অদ্ভুত বর – পর্ব 10

0
349

#অদ্ভুদ_বর
#দিয়া_মনি [ DîYã MôÑî ]
#পর্ব_১০
আরো একবার সাজানো হয় দিয়ার বাসর। ফুলের গন্ধে মম করছে সারাবাড়ি তবে বাসর ঘরে আজ আর ফুল নেই,,, দিয়ার পছন্দমতো বাসরঘরটা বেলুন আর ঝারবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। সবটাই করেছে তিথি। তাই দিয়াকে রুমে বসিয়ে দিয়ে দরজা ধরার দায়িত্বটাও নিজেই নিয়েছে।
রাত ১০টা,, রওশন রুমে ঢোকার জন্য পা বাড়াতেই তিথিসহ টিয়া রশনি ওর সামনে প্রকট হয়। তিথি রওশনের সামনে হাত বারিয়ে আছে। রওশন ওদের এমন ব্যবহারে খানিক চমকে যায়।
—- কি..??
—- ভাইয়া এতো কষ্ট করে বাসর ঘর সাজালাম তো দরজা ধরার টাকা দিবেন না..??
রওশন হেসে উত্তর দিলো
—- কতো লাগবে।
—- তিনজন আছি ত্রিশ হাজার দেন। আর হ্যা কোনো অযুহাত না,, টাকা দিলেই ঢুকতে দিবো নাহলে সারারাত বাইরে দাড়িয়েই মশা মারেন।।তাছাড়া আজ গিয়েও বা কি করবেন রোম্যান্স ছাড়া বাকি সব নিয়ম তো কমপ্লিটও হয়ে গেছে।
রওশন পকেট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার একটা বান্ডিল বের করে তিথির হাতে। দিলো।
—- পঞ্চাশ আছে। বিশ হাজার বোনাস আমার শালিকারা তাদের নরম নরম হাতে এতোটা কষ্ট করেছে,, তাদের খুশি করা তো আমার কর্তব্য তাইনা..??
রশনি মুখ ভেঙচি দিয়ে বলে উঠলো,,
—- বোনদের তো চোখে পড়ে না তোর…
—- দেখ এখন যদি তোরা ঝগড়া করেই রাত পার করতে চাস.. তো আমার কোনো সমস্যা নেই। বউ এর জন্য প্রথম বাসর রাত স্যাক্রিফাইজ করছি, তোদের জন্য নাহয় দ্বিতীয়টা স্যাক্রিফাইজ করবো।
টিয়া দরজা থেকে সরে দাড়ালো,,
—- নিন প্রবেশ করুন জনাব। আপনার জনাবা এখন আপনার অপেক্ষায় অধির হয়ে আছে। প্রবেশ করিয়া তাহাকে এবং আমাদেরকে ধন্য করুন।
রওশন মুচকি হেসে রুমে ঢুকে পড়ে। তারপর দরজা বন্ধ করে দেয়। দিয়া রওশনের উপস্থিতি টের পেয়ে বিছানা থেকে উঠতে যায়।
—- উঠবা না। যেমন আছো তেমনই থাকো।
রওশন দিয়ার সামনে গিয়ে বসতেই দিয়ার ঘোমটা একটানে খুলে ফেলে,,
—- বাবা দম আকটে আসছিলো,,, ঘোমটা তো না মনে হচ্ছিলো গায়ের ওপর পাথর চাপা দিয়ে রাখছি।
দিয়া যেভাবে ঘোমটা সরালো অন্য কোনো ছেলে হলে হয় ভয় পেত, নাহলে ভ্যাবাচ্যাকা খেত কিন্তু রওশন কোনো হেলদোলই নাই। ও একদৃষ্টে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর খুব ইচ্ছা করছে দিয়ার গালটা আলতো করে স্পর্শ করতে,,, প্রথমদিনের মতো আজও গয়নাগুলো খুলে দিতে। কিন্তু পারছে না। কোনো এক অদ্ভুদ শক্তি বারবার ওকে আটকে ধরছে।
—- ওই এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন..?? নজর লাগবে আমার। এমনিতেই চুল কেটে টাকলু হয়ে গেছি, চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে গেছে। আপনি নজর দিয়ে কি ডাইনি বানাতে চান..??
দিয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে, নিচে তাকালো রওশন। রওশনের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে কিন্তু অদ্ভুদ ব্যাপার এটা যে চোখের পানি মাটিতে পড়ছে না শূণ্যে ভাসছে। দিয়া রওশনের কাজে আর ব্যবহারে অবাকের চেয়ে কৌতুহলী হয়ে ওঠে বেশি। দিয়া রওশনের কাধে হাত রাখতে গেলেই রওশন উঠে যায়। যা দিয়ার মনে কষ্টের জন্ম দেয়।
—- তোমাকে আমার কিছু কথা বলার আছে দিয়া। যা জানা তোমার জন্য খুবই জরুরি।
দিয়া কোনো উত্তর দিচ্ছে না। ওর মনে বারবার একটাই প্রশ্ন জাগছে “তবে কি রওশন ওকে আর আগের মতো ভালোবাসে না..?”
—- আমি তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসি দিয়া। কিন্তু আমার,,,
দিয়া অবাক হয়ে যায় কারন রওশন বলেছিলো ও দিয়ার ঠোট নাড়ানো আর চোখ দেখে ওর মনের কথা বুঝতে পারে কিন্তু এবার তো ও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়াই করেনি যে রওশন ওর মনের কথা বুঝবে। দিয়া অসহায় চোখে রওশনের দিকে তাকাতেই রওশন বলে উঠলো,,
—- আমার ওপর জ্বীনের আছড় আছে। আজ পূর্নিমা ওরা আসবে আমাকে নিতে। আমাকে যেতে হবে ওদের সাথে।
—- ফাজলামি করেন..?? জ্বীনের আছড় আছে..?? আজ মেরে আপনার ঘাড়ের ভুত তাড়াবো।
কেঁদে দিলো দিয়া,,, বাসর রাতে এমন মজা করলে কি চলে..?? বরকে নাকি জ্বীনেরা নিয়ে যাবে। দিয়ার মন চাচ্ছে রওশনকে ঠাটিয়ে চর মারতে এসব তামাশার জন্য।
—- আমি সত্যিই বলছি দিয়া। আমার চোখগুলো বাদামী কেন জানো..?? কারন এ চোখ বুজলেও আমি সবটা দেখতে পাই। কোনোকিছুই আমার অজানা থাকে না। তোমার মনের কথা আমি তোমার ঠোট বা চোখ দেখে না,, সরাসরিই শুনতে পাই। শুধু তোমার একার না সবার মনের কথাই আমি শুনতে পাই।
—- বলুন তো এখন আমার কি মনে চাচ্ছে..??
—- আমাকে ঠাটিয়ে চর মারতে। কি তাইতো..??
—- হুম। তাহলে সত্যিই আপনার ওপরররররর। আপনি আমাকে কেন বিয়ে করলেন…?? আমাকে জ্বীনদের রাগের সামনে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে..??
—- হয়তো তাই।
রওশনের কথা শুনে দিয়ার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। ওকে জ্বীনদের কাছে বলি দেওয়ার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছে রওশন। এটা ভাবলে কষ্টের চেয়ে রাগ বেশি হচ্ছে ওর।
—- তাহলে অপারেশন থিয়েটারেই মারতেন। ভুতেদের কাছে দিচ্ছেন কেন..? ওরা আমার এতো সুন্দর হাতপা চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে,, আমার ছোট মাথা দিয়ে ফুটবল খেলবে। এটা সহ্য করা যায়..??
রওশনের এবার খুব জোর হাসি পাচ্ছে। দিয়া জ্বীন-ভুতে ভয় পায় অনেক তাই এতোক্ষন নাটক করলো রওশন। স্প্রে করে হ্যালুজিনেশন ক্রিয়েট করলো। রওশনকে নিয়ে যাবে সেটাও বললো কিন্তু তাতে দিয়া ভয় পাচ্ছে না বরং ওকে ভুতে খাবে তার জন্য ভয় পাচ্ছে,, হায়রে মেয়ে।
—-শুধু এজন্য কান্না পাচ্ছে তোমার..??
—- তো কি আপনার জন্য কান্না পাবে..?? আপনাকে তো জ্বীনরা পছন্দ করে,, আপনাকে নিয়ে গেলে জামাই আদর দিয়ে আবার ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। আমার মতো কাইল্লা মাইয়্যা নিয়ে গেলে উনুনের ওপর ভাজবে আমারে। বিয়ে করছি কোথায় বাচ্চাগাচ্চা মানুষ করবো তা না জ্বীনের চক্করে পড়ছি।
রওশন এবার জোরে জোরে হেসে দিলো,,, দিয়া রওশনের হাসির দিকে চেয়ে আছে,, লোকটা অদ্ভুদ ভাবে হাসে, প্রথমে মুচকি মুচকি হাসে, তারপর গেজ দাঁতগুলো বের করে জোরে জোরে হাসতে থাকে আর তারপর ঠোট কামড়ে চোখ বুজে বাচ্চাদের মতো হাসে। দিয়ার বাবু হলে ওরাও রওশনের মতোই হবে এটা ভাবতেই দিয়াও ফিক করে হেসে দেয়। রওশন দিয়ার এহেনো আচরণে কখনোই অবাক হয় না কারন দিয়ার এই বাচ্চামিগুলোর সাথে রওশন খুব ভালোভাবেই পরিচিত।
—- হাসছো কেন দিয়াপাখি..??
হাসা বন্ধ করে দেয় দিয়া। রওশন এতোক্ষন শুধু দিয়া বলে ডেকেছে আর এখন দিয়াপাখি বলে ডাকছে। কেন.?
—- আপনি তো মন পড়তে পারেন তাহলে পড়ে দেখেন কেন হাসছি।
বলেই খিলখিল করে আবার হেসে উঠলো। ওর মুখে দুষ্টুমির ছাপ স্পষ্ট। রওশন কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,,
—- তুমি কেন হাসছো সেটা যদি না বলো তাহলে কিন্তু জ্বীনদের ডেকে তোমাকে ধরিয়ে দিবো।
—- অদ্ভুদ বর তো আপনি,,, বাসর রাতে নিজের বউকে কোথায় একটু আদর করবেন ভালোবাসবেন তা না ভয় দেখিয়ে যাচ্ছেন। [ এতোক্ষন ভয় না লাগলেও এখন তো ভয় লাগছে। আল্লাহই জানে এই ব্যাটা আদৌ কি.? ]
—- তারমানে তুমি এতোক্ষন বাচ্চাদের প্লানিং করছিলে,, ( কোন বাচ্চার পাল্লায় পড়লাম রে বাবা এ তো তিল থেকে তাল বানানোর চিন্তাভাবনায় ব্যস্ত থাকে। বাসর রাতে বউ লজ্জা পায় শুনেছি। তুহিনও তো বললো তিথি লজ্জায় নুইয়ে গেছিলো,, তাহলে আমার বউ এমন হলো কেন.? টোটালি বেবি )
দিয়া থতমত খেয়ে উত্তর দেয়।
—- না মানে ওসব কেন ভাববো..? তাছাড়া আপনাকে তো আপনার অদ্ভুদ আচরণের জন্য জ্বীন নিয়ে যাবে তাহলে বাবু আনবো কিভাবে..?
—- বাবু আনার কথা কে বলেছে..?
—- ক,,কে,,উ,,উ ন,,ন,,না। কে বলবে..? ( ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো )
—- ওহ। আসলে ভাবছিলাম তুমি তো অসুস্থ তাই তোমার সাথে কিছু করবো না। সুস্থ হও তারপর।
দিয়া মন খারাপ করে গয়না খুলতে লাগলো,,, রওশন এসে দিয়ার পাশে বসে ওকে সাহায্যের জন্য ওর হাত ধরতেই দিয়া ঝারি দিয়ে ওঠে,,
—- আমাকে টাচ করলে হাত কেটে রেখে দিবো। এতোক্ষন মিথ্যা ভয় দেখাইছেন,,, ভীষন খারাপ আপনি। যান দূরে গিয়ে বসুন।
রওশন দিয়াকে উচু করে নিজের কোলে বসিয়ে পেট আগলে চেপে বসিয়ে দিলো,,
—- সরি দিয়াপাখি মজা করছিলাম এতোক্ষন। কিন্তু তাই বলে এতো বড় শাস্তি দিবে..? বাসর রাতে বউকে টাচ করবো না। এটা কি আদৌ সম্ভব..?
—- সম্ভব। ছাড়ুন তো ন্যাকামো ভাল্লাগে না।
—- ইটস নট ন্যাকামি,, ইটস কল্ড রোম্যান্স।
দিয়ার শাড়ির ভেতর হাত ঢুকিয়ে বিছা খুলছে রওশন,,, রওশনের হাতের স্পর্শে শিউরে উঠলো দিয়া। চোখমুখ খিচে চোখ বুজে বসে রইলো,, রওশন দিয়ার হাত থেকে আলতো করে বালা খুলে নিলো,, গলা থেকে হারগুলো খুলে টেবিলের ওপর রাখলো,,, দিয়ার ঘাড় থেকে একটু নিচে একটা ছোট্ট গাঢ় তিল আছে,, রওশন দিয়ার চুলগুলো সামনে সরিয়ে দিয়ে তিলটা দেখতে লাগলো,, ডিজাইনার ব্লাউজ হওয়ায় পিঠের বেশিরভাগ অংশই ফাঁকা ছিলো তাই রওশন গরম নিঃশ্বাস দিয়ার পিঠে পড়তেই ও ফ্রিজড হয়ে যায়। রওশন তিলটার দিকে নিজের ঠোট এগিয়ে দিচ্ছে,, ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে ও,,, [ ওদের দেখার প্রথম দিন গাড়িতেই দিয়ার ওই তিলটা প্রথম দেখে রওশন। সেদিন ওর খুব ইচ্ছা করছিলো তিলটা একবার ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সেদিন অধিকার ছিলো না। আজ আছে। ] রওশন দিয়ার তিলটা নিবিড় ভাবে দুই ঠোটের মাঝে চেপে ধরে,, কাঁপুনি ধরে গেলো দিয়ার সারা শরীরে।
রওশন হঠাৎ ওখান থেকে উঠে যায়। দিয়া কাঠের মতো বসে থাকে,,,
—- রশনি আপু আর তিথি যা বলেছিলো তা তো একদম হলো না। ব্যাটা খালি একবার কিস করেই দৌড় দিসে। এ কেমন বর..? হি*রা ব্যাটা বউরে টাচ করতেও কি ভয় লাগে তোর..?? এরকম চললে আমার বেবি আসবে কিভাবে..?? তিথির কথা যদি সত্যিই হয়ে যায়..?
ওদিকে রওশন দিয়ার ফোন নিয়ে করিডোরে দাড়িয়ে আছে।
—- ফোনে কি এমন আছে দিয়াপাখি যে তুমি বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছো..? তোমার মাথায় বেবির ভুত কে চাপালো,,, তোমাকে বুদ্ধি দিচ্ছে কে..??
রওশন ফোন অন করে ম্যাসেজ অপশনে ঢুকলো,, রশনি আর তিথির ম্যাসেজে ভরা,,, কিছু ম্যাসেজ দেখে রওশনের রাগ লাগলেও পরের ম্যাসেজগুলো দেখে অটোমেটিক হেসে দিলো। তিথি তো রীতিমত ভয় দেখিয়েছে। বলেছে
—- দিয়ু বেবি শোন তোর বিয়ে হয়ে গেছে,, বড় হয়ে গেছিস তুই।
দিয়া রিপ্লাই দিয়েছে,,,
—- হয় আম্মা তোগো মাইয়্যা আমি,, কি কবি ডিরেক্ট ক নাইলে লাথ্থামু তোর ঘরে গিয়ে।
—- রাগিস কেনন..? আমি বলতে চাচ্ছি তোর বর যে পরিমাণে হ্যান্ডসাম আর গুড লুকিং ওয়ালা বাডডি তাতে তোকে ওর পাশাবে মানাবে না,,, তুই তো এখন ওর মোহ,, মোহ কেটে গেলে দেখবি তোকে ছেড়ে দিবে।
—- কি বলিস..?? ওই সাদা যমরাজের পেটেপেটে এই..??
—- দেখতে তো ইনোসেন্ট পেটে কি আছে তা বুঝবো কিভাবে..? এক কাজ কর বেবি প্লানিং করে ফেল।
—- তোর সবকিছুতেই এইসব।
—- ওই বলদি বাচ্চাগাচ্চা থাকলে রওশন ভাইয়া আর কোনোদিকে যেতে পারবি না বুঝলি,,, তাই চুপচাপ তাই কর যা আমি বলছি
—- দেখ তিথি আমি ওরকম কিছু করবো না।
—- তুই যদি আজ রাতে কিছু না করিস তো দেখবি কাল থেকে কলেজের সুন্দরি মেয়েদের ভাইয়ার পিছে লেলিয়ে দিবো,,, সুন্দরি মাইয়াগো ভীরে শ্যামলতারে খুইজ্জা পাওন যাইবো না।
তারপর কিছু বুদ্ধি দিয়েছে বররে এট্রাক্টেড করার।রওশন ম্যাসেজগুলো পড়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
—- আমার পিচ্চি বউটাকে একেবারে পাঁকিয়ে ফেলেছে এরা। শেষমেশ আমাকে নিয়েই ব্লাকমেল..?
রওশন আবার রুমে চলে আসে,, বিছানার কাছে আসতেই ওর চোখ চড়কগাছ। প্লান নাম্বার ১. অনুযায়ী দিয়া শাড়ি পাল্টে নেটের একটা পাতলা শাড়ি পড়ে রওশনের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। রওশন দিয়াকে পাত্তা না দিয়ে বিছানার ওপর গিয়ে বসে। প্লান ২. দিয়া এবার আঁচল ফেলে শো শো করে শাড়ির কুচিসহ পুরো শাড়িটা খুলে ফেললো। রওশন চোখবুজে বালিশে শুয়ে পড়লো। দিয়া এবার রওশনের বুকের ওপর গিয়ে উঠে বসলো,,,
—- আহ দিয়াপাখি এতো রাতে কি হচ্ছে এসব। চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো। আর আমাকেও ঘুমোতে দাও।
রওশন চোখ বুজেই কথা বলছে,,, এদিকে দিয়ার প্রচুর কান্না পাচ্ছে। ও রওশনের উপর থেকে সরে গিয়ে মেঝেতে ফেলা শাড়িটা আবার তুলে পড়তে লাগলো,,
—- ভালোইবাসে না আমাকে,,, ভালোবাসলে একবার অন্ততো আমাকে দেখতো,, আমার দেহের গাঁথুনি কি খুব বাজে নাকি..?? যে বরও আমাকে পাত্তা দিলো না।তিথি ঠিক বলেছিলো,, এখন তো মোহ কেটে গেছে। আমি তো অসুস্থ রোগী। অসুস্থদের ওপর কি ভালোবাসা থাকে..? থাকে না তো। আমি তো দেখতেও আগের চেয়ে খারাপ হয়ে গেছি তাই আমার ওপর ওনার কোনো এট্রাক্শনও নাই। খালি বিরক্ত করি তাইনা..? আর করবো না এই ঘরেই থাকবো না।
কাঁদতে কাঁদতে করিডোরে চলে গেলো দিয়া। রওশন তৎক্ষনাৎ উঠে বসে।
—- বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম না তো..?? এই মেয়েটাও না অধিকার ফলাতে পারে না। আরে বাবা আমি তো যাস্ট দেখছিলাম তুমি কি কি প্লান এপ্লাই করো। ১০-১২টার প্লানের মধ্যে ২টা করেই কাহিনি শেষ।
দিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে আর ওর মায়ের কাছে নালিশ করছে,,, দমকা হাওয়া বইছে,, দিয়ার আঁচল গড়িয়ে নিচে পড়ছে আবার শূণ্যে ভাসছে,, পেছনে দাড়িয়ে রওশন দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,,, চাঁদের আলোয় খোলা চুলে মেয়েটা অপূর্ব সুন্দর লাগছে রওশনের কাছে,, চোখের পাপড়িতে পানি জরিয়ে আছে,, নাকের ডগায় কিছুটা ঘাম চিকচিক করছে,,, চুলগুলোও আজ অনেক অবাধ্য হয়ে গেছে,, রওশনকে ঠিক করে দেখতেই দিচ্ছে না তার দিয়াপাখিকে।রওশন পেছন থেকে দিয়াকে হাতদুটো শক্ত করে ধরে ওকে জরিয়ে ফেলে নিজের বুকের সাথে। আচমকা এমন হওয়ায় দিয়া ভয় পেয়ে যায়,,, রওশনের গলায় দিয়ার মাথা ঠেকেছে,, রওশন আস্তে আস্তে দিয়ার অবাধ্য চুলে মুখ ডুবিয়ে দেয়। রওশনের হাত,, ক্রমশ দিয়ার পেটের দিকে যেতে লাগলো,, নেটের শাড়ি হওয়ায় পুরোটা পেটই অনুভব করা যাচ্ছে,, সুখের আবেশে চোখ বুজে আছে দিয়া।
রওশন দিয়াকে কোলে তুলে নিলো,, তারপর বিছানায় দিয়াকে রেখে দিয়ার স্নিগ্ধ চেহারার দিকে একবার তাকালো,, চোখটা এখনো ভিজে আছে,, আর চোখের কোণা বেয়ে একফোটা জল গড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে। রওশন ঠোট দিয়ে জলটুকু শুষে নিলো,, দিয়ার সারা শরীরে এক অদ্ভুদ অনুভূতি কাজ করছে,,, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে,, লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে। রওশনেরও ঘোরঘোর লাগছে দিয়ার লজ্জামাখা মুখটা দেখে। রওশন সবার আগে দিয়ার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো,, হাত দিয়ে নাকের ওপর থেকে স্লাইড করতে করতে ঠোট অবধি নামে,, চোখটা স্থীর হয়ে যায় দিয়ার কাঁপা কাঁপা ঠোটের ওপর। রওশন দিয়ার মাথার পেছনে আলতো করে হাত ঢুকিয়ে দিয়ার মুখটা ওর আরো কাছে নিয়ে আসে। ঠোট দিয়ে নিজের জিব্হাটা ভিজিয়ে আয়ত্ত্ব করে নেয় দিয়ার ঠোট। অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দেয় দিয়ার মুখশ্রী,, গলা। এক হাতে দিয়ার বুকের ওপর থেকে আঁচল সরিয়ে দিতেই দিয়া লজ্জায় উবু হয়ে শুয়ে পড়ে। রওশন দিয়ার ব্লাউজের ফিতাটা খুলে সারা পিঠে চুমু খেতে লাগলো। দিয়া বালিশের কভার শক্ত করে চেপে ধরলো,,, তা দেখে রওশন মুচকি হেসে নেশালো কন্ঠে বললো,,
—- এখন লজ্জা পাচ্ছো কেন দিয়াপাখি। খুব তো এসেছিলে বাবু নিতে। এখন লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলে চলবে..? সবে তো ভালোবাসার সমুদ্রে পা ডুবিয়েছো সাতার কাটার তো অনেক বাকি,,, তোমার লজ্জা আজ আমার হাতেই শেষ হবে,, আমি আমি..? তোমার ভালোবাসায়।
হারিয়ে গেলো দুজন একে অপরের ভালোবাসায়,, অবশেষে পূর্ণতা পেলো ওদের ভালোবাসা। আজ পূর্ণিমার চাঁদের আলোতেই ঘুচে যাবে ওদের জীবনে সব অন্ধকার অধ্যায়। নতুন সকালের সাথে সাথে শুরু হবে ওদের সামনের দিকে এগিয়ে চলার নতুন পথ।
চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here