#অদ্ভুদ_বর
#দিয়া_মনি [ DîYã MôÑî ]
#পর্ব_০৯
দিয়ার গাছের ডালটা এনে রওশনের হাতে দেয়। রওশন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দিয়ার দিকে ক্যাবলাকান্তর মতো চেয়ে থাকে। রশনি, নিজের ওরনাটা খুলে রওশনের হাতে দেয়। রওশন এবার রাগি রাগি লুক নিয়ে ওদের দিকে তাকায়। রশনি আমতা আমতা করে বলে,,
—- ভাইয়া দেখ তের ডান সাইডে একটা পাখি ওই যে তারের সাথে ঝুলে গেছে.. ওটা এই লাঠিটা দিয়ে ছাড়িয়ে দে প্লিজ।
রওশন পেছনে তাকিয়ে দেখে বৈদ্যুতিক তারের সাথে একটা চড়ুইপাখি ঝুলে আছে।
—- দিচ্ছি। দে।
—- আমার ওরনাটা নিচে ধর তাহলে ওরনার ওপর পড়বে বাচ্চাটা
—- বাচ্চাটা মানে..??
দিয়া কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে বললো,,
—- বাচ্চা পাখি। বাচ্চা পাখিটাকে বাঁচিয়ে দিন না প্লিজজ। প্লিজজজ।
—-( পাখির জন্য এতো দরদ কই আমার জন্য তো এর ১০ভাগের ১ভাগও নাই।) মনে মনে।
রওশন পাখির বাচ্চাটার ডানা ছাড়াচ্ছে আর বলছে
—- বুঝলি পাখি আজ তোর ওপরও হিংসা হচ্ছে। আমার বউ আমার চেয়ে তোকে বেশি ভালোবাসে। দেখ তোর জন্য কেঁদে ফেলছে। আর আমি যে ছাদের কর্ণারে এসে লাফাচ্ছি তার দিকে কোনো নজরই নেই। কেন যে সবকিছু ভুলে গেলো।
রওশন বাচ্চা পাখিকে ছাড়িয়ে দিয়ার হাতে দিলো। দিয়া পাখি নিয়ে নিচে দৌড়। একবার রওশন ঠিক আছে কিনা তাও জিজ্ঞাসা করলো না,, রওশন গাল ফুলিয়ে মাটির দিকে তাকাতেই রশনি বলে উঠলো।
—- পিচ্চি ভাবিকে নিজের করে নে দেখবি এতো টেনশন থাকবে না।
—- এটা করার হলে বিয়ের দিন রাতেই করতে পারতাম। আমি চাই দিয়া নিজ থেকে আমার কাছে আসুক। বাদ দে তুহিনদের আর টিয়াদের জানিয়ে দে একসপ্তাহ পর দিয়ার অপারেশন আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি।
—- তুই সিউর অপারেশন করাবি..?? ভাইয়া পিচ্চি ভাবির লাইফ রিস্ক আছে।
—- কিচ্ছু হবে না দিয়ার। তুই টেনশন করিস না।
সকাল ৯টা দিয়া পাখিটাকে ছেড়ে দিয়ে রওশনের পেছন পেছন ঘুরছে।রওশন আড় চোখে তাকাচ্ছে।
—-কিছু বলবে..??
—- আপনি তো অনেক সুন্দর দেখতে। তাহলে আমাকে বিয়ে করলেন কেন..?? প্রশ্নটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
—- ভালোবাসি বলে।
—- তাহলে আপনার গার্লফ্রেন্ডকেই বিয়ে করতেন। আমাকে ফাসালেন কেন..??
—- দিয়াপাখি আমার একটা কথা রাখবে..??
—- কি কথা..?
—- আগে বলো আমি যা বলবো তাই করবে। নাহলে কিন্তু আমি অনেক কষ্ট পাবো।
—- আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। এই আপনাকে ছুঁয়ে বললাম।
—- আমাকে মেরে ফেলতে পারবে..??
দিয়া রওশনের হাত ধরে ছিলো। কথাটা শোনা মাত্র দিয়া রওশনের হাত ছেড়ে দেয়। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে,,
—- আমার রুহ তো আপনার কাছে আপনি না থাকলে আমি থাকবো কিভাবে..?? আপনাকে কষ্ট দিতে গেলে তো আমি নিজেই আগে শেষ হয়ে যাবো।
রওশনের চোখে পানি চলে আসে,ঠোটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে দিয়ার চোখের পানি মুছে দেয়।
—- পাগলি। আমি তো মজা করছিলাম। আমি বলতে চেয়েছি তোমার ভালোবাসায় আমাকে মেরে ফেলো।
—- মানে..??
—- বোকা মেয়ে। রশনির কাছ থেকে কিছুটা জেনে নিও। ও তোমাকে সব বলে দিবে।
—- আপনি বলুন।
—- আমি বলি না করি। আর যদি আরম্ভ করি তখন সহ্য করতে পারবে তো..?
কথার আগাগোড়া বুঝলো না দিয়া। দুহাতে মাথা চেপে ধরে বসে পড়লো,,, চোখের সামনে অস্পষ্ট কিছু দৃশ্য ভাসছে,,, একটা ছেলে সামনে অনেকগুলো মানুষ। একটা মেয়ে বিছানায় শুয়ে আছে,, দিয়া মেঝেতে ছটফট করতে শুরু করে। এদিকে রওশন চোখ বুজে দিয়ার বাচ্চামি গুলো মনে করতে থাকে।
—- বাঁচাও আমাকে,,,, মরে যাবো আমি।
দিয়ার মুখে এমন কথা শুনে চোখ মেলে তাকায় রওশন। দিয়া মেঝেতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে।
হসপিটালে,,, ডক্টর রওশনকে তার কেবিনে ডেকেছেন।
—- মে আই কাম ইন..?
—- ইয়েস মিস্টার ইয়ারাভ।
—- আংকেল দিয়া..??
—- দিয়ার অবস্থা অনেক ক্রিটিকাল। অপারেশনের ডেট আরো সামনে আনতে হবে। কাল সম্ভব হলে কালই অপারেশন করতাম কিন্তু আমার ফ্রেন্ড ইশতিয়াক সিঙ্গাপুর থেকে পরশু আসবে। মেইনলি ও নিজেই দিয়ার দায়িত্ব নিতে চেয়েছে।
—- আংকেল প্লিজ দিয়াকে ঠিক করে দিন। ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। খুব বেশি ভালোবাসি ওকে।
—- জানি রওশন। সেদিন তোমার ভালোবাসার জোরেই দিয়ার জ্ঞান ফিরেছিলো,,, তোমাকে দেখেছি আমরা। খুলনা থেকে দিয়াকে যখন আমার কাছে নিয়ে এসেছিলে তখন তোমার নিজেকে একবার দেখা উচিত ছিলো।
—- আমার কথা বাদ দিন আংকেল। ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে আমার। আচ্ছা দিয়াকে কি বাড়ি নিয়ে যেতে পারবো..??
—- হ্যা আজকের জন্য তবে কাল রাতেই ওকে হসপিটালে এডমিট করতে হবে। আর অবশ্যই রক্তের ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।
—- সব হয়ে যাবে।
বিছানায় ঘুমিয়ে আছে দিয়া। রওশন ঠিক ওর পাশেই ওর হাত ধরে চোখ বুজে আছে। যেমনটা ৯মাস আগে ছিলো।
৯মাস আগে,,, সেদিন দিয়া অপারেশন থিয়েটারেই শ্বাস নেওয়া ছেড়ে দিয়েছিলো। রওশনও নিজের হিতাহিত জ্ঞান থেকে সরে গেছিলো। রওশনের লক্ষ্য ছিলো একমাত্র দিয়ার জ্ঞান ফেরানো। রওশন ধীর পায়ে দিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। তারপর দিয়ার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে একটা কথাই বলে,
—- আমার দিয়াপাখির কিচ্ছু হয়নি। আর হবেও না।
দিয়ার মাস্ক খুলে ওর ঠোট নিজের আয়ত্ত্বে করে শ্বাসক্রিয়া কার্যক্রম চালিত করতে ব্যস্ত রওশন। উপস্থিত নার্স এবং ডক্টর এক মনে চেয়ে আছে ওদের দিকে। কিছুক্ষন পর দিয়ার আঙ্গুল নড়ে ওঠে। নার্সরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ক্যানোলা ঠিক করতে। রওশন দিয়াকে ছেড়ে দিয়ার হাত ধরে পাশে দাড়াতেই ওর নিজেরও মাথা ঘুরে আসে। দিয়ার হাতের আঙ্গুল নিজের হাতের মধ্যে আকড়ে ধরে চুপ করে বসে থাকে দিয়ার পাশে।
বর্তমানে,,,
দিয়া ঘুমের ঘোরেই হাতে গরম ছোঁয়া অনুভব করতে থাকে। দিয়ার চোখের সামনে পুরোনো স্বৃতিগুলো ভাসতে থাকে,, কলেজ ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে আছে তিথি, টিয়া, তুহিন, সবুজ আর রওশন। দিয়ার রওশন। ওরা মজা করছে। হঠাৎ অন্ধকার রুমে আটকে যায় দিয়া। রওশন ওকে বাঁচাতে আসে।ব্যাসসস। লাফিয়ে ওঠে দিয়া।
—- রওশন…..
দিয়ার আওয়াজে রওশন চোখ মেলে তাকায়। দিয়া ছটফট করছে দেখে রওশন দিয়াকে শান্ত করার জন্য নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
—- ছটফট করো না দিয়াপাখি। শান্ত হও। দেখো আমি আছি তো তোমার কাছে। কিচ্ছু হবে না তোমার। তোমার রওশন তোমার কিছু হতে দেবে না।
—- আব্বু কোথায়..?? তিথি সবুজ ওরা কোথায়..?
চমকে গেলো রওশন। তবে কি দিয়ার সব মনে পরে গেছে..??
—- ওরা কাল আসবে দিয়াপাখি। তুমি চিন্তা করো না। দেখো পরশু তোমার চেক আপ হলেই তুমি একেবারে সুস্থ হয়ে যাবে।
—- চেক আপ নাকি অপারেশন..? মিথ্যা বলছেন আমায়..?? কিন্তু কেন..?? আমি তো সবকিছুই জানি।
—- তোমার সব মনে পরে গেছে..??
—- সব মানে..?? আমার তো সেদিন ক্লাসরুমে যেগুলো হয়েছিলো সেগুলো আর ঘটে যাওয়া কিছুদিনের কথা মনে আছে।
—- আমাকে মনে আছে তোমার..??
—- মনে থাকলেই কি আর না থাকলেই বা কি..?? আমার অজান্তেই তো বিয়ে করে বন্দি করে রেখেছেন। এবার নাটক বন্ধ করে ছাড়ুন আমাকে।
নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো দিয়া। কারন দিয়া রওশনকে তিলে তিলে কষ্ট দিতে পারবে না। একবার আঘাত পেয়ে সবটা কাটিয়ে উঠতে পারলেই দিয়ার কর্তব্য শেষ।
—- [ আমি যে বেশিদিন বাঁচবো না রওশন। চলে যেতে হবে আমায়। আমি জানি শুধু ব্রেইন ইনজুরি না। আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছে। থিয়েটারের সব কথাই মনে পরে গেছে আমার। এই একটা বছর আমি নিজের অজান্তেই কষ্ট দিয়েছি আপনাকে। এবার সজ্ঞানে কষ্ট দিবো। আমাকে ঘৃণা করবেন আপনি। যাস্ট ঘৃণা। কিন্তু কি করবো আমি..? ]
রওশনের মাথায় দিয়ার একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে।” আমি তো সব কিছুই জানি ”
—- [ আমাকে কষ্ট দিতে চাও তাইনা দিয়াপাখি..?? তোমার ভেতরে কি চলছে সেটা জানা খুব একটা কষ্টের না আমার জন্য। ব্রেইন টিউমার তো এখন কমন হয়ে গেছে ডক্টর তোমাকে পরশুই ঠিক করে দেবে। আর এই দুইদিন তুমি যা চাইবে তাই হবে। ঘৃণা করবো তোমায়। তাতে তুমি নিজের ক্ষতি করবে না আর তোমার মনও শান্ত থাকবে। ]
রওশন ওখান থেকে উঠে চলে গেলো। দিয়া ভেজা চোখে রওশনের দিকে চেয়ে আছে।
—- আল্লাহ কেন বারবার আমার পরীক্ষা নেয়..?? আমি যেটা চাইনা সেটাই আমার সাথে ঘটিয়ে দেন। আর যখন চাই তখন সেটা কেড়ে কেন। আমি চাইনি যে কেউ কখনো আমার জীবনে আসুক। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস আল্লাহ তায়ালা আপনাকেই আমার জীবনে পাঠালো,,, মনে আছে আমাদের প্রথম দিনের কথা যখন আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলাম..?? আপনার বুকের ধুকধুক শব্দের মাঝে আলাদা একটা অনুভূতি জন্মে গেছিলো। আপনাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো আপনাকে কিছুক্ষন চোখের সামনে দেখতে পাবো। কিন্তু আপনি কি করলেন..?? পরদিনই বিয়ের প্রপোজাল দিয়ে বসলেন। বলেছিলেন এক মাসের মধ্যে আমি আপনার ভালোবাসা স্বীকার করবো। কিন্তু এটা কি জানেন..? আমি আপনারও আগে থেকে আপনাকে ভালোবাসি.. যখন গাড়ি নিয়ে কলেজে ঢুকছিলেন, কানে ব্লুটুথ গুজে ডার্ক রেড ঠোট নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছিলেন। তখনই আপনার প্রতি এট্রাক্টেড হই আমি। ভালোবাসাটা তখন ঠিক জন্মায়নি। কিন্তু যখন অচেনা একটা মেয়ের প্রতি আপনার মায়া দেখি তখন একটু একটু ভালোলাগা শুরু হয়। আপনার প্রপোজাল রিজেক্ট করার মতো শক্তি আমার কখনোই ছিলো না তবে আল্লাহ হয়তো চান না যে আমরা এক হই। সেজন্যই যখন ভাবি আপনাকে নিজের মনের কথা বলবো তখনই আমাকে আপনার কাছ থেকে কয়েক কদম পিছিয়ে দেন।
দিয়া নিজের ফোনটা বুকে আকড়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আর বিরবির করে এসব বলছে। ওদিকে রওশন দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়ার প্রতিটা কথা অনুভব করতে লাগলো। দিয়া ওকে ভালোবাসে,,, ভালোবাসার এই শক্তিটুকুই রওশনের মনোবল ঠিক রাখার জন্য যথেষ্ট। আর নিজের ভালোবাসাকে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে রওশন নিজের করে নিবেই। সেটা হোক না নিজের জীবনই।
বিকালে টিয়ারা আসে। তুহিন নিয়ে এসেছে ওদের। তিথি আর তুহিনের বিয়ে হয়ে গেছে গত মাসে। সবুজ আর টিয়া এখনো পড়ছে। ওদের মধ্যে আজও ভাবের “ভ” নেই। এসে ধরেই দুটো মিলে বাড়িটাকে চিড়িয়াখানা বানিয়ে রেখেছে। নিঝুমও এসেছে দিয়াকে দেখতে। দিয়া নাক ফুলিয়ে বললো,,
—– সবাই একসাথে আমাকে দেখতে এসেছিস.. মনে হচ্ছে শেষ দেখা দেখবি।
দিয়ার কথায় সবার উজ্জ্বল মুখ চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো হয়ে গেলো। সবাই অসহায় চোখে রওশনের দিকে তাকাতেই রওশন রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কারন রাগ আর কষ্ট মিলে রওশনের চোখে বৃষ্টির সৃষ্টি করেছে সেটা যে করেই হোক দিয়ার কাছ থেকে লুকাতে হবে। কারন দিয়া রওশনের চোখে পানি দেখলে সহ্য করতে পারবে না।
ওদিকে সবার নিরবতা দেখে দিয়া জোরে জোরে হেসে দেয়।
—- সাইলেন্ট মুডে কেন..?? এতোদিন পর দেখা হলো কোথায় আড্ডা দিবি। খেলবি তা না শোক পালন করছিস। তোদের না জ্বালিয়ে আমি মরবো এটা ভাবলি কিভাবে..?? তাছাড়া টিয়া বেবি আর সবুজের বিয়েশাদীরও তো একটা ব্যাপার আছে তাইনা..?? বিয়ের রাতে বিড়াল মারার কাহিনিও বুঝতে হবে। তো বিড়াল তুই মারবি নাকি…তার জন্যও মানুষ ভাড়া করতে হবে লেডিস সবুজ..?
সবুজ রেগগে বললো
—- তুই কিন্তু আবার আমার ইয়ের দিকে আঙ্গুল তুলছিস
—- আঙ্গুল কখন তুললাম..? তুই তো ওটাই যেটা তুই ভাবিস নিজেকে। এখন তুই যদি ওসব ভাবিস তাহলে তো আমার কিছু করার নাই। তাইনা..?
রশনি কিছু স্নাক্স নিয়ে রুমে ঢুকলো নিঝুমও পেছন পেছন আসলো। রশনি সবাইকে প্লেট দিচ্ছে আর তিথি জুসের গ্লাস। দিয়া চিল্লিয়ে উঠলো,,
—- কেউ কিচ্ছু খাবা না। সবাই খাবার রাখো। রাখো বলছি।
সবাই খাবার রেখে দিলো। তারপর দিয়ার দিকে তাকালো।
—- তোর শশুড়বাড়ি আসলাম আর তুই খেতে দিবি না আমাদের..? ( সবুজ )
—- খাদকের বংশধর চুপ থাক। আগে তিথির বাসরের কাহিনি শুনবো তারপরে খাওয়া। ( দিয়া )
দিয়ার কথা শুনে তিথির চোখ রসগোল্লার মতো হয়ে যায়। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,
—- কি..??
—- বাসর রাতে তুহিন ভাইয়া তোর সাথে কি কি করছে তার ফুল কম্পোজিশন বলবি এখন। আর হ্যা এটা অন্ততো বলিস না যে কিছুই হয়নি। কারন তোকে হাড়ে হাড়ে চিনি আমরা। তুহিন ভাইয়া কিছু না করলেও তুই কিছু করবিই এর গ্যারান্টি দিতে পারি আমি।
তিথির এবার কান্না পাচ্ছে, বাসর রাতের কাহিনি এতো মানুষের সামনে কিভাবে বলবে,,, ওদিকে তুহিন ব্যাটাও ঠোট কামড়ে হাসছে।
—- বলতে ইচ্ছা না হলে বলিস না আমরা বরং প্রাক্টিক্যালেই দেখি। কি বলিস তোরা..??
সবুজ টিয়া, দিয়ার ভয় দেখানোয় ভালোই মজা নিচ্ছে। কিন্তু রশনি নিঝুম লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। তুহিন হুট করে সবার মাঝে দাড়িয়ে পড়লো। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলতে লাগলো,,
—- তিথি বলতে পারবে না। কারন ও কাজে গুন্ডি কথায় না। তাই সবটা আমিই বলছি।
দিয়া তিথির দিকে একবার তাকালো, ভয়ে তিথির মুখ বাংলার পাঁচ হয়ে গেছে। তারপর হাসতে হাসতে তুহিনকে বলতে ইশারা করলো,, তুহিন বলতে আরম্ভ করলো,,,
—- আমি যখন বাসর ঘরে ঢুকি তখন তিথি একটা,,,
এটুকু বলার সাথে সাথে তিথি এসে তুহিনের মুখ চেপে ধরে। তারপর ১৬পাটি দাঁত বের করে হাসার চেষ্টা করতে করতে বললো,,
—- তুহিনের এখন কথা বলা যাবে না। ও এখন অফিসে যাবে। ওর কাজ আছে। আমি ওকে টাটা দিয়ে আসছি। তোরা বস
টানতে টানতে রুমের বাইরে নিয়ে গেলো তুহিনকে। সবাই দরজার দিকে একনজর তাকিয়ে জোরে জোরে হেসে দিলো। ওরা পারেও বটে। সবাই কিছুদিন দিয়ার সাথেই থাকবে তাই দিয়া কিছু সার্প্রাইজ প্লান করেছে।
—- জোরছে ঝাটকা খানে বালে হো তুম সাব।বি রেডিডি ফর ইট মাই ডিয়ার আপনজন। ( কথাটা বলে রহস্যময় হাসি দিলো দিয়া। )
চলবে,,,