অদ্ভুত বর – পর্ব 07

0
571

#অদ্ভুদ_বর
#দিয়া_মনি [ DîYã MôÑî ]
#পর্ব_০৭
পরদিন কলেজে যেতেই রওশনের সামনে পড়ে দিয়া। রওশন গাড়ি পার্ক করে প্রিন্সিপালের কেবিনের দিকে হেটে যাচ্ছে। দিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো এখন কি তাকে ডেকে থ্যাংকস দিবে..?? নাকি পড়ে দিবে,,। সিদ্ধান্ত নিলো পরে ডেকে দিবে তাই আবার ক্লাসের দিকে পা বাড়ালো। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ চিৎকার দিলো।
—- এই দিয়া..?? দিয়া দাড়া।
একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে আর দিয়ার নাম ধরে ডাকছে,, ছেলেটা হলদে ফর্সা মুখের গড়ন গোলগাল,, চুলগুলো বাদামী রং এর,, পরনে জিন্স আর টি-শার্ট,, ঘাড়ে ব্যাগ। ছেলেটা দৌড়ে দিয়ার কাছে এসেই ওকে জরিয়ে ধরলো,,, ওদিকে দিয়ার নাম শুনে রওশনও পেছনে ফিরে তাকায়। আর এমন দৃশ্য দেখে রাগে ওর শরীর জ্বলে ওঠলো,,, দিয়া ঠাসস করে একটা থাপ্পড় দিলো ছেলেটাকে,, ছেলেটা অসহায় চোখে গালে হাত দিয়ে প্রশ্ন করলো
—- মারলি কেন..??
—- মারবো না চুম্মা দিবো।
সাথে সাথে ছেলেটা মুখ এগিয়ে দিলো।
—- দে। আই ওয়ান্ট এ চুম্মা।
—- কুত্তা। হারামি। রাঙামাটি গেছিস একবারও বলেছিস আমাদের..? তারওপর নাকি এক্সিডেন্ট করছিস। গত পরশু আন্টির কাছ থেকে জানলাম এসব। ভাগ্গিস জিজ্ঞাসা করেছিলাম নাহলে তো জানতামই না। আমাকে সবটা না জানানোর শাস্তিস্বরূপ এবার তোকে পুঁতে ফেলবো এখানে।
—- একদম না দিয়ু বেবি। আমি মরলে আমার বউ বিধবা হয়ে যাবে। কষ্ট পাবে। অন্ততো আমার বাসর অবথি ওয়েট কর। বাসরের পর মারিস।
—- তখন তো আরেকটা মেয়ের ক্ষতি হয়ে যাবে। তুই নিজে তো মরবি আরেকজনকেও মারবি।
—- এই পর্যন্ত একটা মশা মারতে পারলাম না,,, আবার নাকি মানুষ মারবো।
—- পারবি না তো। পারবি কেমনে..?? তুই কি পুরুষ নাকি..?? টোটালি লেডিস। মাঝে মাঝে তো সন্দেহ হয়। মনে চায় চেক করে দেখি তুই আদৌও ইয়ে নাকি।
—- এত্তো বড় অপমান। আমার পুরুষত্ব নিয়ে সন্দেহ..?? দাড়া তুই
দিয়াকে আর পায় কে..?? এক ছুটে ক্যান্টিনে তিথিদের কাছে চলে গেলো। ছেলেটিও পেছন পেছন ছুটছে। কৌতুহল মেটানোর জন্য রওশনও ওদের পেছন পেছন গেলো। ছেলেটিকে দেখে তিথি লাফিয়ে উঠলো,,
—- সবুজ..??? তুই। কবে আসলি..? এখনো মরিস নি..??
সবুজ ছোটাছুটি বাদ দিয়ে উত্তর দিলো,,
—- কেন..? আমার মরার কথা ছিলো নাকি..?? আমাকে মারার এতো শখ কেন তোদের..??
—- তুই মরলে মিলাদ আর চল্লিশা ভালো করে খেতে পারতাম।
—- সবগুলো ডাইনি।
—- তুই কি ফিল্মের হিরো নাকি হারামি..??
—- তোদের দুজনের জন্য আমার এখনো হিল্লে হচ্ছে না। যে মেয়েরে পটাতে যাই সেই তোদের ভয়ে ভেগে যায়।
—- টিয়ার দিকে তাকা। বাইরে ওতো চোখ যায় কেন..??
—- পশুপাখি ঘরে পুষতে মানা করছে আম্মু।
দিয়া পিঞ্চ দিয়ে বললো,,
—- মাম্মাস বয়। তুই নিজেই তো জিরাফ,,সজারু,, বান্দর,,। তো আন্টিকি তোরে চোখে দেখে না..? তোরে ঘর থেকে লাথ্থি দিয়ে বের করে না কেন..??
—- আমারে বের করলে নাতি নাতনির মুখ দেখবে কি করে..??
—- হায়রে লেডিস,, ওটা পুতা-পুতনি,, পুত্রের ছেলে মেয়ে। আজ নিজেই নিজের কথার দ্বারা প্রমাণ করে দিলি যে তুই মাইয়্যা।
—- নাহ আর সহ্য করা যায় না। চল আজকে তোর কাছে প্রমাণ দিয়েই দেই আমি পুরুষ নাকি। অডিটোরিয়াম খালি আছে। চল।
রওশন এতোক্ষন চুপ ছিলো কিন্তু এবার রাগ চরম সীমায় পৌছে গেলো,,, ওরা কি বলছে..?? দিয়াকে নিয়ে সবুজজজ। রওশন দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
—- কি হচ্ছে এখানে,,,,
তিথি আর দিয়া সবুজের কথায় হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছিলো এমন সময়,, গম্ভির কন্ঠস্বর শুনে ওদের হাসি থেমে যায়। ওরা সবাই একসাথে রওশনের দিকে তাকায়। তিথি গালে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে।
—- হায়,, মার গায়ি ম্যায়।
দিয়া তিথাকে ছোট করে একটা লাথি দিলো। তিথি চট করে উঠে দাড়ালো। তারপর রওশনের দিকে এগিয়ে গেলো,,,
—- কে তুমি..??
সবুজ টিয়াকে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো “ইনি কে” টিয়া উত্তর না দিয়ে ঠোট ফুলিয়ে দিয়ার পাশে গিয়ে দাড়ালো। সবুজ টিয়ার কাজের ঠাইঠিকানা ধরতে না পেরে ঠায় দাড়িয়ে রইলো। দিয়া তিথিকে বললো,,
—- তিথি। উনি আমাদের নতুন স্যার।
—- তোর মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি..?? আমাদের কলেজে কোনো নতুন স্যার ট্যার আসেনি। আসলে এই তিথির কাছে খবর থাকতো।
দিয়া এবার অসহায় চোখে রওশনের দিকে তাকালো। তারপর প্রশ্ন করলো
—- আপনি স্যার না..??
—- না। ( শীতল কন্ঠে বললো )
উত্তর শুনে দিয়ার মাথায় বাজ পরার মতো অবস্থা। রওশন এবার ডিরেক্ট দিয়াকে আস্ক করলো,,
—- বিয়ে করবে আমায়..??
সবার মুখটা “ও” হয়ে গেলো। দিয়ার চোখের কোণে পানি চিক চিক করছে,,,ও লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে আস্তে করে বললো।
—- হ্যা।
রওশনের মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেলো,,, ও দিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ার হাত ধরতে গেলেই দিয়া পিছিয়ে যায়। তারপর হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে বলে,,,
—- কি ভেবেছেন এটা বলবো। নো মিস্টার রওশন ইয়ারাভ। আপনি একজন ফ্লট,, লাইয়ার যে কাল সারাটাদিন আমাকে মিথ্যা বলেছেন। বিশ্বাসের সুযোগটা এভাবে কাজে লাগালেন..?
রওশন চোয়াল শক্ত করে বলে
—- তোমাকে ভালোবাসি আমি। আর তোমাকে আমার চাই,,,, এটা জেনে রাখো দিয়াপাখি,আজ থেকে ঠিক এক মাসের মাথায় তুমি নিজে আমাকে ভালোবাসার কথা বলবে।
—- অসম্ভব।
—- অসম্ভবকে সম্ভব করাই রওশনের স্পেশেয়ালিটি। সো বি রেডি ফর দ্যাট ডে।
—- আপনি দিয়ামনিকে চিনতে ভুল করেছেন,, আপনি যা চান তা কখনোই হবে না। [ আমি আপনার জীবন নষ্ট করতে চাইনা রওশন। আমি চাইনা আমার জন্য আপনি হাজারো প্রশ্নের সম্মুখীন হন। ]
—- [ তোমার বিশ্বাসের সাথে সাথে যেদিন ভালোবাসাটাও অর্জন করবো,, সেদিন বুঝবে রওশন তেমাকে কতটা চায়,,, তোমার ভালোবাসা কতটা চায়… এই ২৮বছরের নিরামিষ লাইফ নতুন করে আমিষ হতে চাইছে তাও শুধুমাত্র তোমার জন্য। নিজের ইচ্ছা না হোক লাইফের ইচ্ছাটা আমি অবশ্যই পূরণ করবো দিয়াপাখি ] দেখা যাক কি হয়। বাই দ্যা ওয়ে,,, তিথি তুমি প্রিন্সিপালকে এখানে নিয়ে আসো।
তিথি একবার দিয়ার দিকে তাকালো। দিয়া ইশারায় যেতে মানা করছে।
—- অকে ফাইন। [ রওশন কাউকে ফোন দিলো ] হ্যালো তুহিন তুই খুলনার সিটি কলেজে চলে আয়। তোর ভাবি আর তার বন্ধুদের এটেন্ড কর।
—-…….
—- মাত্র বানালাম তুই আয় তারপর কথা বলছি।
রওশন ক্যান্টিনের একটা টেবিলে গিয়ে বসলো। আর ইশারায় সবাইকে ডাকলো। টিয়া আর তিথি বসে পড়লো। রওশন রক্তচক্ষু দিয়ে সবুজ আর দিয়ার দিকে তাকালো। সবুজ ভয়ে বসে পড়লেও দিয়া দাড়িয়ে থাকলো। রওশন রেগে বললো,,
—- আপনাকে কি আলাদা করে ডাকতে হবে..?? যদি বলেন তাহলে অন্য উপায়েও ডাকতে পারি। কি বলুন সেভাবে ডাকবো.??
—- ডাকতে বলেছি…?? চুপচাপ নিজের কাজ করে চলে যান।
—- আচ্ছা তিথি তুমিই বলো আমি কোনদিক থেকে খারাপ..?? চেহারা, মাস্যাল,, বাড়ি গাড়িরও অভাব নেই তবুও তোমার বান্ধবি পটছে না। কারন কি..??
—-আমার নামও জানেন…? আই লাইক ইউ।
রওশন টাস্কি খেয়ে গেলো,,, বউ আহত হয় না, আর শালি নিহত হয়ে গেলো। রওশনের ফোনে আবার কল আসে,,,
—- ক্যান্টিনে আয়। আর প্রিন্সিকেও বলে দিস্
—-…………
—- আয় তোর জন্য মুরগি পুষছি।
এটা দিয়া আড় চোখে রওশনের দিকে তাকালো। রওশন চোখ টিপ দিয়ে একটা ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিলো।
—- আসলেই অদ্ভুদ। ভাবছি অপমান করলে চলে যাবে তা না ঘাড়ের ওপর চড়ে বসছে। তারওপর তিথিকে মুরগি বানাচ্ছে। ( ভাবতেই দিয়ার ঠোটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।)
কিছুক্ষন পর প্রিন্সি আর একটা ছেলে দিয়াদের সামনে উপস্থিত হয়। ছেলেটা ৫.১০ইঞ্চি লম্বা। শ্যামলা,, গালে খোচা খোচা দাড়ি,,, চোখের নিচটা কাজল দেওয়ার মতো। শ্যামলা হলেও ক্রাশ খাওয়ার মতো। প্রিন্সি এসেই বললো
—- আগামী এক মাসের জন্য তুমি এই কলেজের টিচার রওশন।
—- থ্যাংকইউ।
প্রিন্সি আর কিছু না বলেই চলে গেলো।ছেলেটাকে রওশন ডেকে টেবিলে বসালো। তারপর বলতে লাগলো,,
—- মাই ডিয়ার শালিকা & শ্যালক মিট মাই ফ্রেন্ড তুহিন। ওর বিয়ের জন্য তিথির মতো একজন পাত্রী প্রয়োজন। তোমরা একটু খুজে দাও।
দিয়া বুঝতে পারছে যে রওশন তিথির কথাই বলতে চাচ্ছে তাই এবার ও টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো। রওশন মুচকি হাসলো,, কারন রওশন দিয়ার প্রতিটা স্টেপ বুঝতে পারছে,,, দিয়া যে রওশনের ওপর একটু হলেও দূর্বল সেটাও জানে রওশন। তবুও একটু নাটক করতে ভালোই মজা। এদিকে তিথিও কেমন জানি লজ্জা পাচ্ছে। এই প্রথম কোনো ছেলের সামনে বসে এমন অস্বস্তি লাগছে ওর। সবুজ বললো,,,
—- এখানে যদি ঘটকালীর কাজ হয় তবে আমার জন্যও একটা মেয়ে খোজা হোক।
দিয়া চট করে বলে উঠলো,,
—- তোর জন্য মেয়ে না ছেলে খোজার প্রয়োজন। তুই নিজেই তো মেয়ে।
এটা শুনে তুহিনের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো,, তুহিন বারবার সবুজের দিকে তাকাচ্ছে। সবুজ তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বললো,,,
—- তোর এসব কথার জন্যই আজ আমি সিঙ্গেল। না পারি মাইয়্যাগো প্রুভ দেখাইতে না পারি তোর টর্চার সহ্য করতে।
—- তোর বউ এক্খান ভদ্র মাইয়্যা হইবো তাই আমিই তোরে জ্বালামু,,,, তোর বিয়ের পর শান্তিতে থাকিস তখন জ্বালাইতে যামু না। [ সবুজ শোকর আদায় করলো ] দোস্ত তখন তোরে পুড়াইতে যামু। এবার বেশি করে শোকর আদায় কর।
টিয়া বলে উঠলো,,,
—- দিয়া আমি বাড়ি যাচ্ছি। আমার ভালো লাগছে না।
—- তুই গেলে সবুজ কি করবে..??
—- ওর যা ইচ্ছা তাই করবে।
তিথির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো।
—- চলো আমরা স্প্রিং দ্যা বোতল খেলি। টিয়া তুইও খেলবি। কোথাও যাবি না।
টিয়া সায় দিলো কারন ও না করলে তিথি ওর তেরোটা বাজিয়ে দিবে ।
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here