#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–আমি তোমাকে সব কিছুর কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই আয়ান।তুমি আমাকে ভালো করেই চিনো আমি কেমন।তোমাদের কলেজের পরিবেশ নষ্ট হবে,এমন কোনো কাজ আমি করবো না।এখন যাও তো একটু।আমাদের একা ছেড়ে দাও।
এবার আর আয়ান নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। আয়াশের শার্টের কলার ধরে বললো।
–তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে এ ধরণের কথা বলার।তোমাকে এর শাস্তি পেতেই হবে। তুমি শিক্ষক এর কাছে বলছো।যেনো তার ছাত্রীকে তোমার কাছে রেখে যায়।কতটা জঘন্য তুমি আয়াশ।
–তুমি এমন ব্যবহার করছো কেনো আয়ান।কলেজে কি আর ছাত্রছাত্রী নেই। শুধু শখের দিকে খেয়াল রাখলে হবে।যাও গিয়ে আরো স্টুডেন্ট আছে,ওদের খোঁজ খবর নাও।
–আয়াশ…..
–কি আয়াশ আয়াশ করছো।তুমি একজন শিক্ষক আর শিক্ষকের এটা কেমন ব্যবহার।
–ব্যবহারের এখনো কিছু-ই দেখো নাই তুৃমি,তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হবে।তুমি যে ভুল করেছো।যারা যারা তোমাকে সাহায্য করেছে সবাইকে শাস্তি দিব আমি।
–বাবা তোমার এত লাগছে কেনো,তা-ও আবার একটা মেয়ের জন্য।তুমি তো মেয়েদের ধারে-ও যেতে না।এমন ভাব দেখাচ্ছো।শখ তোমার ছাত্রী না।ঘরের বউ।
–আয়াশ…
বলেই আয়ান আয়াশের গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
–তোমার সাহস কি করে হয় এসব বলার।একে তো অন্যায় করেছো।তার ওপরে উলটা পালটা কথা বলছো।তোমাকে তো আমি…
–তাহলে কি করবো আয়ান তুমি বলো আমি শখকে ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই।এটা বলার জন্য ওকে নিয়ে আসছিলাম। কিন্তু তুমি তো বলতেই দিচ্ছো না।ভালোবাসা যদি অন্যায় হয়,তাহলে আমি সেই অন্যায় টা করেছি।বিয়ে করতে চাওয়া’টা যদি অন্যায় হয় তাহলে হ্যাঁ আমি সেই অন্যায় করেছি।
আমি শখকে ভালোবাসি কথাটা শোনা মাত্রই আয়ানের ভেতর’টা ধক করে উঠলো। বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করলো সে।মনে হচ্ছে আয়াশকে এখানেই শেষ করে দেই।এই কথা বলার অপরাধে।
–আয়াশ,তুৃমি এখানে থেকে চলে যাও।এটা প্রেম,ভালোবাসা করার জায়গা নই।তুমি এসব কথা বাহিরে বলবে।কিন্তু কলেজের মধ্যে এসব কিছু করতে পাবরে না।এর পরে-ও যদি দেখি,সত্যি তোমার বিরুদ্ধে স্টেপ নেব।(শান্ত হয়ে বললো।)
আয়ানের কথায় আয়াশ রাজি হয়ে যায়।
–ঠিক আছে আয়ান।আমি চলে যাচ্ছি। আর আমি বাহিরে-ই শখের সাথে কথা বলে নিব।বলেই চলে গেলো আয়াশ।
শখ ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেছে। আয়ানের দিকে তাকাতে’ই ভয় লাগছে।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে শখ।আয়ান খুব শান্ত ভাবে বললো।
–আমার কেবিনে এসো।বলে’ই চলে গেলো।আয়ানের এমন শান্ত থাকাটা শখের ভেতর’টা ছারখার করে দিচ্ছে। ভয়টা আরো দিগুণ বেড়ে গেছে। এখন কি করবে সে।স্যারের কেবিনে যাবে।যদি আমাকে একা পেয়ে মেরে ফেলে।হায় আল্লাহ এখন আমি কি করবো।কেনো যে ক্লাসটা করলাম না।এখন আমাকে কে বাঁচাবে।আল্লাহ বাঁচা’ও।
ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে,ছোট ছোট পায়ে আয়ানের কেবিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শখ।মনে প্রচুর ভয়।
–কিরে ঐ দিকে কোথায় যাচ্ছিস।আজ ক্লাস করিস নাই। মজা বুঝতে পারবে সোনা।কাল সবার মা বাবাকে ডেকে পাঠিয়েছে স্যার যার ক্লাস করে নাই আজ।বলল মেধা।
–শখ পেছনে ঘুরে সবাইকে দেখতে পেলো।ওদের দেখে এবার কান্না’ই করে দিলো,শখ।
শখ হঠাৎ করে এভাবে কান্না করে দিবে কেউ ভাবতে পারে নাই।সবাই অবাক হয়ে বললো,কি হয়েছে তোর কান্না করছিস কেনো।
শখ কোনো কথা বলছে না।সবাই এবার একটু ভয় পেয়ে গেলো।অস্থির হয়ে বললো,এই কি হয়েছে আমাদের বল। কান্না করিস না।আমরা আছি না।সব সমস্যার সমাধান করে দিব।
–শখ আমার বইন,তোকে কেউ কিছু বলছে,তুই খালি আমাকে একবার বল।দেখ আমি তার কি অবস্থা করি।দেখিয়ে দিব কোথায় হাত বাড়িয়েছে।বলল আমান।
–আয়াশ ভাইয়া কি তোকে কিছু বলেছে। তুই তো ঐ শালার সাথে গিয়েছিলি।যদি ও তোকে কিছু বলে থাকে,ওর কলিজা ছিঁড়ে খেয়ে ফেলবো আমি।বলল সিয়াম।
–শখ তুই চিন্তা করসি না, বইন যে তোকে কষ্ট দিয়েছে।আমরা তার সব টাকা খেয়ে ফেলবো।পরে ঐ শালা রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে খাবে।বলল কাব্য।
কাব্যের কথা শুনে সবাই কাব্যের দিকে রাগি চোখ নিয়ে তাকালো।
–কিরে কিছু বলছিস না কেনো চুপ করে আছিস কেনো।বলল স্নেহা।
–শুন কথাটা তুই যতটা নিজের মধ্যে রাখবি।তুই ততই বেশি কষ্ট পাবি।আমাদের বল কষ্টটা কম হবে।নিজেকে হালকা লাগবে। আর,আমরা সবাই মিলে সমস্যার সমাধান করতে পারবো।বলল আয়েশা।
এবার শখ বলে উঠলো।
–আর,সমস্যার সমাধান পারলে আমার হয়ে,আয়ান স্যারের কেবিনে যা,বলেই কান্না করে দিলো আবার।
সবাই অবাক হয়ে গেলো,আবার বেশ ভয় পাচ্ছে আয়ান স্যার আজ খুব রেগে আছে।
–কান্না করে না সোনা।বাবুই পাখিটা আমার। লক্ষি বোন আমার বল আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। বলল আয়েশা।
তারপরে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা বললো শখ।
–শখ তুই এবার গেলি রে,আজ তুই আয়ান স্যারের হাতেই শেষ। আমি শুনেছি!ঝড় আসার আগে আবহাওয়া শান্ত থাকে।স্যার তোর সাথে শান্ত ভাবে কথা বলছে।তারমানে আজ তুই শেষ। বলল মেধা।
–তুই চুপ করবি মেধা।দেখতে পাচ্ছিস,মেয়েটা এমনিতে কতটা ভয় পেয়ে আছে।তার ওপরে ওকে ভয় দেখাচ্ছিস।বলল আয়েশা।
–তোর সাহস কি করে হয়।আমাদের শখ এতটা ভিতু নাকি,যে ভয় পাবে।বলল আমান।
–হ্যাঁ,সত্যি কিছু হবে না।তুমি ক্লাস করিস নাই। তাই হয়তো একটু বকে দিবে।যা তো তুই ওর কথায় কান দিস না।বলল সিয়াম।
সবাই মিলে শখকে ভরাস দিয়ে পাঠালো।শখ যেতে না চাইেল।আয়েশা বলল।
–বেশ তোর সাথে আমরা’ও যাব।ভেতরে যেতে পাবরে।কিন্তু বাহিরে স্যারের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো কেমন।
–ওকে চল তাহলে সবাই।
–আসতে পারি স্যার।
–এসো।
–স্যার আমাকে ডেকে আসলেন যে,কিছু বলবেন।
–তোমাকে আসতে বলেছি।মেধা,সিয়াম,কাব্য,আয়েশা, আমান,স্নেহা এদের নয়।
শখ সহ বাকি সবাই ভয় পেয়ে গেলো।
–আসলে স্যার…
–কোনো কথা শুনতে চেয়েছি।
–তোরা সবাই চলে যা,আমি স্যার কি বলে শুনে আসছি।
সবাই চলে গেলো,খুব ভয় হচ্ছে শখের জন্য। সবাই মাঠে বসে চিন্তা করছে।
–কলেজে আসছো,কিন্তু ক্লাস করো নাই কেনো তুমি।
আয়ানের কথার কোনো উওর দিতে পারলো না শখ,মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
–তুমি কি কানে শুনতে পাও না।বা কানে কম শুনো।কোনো সমস্যা আছে তোর কানে।
–না স্যার।
–তাহলে আমার কথার উওর দিচ্ছো না কেনো,আজ ক্লাসে আসো নাই কেনো,তোমার বাবা মায়ের নাম্বার দাও।
–সরি স্যার আর হবে না।ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো মাফ করে দিন।
–তোমার বাবা মায়ের নাম্বার চেয়েছি।কেনো কৈফিয়ত শুনতে চাই নাই।
–আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেনো স্যার।
–নাম্বার….
–কালকে দেই।আমার মনে নেই।
–এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না আমি।সেটা নিশ্চয় জানো।
–জ্বী স্যার।
–আয়াশের সাথে কি করছিলে ক্লাস বাদ দিয়ে।(কিছু লিখতে লিখতে বললো আয়ান।)
–বসে গল্প করছিলাম।
–ক্লাস বাদ দিয়ে,কলেজে গল্প করতে আসো।
–না স্যার।ভুল হয়ে গেছে আর হবে না স্যার।প্লিজ আমার আব্বু আম্মুকে কিছু বলবেন না।ওনারা শুনলে খুব কষ্ট পাবে।
–অন্যায় করার আগে মনে ছিলো না।
–সরি স্যার।
–ঐ ছেলের সাথে তোমার এত কিসের ঘোরাঘুরি। বেশ কয়দিন হলো দেখছি।তোমার জন্য আরো চার,পাঁচ’টা ছেলেমেয়ে এমন হয়ে পারে।
–স্যার আপনি যা ভাবছেন তেমন কিছু-ই না।আর আমি এমন কোনো কাজ করি নাই যে ছেলেমেয়ে খারাপ হয়ে যাবে।
আয়ানের ইচ্ছে করছে শখকে এখনি শেষ করে দিতে কিন্তু রাগটা দমিয়ে রাখলো।
–তাই নাকি এখন সবকিছু তোমার থেকে শিখতে হবে,আমার বাহিরের ছেলে কলেজের ভেতর প্রবেশ করেছে, তার সাথে প্রায় তোমাকে দেখা যায় কারন কি।
–এটা আমার সম্পর্ন ব্যক্তিগত বিষয়। আপনার কোনো অধিকার নেই।এসব প্রশ্ন করার।
আয়ান আর চুপ থাকতে পারলো না রেগে উঠে দাড়ালো।
–তোমার সাহস কি করে হয়।আমার মুখে মুখে কথা বলার, তুমি জানো এর শাস্তি কতোটা ভয়ানক হতে পারে।
–শাস্তি আপনি আমাকে দিতেই পারেন স্যার।কিন্তু আপনার কোনো অধিকার নেই।আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলার।
শখের এই কথা শুনে আয়ান শান্ত দৃষ্টিতে শখের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ানের এমন শান্ত চাহনি শখের দেখার ক্ষমতা নেই। তাই মাথা নিচু করে ফেললো।
আয়ান শখের দিকে কিছু টা এগিয়ে গেলো।শখ ভয়ে পিছিয়ে একদম দেওয়ালের সাথে ঠেকে গেলো।
আয়ান এক হাত দিয়ে দেওয়াল চেপে ধরলো। তারপর শান্ত ভাবে বললো।
–আমার কোনো অধিকার নেই।তাই না।তাহলে কার আছে।ঐ আয়াশের তুমি ওকে ভালোবাসো,বিয়ে করবে তাই না।
ভয়ে মাথা নিচু করে আছে শখ। এখন কথা বলার মতো সাহস নেই তার। আয়ান শখের কাছে থাকায় শখ বুঝতে পারছে আয়ান কতটা রেগে আছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার।আয়ানের গরম নিশ্বাস শখের মুখে পড়তে-ই শখ কেঁপে কেঁপে উঠছে।
–স্যার সরুন।আমাকে যেতে দিন। আমার ক্লাস আছে।
আয়ান রেগে চিৎকার করে বলে উঠলো।
–এখন তোমার ক্লাস আছে,তাই না যখম ক্লাস টাইমে ক্লাস না করে আড্ডা দিচ্ছিলে তখন মনে ছিলো।
আয়ানের চিৎকারে ভয়ে কেঁপে উঠলো।
–আপনি আমার স্যার।বাসার লোক না যে এভাবে আমার সাথে কথা বলবেন।আমি ছেলের সাথে আড্ডা দেই নাকি মেয়ের সাথে আড্ডা দেই। তাতে আপনার কি।
শখ.. বলেই শখকে মারতে গিয়ে’ও মারলো না।
–চলে যা-ও,আমার মুখের সামনে থেকে,এক মুহূর্ত আর তোমার মুখ দেখতে চাই না আমি।তোমার মুখ যেনো আমার কোনোদিন দেখতে না হয়।
বলেই রেগে টেবিলে সবকিছু ভাংচুর শুরু করে দিলো।টেবিলে পানির গ্লাস ছিলো,কিছু টা পানি খেয়ে,গ্লাস টা এত শক্ত করে ধরেছে গ্লাস ভেঙে কাঁচের টুকরো আয়ানের হাতে ঢুকে গেলো।সাথে সাথে রক্ত ঝরা শুরু হলো।
শখ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। একটা কথায় শুধু মনে হচ্ছে আমি তোমার মুখ’ও দেখতে চাই না।খুব কষ্ট হচ্ছে।আচ্ছা উনি আমার মুখ না দেখলো,তাতে আমার কি আমার কেনো কষ্ট হচ্ছে,উনি আমার মুখ দেখলেই কি আর না দেখলেই কি তাতে আমার কোনো যায় আসে না।
শখে চলে যেতে লাগলে দেখলো আয়ান পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে হাত দিয়ে টপটপ করে রক্ত ঝরছে।শখ আয়ানের কাছে যেতে লাগলে।আয়ান বললো।
–তুমি যদি ভুলেও আমার কাছে আসার চেষ্টা করেছো।এর পরিনাম খুব খারাপ হবে।এখনি বেড়িয়ে যাও।মুখ দেখতে চাই আমি তোমার।চিৎকার করে বললো।
কথাটা শুনে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না শখ দৌড়ে বাহিরে চলে গেলো।
চলবে……