রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 40

0
1722

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৪০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
তাল সামলাতে না পেরে,মিহু নিচে পড়ে গেলো।
–তুই নিজে’ও জানিস না মিহু।তুই কোথায় হাত দিয়েছিস।তোর ঐ হাত যদি আমার কলিজায় আঘাত করে।তোর ঐ হাত আমি ভেঙে গুরিয়ে দিব।শখ শুধু আমার বউ না।শখ আমার কলিজা।সেই কলিজায় আঘাত করলে তাকে খুন করতে’ও আমি দুবার ভাববো না।প্রচন্ড রেগে বললো।আয়ানের এমন রুপ দেখে সবাই ভয়ে কেঁপে উঠলো।
–আয়ান তুই এই দুই দিনের জন্য, নিজের বোন’কে মারছিস।
–দুই দিনের মেয়ে কাকে বলছো ফুপি।তোমার মেয়ের আগে ভেবে নাওয়া,উচিত ছিলো ও কার কলিজায় আঘাত করছে।
–আয়ান তুমি আমাকে এই মেয়ের জন্য মারলে।আমি আজ সবকিছু শেষ করে দিব।তুমি আমাকে এভাবে ঠকালে আয়ান।তোমার জন্য কি করি নাই আমি।একদম তোমার মনের মতো হয়ে তোমার সামনে আসছি।তুমি তো আমাকে কথা দিয়েছিলে,তুৃমি আমাকে বিয়ে করবে।বলল মিহু।
–হ্যাঁ,তুই তো মিহুকে কথা দিয়েছিলি তুই মিহুকে বিয়ে করবি।নিজের কথা রাখলি না।
–মিহু তুই ছোন নস।যে তোকে দুধ,ভাত বলে বোঝাতে হবে।তুই ছোট ছিলি তোর পাগলামি বেশি হয়ে যাচ্ছিল।তাই তোকে শান্ত করার জন্য বলছি।কথা দিলাম কবে।আর ফুপি মেয়ের সাথে তোমার মাথাটা’ও খারাপ হয়ে গেছে।তুমি’ও কি মেয়ের মতো পাগল হয়ে গেলো।শুভ তোর মা আর বোনকে ভালো করে বোঝা।
–শুভ তুই সব জানতি।তুই সব জেনে শুনে বোনের এতবড় ক্ষতি করলি।তুই তো জানতি তোর বোন আয়ানকে কতটা ভালোবাসে।আয়ানের জন্য কতটা পাগল।
–মা আয়ান ভাইয়া শখকে ভালোবাসে।মিহু আয়ান ভাইয়ার কাছে সুখী হতো না।ভালোবাসা না থাকলে সংসার করা আর না করা এক-ই কথা।
–চুপ কর বেয়াদব ছেলে।ভাই হয়ে বোনের এতবড় ক্ষতি করলি।আমি তোর মুখ’ও দেখতে চাই না আর।তোর জন্য আমাদের বাসার দরজা বন্ধ।
–আরে ভাইয়া তুই তো তোর ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেলি।আমি নিজে গিয়ে তোর আর ভাবি মনিকে নিয়ে আসলাম।আর তুই আমার ভালোবাসার মানুষ টাকে’ই আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলি।কেমন ভাই রে তুই।তোর মতো ভাই শত্রুর’ও যেনো না হয়।
–মিহু শোন…তার আগে মিহু কাঁচের ডাইনিং টেবিল’টা ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলল।
–ফুপি তুমি তোমার এই পাগল মেয়ে’কে নিয়ে চলে যা-ও।আর একটা ভালো ডক্টর দেখিয়ে নিও।টাকা লাগলে বলবে।আমি দিয়ে দিব।বলে’ই শখে নিয়ে গটগট করে ওপরে চলে গেলো।
–আজ সবকিছু কিছু শেষ করে দিব।বলে’ই বাসার জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারছে।
মিসেস নিলিমা চৌধুরী বেশ বিরক্ত মিহুর কান্ডে।আবরাহাম চৌধুরী শান্ত হয়ে বসে আছেন।শুভ আর মুনতাহা এক কোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।আওয়াজ পেয়ে রুহি রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।এসব দেখে রুহির রাগ সপ্তম আকাশে উঠে গেলো।খুব যত্ন করে এসব তৈরি করেছিলো।আর এই মেয়ে নাকি সবকিছু নষ্ট করে দিলো।রুহি রেগে গিয়ে মিহুর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
–এই মেয়ে তুই যদি আমার সাজানো জিনিসে,আর একবার হাত দিয়েছিস।আমি তোর হাত ভেঙে দিব।আর বাবা মা তোমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছো।বিয়ে হয়ে গেছে,জন্য এতটা পর হয়ে গেছি।আমার শখের ডাইনিং টেবিল।আর এই ফুলদানি গুলো আমি কতো ভালোবেসে কিনে ছিলাম।আমার প্লাস প্লেট।এই গুলো আমি কলেজে পিকনিকে গিয়ে কিনে নিয়ে আসছিলাম।কতদূর থেকে কতটা কষ্টটা করে নিয়ে আসছিলাম।এখন বুজলাম,বিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে এতটা মূল্যহিন হয়ে গেছি তোমাদের কাছে।
–রুহি তুৃমি…
–একদম অজুহাত দিবে না বাবা।তোমার এই বোনের বেয়াদব মেয়ের হয়ে একদম কথা বলতে আসবে না।আমি জানি তোমাদের কাছে আমার কোনো মূল্য নেই।এখনি আকাশকে কল করবো।আমার এসে নিয়ে যায়।মরে গেলেও তোমাদের বাসায় আসবো না।
–সোনা মেয়ে আমার বাজে কথা বলবি না সোনা।আমি তোর মা হই না।এসব কথা শুনলে সয্য করতে পারি না।তোর সব জিনিস ঠিক আছে মা।ও গুলো নষ্ট করতে দিব না।ভেবে আমি সেইম সবকিছুর কপি আনিয়ে সাজিয়ে রাখাছি।কোথাও যাস না মা।তুই চাইলে আমি তোকে দেখাতে পারবো।
মায়ের কথায় শান্ত হলো রুহি।
–এই মেয়ে তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যাহ বেড়িয়ে যা।বলেই মিহুকে দরজার বাহিরে বের করে দিয়ে।দরজা লাগিয়ে দিলো।
–দেখলেন ভাইজান।রুহি কেমন করলো।
–ভাইজান কি বলবে ফুপি।তুমি আসলে শুভকে নিয়ে আসবে।না হলে একা আসবে।তোমার ঐ পাগল মেয়েকে নিয়ে আসবে না।আরে শুভ ভাই আমার আয়,আমার সাথে আয়া কতদিন তোকে দেখি না।অনেক গল্প করবো।মুনতাহা এসো।বলেই আয়ানের রুমের দিকে গেলো রুহি।
আবরাহাম চৌধুরী ছেলেমেয়ে’কে বেশ ভয় করেন।তাদের মুখের ওপরে কোনো কথা বলতে পারে না।রুহি যেতে’ই মিহুকে ভেতর নিয়ে আসলেন।
আবরাহাম চৌধুরী মিহুর কানে কানে কিছু বললো,এতে মিহু শান্ত হয়ে সুন্দর একটা হাসি দিলো।
রুমে এসে শখ আয়ানের সাথে কোনো কথা বলছে না।বোঝাই যাচ্ছে খুব রাগ করেছে।
–এই বউ কথা বলছো না কেনো।আয়ানের থেকে ছাড়িয়ে,দূরে সরে গেলো।
–দেখছো বউ চুলের কি অবস্থা তোমার আসো তোমার মাথায় তেল দিয়ে দেই।তাহলে যদি মাথা একটু ঠান্ডা হয়।শখ রাগি চোখ নিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো।যদি-ও শখের প্রচন্ড মাথা যন্তনা করছে তেল দিলে মন্দ হয় না।কিন্তু আয়ানকে বলবে কি করে।সে,তো রেগে আছে।অন্য মেয়েকে বিয়ে করা ওনার বের করছি।শখ কিছু বলছে না দেখে।আয়ান তেলে,চিরুনি নিয়ে বিছানায় বসে শখকে নিজের কোলের মধ্যে বসালো।শখ উঠে যেতে চাইলে শক্ত করে ধরে বসালো।আয়ান সুন্দর করে তেল দিয়ে শখে মাথায় মেসাজ করে দিচ্ছে।এতে শখের খুব ভালো লাগছে।মাথা যন্তনা’টা ছেড়ে যাচ্ছে।
রুহি কান্না করতে করতে এসে আয়ানের বিছানায় এসে বসলো।
–বাবা কি ভালোবাসা বউকে তেল দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।আর এদিকে ঐ বেয়াদব মেয়ে’টা আমার সবকিছু ভেঙে ফেলছিলো তখন কোথা-ই ছিলি আয়ান।
–ওখানেই ছিলাম,একটু আগে-ই আসলাম।
–তারমানে সবকিছু দেখে’ও চুপ করে আছিস।
–ওকে এখনো বাঁচিয়ে রাখছি,এটাই ওর ভাগ্য ভালো আমার সামনে যেনো আর না পড়ে মিহু।
–কি হয়েছে ভাই।এত রেগে আছিস কেনো।
–মিহু শখের গলা চেপে ধরছিলো।ভেতরে আসতে আসতে বলল শুভ।
রুহি বড় বড় করে শুভর দিকে তাকালো।
–বলিস কিরে।
–সত্যি,আপু।আম্মু’ও আমার ওপরে রেগে গেছে।আমার নাকি জায়গা হবে না আম্মুর বাসায়।
–সমস্যা নেই ভাই।তোকে আর তোর বউকে আমি আমার বাসায় নিয়ে গিয়ে রাখবো।
–আপু আমি শুভ এত বড় পৃথিবীতে আমার আর আমার বউদের থাকার জায়গার অভাব পড়েছে নাকি।
গল্পের মাঝে আয়ানের তেল দেওয়া শেষ করে শখের চুল গুলো বেনুনি,বেধে দিলো।শখ আয়ানের থেকে সরে পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
–শখ তুমি শুয়ে পড়লে কেনো।আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিব।
–আপু আমার ঘুম পেয়েছে।আমি ঘুমাবো।তোমরা সবাই আড্ডা দাও।
–শখ,মানে ভাবি বলছি কি।আপনি রাগ করেন না ভাবি।আমি আমার বোনের হয়ে আপনার কাছে মাফ চাচ্ছি।
শখ উঠে বসে শুভকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।তার মনে হচ্ছে সে শুভর থেকে কোন দিক দিয়ে বড়।তাকে শুভ ভাবি সন্মধোন করছে।
–এত ভাবার কিছু নেই ভাবি।আপনি বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট হলে-ও সম্পর্কে আমার বড় ভাইয়ের বউ।তাই আপনাকে সন্মান করা আমার দায়িত্ব।
শখ বিরক্ত হয়ে আবার শুয়ে পড়লো।শখকে জালানোর জন্য সবাই বুদ্ধি আটলো।আজ এখানে সারারাত কাটিয়ে আয়ানের রুমে।শুভ,মুনতাহা,আয়ান,রুহি মিলে লুডু নিয়ে বসলো।
মিসেস নিলিমা চৌধুরী কাজের লোকদের দিয়ে পুরো বাসা পরিষ্কার করিয়ে নিয়ে।নতুন ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিলো।রান্না শেষ করে সবাই’কে অনেক ক্ষন আগে ডেকে এসেছে।কারো আসার নামে,কোনো নাম নেই।রাত বারোটা বেজে গেছে।শখ ঘুমিয়ে গেছে।আয়ান’রা এখনো আড্ডা দিচ্ছে।আয়ানের মা রেগে সবাইকে ডাকলে সবাই চলে আসলো।শখ ঘুম ঘুম চোখে কোনোরকমে ডাইনিং টেবিলে খেতে বলসো।
আসল লেখিকা ফাবিহা বুশরা নিমু।
মিহুকে দেখে-ই আয়ান রেগে গেলো।রেগে উঠে চলে যেতে লাগলে আয়ানের বাবা বলে উঠলো।
–দেখো আয়ান,তুমি রাগ করো না বাবা।আমি মিহুকে বুঝিয়ে বলেছি।আর এমন পাগলামি করবে না।তুমি খাবার ছেড়ে উঠে যেও না।তোমার জন্য সবাই না খেয়ে বসে আছি।
আয়ান বাবা কথা মানতে নারাজ।সে,এই মেয়ের সাথে কিছুতে’ই খেতে বসবে না।আয়ান চলে যেতে লাগলে।শখ আয়ানের হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে নিয়ে বলল।
–কি বাচ্চাদের মতো শুরু করে দিয়েছেন।চুপচাপ খেয়ে রুমে চলুন আমার প্রচুর ঘুম পেয়েছে।নাটক দেখার সময় আমার নেই।শখের কথায় আয়ান চুপচাপ বসলে’ও মিহু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।তার মামু ইশারা করতে’ই চুপ হয়ে গেলো।খাওয়া দাওয়া শেষ করে।যে,যার মতো রুমে চলে গেলো।শখ উঠে যাবে ঠিক এমন সময় মিহু শখের কানে কানে বলল।
–আয়ান ভাইয়া কিন্তু আমাকে-ই ভালোবাসে।তোমাকে না।
–তাই নাকি।প্রমাণ দেখান।
–আয়ান ভাইয়া যদি তোমাকে ভালোই বাসতো।তাহলে তোমাদের বিয়ের একমাসের বেশি হয়ে গেছে।আয়ান ভাইয়া তোমাকে কাছে টেনে নেয় না কেনো।আপন করে কেনো নেয়নি এখনো।
–আপনি কি করে জানলেন।
–হাহাহা।কারন আয়ান ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে।তাই জন্য তোমাকে আপন করতে পারছে না।বাধ্য হয়ে তোমাকে বিয়ে করছে।
–এসব কথা আপনি অন্য কোথাও গিয়ে বলেন।আমার কাছে বলে লাভ নেই।এসব ফালতু কথা বলে।আমাকে দুর্বল করতে পারবেন না।আমি ছোট বাচ্চা না।যা বোঝাবেন।আমি তাই বুজবো।
বলেই গটগট করে চলে গেলো শখ।এদিকে মিহু রাগে ফুঁসছে।এতগুলো কথা বলে’ও কাজ হলো না।ডোজ আরো বাড়াতে হবে।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here