#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
শখ আর মুনতাহা কলেজে আসতে-ই আয়েশা শখকে বললো।
–কি রে তোর এখন আসার সময় হলো।আমাদের না সবার আগে আসার কথা ছিলো।আমরা সবার আগে চলে আসছি আর তুই কি করলি।এত ঘুম তুই কোথায় পাস আজকের দিন’টা না দেরি করলে হতো না।
—aww.বেবি রাগ করে না সোনা আমার। এই তো আমি চলে আসছি।
–একদম ন্যাকামি করবি না।তোর ন্যাকামি দেখার জন্য আমরা বসে নাই।সবাই মিলে ওকে ধরে দে।বলল আমান।
–তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি।
–না তোকে চুম্মা দিয়ে বলা লাগবে। বলল মেধা।
–ছিঃ,মেধার বাচ্চার লাগবে না আমার তোর চুম্মা।তোরে সাপে চুম্মা দিব।
–তোরে কুত্তা চুম্মা দিব।আমার কোনো বাচ্চা নেই। শুধু শুধু আমার বাচ্চাকে টানবি না।
–তোরা কি ভুলে গেছিস,আমি এখানে আছি।ছাগলের মতো চিল্লা,চিল্লি শুরু করছিস।আর একটা কথা বললে মেরে সবার দাঁত ফেলে দিব বলে দিলাম।
মুনতাহার কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো।একটু পরে মুনতাহার ফ্রেন্ডরা আসলে মুনতাহা ওদের সাথে চলে গেলো। মুনতাহা চলে যাওয়াতে সবাই যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।
–এতক্ষণ আপু ছিলো তাই কিছু বলতে পারি নাই।এখন তুই কোথায় যাবি শখের বাচ্চা। বলল সিয়াম।
–তা-ও ভালো আমার বাচ্চাকে বলছিস,আমাকে বলিস নাই।
–তোরে আজ খাইছি শখ।
তবে রে বলে সবাই মিলে দৌড় দিলো
শখকে আর পায় কে দে দৌড় শাড়ি পড়ে ঠিক মতো দৌড়াতে’ও পারছে না শখ।
–তুই যদি আজ আমাদের খাওয়া’স তাহলে তোকে কেউ কিছু বলবে না।আমি কথা দিলাম। বলল কাব্য।
–আমি এমনিতে-ই গরীব দুঃখীদের খাওয়াতে ভালোবাসি।দু’চার জন বেশি খাওয়ালে কিছু হবে না।
–কি তুই আমাদের গরীব দুঃখী বললি,আমাদের দেখে তোর গরীব দুঃখী মনে হয়।আমরা গরীব দুঃখী।বলল স্নেহা।
–আরে না,তোরা গরীব দুঃখী হতে যাবি কেনো,তোরা তো ফকির মিসকিন।
–শখের বাচ্চা আজ তোরে খাইছি।বলেই আবার সবাই দৌড় শুরু করলো।
শখ দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ করে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে লাগলে ব্যক্তিটি শখকে ধরে ফেলে।ওকে কে ধরে আছে তা দেখার জন্য মাথা উচু করতে-ই আয়ান কে দেখে দফারফা ক্রাস খেলো।আয়ান কালো রং এর পাঞ্জাবি পড়েছে সাথে ম্যাচিং ঘড়ি।ম্যাচিং সুজ চুলগুলো জেল দিয়ে স্পাইক করা চোখে কালো রং এর ম্যাচিং করা সানগ্লাস।
–উফ এই ছেলে’টা তো আজ আমাকে শেষ করে দিবে।এত সুন্দর কেনো উনি।ওনাকে এত সুন্দর হতে কে বলেছে।সবাই কি করে তাকিয়ে আছে।মনে হয় চোখ দিয়ে সবাই গিলে খেয়ে ফেলবে।তুই ছেলে মানুষ তোর এত সাজ কিসের রে।আজ শখের কাছে আয়ান কে একটু বেশি-ই সুন্দর লাগছে।আগে কোনোদিন আয়ানকে এভাবে দেখে নাই শখ।আজ অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে আয়ানের জন্য।
আয়ান’ও শখকে দেখে একদম হা।এই প্রথম শখকে শাড়িতে দেখলো সে।আসলেই প্রতিটা মেয়েকে শাড়িতে একটু বেশি-ই সুন্দর লাগে।যার প্রামন শখ।এত সাজার কি আছে।তুমি এমনি সুন্দর। সবাই কি নজরে তাকিয়ে আছে।এই মেয়েকে ইচ্ছে করছে।আয়ান এবার ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এসে বললো।
–এই মেয়ে দেখে চলতে পারো না।শাড়ি সামলাতে পারো না।তাহলে শাড়ি পড়তে বলছে কে।(কিছুটা রেগে বললো)
শখ এখনো আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। শখের থেকে কোনো উওর না পেয়ে আয়ান আবার বললো।
–এভাবে কি দেখছো,আগে কখনো দেখো নাই আমাকে।জানি আমি অনেক সুন্দর তাকিয়ে থাকা’টা স্বাভাবিক। (কিছু’টা ভাব নিয়ে বললো।)
–বুইড়া ব্যাডার শখ কতো।মানুষের রুচি এতটা’ই খারাপ হয়েছে,যে আপনার মতো বুড়োর দিকে তাকিয়ে থাকবে।
আয়ান এবার ছোট বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে বললো।
–কি বললে আমি বুড়ো। তোমার আমাকে কোন দিক দিয়ে বুড়ো মনে হলো।
শখ এবার টুক করে বলে দিলো।
–আপনি এত সুন্দর কেনো বলেন তো।আপনাকে কে এত সুন্দর হতে বলছে।আপনার কেনো এত সাজা লাগবে।সবাই কি করে তাকিয়ে আছে। (রেগে বললো।)
–তাতে তোমার কি।তুমি কি জেলাস কোনো কারনে।
–উম কি ডং(মুখ বাকিয়ে বললো)
আয়ান কে দেখে কুত্তার দল সবাই মিলে পালিয়ে গিয়েছিল। শখ এখনো আসছে না দেখে সবাই এসে দেখে শখ একদিক হয়ে আয়ান স্যার একদিন হয়ে।দুইজন দুই দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
–কিরে শখ তুই নাচ দিবি না চল আর একবার প্র্যাকটিস করে নেই।মঞ্চে গিয়ে যদি আবার ভুল করে বসিস।সাবধানের মার নেই বাবা চল।বলল আমান।
আমানের কথা শুনে আয়ান বলে উঠলো।
–তুৃমি নাচ দিবে।
–হ্যাঁ,দিব।
–না তুমি নাচ দিবে না।তোমার নাচ দেওয়া লাগবে না।আমি মানা করছি তার মানে তুমি দিবে না।
–উম বললেই হলো নাকি,আপনি কে আপনার কথা শুনবো।আপনার কি অধিকার আছে আমাকে নিষেধ করার।আপনার কোনো অধিকার নেই। আর টিচার হয়ে আপনি আমাকে নিষেধ করতে পারেন না।বলেই শখ চলে গেলো।
আয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল অধিকার….বলে সে-ও চলে গেলো নিজের কাজে।
এদিকে মুনতাহা ওর সব ফ্রেন্ডদের হারিয়ে ফেলছে এখন সে কি করবে শখকে’ও খুঁজে পাচ্ছে না। শখের ফোনটা’ও মুনতাহার কাছে।
–এই যে মিস আমি এখানে আপনার পাশে দাঁড়াতে পারি।বলেই শরবত এগিয়ে দিলো মুনতাহার দিকে।
মুনতাহা তাকিয়ে দেখলো সেই দিনের ছেলেটা।মাথায় যেনো আগুন ধরে গেলো মুনতাহার।
–এই গরুচোর আপনি এখানে কি করছেন।আপনার তো সাহস কম না।পৃথিবীতে কি জায়গার অভাব পড়েছে যে আমার পাশে-ই আপনাকে দাঁড়াতে হবে।
–পৃথিবীতে জায়গার অভাব না পড়লেও মুনতাহার অভাব পড়েছে।যে মেয়েটা আমার রাতে ঘুম হারাম করে দিয়ে নিজে বেশ আমার করে ঘুমোয়।তোমাকে যেদিক দেখছি তার পর থেকে আমি ঠিক মতে খেতে পারি না।ঘুমোতে পারি না।কোনো কাজ ঠিক মতো করতে পারি না।আমার কোনোকিছুতে’ই মন বসে না।শুধু তোমার কথা মনে পড়ে,তোমার মুখটা ভেসে ওঠে। অনেক খুঁজেছি তোমাকে কিন্তু একটু দেখা পাই নাই।
–বাংলা সিনেমা দেখেন খুব ভালোই।ডায়লগ গুলো আমার খুব ভালো লেগেছে।অনেক সুন্দর ডায়লগ বলতে পারেন আপনি।এভাবে পরীক্ষার খাতায় লিখতে দশে দশ পাবেন।
–তোমার ডায়লগ মনে হলো।আমি সত্যি বলছি।
–ছোট বেলা থেকে প্রচুর শুনেছি বাংলা সিনেমায়।
–তুমি আমাকে বুঝতে চাও না কেনো বলো তো।
–থাপ্পড় খেতে না চাইলে মুখের সামনে থেকে সর রাগিয়ে দিবি না বলে দিলাম।বেয়াদব ছেলে বাবা মার থেকে ভালো শিক্ষা পাস নাই।তাই এমন ভাবে মেয়েদের জ্বালাস।
–আমাকে যা খুশি বলো।বাবা মা তুলবে না।
–তুই আমার মুখের সামনে থেকে সর।তোর মুখ আমি দেখতে চাই না আমি।
–তোমাকে সারাজীবন আমার মুখ-ই দেখতে হবে,বলে দিলাম।শুনো তোমাকে দেখার পরে আমি আমার জীবনের বাঁচার মানে খুঁজে পেয়েছি,তাই বলছি আমাকে আমার আসল রুপে আসতে বাধ্য করো না।তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য সবকিছু করতে পারি।শুধু তোমাকে ছাড়তে আমি রাজি নই।বলেই চলে গেলো শুভ।
–শুনেন আমি আপনাকে ভালোবাসি না।আপনার হবার আগে যেনো আমার মৃত্যু হয়।তবুও যেনো আমি আপনার না হই।কথা শেষ হবার আগেই। শুভ দাঁড়িয়ে গেলো।ঝড়ের গতিতে এসে মুনতাহার দুই গাল চেপে ধরে বললো।
–তুই আমার হবি না।তাহলে তোকে আমি কারো হতে দিব না।তুই শুধু আমার। তুই যদি আর একবার আমার থেকে দূরে যাবার কথা বলছিস,তোকে এখানেই মাটি চাপা দিয়ে নিজে’ও মরে যাব।
শুভ এত জোরে-ই মুনতাহা গাল চেপে ধরে আছে।যে,মুনতাহা কথা’ও বলতে পারছে না।চোখ বেয়ে পানি গরিয়ে পড়ছে মুনতাহার।
মুনতাহার চোখে পানি দেখে তাড়াতাড়ি করে শুভ মুনতাহাকে ছেড়ে দিলো।তারপরে মুনতাহা চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে।কপালে একটা চুমু খেলো।
–আমার কথার অবাধ্য হবে না বলে দিলাম। তুমি জানো না আমি কে বা কি করি।আমার কথার অবাধ্য হবে এমন সাহস কারো নেই। আমি যা বলবো ভালো-ই ভালো-ই শুনবে।যদি না শুনো এর পরিনাম কি হতে পারে তুমি নিজে’ও জানো না।
বলে রেগে চলে গেলো শুভ।
মুনতাহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এটা কেমন মানুষ কই আগে তো এমন রুপ দেখি নাই। কতো বাজে কথা বললাম কিছু বললো না।আমি মরার কথা বলতেই রেগে গেলো।তাহলে সত্যি কি আমাকে ভালোবাসে।
না মুনতাহা ভালোবাসা বলতে কিছু হয় না সবকিছু অভিনয়।তুই এই অভিনয়ের ফাঁদে পা দিতে পারিস না।হাজার চেষ্টা করলে-ও কেউ আমার মনে আসতে পারে না।কারো অভিনয়ে ভোলা যাবে না।
এদিকে শখ আয়ানের নিষেধ অমান্য করে নাচ দিয়ে ফেলছে।আয়ান প্রচন্ড রেগে আছে। কতো জন বাজে বাজে মন্তব্য করছে।কতো বাজে কথা বলছে যাহ বলার বাহিরে আয়ানের ইচ্ছে করছে,শখ সহ সবাই কে শেষ করে দিতে।সবকিছু শেষ করে দিতে।
–আয়েশা এই দিকে আয় না সোনা।আমার শাড়ি না খুলে যাচ্ছে। একটু সাহায্য কর নারে।আমি আর কোনোদিন শাড়ি পড়বো না।ভালো হয়েছে এখন শাড়িটা খুলে যাচ্ছে নাচ করার সময় খুলে গেলে কি একটা বাজে ব্যাপার হতো বলতো।
–কেনো তোর শখ মিটেছে।আর পড়বি কোনোদিন। আমাদের শাড়ি পড়ে নাচ দেওয়া ঠিক হয় নাই রে।কতো জন কতো কথা বলছে।আয়ান স্যারের কথা শোনা উচিত ছিলো। উনি ভালোর জন্য-ই বলেছিলো।
–রাখ তোর আয়ান স্যার।শাড়ি ঠিক করে দে।দেখ খুলে গেলো।
তারপরে আয়েশা কোনোরকমে শখের শাড়িটি ঠিক করে দিলো।আয়েশা নিজে’ও শাড়ি পড়তে জানে না।
হঠাৎ করে কোথায় থেকে জানি আয়াশের আগমন হলো।
–এই শখ কোথায় থাকো তুমি তোমাকে আমি খুঁজে পাই না।তোমাকে আমার কিছু বলার আছে চলো,আমার সাথে।বলেই হুট করে শখের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। শখ মানা করছে,তাও আয়াশ শুনছে।এদিকে শখের শাড়ি আবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। জোর হাঁটার ফলে পেট থেকে কখন শাড়ি সরে গেছে খেয়াল নেই শখের।
আয়ান শখকে খুজতে আসছিলো।এসে দেখে আয়াশ শখের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। নিমিষেই আয়ানের চোখ লাল বর্নে পরিনত হলো।কপালে রগ গুলি ফুলে উঠেছে। রাগে হাত পা রীতিমতো কাঁপছে। ইচ্ছে করছে এখনি সবকিছু শেষ করে দিতে।অনেক হয়েছে। আজ শখকে কিছু একটা করতেই হবে।বেশি বার বেড়েছে। বলেই আয়ান রেগে শখের আর আয়াশের দিকে গেলো।
চলবে…..