#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_০৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
সবাই ওর দিকে থাকিয়ে না থেকে ক্লাসে মন দেন।তা-নাহলে ওর সাথে সবাইকে দাঁড় করিয়ে রাখবো।কিছুটা জোরে-ই বললো আয়ান।সবাই ভয়ে সামনে ঘুরে ক্লাসে মন দিলো।এদিকে শখ বেচারা এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। না পারছে বলতে না পারছে সইতে।পুরো ক্লাস এভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো স্যার যাওয়ার সাথে সাথে ধপ করে বসে পড়লো।চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
আয়েশা:তোকে বলেছিলাম স্যার খুব রাগী।ক্লাসে সাবধানে থাকবি আমার কথা শুনলি না।দেখলি তো খুব কষ্ট হচ্ছে সোনা।
শখ কান্না করতে করতে বললো শালা ব্যাডা রে একবার খালি পাই জন্মের শিক্ষা দিয়ে দিব।আমি না হয় একটু ভুল-ই করেছিলাম তার জন্য কতো,মাফ চাইলাম শালা মাফ তো করলো না উল্টো শান্তি দিলো।এখন সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে।
–এই মেয়ে তোমার কাল শাস্তি পেয়ে মন ভরে নাই।তাই জন্য আজ আবার নতুন করে শান্তি নিলে।বলেই পুরো ক্লাসের সবাই হেঁসে উঠলো।
–সব জায়গায় ত্যারামু খাটে না একটু ভালো হও বুঝতে পারলে।এত সুন্দর হিরোর মতো স্যার এর সাথে কেউ ঝগড়া করে।একটু ভালো করে কথা বলতে পারো না।স্যার তো আমাদের সাথে কথা-ই বলে না তা না হলে ঠিক পটিয়ে নিতাম।
শখ:আচ্ছা তোমাদের কি মনে হয়।তোমাদের মতো আমার রুচি এতটাই খারাপ নাকি।যে,ঐ বজ্জাত হনুমান ব্যাডারে পটাতে যামু।আল্লাহ তোমাদের ভালো রুচির অধিকারী করে দিক আমিন।
–এই মেয়ে কি বললে আমাদের রুচি খারাপ।
–সাবধানে কথা বলবে বলে দিলাম।তোমার স্যার কে ভালো না-ই লাগতে পারে কিন্তু স্যার আমাদের সবার ক্রাস।স্যারকে নিয়ে একটা বাজে কথা বললে ছেড়ে দিব না হুম বলে দিলাম।
–আরে দেখ না স্যার আসার পরে থেকে শাস্তি পেয়ে-ই যাচ্ছে তা-ও লজ্জা নেই বুজলি।কেমন আমাদের সাথে তর্ক করেই যাচ্ছে।
–তাহলে কি তোমাদের চুম্মা দিমু ময়নারা।আমি তোমাদের খাই’ও না পড়ি’ও তোমাদের কথা আমার চুপচাপ শুনতে হবে।তা-ও তোমারা আমাকে কার জন্য কথা শুনাচ্ছো।ঐ ছাগলের মতো দেখতে হনুমান ব্যাডার জন্য।
মেধা:শখ তুই স্যারকে এত বকা দিস।যদি স্যারের কানে যায় তাহলে তুই শেষ।
–ওনার কানে গেলে আমার কচু হবে আমি ভয় পাই নাকি হুম।উনি বাঘ না ভাল্লুক যে আমাকে খেয়ে ফেলবে।আমি শখ কাউকে ভয় পাই না।কিছুটা ভাব নিয়ে বললো।
স্নেহা:শখ ঐ দেখ স্যার আসছে।
শখ:আল্লাহ বাঁচাও বিশ্বাস করেন স্যার আমি কিছু বলি নাই কিছু করিও নাই এরা সবাই মিলে আমার সাথে ঝগড়া করছে আমি খুব ভালো মেয়ে আপনার কি মনে হয় আমার মতো মাসুম বাচ্চা কাউকে কিছু বলতে পারে।
চোখ বন্ধ করে একদমে কথাগুলো বলে ফেললো শখ।
আয়ান কোনো প্রতিক্রিয়া না করে ভুলে কলম রেখে গিয়েছিল।সেটা-ই নিতে আসছিলো আয়ান। শখের একটা কথা’ও শুনতে পায় নাই সে।শখের দিকে একবার তাকিয়ে।গটগট করে চলে গেলো আয়ান।
শখ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।
আয়েশা:কিরে তুই নাকি ভয় পাস না।এখন তো ভয়ে ভেজা বেড়ালের মতো ম্যাউ ম্যাউ করলি।
–এতক্ষণ তো সেই মুখে ফটর ফটর করছিলে স্যার এর সামনে সব টুস।
শখ:তোদের মতো বান্ধবী থাকলে শত্রুর কি দরকার বল।
মেধা:কি তুই আমাদের শত্রু বললি।যা তোকে আমরা সাহায্য করবো না।আমরা যখন কেউ হয় না তোর।
শখ:এমনিতেও’ তোদের কিচ্ছু করতে হবে না।আজ আমার ভালো লাগছে না আমি বাসায় চলে যাব এখন।পা’টা কেমন জানি অবশ হয়ে আসছে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।
বলেই শখ চলে গেলো।
আয়েশা:তোর এভাবে বলা ঠিক হয় নাই। দেখ ও কষ্ট পেয়ে চলে গেলো।সত্যি ওর পায়ের অবস্থা ভালো না পুরো ৪০ মিনিট এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তুই কম কিছু মনে করছিস নাকি রে।আমি নিশ্চিত আজ ওর জ্বর আসবে কাল ও কলেজে আসতে পারবে না।তুই থাক দেখি আমি ওর সাথে যাই।
আয়েশা দৌড়ে শখের কাছে আসলো শখের পায়ে ব্যথা শুরু হবার কারনে হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে শখ পড়ে যেতে লাগলে।আয়েশা এসে ধরে ফেলে।
শখ:কিরে তুই আসলি কেনো ক্লাস নেই।
–তুই হাঁটতে পারছিস না আর আমি তোকে এভাবে একা ছেড়ে দিব নাকি চল আমি’ও তোর সাথে যাব তোকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তারপরে আমি বাসায় যাব।
–না থাক আমার সাথে কারো যাওয়া লাগবে না।আমি একাই যেতে পারি।আমার কাউকে দরকার নেই।
–ওলে বাবা লে বাবুর লাগ হয়ে গেছে বুঝি।এত কথা না বলে চল তোকে তাড়াতাড়ি বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
তারপরে শখ আর কিছু বললো না আয়েশা শখকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে নিজে’ও বাসায় চলে গেলো।
রাহেলা বেগম:কি রে মা কোনো সমস্যা হয়েছে তোর,তুই কি কোনো ভাবে অসুস্থ নাকি আজ এত বাসায় তাড়াতাড়ি চলে আসলি।
শখ:না আম্মু এমনিতেই ভালো লাগছে না।একটু খারাপ লাগছে তাই চলে আসলাম।
–কি হয়েছে আমার মেয়েটার কি সমস্যা হচ্ছে মাকে বল।আমি কি ডক্টর কে কল করবো।একবার এসে দেখে যেতো তোকে।
–আম্মু তুমি একটুতে-ই এত হাইপার হয়ে যাও কেনো বলো তো আমার কিছু হয় নাই। একটু ঘুমোলে ঠিক হয়ে যাবে।
–তুই সত্যি বলছিস তো।আমি যে কেনো এত হাইপার হয় তুই বুজবি না।যেদিন তুই মা হবি যেদিন বুজবি।
–হ্যাঁ আম্মু সত্যি। ছোট থেকে তোমার এই ডায়লগ শুনে শুনে বড় হলাম গো আম্মু।আর কতো বার শুনাবে।
–যতোদিন বেঁচে আছি।ততোদিন বলবো।আমি মরে গেলে তো আর কেউ বলবে না।
–আম্মু একদম বাজে কথা বলবে না।দিলে তো মনটা খারাপ করে।বলেই শখ রাগে নিজের রুমে চলে গেলো।
পাগল মেয়ে একটা খালি রাগ করে। আমি কি বোঝাতে চাই একটুও বুঝে না।একদিন ঠিক বুঝতে পারবি।যেদিন আমি থাকবো না।
রাত্রে শখের গায়ে জ্বর এসে ভরে গেছে। রাহেলা বেগম আসছিলেন মেয়েকে খাওয়ার জন্য ডাকতে মেয়েটা দুপুরে এসে ঘুমিয়েছে সারাদিন না খাওয়া।ডাকতে এসে মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে আঁতকে উঠে।একি জ্বরে তো গা পুরে যাচ্ছে।জ্বর আসলো কখন একটা বার ডাকলো না আমাদের।
–কি গো একটু ওপরে আসো তো দেখো মেয়ের গায়ে জ্বর এসে ভরে গেছে।ডক্টর কে কল করো।
রাহেলা বেগম এর চিৎকার শুনে আহনাফ সাহেব,মুনতাহা,ফিয়াজ সবাই ওপরে চলে আসে।
আহনাফ সাহেব:কি হয়েছে আমার মেয়ের।
ফিয়াজ:মা কি হয়েছে বোনের।
মুনতাহা:সব নাটক সবার থেকে ভালোবাসা নেওয়ার জন্য এসব আমি বুঝি না মনে করছে।এসব নাটক করে তোমাদের সবাইকে ভুলাইতে পারে আমাকে না।যতো সব এস নাটক অন্য কোথাও গিয়ে করতে বলো।
কথা গুলো বলেই মুনতাহা চলে গেলো।
ফিয়াজ:বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।আব্বু,আম্মু তোমরা ওকে ঠিক মতো মানুষ করতে পারোনাই।দিন দিন বেয়াদব আরো বেশি হচ্ছে।যেদিন আমার হাতে ও পড়বে ঐদিন’ই ও শেষ।বড়দের সামনে কি করে কথা বলতে হয় জানে না।
–বাবা এখন রাগ করার সময় না।আগে মেয়েটাকে দেখ।
–মা তুমি এক কাজ করো ওকে তুলে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দাও।তারপরে মাথা পানি পট্টি দিয়ে দাও আমার মনে হয় সুস্থ হয়ে যাবে।যদি তাও জ্বর না কমে তাহলে ডক্টর আংকেল-কে আসতে বলবো।
রাহেলা বেগম শখকে খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো। সরারাত জেগে শখের সেবা করলো।পরের দিন সকাল বেলা আর কলেজে যেতে দিলো না শখকে এখন আর জ্বর নেই।
শখ:আম্মু তুমি কেনো কাল সারারাত জেগে ছিলে।তুমি জানো না রাত জাগলে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়।
–আমার মেয়েটা যে কাল অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। আমি কি আরামে ঘুমোবো।
–আরামে না ঘুমোতে আমার পাশে তো ঘুমোতে পারতে।
–তুই বুজবি না।যেদিন মা হবি সেদিন বুজবি।সন্তানের কিছু হলে মা কখনো শান্ত থাকতে পারে না।
–শুরু হয়ে গেলো তোমার উলটা পালটা বকবকানি।যাও তুমি গিয়ে ঘুমোও আমি আজ রান্না করছি।
–দেখি জ্বর কমছে নাকি।আর তুই করবি রান্না। ডিম ভাজতে গিয়ে গলা পুরিয়ে ফেলে এই মেয়ে নাকি রান্না করবে।
–তোমার আমাকে কি মনে হয় আম্মু পারবো হুম।
মুনতাহা:শুধু শুধু আমাদের দুপুরের খাবারটা নষ্ট করিস না বুজলি।কামাই তো করিস না।আমার বাবার টাকায় বসে বসে খাস।কিছু একটা কর।আর কতোদিন এভাবে আমার বাবার টাকা ধংস করবি বল।
–আপু তুমি এভাবে বলছো কেনো।বাবা কি তোমার একার নাকি আমার’ও বাবা।আর আমি কি একা একা বসে বসে খাই নাকি।তুমিও তো বসে বসে খাও বড় মেয়ে হিসেবে তোমার দায়িত্ব আগে।আমি তো করবোই আমার সাথে তোমারও দায়িত্ব আছে মনে রেখো।
–বেয়াদব মেয়ে বড় বোনের মুখে মুখে কথা বলিস দেব এক থাপ্পড় সব দাঁত ফেলে দিব বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।
–আপু তুমি আমার সাথে সব সময় এমন করো কেনো বলো তো আমি কি দোষ করছি যে তুমি আমাকে সব সময় অপমান করো।দেখতে পারো না।আমার তো এখন মনে হয় তুমি আদো আমার নিজের বোন তো।
–তুই তোকে দেখতে পারার মতো কি কাজ করছিস সব সময় বেয়াদবের মতো মুখে মুখে কথা বলসি।আপদটা বিদায় হলে বাচিঁ।
রাহেলা বেগম:মুনতাহা ছোট বোনের সাথে এ তোমার কেমন ব্যবহার।
–ও আমার কিসের ছোট বোন ওর মতো বেয়াদব মেয়েকে আমি ছোট বোন হিসেবে মানি না।
বলেই চলে গেলো মুনতাহা। শখ দাঁড়িয়ে কান্না করছিলো রাহেলা বেগম শখের চোখের পানি মুছে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো কাদিস না মা।
–আম্মু আপু আমাকে কেনো দেখতে পারে না আমি কি করছি যার জন্য আপু আমাকে সয্য করতে পারে না।
–মন খারাপ করিস না মা দেখবি একদিন মুনতাহা ঠিক ওর ভুল বুঝতে পারবে আর তোকে অনেক অনেক ভালোবাসবে।
–কবে আসবে সেই দিন।আর কতো অপেক্ষা করবো সেই দিন এর।
আর কাঁদিস না তো চল আজ তোকে আমি রান্না করা শিখাবো।শখ এবার চোখের পানি মুছে কিছুটা খুশি হয়ে বললো
–সত্যি আম্মু।
–হ্যাঁ,সত্যি এবার চল আমার সাথে। তারপরে শখ তার মায়ের সাথে রান্না ঘরে চলে গেলো।
চলবে……