#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_২৫(ধামাকা)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
মুনতাহা কবুল বলার আগেই,শুভ তার দল-বল নিয়ে পুরো বিয়ে বাড়ি ঘিরে ফেললো।
শুভ কাজী সাহেবর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বললো।
–খুব শখ তাই না তোর বিয়ে পড়ানোর।এখন উপরে গিয়ে বিয়ে পড়াবি যাহ।
–আমার কোনো দোষ নেই। আমার কাজ-ই এটা।তার জন্য আপনি আমাকে মারবেন।আমি আপনার বাবার মতো হয়।
–এই বাড়িতে কোনো বিয়ে হবে না।লাশ ফেলে দিব আমি।বলেই মুনতাহার চুল ধরে টেনে তুলে বললো।
–খুব শখ তাই না রে,অন্য কাউকে বিয়ে করার।তোকে বলেছিলাম আমাকে যা ইচ্ছে খুশি করিস।কিন্তু অন্য কারো হবার এমন দুঃসাহস কোনোদিন দেখাবি না।এর পরিনাম খুব খারাপ হবে।তুই আমার কথা অমান্য করিস।এতদিন শুভর ভালোবাসা দেখছিস।এখন শুভর ঘৃণা দেখবি,কতটা ভয়ংকর।
–ছাড়ুন আমাকে লাগছে আমার। আপনার ভালোবাসা এতদিন….আর বলতে পারলো না।শুভ আরো শক্ত করে মুনতাহার চুল টেনে ধরলো।মুনতাহা ব্যথায় চিৎকার করছে।
সবাই ভয়ে চুপ হয়ে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কালো পোশাক পড়া ভারী দেহের মানুষ গুলো বন্দুক হাতে পুরো বাসা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। পালিয়ে যাবার কোনো সুযোগ নেই। মুখ কালো মাস্ক দিয়ে ঢাকা তাই চেনার’ও উপায় নেই।
এতক্ষণ দূরে থেকে সবকিছু দেখছিলো আয়ান।এসব দেখে রেগে এসে শুভর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। শুভ মুখের দিকে না তাকিয়ে-ই বলল এই কে,রে। কার এত বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলে।বন্দুক হাতে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
–ভাইয়া তুমি।
–হ্যাঁ,আমি এটা তোর কি ধরনের ব্যবহার!এই শিক্ষা পেয়েছিস তুই।আমার থেকে-ও কি তোর রাগ বেশি।
শুভ এবার মাথা নিচু করে ফেলল।কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল।
–ভাইয়া তুমি জানো না।এই মেয়েকে পাওয়ার জন্য কতো বড় বেয়াদব হতে পারি।ওকে বলেছিলাম আমি ছাড়া অন্য কারো হবার দুঃসাহস না,দেখাই।ও সেটাই করেছে।ওকে আমি শেষ করে দিব।বলে’ই মুনতাহার দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলে।
আয়ান আস্তে করে শুভ বলে ডাক দিলো।শুভ থেকে গেলো।
–রাগ করিস না।ভালোবাসা এভাবে হয় না।রাগ না দেখিয়ে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলে দেখতি।মনে কোণে কোথাও না কোথাও একটা জায়গা তৈরি হয়ে যেতো।রাগ দিয়ে ভালোবাসা হয় না।ভালোবাসতে সুন্দর ব্যবহার,আর ধৈর্যের দরকার সবচেয়ে আগে।তুই চিন্তা করিস না। তোর বিয়ে মুনতাহার সাথে-ই হবে।আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোদের বিয়ে দিব।
তখনি রুহি বললো।
–তাহলে আমাদের কি হবে।মুনতাহার সাথে তো তোর বিয়ে হবার কথা। আমাদের মানসম্মান সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।
–ভাইয়া তোমার সাথে মুনতাহার বিয়ে হচ্ছে। কিন্তু তুৃমি তো….
–চুপ আর একটা কথা’ও না।
–আমি এই ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিব না।বলল মুনতাহার মা।
–আপনি দিলে-ই কি আর না দিলে-ই কি,মুনতাহাকে আমি বিয়ে করবো। ও শুধু আমার বউ হবে।এতে যে বাঁধা দিতে আসবে আমি তাকে-ই শেষ করে ফেলবো।মুনতাহা শুধু আমার ও যদি আমার না হয় তাহলে আমি ওকে অন্য কারো হতে দিব না।ও’কে মেরে নিজেই নিজে-কে শেষ করে দিব।রেগে বলল।
–কি বেয়াদব ছেলে রে বাবা।আমি কিছুতেই বিয়ে দিব না।দরকার পড়লে সারাজীবন মেয়ে’কে ঘরে বসিয়ে রাখবো।
–আন্টি,আপনি শান্ত হন।আপনি শুভকে যতটা খারাপ ভাবছেন।ও এতটা খারাপ না।মুনতাহাকে খুব বেশি ভালোবাসে তাই এমন পাগলামি করছে।আমি ওকে ছোট থেকে চিনি।ওও খুব ভালো।
শুভ অবাক ওর রাগী ভাই এত সুন্দর করে কথা বলছে।তা-ও আবার এতটা শান্ত হয়ে।
–এই ছেলে তোমার কি হয়।তুমি কি ভাবে ওকে চিনো।আর ওর হয়ে এত কথা বলছো কেনো।পড়ে যদি আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে।তার দায় ভাড় কে নিবে তুমি।
আয়ান হালকা হেঁসে বলল।
–আন্টি ও আমার ফুপির ছেলে।সম্পর্কে আমার ফুফাতো ভাই হয়।ওকে আমি কোনোদিন ফুফাতো ভাই বলে মনে করি নাই। নিজের ভাই মনে করে আসছি।আর আমি আপনাকে কথা দিলাম।মুনতাহার যদি কিছু কিছু হয় তার দায় ভাড় আমার।
–বাবা এত’টা বিশ্বাস। মুনতাহার বাবা না আসলে, আমি কিছু করতে পারবো না।আমার তো তোমাকে পছন্দ, এই ছেলেকে না।
–আপনার পছন্দ হলেই কি আর না হলেই কি,তাতে আমার কোনো যায় আসে না।ভাইয়া কারো বিয়ে পড়ানো লাগবে না।আমি নিজের বিয়ে নিজেই করে নিতে জানি।বলেই মুনতাহার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেলো শুভ।কেউ কিছু বলতে পারলো না ভয়ে।
আচ্ছা এতকিছু হয়ে গেলো বাবা কোথায় বাবাকে তো দেখছি না।মনে মনে বলল শখ।
–আয়ান এখন কি হবে।এই মেয়ে কে যে শুভ ভালোবাসে আগে জানলে কখনোই, তোর সাথে বিয়ে ঠিক করতাম না।
–আচ্ছা আপু বাদ দাও। চলো বাসায় চলে যাই আমরা।
–আয়ান তোর মাথা খারাপ হ’য়ে গেছে। বউ ছাড়া বাসায় ফিরলে লোকে কি বলবে।কতটা অপমানিত হতে হবে।আর বাবা মা এটা কি করে সয্য করবে।
আয়ান চুপ করে আছে।
আমি সফল হয়েছি।আমার কাজ আমি করে ফেলছি।এখন কোথায় যাবে।আহনাফ সাহেব।আমি আজকে’ই আমার ছেলেকে আমার কথা বলে দিব।বলেই লোকটি হাসলো।
আয়ান’রা চলে যাচ্ছিলো।ঠিক তখনি আহনাফ সাহেব আসেন।আয়ানের হাত ধরে বলে।
–আমি তোমাকে কি বলবো। সত্যি লজ্জায় আমার বলার কিছু নেই। আমার মেয়ে যে অন্য কাউকে ভালোবাসে। এটা আগে জানলে আমি তোমার সাথে মুনতাহার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হতাম না।
–স্যার,এখন এসব বলে কি হবে।আমাদের যাহ ক্ষতি করার তা করে-ই দিয়েছেন। এখন আমরা সামাজে মুখ দেখাবো কি করে।বউ নিতে এসে খালি হাতে ফিরে যাব।এর থেকে অপমানের বর কি হতে পারে।
–তোমরা যদি রাজি থাকো,আমি তোমাদের খালি হাতে ফিরতে দিব না।আমি আমার শখের সাথে তোমাকে বিয়ে দিতে চাই। তোমরা কি আমার শখকে মাফ করে। মেনে নিবে।রুহির হাত ধরে বলল শখ।
আয়ান কোনো কথা বলছে না।রুহি আহনাফ সাহেবর কথায় খুব খুশি হলো।বলল।
–শখ তো আয়ানকে বিয়ে করতে চাই না।শখ কি রাজি হবে।
–শখকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার। আমি বললে ঠিক আমার কথা শুনবে।
–আমি কি খেলনা নাকি।যার যেভাবে ইচ্ছে খেলবে।আমি শখকে বিয়ে করবো না।আপু তুমি থাকো আমি চলে গেলাম।
–বাবা মায়ের কথা একটা বার ভাববি না আয়ান।তারা কতটা আশা বসে আছে।তুই তাদের জন্য নতুন বউ নিয়ে যাবি।বাবা মায়ের সন্মানের দিক’টা একবার ভাব।তুই কেমন ছেলে রে।
–আপু….
–আমি আর একটা কথা শুনতে চাই না। আমি যাহ বলবো তাই হবে।আমি তোর বড় নাকি তুই আমার বড়। তোর এত সাহস হয়ে গেছে। তুই আমার মুখে মুখে কথা বলছিস।
আয়ান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।রুহি তার স্বামীকে হাত দিয়ে ইশারা করলে।উনি এসে আয়ানকে নিয়ে যায়।
রুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল।পাগল ভাই আমার। কেউ না জানলে,আমি জানি তুই শখকে কতটা ভালোবাসিস।তুই যে অভিমান থেকে শখকে বিয়ে করতে চাইলি না।সেটা’ও আমি জানি।তোর ভালোর জন্য-ই আমাকে এতটুকু কঠিন হতে হলো। প্লিজ ভাই আমাকে ভুল বুজিস না।
এতক্ষন দূর থেকে সবকিছু দেখছিলো শখ।কি বলবে।এখন তার কি করা উচিৎ সে কিছু ভাবতে পারছে না।
আহনাফ সাহেব এসে শখের হাত ধরে বলল।
–আমাকে বাঁচা মা তুই। এখন আমার সন্মান রক্ষা করার শেষ সম্বল তুই। এখন তুই যদি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিস।তাহলে আমার মরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
–বাবা তুমি এসব কি বলছো।একদম বাজে কথা বলবে না।বলে দিলাম, না হলে আমি খুব রাগ করবো।আর কথা বলবো না তোমার সাথে।
–আমার একটা কথা রাখবি।কথা দে রাখবি।
–আচ্ছা কথা দিলাম।
–তুই আয়ান কে বিয়ে কর।আমার অসন্মান হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দে মা।আমি দু-হাত জোর করে বলছি।
–বাবা তুমি এমন করে বলছো কেনো।
–তুই কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিস।
–আচ্ছা বাবা আমি বিয়ে করবো।তোমার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি বাবা।তবু্ও তুমি বাজে কথা বলবে না।
আহনাফ সাহেব শখকে জড়িয়ে ধরে বললো লক্ষি মেয়ে আমার। আমি তাহলে সবাইকে বলি।বলেই চলে গেলো।
–রুহি মা,শখ রাজি ও বিয়ে করবে।
–সত্যি বলছেন স্যার।
–হুম সত্যি মা।এখন তোমাদের বউকে তোমরা নিজের মতো করে বউ সাজিয়ে না-ও।
–আলহামদুলিল্লাহ। বলেই শখকে সাজাতে চলে গেলো রুহি।
তারপরে শখকে বউ সাজিয়ে আয়ানের পাশে বাসনো হলো।শখ ভয়ে চুপ করে আছে। সেই সাথে ভেতরে ভেতর খুব খারাপ লাগছে। আজ বাবা মাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে। কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। আয়ানকে কবুল বলতে বললে আয়ান তিন বার কবুল বলে দিলো।তারপরে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দিলো।কাজী সাহেব শখের কাছে আসলো।শখকে কবুল বলতে বললে শখ চুপ কোনো কথা বলছে।একটু পরে ফোপাঁনির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সবাই বুজতে পারলো শখ কান্না করছে।রুহি শখকে ভালো করে বুঝিয়ে বললো,প্রায় পাঁচ মিনিট পড়ে শখ তিন বার কবুল বললো।তারপরে সাইন ও করে দিলো।
কাজী সাহেব বলে উঠলো আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে সম্পূর্ন হলো।সবাই নতুন দম্পতির জন্য দোয়া করুন,ওরা যেনো সারাজীবন একসাথে একে অপরের পাশে থাকতে পারে।তারপরে দোয়া করে মোনাজাত করে কাজী সাহেব চলে গেলেন।সবাই কে বিয়ের মিষ্টি খাওয়ানো হলো।
সবকিছু শেষ এবার বিদায়ের পালা।শখের বাবা আয়ানের হাতে শখের হাত দিয়ে বলল।
–বাবা আজ থেকে আমার মেয়ের দায়িত্ব তোমার। আমার মেয়ে’কে কখনো কষ্ট দিও না।খুব আদরের মেয়ে আমার। ভরাস করে তোমার কাছে দিয়ে দিলাম।আশা করি তুমি এর মর্যাদা রাখবে।
–স্যার,আপমি চিন্তা করবেন না।আপনার ভরসার মূল্য আমি দিব।
আয়ানের কথায় আহনাফ সাহেব ভরসা পেলো।গাড়িতে ওঠার সময় বাধলো ঝামেলা শখ কিছুতেই একা যাবে না।বাবা মাকে শখের সাথে যেতে বলছে।চিৎকার করে কান্না করছে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে। শখের আম্মু কোনো রকম শখকে বুঝিয়ে গাড়িতে তুলে দিলো।গাড়ি ছেড়ে দিলো।গাড়ি চলছে আপন গতিতে। শখের কান্না আরো দিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। তা দেখে আয়ান বিরক্ত হয়ে বললো।
–আপু এই মেয়েকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দাও।কানে মাথা খেয়ে দিলো।
আয়ানের কথা শুনে হা হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। শখের কান্না আওয়াজ কিছুটা কমে আসছে।সে একবার আয়ানের দিকে তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে আবার কান্না শুরু করে দিলো।
চলবে…..