অদ্ভুত বর – পর্ব 04

0
438

#অদ্ভুদ_বর
#দিয়া_মনি [ DîYã MôÑî ]
#পর্ব_০৪
দিয়া চোখ খুলে তাকিয়ে একটা ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছাদ আবিষ্কার করলো। ওদিকে রশনি দিয়াকে পৌছে দিয়েই নিচে চলে যায়। তাই দিয়া রশনিকে খোজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। দিয়া অনুভব করতে লাগলো ওর পেছনে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে আর সে ক্রমশ দিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে। দিয়া ভয়ে দেওয়ালের সাথে মিশে যেতে চাইলেই, দিয়া নিজের পেটে কারোর হাতের ছোঁয়া পেলো। শিউরে উঠলো ও। ভয়ে চোখ বন্ধ করে আয়তাল কুরছি পড়া শুরু করলো।
—- ভয় পেয়ো না আমি। এদিকে আসো।
দিয়ার পেটে হাত দিয়েই নিজের কাছে টেনে নিলো রওশন। দিয়ার চুলগুলো বাঁধা ছিলো ক্লিপ দিয়ে সেই ক্লিপটাও খুলে দিলো,,, দিয়ার পিঠ জুরে ছড়িয়ে পড়লো একরাশ কালো চুল। চুলগুলো দিয়ার বাম সাইডের ঘাড়ের ওপর রেখে ডান সাইডে চিবুক রাখলো রওশন।
—- ভয় করছে এখনো..??
দিয়া কোনো কথা বলছে না। কারন এখন ভুতের ভয়ের চেয়েও বেশি ভয় রওশনকে কাছে পেয়ে করছে। রওশনের হাতের ছোঁয়া বারবার দিয়াকে শিহরিত করছে,,, রওশন দিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। তারপর নিজের কপাল ওর কপালে ঠেকিয়ে,, বাম হাতে কোমর জরিয়ে,,, ডান হাত দিয়ে দিয়ার পেট,পিঠ,গলা স্লাইড করতে করতে উপরে উঠছে। রওশনের এমন কাজে দিয়া হতবাক।
—- ভয় যখন করছে তখন ভয়টা আরেকটু বাড়িয়ে দেই। কি বলো..?
রওশন নিজের ঠোট দিয়ার ঠোটে ঘসতে থাকে। দিয়ার হার্টবিট অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে,,, হাত পা ভয়ে + অজানা অনুভুতিতে শীতল হয়ে আসছে। তারপর হুট করেই দিয়ার ঠোটজোড়া নিজের ঠোটের ভেতর ঢুকিয়ে নেয়। দিয়ার এবার দম আটকে আসছে,,,
—- লোকটা কেন এমন করছে ? ব্যাথা দিয়ে মলম লাগিয়ে দেওয়ার কি প্রয়োজন..?? আমার সাথে এসব করার মানে কি,,,, দূরে যেতে চাই আপনার থেকে আপনার এই অদ্ভুদ কাজের থেকে। নিজেকে জড়াতে চাইনা আপনার মায়ায়। আমি জানি আপনি কখনো মেনে নিবেন না আমায়। ( মনে মনে )
৫মিনিট পর রওশন দিয়ার ঠোট ছেড়ে দিয়ে দুহাতে দিয়ার মাথাটা ধরে নাকের সাথে নাক মিলিয়ে বললো,,
—- হ্যাপি বার্থডে দিয়া। ওদিকে তাকাও।
ডান সাইডে দিয়ার মুখ ঘুরিয়ে ধরলো,,, দিয়া তাকানো মাত্রই একটা ফানুশ উড়ে গেল আকাশে আর আকাশে লাভ সেপের মধ্যে জ্বলজ্বল করে উঠলো একটা লেখা ★★I LoVe yOu DiYu pAkHi ★★ দিয়া যেন নিজের চোখ আর কানকে বিশ্বাসই করতে পারছে না। আজ যে ওর জন্মদিন সেটা ও ভুলে গিয়েছিলো। তারওপর রওশন যে ওকে ভালোবাসে সেটাও স্বীকার করলো.. দিয়া রওশনের দিকে তাকাতেই দেখলো রওশন ওখানে নেই। ছাদে ভালো করে চোখ বুলালো তবুও কিছু বুঝতে পারলো না। হঠাৎ ছাদের লাইট অন হলো,, পুরো ছাদটা হলুদ গোলাপ দিয়ে সাজানো ছাদের চারকোণায় বড় বড় চারটা মোম রাখা। ছাদের মাঝে একটা টেবিল আর টেবিলের ওপার কিছু জিনিস ঢেকে রাখা হয়েছে। মেঝেতে নীল সাদা রংএর বেলুন উড়ছে পড়ে যাচ্ছে,,, পুরো ছাদটাকেই ফুলবেলুনের রাজ্য মনে হচ্ছে আর সেই রাজ্যের রানি দিয়া। দিয়া হঠাৎ ঘাড়ের ওপর কারোর টোকা অনুভব করে। তৎক্ষনাৎ ও পেছনে তাকায় আর দেখে,, রওশন হাটু গেড়ে বসে লাল গোলাপের একটি তোরা দিয়ার দিকে এগিয়ে ধরে আছে। তারপর বলতে শুরু করলো
★★★ আমার হৃদয় হৃদপিন্ডের চাইতেও অনেক গভীরে,, রক্ত আর শিরা উপশিরারও অনেক গহিনে যে অস্পৃশ্য অবিনশ্বর রুহ আছে,, সেই রুহবিন্দু থেকে তোমাকে ভালোবাসি। তোমার রূপ অবয়ব বা বয়স নয়, তোমার আত্মাটাকে ভালোবাসি।কারন ভালোবাসা নয় রূপ যৌবনের লোভ। ভালোবাসা মানে নিজের অপর সত্ত্বাকে তোমার মাঝে খুজে পাওয়া। যাকে ছাড়া আমি অসমাপূর্ণ। তুমি কি আমার ভালোবাসা স্বীকার করবে..??
দিয়া ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এটা কি আদৌও সত্যি..? রওশন আর অপেক্ষা করতে পারছে না। তাই নিজেই দিয়ার হাতে ফুল গুজে দিলো।
—- অন্ততো হ্যা বা না বলো…. বোবার মতো দাড়িয়ে থেকে আমাকে টেনশনে ফেলার মানে কি..??
দিয়া এবার বললো,,,
—- নিজের বউ এর কাছ থেকেও অনুমতি চাইতে হয়..??
—- হ্যা ম্যাডাম চাইতে হয়। কারন আমি আমার বউ এর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুই করবো না। আর প্রতিটা মানুষেরই নিজের মত, ইচ্ছা, পোষণ করার অধিকার আছে। এবং নিজের মতো চলার অধিকার আছে। একটা মেয়ে নিজের বাবার বাড়ি যেভাবে নিজ ইচ্ছায় চলেছে,, থেকেছে,, আনন্দ করেছে। বিয়ে নামক রীতির জন্য কি তার সব ইচ্ছাই বিসর্জন দিতে হবে..?? আর সবাই দিলেও আমার বউ এর দিতে হবে না। সে তার মনমতো চলবে,, হাসবে,, খেলবে,, ভালোবাসবে।
—- সত্যিই আপনি অনেক ভালো। আপনার চিন্তাভাবনা গুলোও অনেক ভালো।
—- ধন্যবাদ তবে এখনো কিন্তু আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। আমার ভালোবাসা কি গ্রহণ করা যায় না..?
দিয়া এখন কি করবে..??কখনোই না বলবে না কারন ভাগ্য করে এমন বর পাওয়া যায়। যে প্রতিটা মুহূর্তে তার স্ত্রীর পাশে থাকবে। স্ত্রীর মতামতকে সম্মান করবে,, ভালোবাসবে। কিন্তু হ্যা বলতেও ভীষন লজ্জা লাগছে। কিভাবে তার সামনে দাড়িয়ে মুখ ফুটে বলবে যে হ্যা দিয়াও রওশনের মতো অদ্ভুদ আচরণদাতার প্রেমে পড়েছে..?? অনেক ভেবে দিয়া রওশনের দিকে এগিয়ে যায়,, তারপর আলতো করে জরিয়ে ধরে রওশনকে। রওশনও নিজের উত্তর পেয়ে দিয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ওর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।
—- দিয়াপাখি..??
—- উমম
—- চলো কিছু খেয়ে নেই।
—- রাতে আম্মু ওতো কিছু খাওয়ালো,,, এখন আবার খাবো..?? পেট ভরা
—- উহু। খেতে হবে। চলো।
জোর করে দিয়াকে সেই টেবিলে বসালো তারপর এক এক করে ঢেকে রাখা প্লেটের ওপর থেকে ঢাকনা সরালো,,, দিয়ার পছন্দের ফালুদা আর ভ্যানিলা আইসক্রিম।
—- এতোক্ষনে তো আইসক্রিম গলে যাওয়ার কথা তবুও গললো না কেন..??
—- বোকা মেয়ে ৮মিনিটে আইসক্রিম গলে নাকি..?? আমি তো একটু আগে এনেছি এগুলো। নাও তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো।
দিয়া খাওয়া শুরু করে দিলো,,, ওর সারামুখ আইসক্রিমে লেপ্টে আছে,,, খাওয়ার শেষ মুহূর্তে দিয়ার মনে পড়লো। রওশনকে তো দিতেই ভুলে গেছে ও।
—- আপনি খাবেন না..??
—- হুম খাবো তো।
বলেই দিয়ার গালে লেগে থাকা আইসক্রিমের অংশটুকু চেটে খেয়ে নিলো। রওশনের জিব্হা দিয়ার গাল স্পর্শ করা মাত্র দিয়া টেবিলের ওপর থাকা রওশনের হাত চেপে ধরে। রওশন এবার ইচ্ছা করে দিয়ার গালে জিব্হা দিয়ে লেহন করতে শুরু করে। অবশেষে ঠোটে ঠোট স্পর্শ করে বলে,,,
—- এটা হলো পৃথিবির সর্বশ্রেষ্ঠ আইসক্রিম। আমি তোমার মতো নরমাল আইসক্রিম খাইনা দিয়াপাখি।
দিয়া চোখ বড়বড় করে রওশনের দিকে তাকিয়ে আছে,,, রওশন আবার বলে উঠলো,,,
—- ওভাবে তাকিয়ো না তাহলে আম্মুর কথা রাখতে পারবো না। কন্ট্রোললেস হয়ে যাবো। তখন কিন্তু আমার দোষ্ দিতে পারবে না।
দিয়া লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। রওশনকে আগে কখনো এতো কথা বলতে দেখেনি দিয়া। সবসময় চুপচাপ আর রাগি লুক নিয়ে থাকে,,, আর আজ..?? রওশন দিয়াকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার বললো,,,
—- পৃথিবির সমস্ত লজ্জা আর ভয় কি আল্লাহ তোমার মধ্যে দিয়েছে..?? সেই কখন থেকে আমি কথা বলছি আর তুমি..?? চুপ করে বসে আছো। আমার সাথে কথা বললে কি কোনো সমস্যা হবে..?? আনইজি ফিল করছো। তাহলে আমি চলে যাচ্ছি
—- নাহ।
—- তাহলে তুমি চাচ্ছো যে আমি এখানে থাকি..??
—- হুম। ( মাথা নিচু করে বললো।)
রওশন দিয়ার হাতে হাত রেখে বললো।
—- তোমার স্বামী আমি। তোমার সবকিছু দেখার অধিকার আছে আমার।
—- মানে,,,, ( ভয়ে + উত্তেজিত হয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো )
—- না মানে,,, তোমার সবকিছু জানার অধিকার আছে
—- কি..??
—- আরে খারাপ ভাবে নিচ্ছো কেন..?? আমি তোমার সম্পর্কে জানতে চেয়েছি,,, তোমার ইচ্ছা,, ভালো লাগা,, খারাপ লাগা,,, পছন্দ,,, অপছন্দ।
—- ওহহ। আমার তেমন বিশেষ কোনো কিছু নেই। আমি সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি।
—- তাহলে আমাকে মেনে নিতে এতো হেজিটেশন কেন..?? কারন কি..??
—- সত্যিই বলবো..??
—- আমি কি মিথ্যা শুনতে চেয়েছি..??
—- আসলে ভয় লাগে। আপনি অলঅয়েজ রাগি রাগি লুক নিয়ে থাকেন তাই ভেবেছি,,,,
—- ভয় কে জয় করতে শেখোনি…?? যেদিন শিখবে সেদিনই তোমার কাছে আসবো আমি। তার আগে না। গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো যাও।
—- আপনি সবসময় আমার সাথে এমনই করেন। প্রথমে ব্যাথা দিয়ে পরে মলম লাগান। একটুও ভালো না আপনি খুব পঁচা। পঁচা আপনি।
—- যাও। ( চিৎকার দিয়ে বললো )
দিয়া কষ্টে আর ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে যায়। রওশন উঠে ছাদের কর্ণারে এসে দাড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। চোখ বেয়ে নোনাপানি গড়িয়ে পড়ছে।
—- তুমি এমন কেন করো দিয়া..?? আমি আর আমার সবকিছুই তো তোমার তবুও কেন এতো সংশয়..?? কেন বউ এর দাবি নিয়ে আমার সামনে আসতে পারো না..?? কেন সবসময় আমার থেকে দূরে থাকতে চাও। তোমার শ্যাম বর্ণের চেহারা আর তোমার পরিবার নিয়ে তো আমার কোনো আপত্তি নেই,,,, তাহলে আমাকে ভালোবেসেও আমার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখো কেন..?? এবার তুমি নিজে আমার কাছে আসবে এটা রওশন ইয়ারাভের প্রমিস। তুমি নিজে আসবে বউ এর দাবি নিয়ে,,, অধিকার ফলাবে আমার ওপর,, আমার চেহারার ভাষা না,,, চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করবে। যেদিন আমার মনের ভাষা বুঝতে পারবে সেদিন বুঝবে এই মনের সবটা জুরে আছে শুধু দিয়া,,, রওশনের দিয়া। কবে আমার মনের গহিনে পৌছাবে দিয়াপাখি..?? অপেক্ষা করবো তোমার জন্য। জানি তুমি ঠিক আসবেই।
চলবে,,,
[ সবার প্রশ্ন আমি হিন্দু নাকি মুসসলিম। কারন আমার নাম দিয়ামনি + আমি নোটেও হিন্দু মুসলিম উভয়কে সমর্থন করি। তাই সবাইকে বলে দিচ্ছি আমি মুসলিম। আমার আসল নাম সাদিয়া কিন্তু সবাই দিয়া / দিয়ামনি বলেই চেনে।
আর আমি নেক্সট পার্ট তো অবশ্যই দিবো তাই নেক্সট নেক্সট না বলে গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ তাহলে লিখতে উৎসাহ পাবো।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here