#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
সবাই মিলে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছে। রুহি শখকে’ও বাসার সবার সাথে খেতে বসিয়ে দিয়েছে। যেহেতু শখ ছিলো না।
–তা শালা বাবু কোথায় ছিলে।জিসানের কেক কাটার সময় তো তোমাকে দেখলাম না।বলল আকাশ। (রুহির স্বামী)
–বাহিরে কাজ ছিলো।তাই আসতে পারি নাই। (গম্ভীর হয়ে বললো দেখেই বোঝা যাচ্ছে আয়ান বেশ রেগে আছে।)
আয়ানকে আরেকটু রাগানোর জন্য আকাশ বললেন।তুমি কি প্রেম করছো নাকি শালা বাবু।তোমার হাতে কামড়ে দিয়েছে কে।দেখি দেখি কি অবস্থা হাতের। অবাক হওয়ার ভান ধরে।
–আরে দুলাভাই ও কিছু না।
–ও কিছু না মানে কি সত্যি তো তোর হাতে কি হয়েছে। আগে খেয়াল করি নাই। সত্যি করে বল তুই আবার প্রেম করছিস না তো আয়ান।
–মা কি শুরু করে দিলে বলো তো আমাকে কি খেতে দিবে নাকি উঠে চলে যাব।
–তুই রেগে যাচ্ছিস কেনো।দেখ তো তোর হাতের কি অবস্থা। লাল হয়ে আছে।কিছুটা কেটে’ও গেছে। রক্ত জমাট বেঁধে আছে।ঔষধ’ও তো লাগাস নাই।তুই যে কি করসি।
সবার কথা শুনে শখ আয়ানের হাতের দিকে তাকালো সত্যি তো তখন ভয়ে নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে কামড়ে দিয়ে ছিলো।অদ্ভুত বিষয় এতজোরে কামড়ে দিলাম।উনি এতটুকু ও শব্দ করলো না।শখের ভাবনার মাঝে রুহি বলে উঠলো।
–একি তোমার খাওয়া শেষ শখ।এতটুকু খেলে হবে।এই জন্য-ই তোমার শরীলের এই অবস্থা। শুকনা একদম।
–আমি আন্টির থেকে বেশি ভাত খাই তাই না বলো আম্মু।আন্টি তো আমার থেকে-ও বড় মাননীয় হাড্ডিমন্ত্রী হয়েছে।
জিসানের কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো।
–হ্যাঁ হয়েছে ওর অনেক খাওয়া হয়েছে। এবার বাড়ি চল।অনেক রাত হয়েছে। আমি তোর জন্য সারারাত জেগে বসে থাকতে পারবো না।মহারানী হয়েছেন।ওনার জন্য বসে থাকতে হবে।বলল মুনতাহা।
–তুমি ওকে এভাবে বলছো কেনো।তোমাকে বলেছিলাম স্যারদের সাথে যেতে পারো।আমি শখকে সুস্থ হালে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো।বলল রুহি।
–হ্যাঁ আপনি মেয়ে হয়ে কেমন দিয়ে আসতেন আমার জানা আছে।
–আমি যেতে পারতাম না ঠিকি।কিন্তু ভাইকে বললে পৌঁছে দিয়ে আসতো।
–হ্যাঁ সেই জন্য যাই নাই।আপনার ঐ ভাইকে আমার একদমই বিশ্বাস নেই। এমনি আমার বোনকে দেখতে পারে না।যখন তখন শাস্তি দেয়।রাগে না জানি আমার বোনটাকে মেরে কোথায় ফেলে দিয়ে আসবে।
–আপু চুপ থাকো।তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো।
আয়ান রেগে কিছু বলতে যাবে।তার আগেই আয়ানের মা মিসেস নিলিমা চৌধুরী চোখ দিয়ে ইশারা করে না করে দেয়। বুঝিয়ে দেয়।তাদের সন্মান নষ্ট হয় এমন কাজ সে যেনো না করে।আয়ান রেগে না খেয়েই উঠে চলে গেলো।
–তোর থেকে শিখতে হবে।আমি কি করে কার সাথে কথা বলবো।
— তুমি আমাকে যা ইচ্ছে খুশি বলতে পারো কিন্তু রুহি আপুকে বলতে পারো না।উনি বয়সে আমাদের থেকে বড় তাই ওনাকে আমাদের সন্মান করা উচিৎ।
রুহি যতই শখকে দেখছে।মেয়েটাকে আরো বেশি ভালো লাগছে।মুনতাহার কথায় রাগ হলেও প্রকাশ করলো না।
–চুপ থাকো তোমরা ছোট আছো নাকি বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছো।আজ রাতে যাওয়ার দরকার নেই। আজ রাতে আমাদের বাসায় থেকে যাও।
–তার কোনো দরকার নেই আপু। আমরা কারো বাসায় থাকি না।আসি ভালো থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ।
–আরে শুনো একা যাবার দরকার নেই। আমি আয়ানকে বলছি তোমাদের নামিয়ে দিয়ে আসবে।অনেক রাত হয়েছে। গাড়ি পাবে না। তোমরা।
–পাগল নাকি ঐ বাজে লোকের সাথে কিছুতে-ই যাব না।
–আপু তুমি রাগ করো না রুহি আপু সত্যি কথা বলছে। আমি বাহিরে গিয়ে দেখে আসছি।
–এ্যাঁ মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি। তোর নিজের বোনের সামনে রেখে সারাদিন রুহি আপু রুহি আপু করছিস কেনো।আমি কি মরছি নাকি রে।
–এমন করে বলছো কেনো।তুমি খালি বাজে কথা বলো।
–আমার কথা তো বাজে লাগবেই। আমি মানুষটাই বাজে।
ওদের ঝগড়ার মাঝে আয়ান নিচে এসে হনহন করে বাহিরে গিয়ে গাড়িতে বসলো।
মুনতাহা আর শখ যখন ঝগড়া করছিলো তখন রুহি তার মাকে বলে আয়ানকে নিয়ে আসতে।আয়ান আসতে না চাইলে’ও ওর মা জোর করে পাঠায়।
শখ আর মুনতাহা গিয়ে গাড়ির পেছনে গিয়ে।এটা দেখে আয়ান আরো রেগে যায়।
–আপু আমি গাড়ির ড্রাইভার নয়।ওদের বলে দাও।
এবার মুনতাহা শখের দিকে তাকায় শখ মুনতাহার দিকে।
–আপু তুমি যাও।আমি যাব না।আমার ভয় লাগে ঐ রাক্ষস টাকে…আর কিছু বলতে পারলো না।আয়ান চোখ গরম করে তাকালো।
–তুই বড় না আমি বড়।তুই আমাকে যা বলবি।আমি তাই শুনবো নাকি।যা গিয়ে সামনে বস।আর একটা কথা বললে তোর খবর আছে।
বেচারি শখ নিরুপায় হয়ে আয়ানের পাশে গিয়ে বসলো।
আয়ান শখদের বাসায় সামনে নামিয়ে দিয়ে এক সেকেন্ড’ও দেরি না করে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে আসলো।
বাসায় এসে কারো সাথে কোনো কথা বললো না।চুপচাপ উপরে নিজের রুমে চলে গেলো।
পরের দিন সকাল বেলা। কলেজে গোল হয়ে বসে আছে শখ ও তার কুত্তার দল। শখ ভালোবেসে নামটা দিয়েছে।
–কিরে কাল মুনতাহা আপু তোকে নিয়ে গিয়েছিলো কেনো রে।বলল আয়েশা।
–মনে ওকে বিয়ে দিবে।ছেলে দেখতে কেমন রে।যাক একটা বান্ধবীর তো বিয়ে খেতে পারবো।বলল মেধা।
–আমার খাওয়া পেলে-ই হয়েছে বিয়ে হলেই কি আর মরে গেলেই কি।বলল কাব্য।
–তোর মুখে ঠাডা পড়বো কইলাম কাব্য।সব সময় খালি খাওয়া আর খাওয়া।তুই খাওয়া ছাড়া কিছু বুঝিস না নাকি।বলল আমান।
–না বুঝি না।তোদের কিরে।তোদের এত জ্বলে কেনো।
–মরলে’ও বলবে খেতে দে।মরার পরের খাস তুই।বলল সিয়াম।
–আচ্ছা তোদের কথা শুনবো নাকি মুনতাহা আপু কেনো শখকে নিয়ে গিয়েছিল সেটা শুনবো তাই বল।বলল স্নেহা।
–একদম ঠিক কথা বলছিস।স্নেহা তুই। কুত্তা গুলা সারাদিন ভাউ ভাউ করতেই থাকে।বলল মেধা
–দিব একটা থাপ্পড় লাগিয়ে আমরা কুত্তা হলে তুই কি হাতি একটা।বলল সিয়াম।
–দে দেখি তোর কতো সাহস।যদি থাপ্পড় না দিতে পারিস।তোর আজকে আছে বলে দিলাম।
–দেখলি তো এখন কে ভাউ ভাউ করছে।আমরা না বরং তুই কুত্তা।
–আচ্ছা আমি ঘুমাইলাম। এদের ঝগড়া শেষ হলে আমাকে ডাক দিস।বলল শখ।
সবাই মিলে বললো আচ্ছা ঠিক আছে।একটু পরেই আবার বলে উঠলো এই না…..
–তোর খালি সারাদিন ঘুম আর ঘুম।বল কালকে কেনো নিয়ে গিয়েছিল আপু।বলল আয়েশা।
–কাকে বলবো এখানে আমার কথা শোনার মতো কেউ আছে।খুঁজার ডং করে বললো শখ।
–তোর কি আমাদের চোখে পড়ে না।
–তোরা কি আদো আমাকে কথা বলতে দিচ্ছিস।
এবার সবাই চুপ।
তারপরে শখ সবাইকে সবকিছু বলে দিলো।সবটা শুনে কেউ শখের কথা বিশ্বাস করলো না।মজা ভেবে উড়িয়ে দিলো।
আমেরিকার ব্যস্ত শহরে অন্ধকার রুমে বসে আছে এক যুবতি কন্যা।তার সামনে পুরো রুম জুরে আয়ানের ছবি।
–না তুমি আমাকে বুঝলে।না আমার ভালোবাসাটা বুঝলে আয়ান।তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি কি করি নাই। আজ সবকিছু হারিয়েছি শুধু মাত্র তোমার জন্য আয়ান।তাতে কি এখনো হাল ছেড়ে দেই নাই আমি।রেডি হও আসছি আমি তুমি আমাকে কোনো ভাবেই ফিরিয়ে দিতে পারবে না।আমার পড়াশোনা’ও শেষ এবার।তুমি আমাকে কোনো ভাবেই না করতে পারবে না।বিয়ে তো তোমার আমাকেই করতে হবে।
বলেই মেয়েটি আয়ানের ছবি বুকে নিয়ে হাঁসছে।
–হেই শখ কেমন আছো।বলল আয়াশ।
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি।
–আমি’ও ভালো আছি।কিছু মনে না করলে আমরা কোথাও বসে কথা বলতে পারি।
–এখানেই বসেন।আমরা এখানে বসে কথা বলতে পারি।
–নারে শখ এখন আয়ান স্যারের ক্লাস সময় নেই চল।বলল আয়েশা।
–দূর তোরা যা আমি যাব না।ঐ লোকের ক্লাস আমি করবো না।(সকালে সালাম দিলাম কেমন ভাব করলো আমাকে চিনেই না।ভাব দেখিয়ে চলে গেলো আমি’ও ওনার ক্লাস করবো না।)
–তোর মাথা ঠিক আছে শখ।স্যার যদি জানতে পারে তাহলে তুই শেষ। বলল মেধা।
–আমার ইচ্ছা সেটা।আমি কি স্যারের বউ নাকি যে,উনি আমাকে যা ইচ্ছে খুশি করতে পারবে।যাব না দেখি উনি কি করতে পারে।চলুন আয়াশ।
বলেই আয়াশের সাথে চলে গেলো শখ।সবাই অবাক হয়ে শখের দিকে তাকিয়ে আছে। হলোটা কি শখের।
আয়ান ক্লাস শেষ করে বেড়িয়েছে।মেয়েটাকে তো ক্লাসে দেখালাম না।গেলো কোথায় মেয়েটা।সকালে তো দেখালম কলেজে আসছে।ভাবতে ভাবতে আয়ান ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলো।তখনি চোখ যায় আয়াশ আর শখের দিকে।আয়ানের মাথায় আগুন ধরে গেছে শখকে একটা ছেলের সাথে দেখে,তাও আবার একা।রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো আয়ান।কিছু একটা ভেবে আবার ফিরে আসলো।
–আয়াশ আমার জানা মতে তুমি এই কলেজের টিচার বা স্টুডেন্ট কোনো টাই নও।তুমি বাহিরের ছেলে হয়ে আমাদের কলেজে এসে এভাবে কলেজের ছেলেমেয়ের সাথে এভাবে ঘোরাঘুরি করতে পারো না।একদিন হলে মানা যায়।কিন্তু প্রতিদিন কলেজ কতৃপক্ষ এটা মানবে না।এই কলেজের একটা নিয়ম আছে।
–আয়ান,প্লিজ তুমি চুপ করো।আমি তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।তার আগে শখের সাথে আমার কিছু কথা আছে।বলে নেই তোমার সাথে আমি পরে কথা বলছি।
–আয়াশ তুমি মনে হয় ভুলে যাচ্ছো আমি এই কলেজের টিচার।তোমার পড়াশোনা শেষ তুমি কোথায় জব করবে।তা না করে আমাদের কলেজে মিথ্যা পরিচয়ে ঘুরে বাড়াচ্ছো।তুমি জানো এর জন্য তোমাকে শাস্তি দিতে পারি।
–চুপ থাকবে আয়ান।আমি কি করবো না করবো এখন তোমাকে বলে করতে হবে।
–হ্যাঁ আমাকে বলেই করতে হবে। কারন এই কলেজের টিচার আমি তাই সকল ছাত্রছাত্রীদের দিকে খেয়াল রাখা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।(আয়ান নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করছে)
এদিকে শখ আয়ান আর আয়াশের কথার আগা মাথা কিছু বুঝতে পারছে না।তাই চুপ করে আছে।কিন্তু আয়াশ মিথ্যা কেনো বললো।
চলবে……