#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_২৮(বোনাস পর্ব)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–এই যে মেয়ে তোমার সাথে আলাপ করতে আসলাম। বড়দের সালাম দিতে হয়।তুমি জানো না,তোমার বাবা মা তোমাকে কিছু শেখায় নাই।
রাফির কথা শুনে ড্যাব ড্যাব করে রাফির দিকে তাকিয়ে আছে শখ।
–এই যে মামি মনি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো।(পায়ের ওপরে পা তুলে বসতে বসতে বলল রাফি।
–তুমি কে,আর এত পাকা পাকা কথা বলছো কেনো।
–ওমা আমার ছেলেকে বিয়ে করে,এই বাসায় এসেছো।আর আমাকে-ই চিনো না।কেমন বউ তুমি নিজের শশুর কে চিনো না।
–আসসালামু আলাইকুম শশুর আব্বু।আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি তো এ বাসায় নতুন। তাই সবাইকে ভালো ভাবে চিনি না।
–অলাইকুমুস আসসালাম।ঠিক আছে মা।সমস্যা নেই। তুমি আমার মেয়ের মতো।ছোট মানুষ একটু আকটু ভুল করতেই পারে।আর আমাদের বড়দের উচিৎ তাদের ভুল গুলো ক্ষমা করা।
রাফির কথা শুনে শখসহ আয়ান অবাকের চরম পযার্য়ের পৌঁছে গেছে। এতটুকু বাচ্চা এসব কথা কই থেকে শিখল।তখনি রুহি এসে রাফির কান টেনে ধরলো।
–খুব পাকা পাকা কথা হয়েছে তোমার তাই না। এসব কথা কোথায় থেকে শিখেছ,তুৃমি।
রুহি রাফিকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসেছিল। তাই রাফির সব কথা শুনতে পেয়েছে সে।
–আম্মু ছাড় তো।ব্যাথা লাগছে।আমি আমার ছেলের বউয়ের সাথে আলাপ করতে এসেছি।আমি দাদুকে দেখছি।বড় আম্মুকে এভাবে বলতে।,তাই আমি’ও শিখে নিয়েছি।
–ওও আচ্ছা এই ব্যাপার বাবাকে কতবার বলেছি।বাচ্চাদের সামনে এমন কিছু করবেন না।যাতে করে ওরা উল্টা পল্টা কিছু শিখে।এটা’ই বয়স এখন আমরা বাচ্চাদের যা শিখাব,ওরা তাই শিখবে।আগে বাসায় ফিরি তারপরে বাবার সাথে কথা বলে নিব।রাফি দেখি চল।আমার সাথে যাবি অনেক হয়েছে ছেলের বউয়ের সাথে আলাপ করা।তুই একা আলাপ করলে তো হবে না।বাহিরে তোর ছেলের বউয়ের সাথে আলাপ করার জন্য অনেকে অপেক্ষা করছে।
–শখ,আয়ান তোরা রেডি হয়ে নিচে আয়।সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।বলেই রুহি চলে গেলো।আয়ান আর কোনো কথা না বলে ওয়াশরুম চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে শখের সাথে কোনো কথা না বলে নিচে চলে গেলো।শখ উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।এখন কি করবে সে।একটু পড়ে আয়ানের আম্মু রুমে প্রবেশ করলো।
–মামনি তুমি এখনো রেডি হও নাই।
–আসলে আমি কি দিয়ে কি করবো বুজতে পারছি না,আন্টি।
–আচ্ছা এই ব্যাপার,আমি আসছি এখন সবকিছু আমি করে দিচ্ছি। আর আন্টি কি হুম।আম্মু বলে ডাকবে,কেমন।
–আচ্ছা আন্টি,না মানে আম্মু।
–শাড়ি পড়তে পারো।
–না
–সমস্যা নেই আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
বলেই উনি শখকে একটা লাল রং এর শাড়ি পড়িয়ে দিলো।সাথে হাত ভর্তি করে লাল চুরি পড়িয়ে দিলো। হালকা মেক-আপ করে দিলো।হালকা সাজে শখকে অসাধারণ সুন্দর লাগছে।তারপরে মিসেস নিলিমা চৌধুরী শখকে নিচে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো।শখের পাশে আয়ান’কে বসিয়ে দেওয়া হলো।
শখ আড়চোখে আয়ানকে দেখে বলল মাশাল্লাহ। আমার জামাই টারে সেই সুন্দর লাগছে।কারো জানি নজর না লাগে।
সবাই চলে আসলো শখকে দেখতে।
–বাহ নীলিমা। তোমার ছেলের বউ ভারি মিষ্টি দেখতে হয়েছে।
–আসলে-ই খুব সুন্দর হয়েছে। তবে একটু বাচ্চা সমস্যা নাই। ঠিক মানিয়ে চলতে পাবরে আমার মনে হয়।
–মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ লক্ষি।তাজা গোলাপ ফুল।এত সুন্দর বউ কই থেকে আনলে গো নীলিমা। আমার ছেলের জন্য এমন একটা বউ চাই।খুঁজে দিতে হবে গো তোমার।
একটু পড়ে শখের বাবা,মা,ভাই চলে আসল।শখ দৌড়ে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।ফিয়াজ বলল।
–কেমন আছিস বোন।সরি রে তোদের বিয়েতে থাকতে পারলাম না।আমি অফিসের কাজে বাহিরে গিয়েছিলাম।
শখ এবার চোখের পানি মুছে বলল।কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল।
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাইয়া।তুমি কেমন আছো।
–আমি’ও ভালো আছি রে বোন।
–বাবা কেমন আছো।আমাকে তো ভুলেই গেছো।একদিনে পর হয়ে গেলাম। কথা বলছো না আমার সাথে।
–আলহামদুলিল্লাহ মা ভালো আছি।তুই আমাকে ভুল বুঝিস না মা।আমার দুই মেয়ে একদিনে আমার ঘর থেকে চলে এসেছে। আমাদের কি অবস্থা হচ্ছে একটা বার ভাব তুই।তোদের ছাড়া কতটা কষ্টে আছি।তুই জানিস।একটা দিন একটা বছরের সমান মনে হচ্ছে। তা মা তোর কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো কোনো।
–মা বাবা আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এই বাড়ির সবাই অনেক ভালো।বাবা তুমি কি কোনো কারনে ভয় পাচ্ছ বা চিন্তা করছো।এত ঘেমে যাচ্ছো কেনো।
–খালি বাবার সাথে কথা বললে হবে।মা’কে কি চোখে পড়ে না।
–চোখে পড়ে জন্য-ই সবার আগে তোমার কাছে আসলাম। কিন্তু বাবার…
কি শখ বাবা মাকে এখানে দাঁড় করিয়ে রাখবে,নাকি ভেতরে নিয়ে আসবে।বলল রুহি।শখ আর কোনো কথা বলল না।রুহি সবাই’কে ভেতরে নিয়ে গেলো।
সন্ধ্যার বেলা খাওয়া দাওয়া করে কিছু আত্নীয়-স্বজন বাসার দিকে রওনা দিলো।বাসা দূরে হওয়ার আগে-ই রওয়া দিলো।যেনো বাসায় আগে পৌঁছাতে পারে।অর্ধেক বাসা খালি হ’য়ে গেছে।
–শখ মা আজ তাহলে আমরা উঠি।পরে সময় করে আবার আসবো।
শখের বাবা প্রচুুপ পরিমানে ভয় পাচ্ছে,তা শখ ভালোই খেয়াল করছে।কিন্তু এত মানুষের মধ্যে বাবার সাথে কথা’ও বলতে পারছে না।
–একি স্যার এখনি চলে যাবেন।আজ রাত থেকে তারপরে যাবেন।
–না মা থাকতে পারব না।আমরা এসেছিলাম শখকে নিতে।তোমরা তো যেতে দিবে না।তাহলে আর রাত করে লাভ নেই।
–স্যার আপনি কি কষ্ট পেয়েছেন। রাগ করবেন না স্যার।কয়টা দিন পড়ে আমি নিজে আয়ান আর শখকে আপনাদের বাসায় পাঠিয়ে দিব।
–আচ্ছা মা তাহলে আছি।শখ দেখেশুনে থাকবি।আর কোনো রকম বেয়াদবি করবি না।বড়দের সাথে। সবার সব কথা শুনে চলবি কেমন।ব’লে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।
এদিকে ফিয়াজ তুই তোর মাকে নিয়ে বাসায় যা,আমার একটু কাজ আছে।কাজ’টা করে আমি আসছি।
–এতরাতে কোথায় যাবে।
–বললাম এত কাজ আছে।
–এই রাতে তোমার আবার কিসের কাজ।
–আম্মু বাদ দাও না।বাবাকে যেতে দাও তুমি আর আমি বাসায় চলে যাই।বলে-ই বাসার দিকে রওনা দিলো।
এদিকে….
–এনি কে মা।বলল শুভ।
–উনি তোর আসল বাবা।
–মানে..এনি আমার বাবা হতে যাবে কেনো,আমার বাবা তো…
–উনি তোর আসল বাবা রে শুভ।আমি না।ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বলল আহনাফ সাহেব।
আহনাফ সাহেব কে দেখে মুনতাহা বলল বাবা তুৃমি।তা দেখে শুভ বলল উনি তোমার বাবা হতে যাবে,কেনো উনি আমার বাবা।
–আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। উনি আমার বাবা।
–শুভ মুনতাহা ঠিক কথা বলছে।মুনতাহা ঠিক কথা বলছে।মুনতাহা আমার মেয়ে। কিন্তু তুই আমার ছেলে না।তোর আসল বাবা ঐ যে দেখছিস,দাঁড়িয়ে আছে উনি রায়হান তালুকদার। উনি তোর বাবা।
–মানে আমি কিছু-ই বুজতে পারছি না।আমি তো এতদিন তোমাকে-ই নিজের বাবা বলে মেনে এসেছি।উনি যদি আমার বাবা হয় তাহলে উনি এতদিন কোথায় ছিলেন।
–ওনাকে আটকে রাখা হয়েছিল। আমি আটকে রেখেছিলাম। তোকে দিয়ে খারাপ কাজ করানোর জন্য। কিন্তু আমি সফল হতে পারি নাই। তোর মা তোর বাবাকে বাঁচানোর জন্য আমি যাহ বলছি।আমার সব কথা শুনছে।
–কিন্তু তুমি এমন করলে কেনো বাবা।
–আমি এসব বলতে পারবো না।তোর বাবা খুব ভালো মানুষ রে তোকে একটু কাছে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে।কতগুলো বছর তোর থেকে দূর সরিয়ে রাখছিলাম।
মুনতাহার সবকিছু মাথার ওপরে দিয়ে যাচ্ছে। কি হচ্ছে কিছুই বুজতে পারছে না।
–বাবা,শুভ দুইজন আগে থেকেই দু’জনকে চিনতে।কেমন কি।
–হ্যাঁ রে মা।সে অনেক কথা আমি তোকে সময় করে বলবো।সেজন্য কাল আমি তোদের বিয়ের সময় ছিলাম না।শুভকে এটা জানানোর দরকার ছিলো।ও যাকে নিজের বাবা মনে করে,সে তার বাবা-ই না।আর না তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক আছে। আমি শুধু এতটুকু-ই বলতে আসছিলাম।
–ভাগ্যর কি পরিহাস দেখে বাবা তুমি আমার বাবা নও।আর না তোমার সাথে আমার কোনো রক্তের সম্পর্ক আছে। সেই ঘুরে ফিরে তুমি আমার বাবাই হয়ে গেলে।কিন্তু তুমি আমার বাবাকে আমার থেকে এতগুলো বছর দূরে সরিয়ে রাখছো।আমাকে মিথ্যা বলেছ।এর জন্য আমি তোমাকে কি শাস্তি দিব।
–আচ্ছা আমি তোকে মিথ্যা কথা বলছি,ঠিকি কোনো দিন তোকে আর তোর মাকে কষ্ট দিয়েছি।বাজে ব্যবহার করেছি।কোনো দিকে অভাব রাখছি।বল তো।
–শুভ ভেবে দেখলো সত্যি তো।তা রাখো নাই। কিন্তু এতগুলো বছর আমাকে আমার বাবার থেকে দূরে সরিয়ে রাখছো।এর শাস্তি তোমাকে কি দিব।
–আমাকে যা শাস্তি দিতে মন চাই দে।পারলে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দে।আমি আর পারছি না।মুক্তি চাই আমার।
–নাহ তোমাকে শাস্তি দিব না।তোমার পাপের ফল যদি মুনতাহাকে দেই।তাহলে তুমি কষ্ট পাবে।
–শুভ আমি তোর নিজের বাবা না হতে পারি।তোকে এতগুলো বছর পেলে মানুষ করছি।এতটা খারাপ কাজ তুই করতে পারবি না।আমি জানি তুই আমার মেয়েটাকে কতটা ভালোবাসিস।আমার মেয়ের কিছু হয়ে গেলে,তুই বেঁচে থাকতে পারবি তো।
–তুমি খুব চালাক বাবা,এই জন্য-ই এত গুলো বছর এত সুন্দর করে অন্যায় করতে পেরেছ।
আহনাফ সাহেব মাথা নিচু করে আছেন।
চলবে….