#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৩২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
শখ চলে যাওয়ার সাথে সাথে আয়ান মেয়েটির গলা টিপে ধরলো।
–তোর সাহস কি করে হয়,আমার শখকে নষ্ট চরিত্র হীন মেয়ে বলার।তুই নিজে কি সেটা আগে ভাব।
–স্যার আপনি ঐ নষ্ট মেয়ের জন্য আমাকে মারলেন। আয়ান এবার রেগে মেয়েটির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
–শখকে নিয়ে যদি আপনি আর একটা কথা বলেছেন।আপনাকে এখানে’ই শেষ করে দিব।আপনি ভাবতে’ও পারবেন না।আমি আয়ান রেগে গেলে।কি কি করতে পারি।
–আপনি জানেন,আমি চাইলে আপনার নামে মামলা করতে পারি।একটা ছাত্রীর জন্য এত টান,এত দরদ কিসের আপনার। আর হবে’ই বা না কেনো,বাজে মেয়েটা ঠিক আপনাকে ইমপ্রেস করে নিয়েছে।
–এনাফ ইজ এনাফ। কাকে তুৃমি বাজে মেয়ে বলছো।তুমি যাকে বাজে মেয়ে বলেছ।সে আমার স্ত্রী।আমি তোমাকে শেষ বারের মতো বলছি।শখকে নিয়ে বাজে কথা বলা বন্ধ করো।
–স্যার আপনি বিয়ে করেছেন। তাও আবার শখকে।যাকে দুই চোখে দেখতে পারেন।এটা’ও আমাদের বিশ্বাস করতে হবে।আমাদের কি বোকা ভেবেছেন।
–সব কিছুর কৈফিয়ত আমি তোমাদের দিব না।তোমরা আমার টিচার নাকি আমি তোমাদের টিচার। আজ-ই কলেজে শেষ দিন তোমার। আমার সামনে থেকে সরে যা-ও। চিৎকার করে বলে উঠলো। ভয়ে সবাই বেড়িয়ে আসলো।যাওয়ার আগে মেয়ে’টি বলল আপনাকে দেখে নিব স্যার।আয়ান হালকা হাসলো।
এক ঘন্টা পড়ে মেয়েটির বাবা মা আসলো।
–কলেজের সামান্য একটা টিচার হয়ে,তোমার সাহস কি করে হয়।আমাকে মেয়েকে মারার।আবার আমার মেয়েকে কলেজ থেকে রাসটিকেট করা হলো কেনো।
–আপনার মেয়ে অন্যায় করেছে। তাই তার শাস্তি সে পেয়েছে। আপনার মেয়েকে আমি যে এখনো আস্ত রেখেছি।এটাই আপনাদের ভাগ্য ভালো।
–আয়ান তুমি জানো,তুৃমি কার সাথে কথা বলছো।আমি তোমাকে শেষ করে ফেলবো।
–হ্যাঁ আমি জানি আমি একজন অবৈধ ব্যবসায়িক এর সাথে কথা বলছি।দেখবেন ভিডিও সহ প্রমান আছে।বলে’ই আয়ান একটা ভিডিও বের করে দেখালো।ভিডিও টি দেখে লোকটি ঘামতে শুরু করলো।
–এটা তুমি কোথায় পেলে।
–আপনি যে ভাবে সবকিছু না জেনে আপনার মেয়ের কথা শুনে আমার বিচার করতে আসছেন।আপনি যাহ খুশি করতে পারেন।মামলা করবেন না কি করবেন করেন।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল।
–আর এই যে আপনি,আমার ওয়াইফ’কে চরিত্রহীন বললেন না।দাড়ান আপনাকে একটা ভিডিও ফুটেজ দেখায়,বলেই আয়ান একটা ভিডিও বের করে দিলো,যা সিসি ক্যামেরাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।মেয়েটি একটি ছেলের সাথে অশ্লীল কাজ করছে। ভিডিও টি দেখে মেয়েটির বাবা মা চোখ বন্ধ করে ফেলল।মেয়েটি মাথা নিচু করে ফেলল।
–তুমি নিজে চরিত্র হীন,নষ্ট মেয়ে হয়ে আমার ওয়াইফকে এসব বাজে কথা বলার মতো দুঃসাহস পেলে কোথায় থেকে।আমি কাউকে কষ্ট দিতে চাই না। বা কারো দুর্বলতা-তে আঘাত করতে পছন্দ করি না।কিন্তু তুমি আমার কলিজাতে আঘাত করেছো।এর শাস্তি তো আমাকে পেতেই হবে।এর পরিণাম যে আরো কত খারাপ হতে পারে তুমি নিজেও জানোনা।
–প্লিজ স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি জানতাম না শখ আপনার বউ।যদি যানতাম কোনোদিন এসব কথা বলতাম না।দয়া করে আমাদের সন্মান’টা নষ্ট করে দিবেন না।
–তারমানে আমার বউ হলে বলবেন না।অন্য কেউ হলে বলবেন তাই তো।আজ শখকে বলেছেন।কাল হয়তো অন্য কাউকে বলবেন।
–আয়ান বাবা তুমি শান্ত হও।আমার মেয়ে একটা ভুল করে ফেলেছে।বাচ্চা মেয়ে তুমি ওকে মাফ করে দাও।
–আপনার মেয়ে তো বাচ্চা। আপনি তো আর বাচ্চা না।ছোট’রা ভুল করলে ওটা ভুল।তাকে বুঝিয়ে বলতে হয়।ছোটদের মাফ করা যায়।কিন্তু বড়’রা ভুল করলে ওটা ভুল নয়।ওটা অন্যায়।এখন বলেন আপনাকে কি শাস্তি দিব।
–আমাকে একটা সুযোগ দাও আয়ান।কথা দিলাম ভালো হয়ে যাব।আল্লাহর কাছে তওবা করে।আল্লাহর পথে ফিরে আসবো।যে কয়দিন বেঁচে আছি আল্লাহর ইবাদত করে কাটিয়ে দিব।তোমাকে আমি কথা দিলাম।
–আপনি সত্যি বলছেন।
–একদম সত্যি। তোমার বিশ্বাস না হলে তুমি আমার ওপরে নজর রাখতে পারো।
–ঠিক আছে।যে ভালো হতে চায়।তাকে একটা সুযোগ দেওয়া যায়।আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে এখনি চলে যান।রেগে বলল।
লোকটি তার মেয়ের চুল ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেলো।
এদিকে শখ কলেজে থেকে এসে রুমে গিয়েছে আর বের হয় নাই। দুপুর থেকে কান্না করে’ই যাচ্ছে। রুহি আসছিলো কোনো রকম বুঝিয়ে রুহিকে তাড়িয়ে দিয়েছে।সারাদিন এর ক্লন্তি নিয়ে আয়ান বাসায় ফিরল।শখ রুমে বসে ছিলো শখের সাথে কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে,খাবার খেয়ে নিলো।আয়ানকে দেখে এখন শখের খুব রাগ হচ্ছে।থাকতে ইচ্ছে করছে না।এই মানুষটা’র সাথে একরুমে থাকতে।শখ উঠে চলে যেতে লাগলে আয়ান বলল।
–দাঁড়াও,আয়ানের কথা পাত্তা না,দিয়ে শখ সামনের দিকে এগোতে লাগল।আয়ান উঠে গিয়ে,শখের হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরালো।
–কলেজে শাড়ি পড়ে তোমাকে কে যেতে বলেছিল।তোমাকে না বলছি।বোরকা পড়ে বাহিরে চলাফেরা করবে। পর্দাতে’ই নারীর সৌন্দর্য।তোমাকে আমি নিষেধ করার পরে,কেনো আমার কথা অমান্য করলে তুমি।
–আমাকে কেউ গাদা গাদা বোরকা কিনে দিয়েছে আমি সেটা পড়ে যাব।শাড়ি ছাড়া কিছু’ই নেই আমার। ভাগ্যিস মনে করে আমার সালোয়ার কামিজ গুলো এনেছিলাম এখন শান্তিতে পড়তে পারছি।বলেই শখ হাত ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে নিলো।
–বাপ রে বউ কি রাগ করেছে। এখন কি করবো আমি,আয়ান কিছু একটা ভাব।
শখ বিছানায় শুয়ে কান্না করছে।আয়ান গিয়ে শখের পাশে শুয়ে বলল।
–কি হলো এভাবে কান্না করছো কেনো।তোমার জামাই কি মারা গেছে।আমার সামনে এভাবে কান্না করতে পাবরে না।কান্না করতে হলে বাহিরে গিয়ে কান্না করে আসো।
শখ রেগে কান্না করতে করতে বলল আপনার বউ মরছে।আমি তো বাহিরে-ই যাচ্ছিলাম।আমি কাউকে বলছিলাম আমাকে ধরে রাখেন।বলে’ই উঠে বেলকনিতে চলে গেলো শখ।
–যাহ বাবা সত্যি চলে গলো। আমার থেকে এক কাঠি উপরে আমার বউ।মেয়ে মানুষের রাগ কি করে ভাঙাবো।আগে কোনোদিন ভাঙা’ই নাই।
আয়ান উঠে গিয়ে শখের হাতের ভাজে হাত রেখে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো।শখ রেগে আয়ান’কে সারানোর জন্য উঠে পড়ে লাগল।কিন্তু আয়ানের শক্তির কাছে সে ব্যর্থ।
–কি হচ্ছে ডা কি ছাড়ুন আমাকে।একদম আমাকে কাছে আসবেন না।খবর খারাপ হয়ে যাবে।আমার মতো বাজে মেয়ের কাছে কেনো আসছেন।আপনার জন্য কতো ভালো মেয়ে আছে তাদের কাছে যান।
শখকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে শখের ঠোঁটে হাত রেখে বলল হুঁশশ।
–যাহ বলেছ।এই কথা আর যেনো না শুনি।নাহলে পরিনাম খুব খারাপ হয়ে যাবে।
শখ কোনো কথা বলছে না মাথা নিচু করে কান্না করছে।আয়ান শখের মুখ উঁচু করে তুলে দুই হাত দিয়ে শখের চোখের পানি মুছে দিলো।তারপরে শখকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বলল।
–পাগলি মেয়ে তুমি কাঁদছ,কেনো?আচ্ছা তুমি ভেবে দেখো তো আমি কি তোমার খারাপের জন্য বকেছি।তুমি বুঝো না কেনো।তোমার থেকে কেউ তাকালে আমার ভেতর’টা পুরে ছাই হয়ে যায়।তুমি আমার কাছে সুন্দর হলেই হবে।সবার কাছে এত সুন্দর হওয়া লাগবে না।তুমি জানো সবাই কি বাজে নজরে তোমাকে দেখছিল।ইচ্ছে করছিলো সবাইকে শেষ করে দিতে।
–আমার বোরকা বাসায় রেখে আসছি।সাথে করে নিয়ে আসছি নাকি।আপনার এটা ভেবে আমাকে বকা উচিৎ ছিলো।
–আচ্ছা বাবা আমার ভুল হয়েছে।এখন আমি আমার বউ এর জন্য কি করতে পারি।
–কিছু করা লাগবে না।যখন বলার তখন কিছু করেন নাই।আসছে এখন বউ দেখাইতে।অথচ সবার সামনে বউকে স্বীকার করে বাঁধে আপনার।
–তোমাকে আমি চকলেট,আইসক্রিম কিনে খাওয়াবো।খাবে।
–আমাকে কি আপনার ছোট বাচ্চা মনে হয়।আমাকে চকলেট আর আইসক্রিম এর লোভ দেখাবেন আমি সব ভুলে যাব।দেখি সরুন।আমাকে যেতে দিন। আপনার সাথে কোনো কথা নেই।একদম কথা বলবেন না।আমি কালকে’ই বাবার বাসায় চলে যাব।
–আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বললে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো।
–আপনার মতো বাজে লোকের সাথে আমি থাকবো না।
–তুমি না চাইলে’ও আমার কাছে’ই তোমাকে থাকতে হবে।ফুচকা খেতে যাবে কাকার দোকানে।
–হ্যাঁ যাব সত্যি আপনি নিয়ে যাবেন।এবার কিন্তু আমাকে অনেক গুলা ফুচকা খেতে দিতে হবে।আগের বারের মতো আমাকে ভয় দেখাতে পারবেন না।কিন্তু আমি যাব কি করে আমার তো বোরকা নেই।
–আস্তে আগে একটু দম নিয়ে না-ও।তারপরে কথা বলো।আগেই জানি ফুচকা নিয়ে বাসায় আসতাম।
–ঘুষ,আমি যাব না যান।
–আরে আমি তো মজা করছিলাম রুহি আপুর অনেক গুলো বোরকা আছে একটা এনে দিচ্ছি।
–আপুকে না বলে আপুর জিনিসে, হাত দিবেন।
–সমস্যা নেই।বলে’ই আয়ান একটা বোরকা এনে দিলো শখকে।
দুজন মিলে বেড়িয়ে পড়লো ফুচকার দোকানে।
–আমি আপনার হাত ধরি।
আয়ান হেঁসে বলল।
ধরবে ধরো।
তারপরে শখ আয়ানের হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো।
–ভালো লাগছে তোমার।
–হ্যাঁ অনেক ভালো লাগছে। আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো।জামাইয়ের সাথে রাতে হাত ধরে ঘুরবো।বলেই জিভে কামড় দিলো শখ।তা আয়ানের চোখ এড়ালো না।
–রাগ কমছে।বলল আয়ান।
–না।
–তাহলে ফুচকা খেতে হবে না চলো।বাসায় ফিরে যাব।
–ঠিক আছে চলেন।আমি কি আপনাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিব।
–আর তুমি কোথায় যাবে।
–ফুচকা খেতে।
–একা একা!
–আপনি তো বললেন ফুচকা খাবেন না।
–রাগ করে বলছি।
–এত রাগ আসে কোথায় থেকে।
–জানি না।
–আচ্ছা চলেন বাসায় চলে যাব।বলে’ই শখ বাসার দিকে ঘুরলো।
–আরে আরে কি করছো।আমি এমনি বলছি,চলো।
–যাব না।আপনি যান।বলে’ই আয়ানের হাত ছেড়ে দিলো।
–হাত ছেড়ে দিলে কেনো,এত রাগ করো কেনো।বলেই শখের হাত শক্ত করে ধরে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।
চলবে…..