#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_২২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
আজ সবাই শপিং করতে বেড়িয়েছে।কাল গায়ে হলুদ।দুই পরিবার মিলে একসাথে শপিং করবে বলে ঠিক করেছে।
শখের পরিবার চলে এসেছে আগেই,কিন্তু আয়ানেরা এখনো এসে পৌঁছাতে পারে নাই। তাই সবাই মিলে অপেক্ষা করছে।একটু পরে আয়ানের পরিবার’ও চলে আসলো।আয়ান’ও এসেছে। রুহিকে দেখে শখ দৌড়ে রুহির কাছে গেলো।
–আপু কেমন আছো।
রুহি কোনো উওর দিলো না।দেখেই বোঝা যাচ্ছে, শখের ওপরে খুব রেগে আছে।
–আপু কথা বলছো না কেনো,তুমি রেগে আছো আমার ওপরে।
–তুমি কে ?যে, আমার তোমার ওপরে রাগ করতে হবে।মানুষ তার ওপরে রাগ করতে পারে,যার ওপরে তার অধিকার থাকে।তোমার ওপরে আমার কোনো অধিকার নেই। তাহলে আমি কেনো তোমার ওপরে রাগ করতে যাব।আমি রাগ করলে মুনতার ওপরে করতে পারবো।কারন দুই দিন পরে আমার ভাইয়ের বউ হবে,মুনতাহা।ওর ওপরে আলাদা অধিকার হবে আমার।তুমি আমার ভাইয়ের হবু বউ এর ছোট বোন আমি তাই রাগ করতে পারি।
–আপু…
–আপু তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো,কেনো সবাই ভেতরে চলে গেলো। আমার সাথে যাবে চলো।বলল আয়ান।(কথা গুলো বলার পরে শখের আয়ানের একবার চোখাচোখি হয়।আয়ান সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলে)
–আপু তোমরা আসো,আমি ঐ দিকে গেলাম।
–ভাই তুই দ্বারা আমি তোর সাথে যাব।শখ তুমি আসলে আসতে পারো।
–না আপু আমি যাব না।এখানে থাকি তোমরা সবাই শপিং করে নিয়ে আসো।
রুহি আর কোনো কথা না বলে আয়ানকে নিয়ে চলে গেলো।
শখ একা একা দাঁড়িয়ে আছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। চোখের সামনে এসব আর দেখতে পারছে না।ইচ্ছে করছে দূরে কোথা’ও চলে যেতে।ঠিক সেই সময়ে হাঁজির আয়াশের,
–আরে শখ তুমি এখানে,আমি কাজের জন্য বাহিরে গিয়েছিলাম। তাই এতদিন তোমার সাথে দেখা করতে পারি নাই।
–আপনার লজ্জা করে না।কোন মুখ নিয়ে আমার সামনে আসছেন।আর কোনোদিন আমার সামনে আসলে মেরে তক্তা বানিয়ে দিব।লুইচ্চা শালা।
–শখ মুখ সামলে কথা বলো।ভদ্রভাবে তোমার সাথে কথা বলছি,তারমানে এই না যে তুমি যা বলতে আমি তাই শুনবো।
–তুই আমার কিসের ভদ্র ছেলে রে।তুই একটা লুজার। কাপুরষ।
–শখ…. বলেই থাপ্পড় দিতে লাগলে আয়ান এসে আয়াশের হাত ধরে ফেলে।
–আয়ান কি করছো।হাত ছাড়ো।আমার লাগছে।
–তাহলে ভাবো আমার কোথায় লাগছিল। তোমার সাহস কি করে হয়।ওর গায়ে হাত তোলার।তোমার এই হাত যদি আমি ভেঙে দেই।(আস্তে করে বললো শখ যেনো শুনতে না পায়)
–হাহাহা,আয়ান আমি কিছু বুঝি না মনে করছো।তুমি যে শখে ভালোবাসো। কিন্তু শখ তো তোমাকে পাত্তা’ও দেয় না।আর তুমি শখকে কোনোদিন পাবে না।শখ শুধু আমার। বলেই আয়ানের থেকে হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো।
সত্যি তো আমি শখকে কোনোদিন পাব না।তবে কি সত্যি ও আয়াশের হবে।না,আর ভাবতে পারছি না।আয়ান রেগে শখের দিকে তাকালো।শখ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ।
আয়ান শখের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে মুনতাহার কাছে ফেলে দিলো।
–নিজের বোনকে দেখেশুনে রাখতে পারো না।বলেই আয়ান চলে গেলো।
–এই মেয়ে তুই আবার কি করছিস,যেখানে যাবি একটা না৷একটা ঝামেলা পাকাবি। তোকে নিয়ে আর পারি না।আয় আমার সাথে আয়।
সবাই শাড়ি পছন্দ করছে।যে যার মনের মতো শাড়ি পছন্দ করে নিচ্ছে।শখ চুপচাপ বসে আছে।
–একি রে মা,তুই চুপচাপ বসে আছিস কেনো।তুই একটা শাড়ি নিবি না।চল পছন্দ করবি।বলল শখের আম্মু।
–না আম্মু আমার কিছু লাগবে না।আমার অনেক জামা আছে।সেগুলো পড়ে শেষ করতে পারি না। আর তো শাড়ি।
–চুপ একদম কথা বলবি না।চল আমার সাথে। বলে শখের হাত ধরে নিয়ে গেলো।
–কি রে ভাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছিস কেনো।তোর বউ এর জন্য শাড়ি পছন্দ করে দে।
–তোমাদের যেটা পছন্দ হয়।কিনে না-ও তো।আমাকে বলছো কেনো।
–বাবা তোর বউ আর তুই দিবি না।তাই কখনো হয়।
–আচ্ছা দারাও দেখছি।
এত শাড়ি দেখছে তা-ও একটা শাড়ি’ও শখরে পছন্দ হচ্ছে না। চোখ যায় একটা লাল শাড়ির দিকে।শখ দৌড়ে শাড়ির কাছে গিয়ে শাড়িটি তুলতে যাবে,আয়ান ও শখের সাথে শাড়িটি তুলে ফেললো।শখ শাড়িটি সাথে সাথে ছেড়ে দিলো।
–এটা তুমি নিবে। এটা তোমার পছন্দ।কিন্তু এটা তো আমাকে দেওয়া যাবে না।এটা ভাই তার বউ এর জন্য পছন্দ করেছে। বলল রুহি।
–না আপু এটা আমার পছন্দ না।এমনি দেখতে আসছিলাম। আমি তো শাড়ি নিব না।আম্মু জোর করলো তাই।
–আচ্ছা আমি তোমাকে অন্য শাড়ি পছন্দ করে দিচ্ছি।
–একই শাড়ি দুটো নিলেই তো হয়।বলল আয়ান।
–সরি স্যার আমাদের কাছে দুটো শাড়ি আছে।কিন্তু একটা শাড়ি ছেঁড়া।আর আমরা ছেঁড়া শাড়ি কি করে বিক্রি করবো।নিলে একটাই নিতে হবে।
–আচ্ছা শখ যখন পছন্দ করেছে। তাহলে শাড়িটা শখকেই দিয়ে দাও না।বলল মুনতাহা।
–না গো শখকে দেওয়া যাবে না।এটা আয়ান তার বউ এর জন্য কিনেছে।
–হয়েছে অনেক কথা হয়েছে। শখের শাড়ি লাগবে না।বিয়ে তো শখ করছে না।ওর শাড়ি না নিলে’ও চলবে।বলল আয়ানে ফুপি।
–আহ আপু এভাবে বলছো কেনো।বলল আয়ানের মা।
–তুই চুপ থাকবি।তাড়াতাড়ি চল এখনো অনেক কাজ আছে।
তারপরে শপিং করে যে যার মতো বাসায় চলে গেলো।পরের দিন সন্ধ্যা বেলা।আয়ানের বাসা থেকে সবাই আসছে,মুনতাহাকে হলুদ দিতে।
–শখ এদিকে আয় তো,তোর সাথে একটু কথা আছে।বলল মুনতাহা।
শখ মুনতাহার কাছে আসতে-ই মুনতাহা শখকে গাল ভরে হলুদ মাখিয়ে দিলো।
–এটা তুমি কি করলে আপু।
–আমি চাই ছিলাম আমার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে তুই সবার আগে হলুদ মাখবি।সেটা-ই করলাম।
–কিন্তু মুনতাহা সবকিছু ছেলে খেলা নয়।এটা আয়ানের গায়ে ছোঁয়া হলুদ ছিলো।বলল রুহি।
–সমস্যা নেই আপু।এখনো অনেক হলুদ আছে।কিছু হবে না।
–কিন্তু মুনতাহা,এটা সবার আগে তোমাকে দেওয়া হবে।তুমি কেনো শখকে আগে দিতে গেলে।
–এই মেয়ে অলক্ষী, সব সময় ভালো কাজে একটা না একটা বাঁধা তৈরী করবে-ই।বেয়াদব মেয়ে একটা বার আটকালো’ও মুনতাহাকে।
–ফুপি তুমি ওকে বকছো কেনো, ও ছোট মানুষ।যা-ও তো শখ তুমি হলুদ ধুয়ে আসো।
শখ সেখানে আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না।দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।ওয়াশরুমে গিয়ে হলুদ তুলে ফেললো।আর বাহিরে বের হয় নাই শখ।
বালিশে মুখ গুজে কান্না করছিলো শখ।ঠিক সেই সময়ে শখের আম্মুর ডাক পড়লো।
–কিরে শখ তোর হয়েছে’টা কি বলতো রুমে আসলি,আর বের হলি না কেনো।সবাই কি ভাবলো বলতো।আয় খেয়ে নিবি চল।
শখ আর কোনো কথা না বলে,চুপচাপ উঠে চোখের পানি মুছে খেতে চলে গেলো।শখের সাথে যদি আয়ানের বিয়ে না হয়।তাহলে আমরা আমাদের কাজ করতে পারবো না।এটা কি হয়ে গেলো।মুনতাহার সাথে কেনো আয়ানের বিয়ের হচ্ছে।
–আরে সব হয়েছে শখের মায়ের জন্য।উনি তো মুনতাহাকে আয়ানের ঘাড়ে ঝুলিয়ে দেওয়া জন্য পাগল হয়ে গেছে। না হলে শখের বাবা ঠিক বুঝিয়ে শখকে আয়ানের সাথে বিয়ে করতে রাজি করাতো।
–কিন্তু এখন উপায়। কি করে শখের সাথে আয়ানের বিয়ে দিব।আচ্ছা আমরা যতটা সহজ ভাবছি ততটা সহজ যদি না হয়।আয়ান যদি শখের মাথার ওপরে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়।
–দাঁড়ালে,দাঁড়াবে তাতে আমাদের কি আমাদের কাজ হয়ে গেলেই মিটে গেলো।
–হ্যাঁ বাবা ঠিক কথা বলছো।
–কিন্তু এখন কি করে আয়ান আর মুনতাহার বিয়ে না ভাংবো।
এদিকে আয় শোন লোকটি ছেলেটির কানে কানে কি জানি বললো ছেলেটি শয়তানি হাসি দিয়ে বড়িয়ে গেলো।
চলবে…..