#অদ্ভুদ_বর
#দিয়া_মনি [ DîYã MôÑî ]
#পর্ব_১৩
ধুসর রং একটা শাড়ি পড়েছে দিয়া। দেবরের সাথে নাইট স্পেন্ড করবে একটু না সাজলে হয়..?😅😅😅 ওদিকে রোশানের মুখে শয়তানি হাসি। আর রওশন? সে ছাদে বসে তারা গুনছে।
রাত সাড়ে ৯টা হয়তো,, চারিদিকে ছমছমে পরিবেশ। সবাই এর মধ্যেই ঘুমিয়ে গেছে। রোশান ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলোর দিকে। দরজা টা খুলতে ওর সামনে ঝাপিয়ে পড়ে একটা মেয়ে,,
বেশি ভয় না পেলেও একটু কেঁপে ওঠে রোশান। হাত দিয়ে মেয়েটাকে ঘোরাতেই রোশানের মেজাজ বিগড়ে গেলো,, এটা তো একটা পুতুল । বাংলোয় অনেকগুলো বড় বড় পুতুল মূর্তির সোপিস আছে সেখান থেকেই নেওয়া এটা। রোশান দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না।
— তুমি ভয় পাওনি। আবার বাইরে যাও। আমি আবার ভয় দেখাবো। আর তুমি ভয়ে চিল্লাবা। নাহলে আমি আজ তোমার সামনে আসবো না।
কথাগুলো বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগলো দিয়া। দিয়ার কথাগুলো দেয়ালের সাথে বারি খেয়ে রোশানের কানে লাগছে,, অস্থির হয়ে ওঠে রোশান। ওর শক্তির প্রভাব যে দিয়ার ওপর পড়বে না। আর দিয়া যতক্ষন না চাইবে ততক্ষন রোশান ওকে খুজেও পাবে না।
— মেয়েটা অতিরিক্ত চালাক। লকেটের ক্ষমতা সম্পর্কে কি জেনে গেছে..?? কিন্তু আমার সম্পর্কে জানবে কিভাবে..? হয়তো রওশন ভেবেই বাচ্চামি করছে।
ভাবতে ভাবতে আবার বাইরে চলে গেলো রোশান। দিয়া সেই সুযোগে পুতুলের সাথে সাথে মেঝেতে তেল ঢেলে দিলো।
— জ্বীন হও বা ভুত এখন তো মানুষের রূপেই আছো,, আসো ভেতরে তেলে মেঝেতে এক হবা। দেবরজি। এটা তোমার একমাত্র ভাবির তরফ থেকে তোমার মুখ দেখার উপহার। তুমি তো কিছু দিলে না তাই আমি দিলাম।
রোশান এবার দরজা খুলতেই পুতুলটি এসে ওর গায়ের ওপর পড়লো,, ও নিজেও একটু ভয় পাওয়ার ভান করে চিৎকার দিলো যা দিয়া আর রওশন ছাড়া কেউ শুনলো না। রওশন ওর চিৎকারে ভয় পেয়ে গেলো।
— রোশান চিৎকার দিলো কেন..? কি হয়েছে নিচে..?
রওশন ছাদের ওপর থেকে এক লাফে সানসেটের ওপর গিয়ে দাড়ায়। এখান থেকে সবটা স্পষ্ট দেখা যাবে।
ওদিকে রোশান বাংলোর ভেতরে ঢুকতেই চিটপটাং। রোশানের রাগ এবার চরম সীমায় পৌছে গেলো।
— জান পড়লে কিভাবে..?? ব্যাথা পাওনিতো..? উঠে পড়ো নাহলে আমার সার্প্রাইজটাই তো নষ্ট হয়ে যাবে। ( বাহ পড়ছিস ভালো হইছে আরো পর। পইরা মর। বেয়াদব দেবর, ভাবির সাথে টাংকি দেয়ার মজা বুঝবি আজ। কেবল তো শুরু তোর জন্য আরো প্লানিং আছে। বলদ নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনলি। )
— না ঠিক আছে দিয়াপাখি। কিন্তু তুমি কোথায়..?
— বলবো না। না মানে বলবো কেন..?? খুজে নাও। তুমি আমাকে খুজে নিলেই আমি তোমাকে তাই দিবো যা তুমি চাও। ( বাল দিবো শয়তান। তোরে তো টাইট দিমু। দিয়ারে চিনোস না তুই।)
— রওশনের চেয়েও দেখছি এই মেয়ে বেশি ধূর্ত,, একে কি এভাবে বাগে আনা যাবে..? অন্য উপায়ও তো নেই। ( মনে মনে বললো রোশান আর সবটাই শুনে নিলো দিয়া )
— জ্বীন জাতির চামচা। তোর তো ব্যান্ড বাজাবোই সেই সাথে আমার বরেরও বাজাবো। ( মনে মনে)
দিয়ার কথা শুনে রওশন ঘাবড়ে গেলো।
— আমি আবার কি করেছি..?? ভাই আর বউ দুইটাই আমার বিপক্ষে দৌড়ায় সবসময়।
রোশান উঠে সামনের দিকে একপা দিতেই পুরো বাংলো আগুনের আলোয় জ্বলজ্বল করে উঠলো। বাংলোর চার কোনায় বড় বড় ৮টা মোমবাতি আর সিড়ি সহ চারদিকে ছোট ছোট মোমবাতি। পিকনিকের জন্য এগুলো আগেই এনেছিলো টিয়া। ব্যাস কাজে লেগে যাচ্ছে সব।
সিড়ির ঠিক উপরেই দিয়া দাড়িয়ে আছে,, এলোমেলো চুল হাতে বালার ঝন ঝন শব্দ। পায়ে নুপুরের ঝুমঝুম আওয়াজ,, রোশান দিয়ার মুখের দিকে তাকাতেই দিয়া লজ্জাবতি লতার মতো চোখ নামিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর হেটে চলে বারান্দা দিয়ে। শাড়ির আঁচলটা এখনো পতাকার মতো উড়ছে। রোশানের আজ প্রথম দিয়াকে দেখে অন্যরকম অনুভুতি অনুভূত হচ্ছে । জ্বীন হওয়ায় ও মানবীদের দিকে বেশি নজর দিতো না। তবে আজ চোখ সরাতেই পারছে না।
— যে করেই হোক তোমাকে আজ আমি নিজের করে নিবো দিয়া। তুমিই হবে আমার সন্তানের মা আর আমাদের সন্তান হবে রওশনদের কাল। ( মনে মনে বললো রোশান)
— আমাকে কি তোর বাচ্চা দেয়ার ম্যাশিন মনে হয়..? তোরা জ্বীন হয়েও এতো মেয়েবাজ কেন রে..? তোদের কি পরিটরি চোখে পড়ে না..? এই প্রথম কোনো জ্বীন দেখলাম। তাও তোর মতো। লুচ্চা জ্বীন।
দিয়া মনে মনে গালি দিচ্ছে আর ওর কথা শুনে রওশন হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।
— মেয়েটা যতটা বুদ্ধিমতি তার থেকে ১০গুন বেশি দুষ্টু। বেচারা ভাইটা আমার, আজ বুঝবি তোর ভাবি কি জিনিস। ( রওশন।)
দিয়া একটা রুমের মধ্যে ঢুকে গেলো,, রুমের পুরোটা সাদা কাপড় দিয়ে ভরা। পর্দা জিনিসপত্র সবকিছু কাপড় দিয়ে ঢাকা সেই সাথে সিলিং এর দড়ির ভাজে ভাজে কাপড় ঝুলছে। রোশান রুমের মধ্যে ঢুকে দিয়াকে খুজতে লাগলো,,
— আমি তোমার বাম দিকে,,, এবার ডানদিকে, খুজো আমাকে। ধরতে পারবে না। ধরো আমাকে, ধরো।
— দিয়াপাখি লক্ষিটি সামনে আসো। এভাবে খুজবো কিভাবে..??
ওদিকে দিয়া রুমের বাইরে থেকে উকি মেরে রোশানের নাজেহাল অবস্থা দেখে হাসছে। কারন ও তো রুমের মধ্যেই নেই রুমের মধ্যে যে মেয়েটা আছে সে হলো দিয়ার যমজ বোন ভিভো ( ফোন )। দিয়া রেকর্ডিং বাজিয়ে রোশানকে আঙ্গুলের ওপর নাচাচ্ছে।
— হায়রে বেকুব। তোর এই নাজেহাল চেহারা দেখে আমারই তোর জন্য কষ্ট হচ্ছে। রেকর্ডিং ২০ মিনিটের ৬মিনিট হহইছে তুই এখানে আরো ১৫ মিনিট দৌড়া আমি তোর জন্য আরেকটা বাশ রেডি করি।
রোশান এখনো খুজছে ওদিকে দিয়ার কাজ শেষ। দিয়া চিল্লিয়ে রোশানকে বললো।
— আমি বাইরে এই যে দরজার কাছে। আসো এদিকে।
— উফ মানুষ সেজে ভুল করে ফেলছি,, কুকুরের সামনেও মনে হয় এতো দৌড়ানি খাইনি।
[ শুনেছি অশুভ শক্তি বা জ্বীনদের নাকি পশুপ্রাণী রা দেখতে পারে তাই কুকুরের জাতি উল্লেখ করলাম ]
— আভি তো ম্যারাথন শুরু হুয়ি হ্যায় আগে আগে দেখো হোতা হ্যায় ক্যা দেবরজি সরি জ্বীন জাতির কলঙ্ক।
দিয়া সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো,, নিচের একটা রুমে সকালে ও কুরআনশরিফ দেখেছিলো,, যেটা একটু আগে ওযু করে অন্য রুমে এনেছে দিয়া।
— শয়তানরা তো আল্লাহকে ভয় পাবে। খারাপ জ্বীন তো শয়তানের যমজ ভাই। কুরআন শরিফ দেখলে এমনিই ওর হাটু কাঁপবে। আচ্ছা ওযু তো করাই আছে সূরা জ্বীনের দুআয়াত পড়বো নাকি..? ওরনাটা দিয়ে হিজাব বানাই।
রোশান দিয়াকে খুজতে খুজতে রুমের মধ্যে আসে। রুমে ঢুকে দেখে দিয়া জানালার কাছে বই জাতীয় কিছু একটা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। দিয়ার দিকে এগোতে লাগলো রোশান। অমনি দিয়া তিলাওয়াত করতে শুরু করে,,, কানসহ ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে রোশানের। দিয়ার দিকে তাকতেও কষ্ট হচ্ছে ওর। দূর্বল হয়ে পড়ছে আস্তে আস্তে।
— ভাবলাম শুভ কাজের আগে একটু আল্লাহকে স্বরণ করবো আর একটু কুরআন তিলাওয়াত করবো। ভালো করেছি না আমি..??
অনেক কষ্টে রোশানের গলা দিয়ে একটা শব্দ বের হলো।
— হুম
— ছাদে চলো। আজ তোমার স্নিগ্ধ চেহারার চাঁদের আলোয় দেখবো,, ওহ হো এখন তো চাঁদও নেই মানে এক ফাঁলি আছে। তুমি আসো আমি একটু গুছিয়ে নেই।
— মেয়েটা কি জেনেশুনে এমন করছে..?? না আর অপেক্ষা করা যাবে না। অলরেডি ২ঘন্টা ধরে ঘুরছি। সাড়ে ১১টা বেজে গেছে হয়তো। এবার ডিরেক্ট ওকে প্রাপ্ত করতে হবে।
আধা ঘন্টা পড়ে রোশান ছাদে গেলো আর দেখলো দিয়া ছাদের এক কর্ণারে দাড়িয়ে নিচের পুকুরটার দিকে তাকিয়ে আছে। পরনে ব্লাউজ আর পেটিকোট। শাড়িটা মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রোশানের মনে এবার রসমালাই ফুটছে,, (লাড্ডু তো মানুষদের মনে ফোটে) রোশান পেছন থেকে দিয়ার পেট জরিয়ে ধরে ওর কাধে চিবুক রাখে।
— (কি হলো দিয়ার শরীর এমন কাঠের মতো শক্ত হয়ে গেলো কেন..? গায়ের মাদকমিশ্রিত গন্ধটা তো ঠিকই পাচ্ছি।) দিয়াপাখি হঠাৎ শক্ত হয়ে গেলে কিভাবে..??
কথাটা বলার পরপরই দিয়ার হাসির শব্দ পাওয়া গেলো। তবে সেটা রোশানের পেছন থেকে আসছে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো রোশান। পেছনে তাকাতেই দেখলো দিয়া দাড়িয়ে খিলখিল করে হাসছে।
— তুমি ওখানে তাহলে এটা কি..?
— ওটা সোপিস নিচ থেকে তুলে এনে আমার পেটিকোট আর ব্লাউজ পড়িয়ে দিয়েছি। আমার পছন্দের পার্ফিউমও মাখিয়েছি। আর তুমি কিনা ওকে গিয়েই। হা হা হা
রোশান নিজের রাগ কন্ট্রোল করার জন্য মুখ ঘুরিয়ে নিচে থাকা একটা বরই গাছের দিকে তাকালো,, ঠিক তখনই ওর চোখ থেকে এক তীব্র রশ্মি বেরিয়ে গাছটাতে পড়লো। সাথে সাথে আগুন ধরে গেলো গাছে। তবে গাছটা ছোট হওয়ার কেউ কিছু বুঝতে পারলো না।
— এতো দৌড়ানির পর মনে হয় আমার মিষ্টি জ্বীন দেবরের রোম্যান্স করার মুড চলে গেছে। যাক ভালোই হয়েছে।
— ( কিভাবে দিয়ার কাছে যাবো..? ও যদি স্বেচ্ছায় আমাকে না ডাকে তাহলে তো আমি ওকে স্পর্শও করতে পারবো না। কিছু একটা করতেই হবে।) দিয়াপাখি কেমন লাগছে এখন।
— বেশ ভালো। সত্যিই থ্যাংকইউ এতো সুন্দর পিকনিক স্পট বাঁছার জন্য।
— আমার একটা অনুমতি চাই দিয়াপাখি। তুমি কি অনুমতি দিবে আমায়..?
— কি বলো তো..?
— আজ আরো একবার তোমাকে এখানে এই সুন্দর ওয়েদারে নিজের করে নিতে চাই।
— বাট আমি তো তোমার ওপর ইমপ্রেস্ড না। মানে বোরিং লাগে তোমাকে।
— আজ রাতে তোমার ইচ্ছা মতো সব হবে দিয়াপাখি। তুমি শুধু অনুমতি দাও। পৃথিবির সব সুখ আজ তোমার পায়ে ঢেলে দিবো আমি।
— দিয়ে দেখাও। যদি দেখাতে পারো তাহলে আমি তোমাকে একটা চান্স দিলেও দিতে পারি। ( দুই ভাই যথেষ্ট লুচ্চা। উনার কথা বাদ দিলাম উনি ওনার বউএর সাথে লুচুগিরি করে। বলতে গেলে ভালো লুচু। আর এটা ভাবির সাথে রাত কাটাতে চায়। এমন দেবর থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।)
— আমার মতো একটা জ্বীন কিনা এই মেয়েটার গোলাম হয়ে গেলাম..? রওশনের চয়েজ খারাপ প্যাচাল টাইপের মেয়ে বিয়ে করছে। অন্য মেয়ে হলে এতোক্ষনে আমার কাজ হয়ে যেতো। এখন যদি শক্তির ব্যবহার করি তাহলে ও আমাকে চিনে যাবে। দূরে সরে যাবে। কিন্তু এখন ওকে ইমপ্রেস করবো কিভাবে..??
রওশন এবার ছাদের দরজার পাশ ঘেসে দাড়ালো,, দিয়া ততক্ষনে রওশনকে দেখে ফেলেছে।
— (এবার সময় এসেছে ওনাকে জ্বালানোর।) জান তুমি বসো আমি তোমার মাথা টিপে দেই।
রোশান যেন এমনকিছুরই অপেক্ষা করছিলি। ও সোজা ছাদের দোলনায় বসে পড়লো। দিয়া বসতেই দিয়ার কোলে মাথা রাখলো। দিয়া ওর মাথা টিপে দিচ্ছে আর রওশনের দিকে তাকাচ্ছে। বেচারার মুখটা অভিমান আর কষ্টে কালো হয়ে গেছে।
— দিয়াপাখি কিছু বলো… এখন কি ইচ্ছা করছে তোমার..?
— ( তোর মাথা না টিপে গলা টিপে দিতে ইচ্ছা করছে।)তোমার কি ইচ্ছা করছে..??
— ভালোবাসতে।
— ওহহ।
চট করে উঠে বসলো রোশান। দিয়ার দিকে একটু একটু করে এগোচ্ছে ও। দিয়া উঠতে গেলেই রোশান দিয়ার হাত টেনে দোলনার ওপর ফেলে দেয়।
— শুধু “ওহহ” বললে হবে..? পতিসেবা করতে হবে না..??
দিয়ার দুহাত দোলনার সাথে চেপে ধরলো রোশান। দোলনার ঘসা লেগে চেইনটা খুলে নিচে পড়ে গেলো। আৎকে উঠলো রওশন । এবার কি হবে..??
চলবে,,,