমাকে কেনো বিয়ে করছো।বলেই রেগে হন হন করে বেলকনিতে চলে গেলো।বাহিরে প্রচুর আত্নীয়স্বজন।এখন যদি আয়ান বেড়িয়ে যায়।সবাই শখকে অনেক কথা শোনাবে।রাগ যেনো কিছুতে-ই থামতে চাইছে না। থামবে-ই বা কি করে।কোনো স্বামী তার স্ত্রীরর মুখে অন্য ছেলের নাম তো দূর ছায়া’ও সয্য করতে পারে না।
শখ আর দাঁড়িয়ে না থেকে,লাগেজ থেকে একটা কালো রং এর সালোয়ার কামিজ বেড় করে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ওর আর এভাবে সং সেজে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।প্রচুর কান্না করছে শখ।চোখের পানি’ও আজ খুব স্বার্থপর হয়ে গেছে। কিছুতে-ই
থামছে না।আমি ওনার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছিলাম উনি এতটা রেগে যাবে,কখনো ভাবতে পারি নাই।এতটা ঘৃণা জমে গেছে,ওনার মনে আমার জন্য।
একবারে সাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড় হলো।এসে কোনো কথা না বলে বিছানার এক কোণে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল।
রাত বাজে একটা।শুভরা বাসার সামনে এসে পৌঁছালো। মুনতাহাকে শুভর আম্মু বরন করে নিলো।
–মিহু মা এদিকে আয় তো,তোর ভাবিকে শুভর রুমে দিয়ে আয়।
–এই তো আম্মু আসছি।আমার কাজ হয়ে গেছে। এখন শুধু ভাবি মনি কে ভাইয়ার রুমে দিয়ে আসবো।
–কিরে তুই কখন এলি।তোর না আমেরিকাতে থাকার কথা।
–যাক বাবা,তা-ও আমাকে কারো চোখে পড়েছে।বউয়ের জন্য যেভাবে পাগল হয়ে,গিয়েছিলে ভাইয়া।ভাবছি আমাদের কথা ভুলেই গেছো।
–দিব এক থাপ্পড় খুব পাকনা হয়ে গেছিস।
–তোমার বোন না।তোমার মতো না হলে চলবে।
শুভ মিহুর কান ধরে বলল।খুব পাকনা হয়ে গেছিস।এবার তোকে বিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দিব।
–হ্যাঁ,তাই দাও।আর কতদিন সিঙ্গেল থাকব।আম্মু ভাইয়ার বিয়েটা তো করিয়ে দিলে।এবার আমার বিয়েটা করিয়ে দাও।
শুভর মা মিহুর গালে হালকা থাপ্পড় মেরে বলল।
–মায়ের সামনে এমন কথা বলিস।তোদের কি কোনো লজ্জা সরম নেই।
–না আম্মু লজ্জা সরম বিক্রি করে ফুচকা খেয়ে ফেলছি।
–অনেক কথা হয়েছে। এবার মুনতাহাকে নিয়ে যা।সবাই ঘুমিয়ে পড়,অনেক রাত হয়েছে।
তারপরে মিহু মুনতাহাকে শুভর রুমে দিয়ে আসলো।বাহ এই অল্প সময়ের মধ্যে বেশ সুন্দর করে রুম’টা সাজিয়ে মেয়ে’টা।
–তোমার এই ভারী ভারী গহনা পড়ে থাকতে সমস্যা হচ্ছে না।
–না না সমস্যা হবে কেনো।আমি কি মানুষ নাকি। আমি তো পাথর।এত অল্প কিছুতে আমার কিছু হবে না।
–দেখো ঝগড়া করার মন নেই। এগুলো আয়ান ভাইয়াদের বাসা থেকে দেওয়া হয়েছে।তাই সবকিছু খুলে ফেলো,আমার বউকে আমি সবকিছু কিনে দিব।এগুলো আয়ান ভাইয়াদের ফিরিয়ে দিব।
–এখন আমি কি পড়ব।
–কেনো আমাকে পড়।
–আপনি কি আমার সাথে মজা নিচ্ছেন।
–মজা নিব কেনো।কিছু পড়া লাগবে না তোমার। আমি তো আর কেউ নেই রুমে।
মুনতাহা রেগে শুভর দিকে তাকালো।
–বাপরে বউয়ের কি রাগ।দাঁড়াও একটা শাড়ি এনে দিচ্ছি। তোমার জন্য কিনে রাখছিলাম। কিন্তু দেওয়া হয় নাই। বলেই শুভ আলমারি থেকে একটা নীল শাড়ি বের করে দিলো।
–ওয়াশরুম কোথায়।
–ওয়াশরুম যাওয়া লাগবে না।আমার…
–শুভর বাচ্চা।আমি কি বলছি কথা কানে যাচ্ছে না।বেয়াদির একটা সীমা থাকে।
–বাপ রে দোষ ও করছে।রাগ’ও আবার ও দেখাচ্ছে। যেখানে আমার রাগ দেখানোর কথা। আচ্ছা আজকে অনেক কান্না করেছ।তাই মাফ করে দিলাম কাল থেকে শাস্তি দিব।
–ভাষণ দেওয়া শেষ হয়েছে। কিছুটা রেগে বলল।
তারপরে শুভ মুনতাহাকে ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলো।মুনতাহা ওয়াশরুমে গিয়ে নীল শাড়িটি পড়ে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসলো।মুনতাহাকে দেখে শুভ হা করে তাকিয়ে আছে।
–গরুর মতো করে তাকিয়ে আছেন।কেনো,বলল মুনতাহা।
–তোমাকে সেই সুন্দর লাগছে বউ।তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি।
মুনতাহা রেগে বলল আমার ঘুম পেয়েছে আমি ঘুমাব।বলেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
–থাক আজ কিছু বলবো না।আজ অনেক ধকল গেছে বউয়ের ওপরে দিয়ে।আমি তাই আমার বউকে কষ্ট দিতে পারি।
শুভ গিয়ে মুনতাহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। মুনতাহা ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শুভ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
রাত বাজে তিন টা,আয়ানের রাগ কিছু’টা গেছে। এতক্ষণে খেয়াল হলো,সে শখকে রেগে থাপ্পড় মারছিল।কথাটা মনে হতেই বেশ কষ্ট লাগছে আয়ানের।দৌড়ে রুমে গিয়ে দেখলো শখ ঘুমিয়ে গেছে।
আয়ান শখের কাছে গেলো। কান্না করছে মেয়ে’টা,চোখের পানি এখনো চোখের পানি শুকায় নাই। ইশ মেয়েটাকে একদম মারা উচিৎ হয় নাই। কেনো যে মারতে গেলাম।সব দোষ কেনো ও অন্য ছেলের কথা বলল।ওকি জানে না,ওর মুখে অন্য ছেলে কথা শুনলে,আমার ভেতর টা পুরে ছাই হয়ে যায়।আয়ান পরম যত্নে শখের চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।গালে হাত বুলিয়ে দেয়।পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে।ইস খুব জোর মা-রা হ’য়ে গেছে। এত জোরে মারা উচিৎ হয় নাই।বলেই শখের গালে চুমু খেলো।
তারপরে আয়ান শখের পাশে শুয়ে,শখকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল।শখ আয়ানকে কোলবালিশ ভেবে আয়ানের পায়ের মধ্যে পা দিয়ে,আয়ানকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো।আয়ান মুচকি হেঁসে আরো শক্ত করে শখে জড়িয়ে ধরলো।তারপরে কখন যে সে ঘুমিয়ে গেছে সে নিজে’ও জানে না।
পরের দিন সকাল বেলা শখের আগে আয়ানের ঘুম ভাংলো।শখ এমন ভাবে আয়ানকে ধরে আছে,যেনো ছেড়ে দিলে-ই পালিয়ে যাবে।শখের ঘুম নষ্ট হবে ভেবে।আয়ানের উঠতে ইচ্ছে করলো না।আয়ানের ইচ্ছে করছে সারাজীবন এভাবে থাকতে।এই মুহূর্ত যেনো শেষ না হয়।
দরজায় কড়া নাড়তে শখ একটু নড়েচড়ে উঠলো।তা দেখে আয়ান চোখ বন্ধ করে ফেলল।
শখ তাকিয়ে দেখলো,সে আয়ানকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে।তার আবার পায়ের মধ্যে পা দিয়ে।
–শখ তোর কপালে দুঃখ আছে। কাল থাপ্পড় খেয়ে হয় নাই। আবার থাপ্পড় খাওয়ার শখ হয়েছে।আচ্ছা উনি কখন আসলেন।আগে উনার থেকে নিজেকে ছাড়াতে হবে।শখ আয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আয়ান’ও কম যায় কিসে।সে শখকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।আয়ানরে শক্তির কাছে।শখ ব্যর্থ।শখ না পেরে আয়ানকে ডাক দিলো।
–স্যার উঠুন না।কে জানি ডাকছে।যেতে দিন।এই স্যার।
আয়ান এবার উঠে বসলো।
–সমস্যা কি তোমার ঘুমোতে দাও না কেনো।বাসায় তো তোমাকে মেরে’ও তোলা যেত না।আর আমাদের বাসায় এসে সাত সকাল বেলা উঠে বসে আছো।
শখ আয়ানের কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলল।এখনো শখ আয়ানের পায়ের মধ্যে পা দিয়ে বসে আছে। আয়ান উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।দেখলো রুহির ছেলে রাফি এসেছে।
–মামু তুমি’ও বউ পেয়ে সবার মতো হয়ে গেলে।আগে একবার ডাক দেওয়ার পরে সাথে সাথে এসে দরজা খুলে দিতে।আর এখম বউ পাওয়ার পরে সেই কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি। দরজা খোলার নামে কোনো নাম-ই নাই।
এইটুকু বাচ্চা হলে হবে কি। যে পাকনা রে বাবা।
রাফির কথা শুনে শখ হেঁসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।তা দেখে আয়ান রেগে শখের দিক তাকাল। শখ মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানো চেষ্টা করছে।
–রাফি বাবা-ই তুমি এত সকালে উঠে পড়েছ,কেনো।তোমার তো এত সকালে উঠার কথা না।
–কোথায় এত সকাল।কয়টা বাজে দেখছো।রাফির কথায় আয়ান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাতটা বেজে পার হ’য়ে গেছে।
–দেখেছো,আমি ঠিক সময়ে উঠছি।তুৃমি বউ পেয়ে সবার মতো হয়ে গেলে মামু।দেখি সরো তোমার বউয়ের সাথে একটু আলাপ করতে দাও।বলেই আয়ান’কে পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে গেলো রাফি।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here