রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 05

0
1963

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_০৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
সবাই আয়ানের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই খুব ভয় পাচ্ছে।শখ প্রথমে সাহস দেখালে এখন মনে মনে সেও খুব ভয় পাচ্ছে।
শখ কিছুটা সাহস নিয়ে বললো।
–আসতে পারি স্যার।
–আসো তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
–স্যার আমাদের কেনো ডেকে ছিলেন।
আয়ান তার ল্যাপটপ সামনের দিকে ঘুরিয়ে দিলো।ভিডিও দেখে সবার হাত পা রীতিমতো কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। আয়ান রাগি দৃষ্টি নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।সবাই একসাথে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়ান:তোমাদের সবার বাবা মায়ের নাম্বার দাও।
আমান ও মেধা:সরি স্যার আমাদের ভুল হয়ে গেছে এবারের মতো মাফ করে দেন।আপনাকে কথা দিচ্ছি এমন ভুল কোনোদিন করবো।প্লিজ বাসায় জানাবেন না।তাহলে আমাদেরকে মেরেই ফেলবে।
–আমি তোমাদের থেকে নাম্বার চেয়েছি।কোনো অজুহাত শুনতে চাই নাই। তাড়াতাড়ি তোমাদের বাবা মায়ের নাম্বার দাও।আমি এক কথা বার বার বলতে পছন্দ করি না।অনেকটা রেগে বললো।
শখ বাদে এবার সবাই কান্না করতে করতে আয়ানের পা ধরে বললো স্যার ভুল হয়ে গেছে এবারের মতো মাফ করে দেন আর কোনোদিন এমন ভুল করবো না।যদি করি তাহলে আমাদের কলেজে থেকে বের করে দিয়েন।দয়া করুন স্যার।
আয়ান কিছু ভেবে বললো বেশ আমি তোমাদের মাফ করবো আর যে ভুল করে পরে সে যদি তার ভুল বুঝতে পারে তাহলে তাদের একটা সুযোগ অবশ্য’ই দেওয়া উচিৎ।
সবাই মিলে বললো সত্যি স্যার আমাদের মাফ করে দিয়েছেন।
–আরে এত খুশি হবার কিছু নেই ভুল যখন করেছো শাস্তি তোমাদের পেতেই হবে।এখন যদি তোমাদের শাস্তি না দিয়ে মাফ করে দেয় তাহলে নেক্সট টাইম আবার এমন ভুল করবে।
আমান:প্লিজ স্যার বাসায় বলবেন না।এটা বাদে আপনি যা শাস্তি দিবেন আমরা মাথা পেতে নিব।
–তুমি আমার স্যার নাকি আমি তোমাদের স্যার আমি তোমাদের কি শাস্তি দেব।তা এখন তোমাদের থেকে জেনে দিতে হবে।
–সরি স্যার।মাথা নিচু করে বললো।
আয়ান একটা বেত নিয়ে আসলো আর সবাই উদ্দেশ্য বললো সবাই হাত পাতো।
আয়ানের কথায় সাথে সাথে সবাই হাত পাতলো।আয়ান অনেক জোরে জোরে সবার হাতে বেত দিয়ে মারলো।মারা শেষে বেত হাতের সাথে চেপে ধরে রাখছিলো।সবার হাত লাল হয়ে গেছে বেত হাতে চেপে ধরে রাখার জন্য হাত খুব জ্বলছিলো।
–আশা করি এরপরে কোনো স্যারের সাথে বেয়াদবি করার আগে মনে থাকবে তোমাদের।
–স্যার আমরা এমন কাজ আর কখনো করবো না।
–কান ধরো সবাই।দশ বার কান ধরে উঠ বস করবে আর কথা গুলো বলবে।
–এ্যাঁ।
–এ্যাঁ না হ্যাঁ নাও শুরু করো।আর যদি ইচ্ছে না থাকে তাহলে আমি অন্য রাস্তা দেখতে পারি।
–না,না স্যার আমরা বসছি।
সবাই কান ধরে উঠ বস করছে আর কথা গুলো বলছে স্যার মাফ করে দিন।এমন ভুল আর আমারা কোনোদিন করবো না।
হঠাৎ করে আয়ানের চোখ গেলো শখের দিকে।রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে।রাগে গজগজ করতে করতে বললো।
–এই মেয়ে তোমাকে কি আলাদা করে ইনভাইটেশন করতে হবে।
–স্যার আসলে আমার পায়ে খুব ব্যথা তাই জন্য উঠ বস করতে পারছি না।
আয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকালো শখের দিকে।এতক্ষণ তো ঠিকি ছিলো উঠ বস করার কথা বলতেই পায়ে ব্যথা শুরু হলো।
–স্যার আমাদের হয়ে গেছে। এবার কি আমরা যেতে পারি।
–ওর নাম কি(শখ কে দেখিয়ে দিয়ে বললো)।আর এটা বলো তোমরা আমার সাথে এই কাজ করলে এই বুদ্ধিটা কার।
এবার সবাই চুপ হয়ে গেলো।আয়ান রেগে আবার বললো।
–তোমাদের আমাকে কি মনে হয়।আমি তোমাদের ফ্রেন্ড মজা করছি তোমাদের সাথে। আমি বলছি না এক কথা বার বার বলতে পছন্দ করি না আমি।
কিছুটা ধমক দিয়ে’ই বললো সবাই ভয়ে কেঁপে উঠলো।মেধা ভয়ে কান্না করে বলে দিলো।যে তারা শখের কথায় এই কাজ করেছে। শখ তো ভয়ে শেষ এখন কি হবে কে বাঁচাবে ওকে।আল্লাহ বাঁচাও।
–বেশ ঠিক আছে।শখ বাদে তোমরা সবাই চলে যাও।
–সবাই খুশিতে গদগদ হয়ে চলে গেলো কিন্তু শখের জন্য খারাপ লাগছে।মেধা কি করে পারলো শখের নাম বলে দিতে।
–তুই এটা কি করলি শখের নামটা কেনো বলে দিলি।শখ আমাদের জন্য কি করে নারে।তুই এটা কোনো ফ্রেন্ড এর পরিচয় দিলি।বলল আমান।
–আমি মানছি মেধা তুই খুব সহজ সরল ভয় পাস খুব স্যারকে।তাই বলে তুই ফ্রেন্ডকে এভাবে বিপদের দিকে ঠেলে দিবি।বলল আয়েশা।
–আমি বলতে চাই নাই রে ভয়ে বলে দিছি।সত্যি আমি ফ্রেন্ড হবার যোগ্যতা রাখি না।কান্না করতে করতে বললো মেধা।
সিয়াম:এখন যা হবার তা হয়ে গেছে। এখন স্যার না জানি শখকে কতোটা শাস্তি দিবে।আল্লাহ মালুম।
কাব্য:শখ আসলেই ভালো জানতে পারবো।চল সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করি।বলেই সবাই বাহিের শখের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
আয়ান রাগি দৃষ্টিতে শখের দিকে তাকিয়ে আছে।শখ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।মুখ ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
আয়ান শখের দিকে এগোতে এগোতে বললো।আমাকে তোমার কি মনে হয়। আমি কি তোমায় ফ্রেন্ড।তাই আমার সাথে যখন যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে মজা করবে।অনেকটা শান্ত হয়ে বললো আয়ান।
শখ আয়ানের এমন শান্ত হতে দেখে আরো বেশি ভয়ে পেয়ে গেলো।ঝড়ের পূর্বে সবকিছু শান্ত হয়ে যায়।তাহলে আয়ানের এই শান্ত হওয়াটা কি ঝড়ের আগে হওয়া পূর্বাভাস।
–সরি স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর এমন ভুল কোনোদিন করবো না। মাথায় আনা তো দূর।মুখে’ও আনবো না আমাকে মাফ করে দিন। কাঁপাকাঁপা গলায় বললো শখ।
আয়ান এবার রেগে শখের দুই হাত দেওয়ালে চেপে ধরলো। আয়ান সামনে এগোচ্ছিলো।তা দেখে শখ ভয়ে পেছতে পেছতে কখন যে ওর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।ভয়ে সেদিকে খেয়ালই নেই শখের।
–আমি তোমার ফ্রেন্ড হয়। নাকি।তোমার কাছের কোনো রিলেটিভ হয়।যে তুমি আমার সাথে এমন ফালতু মজা করবে।শখ আমি তোমার স্যার হয়। স্যারদের কিভাবে সন্মান করতে হয়। তুমি জানো না।তোমাকে কেউ শেখায় নাই। এত বছর পড়াশোনা করে কি শিখছো।
আয়ান শখের এতটা কাছে চলে আসায় শখ ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।আয়ানের গরম নিশ্বাস শখ অনুভব করতে পারছে।অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে শখের। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না।এদিকে আয়ান শখের হাত এতজোরে শখ সয্য করতে না পেরে।শখ ফু্ঁপিয়ে কান্না করে দিলো।এবার আয়ানের হুস আসলো রাগের মাথায়।কি করে বসলো।এবার আরো রাগ লাগছে শখের কান্না দেখে।এবার চিৎকার করে বলে উঠলো।
–আমার চোখের সামনে থেকে সরে যাও।একে তো অপরাধ করছো।তার ওপরে আমার কথা অমান্য করেছো।এখন আবার কান্না করছো।আমার মুখেরসামনে থেকে সরে যাও শখ।আপাতত আমি তোমার মুখটা দেখতে চাচ্ছি না।আমার রাগ উঠে গেলে আমি তোমাকে কি করবো নিজেও জানি না।বলেই টেবিলে নিজের হাতে আঘাত করলো।
শখ আর এক মুহূর্ত দেরি না করে কান্না করতে করতে বেড়িয়ে আসলো। ওরা সবাই শখের জন্য অপেক্ষা করছিলো।কিন্তু শখকে কান্না করতে দেখে সবাই অবাক। কোনো কথা না বলে শখ দৌড়ে চলে আসলো।
বাসায় এসে কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজ নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে ফ্লোরে বসে কান্না করছে শখ।এক সময় কান্না করতে করতে ফ্লোরে’ই ঘুমিয়ে পড়লো শখ।
বিকেল ৪:০০ টায় বাবার ডাকে ঘুম ভাঙলো শখের।
–শখ মামনি আর কতো ঘুমোবি না।সারাদিন না খেয়ে আছিস।এখন উঠ মা সন্ধ্যা ছয়টা থেকে তোদের নতুন টিচার আসবে।পড়াতে।উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে।
শখ বাবার কথা মতো উঠে সাওয়ার নিয়ে নিচে এসে খেতে বসলো।
–কিরে মা,তোর কি শরীল খারাপ নাকি।সেই দুপুরে এসে না খেয়ে ঘুমিয়েছিস।বলল শখের আম্মু
–না আম্মু সকাল সকাল উঠছিলাম না ঘুম হয় নাই।তাই এখন ঘুমিয়ে শোধ নিলাম আর কি।
শখের কথা শুনে শখের আম্মু হেঁসে দিলো।
–পাগলি মেয়ে একটা। পুরাই ঘুম পাগলি হয়েছিস।ঠিক তোর মায়ের…
–মায়ের মানে আম্মু।
রাহেলা বেগম আমতা আমতা করে বললো না মানে আমার মতো আগে আমি ঠিক মতো মতো ছিলাম।খুব ঘুমাইতাম।কেউ আমাকে মেরে’ও তুলতে পারতো না।
–সত্যি রে মা।এখন যা রেডি হয়ে নে।তোদের নতুন টিচার আসবে।অনেক খুঁজে একটা ভালো টিচার পেয়েছি।আগের টিচার টা বদলি হয়ে যাওয়াতে।অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে তোদের।আর পড়াশোনায় ফাঁকি দিলে চলবে না।রেডি হয়ে। বই নিয়ে বোনের রুমে আয়।
–কিন্তু আম্মু আপু যদি রাগ করে।আপু তো আমাকে দেখতে পারে না।আমি আপুর রুমে গেলে আবার সমস্যা তৈরি করবে।
–নারে মা কিছু বলবে না।তোর বাবা আগেই কথা বলে রাখছে।
–সত্যি আম্মু।তাহলে খুব ভালো হবে আমি আর আপু একসাথে পড়াশোনা করবো।
–হ্যাঁ এখন যা বই নিয়ে বোনের রুমে যা।
স্যার আসছে না দেখে মুনতাহার রুমে বই রেখে শখ চিপস খাচ্ছিলো আর টিভিতে কার্টুন দেখছিলো।একা একা ভালো লাগছিলো না মুনতাহা’ও ওর সাথে ভালো করে কথা বলে না।
হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠলো শখ ভাবলো হয়তো স্যার এসেছে। দৌড়ে দরজা খুলে দিয়ে সামনে তাকাতেই একশ ভল্টেজের শক খেলো।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।দুচোখ ডলা দিয়ে নিলো।না সে তো ভুল দেখছে না।এটা তো সত্যি আয়ান স্যার।উনি এখানে কেনো ভেবেই অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলো শখ।কিন্তু আয়ান অবাক হলো না শখের বাবার থেকে জেনে বুঝতে পারছিলো আয়ান কিন্তু আয়ানের জানামতে শখের বাবার তো একটাই মেয়ে ছিলো শখ আসলো কোথায় থেকে।হয়তো পরে হয়েছে সে-সব ভেবে কাজ নেই।যে কাজ করতে আসছি সে কাজ করে চলে যাব।
–আমাকে কি ভেতরে আসতে দিবে নাকি বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখবে।
–না মানে স্যার আপনি এখানে।
–তোমাদের পড়াতে এসেছি।
–আমি যতোদূর জানি আপনি কাউকে বাসায় গিয়ে পড়ান না।
–আমি ডেকেছি আর ও আসবে না।পেছনে থেকে বললো শখের বাবা।
আয়ান শখের বাবাকে দেখে সালাম দিলো।
–আসসালামু আলাইকুম স্যার কেমন আছেন।
–আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি।তুমি কেমন আছো।তোমার আসতে কোনো সমস্যা হয় নাই তো বাবা।তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই গরীবের ঘরে পড়াতে আসার জন্য।
–আলহামদুলিল্লাহ স্যার আমি’ও ভালো আছি। আপনি কি যে বলেন না।আপনি আমার স্যার আমার গুরুজন। আপনাকে আমি অনেক সন্মাম করি।আপনি ছিলেন আমার প্রিয় শিক্ষক। আর আপনি ডাকবেন আমি আসবো না। এটা কোনোদিন হয়।আপনি বললে আমি নিজের জীবন’ও দিয়ে দিতে রাজি স্যার।
–সোনার টুকরো ছেলে আমার।জানিস তো শখ মা। আয়ান আমার স্টুডেন্ট ছিলো।ক্লাসে ফাস্ট বয় ছিলো।
ও সব সময় ক্লাস টপার ছিলো।আর অনেক ভালো ছিলো আমি আমি যা বলতাম আমার সব কথা শুনত।ওর ব্যবহার ছিলো অনেক সুন্দর যা আমাকে খুবই মুগ্ধ করে ছিলো। সেজন্য আমি ওকে খুব ভালোবাসতাম।আমার প্রিয় ছাত্র ছিলো।
–ও আচ্ছা তার মানে আয়ান স্যার বাবার ছাএ ছিলো।বাবা তোমার ছাত্র তোমার মতোই হয়েছে বদমেজাজি। বিরবির করে বললো শখ।
–না বাবা কিছু বলি নাই।
–আয়ান আসো বাবা ভেতরে আসো।
সবাই মিলে ভেতরে আসলো।কিছু গল্প করে আয়ান মুনতাহার রুমে গেলো স্যারকে দেখে মুনতাহা সালাম দিলো।আয়ান মুনতাহা আর শখকে পড়ানো শুরু করলো।শখ পড়া বাদ দিয়ে খালি বার বার আড়চোখে আয়ানে দিকে তাকাচ্ছে। একটু পরে শখের আম্মু এসে শখকে ডেকে নিয়ে গেলো।পড়াশোনার ক্ষতি হবে জন্য আয়ান মানা করলে।উনি শুনেন নাই।শখকে নিয়ে চলে গেলো।
–ছেলেটা কতদিন পরে আসলো কিছু নাস্তা পানি না করালে হয়।এসব কথা বলে শখের আম্মু নাস্তা তৈরি করে শখের হাতে দিয়ে বললো যা দিয়ে যা।
শখ বাধ্য মেয়ের মতো নাস্তা নিয়ে মুনতাহার রুমে গেলো।শখ যখনি নাস্তার ট্রে-টি টেবিলে রাখছিলো তখনি আয়ানের চোখ যায় শখে হাতের দিকে।ফর্সা হাতে ওর পাঁচ আঙুল এর দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। লাল হয়ে আছে দুই হাত।আয়ান কি দেখছে তা কৌতুহল বসত দেখার জন্য আয়ানের চোখ লক্ষ্য করে শখ দেখলো আয়ান ওর হাতের দিকেই তাকিয়ে আছে।তা দেখে শখ তাড়াতাড়ি করে নিজের হাত ওড়নার ভেতরে লুকালো।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here