#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৪১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
পরের দিন সকাল বেলা আয়ান খেয়ে কলেজের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেলো,শখ আজ কলেজে যাবে না।রুহি আপু আছে।কয়টা দিন বাসায় থাকবে।
–শখ এখনো আমার ওপরে রেগে আছিস।বললো মুনতাহা।
–তুমি আমার কে বলোতো।যে,আমি তোমার ওপরে রাগ করতে যাব।মানুষ তার ওপরে রাগ করে যার ওপরে অধিকার থাকে।আর তোমাদের ওপরে তো আমার কোনো অধিকার নেই।তাহলে রাগের প্রশ্ন আসছে কোথায় থেকে।
–আমি জানি আমি যে,অন্যায় টা করেছি তার কোনো ক্ষমা হয় না।আমি সত্যি’টা বলতে চাই নাই।বিশ্বাস কর বোন আমার।তুই আমার নিজের বোন না হলে-ও তোকে ভালোবাসার এতটুকু কমতি রাখি নাই।তোর সাথে একটা কারনে খারাপ ব্যবহার করেছি।সেই কারন’টার সমস্যার সমাধান হ’য়ে গেছে।সেদিন শুভ ওপরে রাগ করে আমি তোকে সত্যি কথা বলে দিয়েছি।প্লিজ আমাকে মাফ করে দে।
–আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য’ই করে আপু।সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না।একদিন না একদিন সামনে আসতো’ই তোমরা আমাকে আঘাত করেছো।খুব ভালো করেছো।মানুষ প্রতিটি আঘাত থেকে’ই কিছু না কিছু একটা শিখে।আমি’ও শিখে গেছি।স্বার্থে আঘাত পড়লে কেউ আপন না।তোমরা’ও তোমাদের আসল রুপ’টা দেখিয়ে দিয়েছো।আমার ভাই’টার আমার কথা মনে নেই।আমার ভাইয়ের পরিনতি কি হবে আল্লাহ জানে।আমার ভাইয়ের আজ কিছু মনে নেই।তার জন্য তোমার ভাই দায়ী কই আমি তো কোনোদিন কোনো অভিযোগ রাখি নাই।তাহলে ছোট একটা কারন ইশু করে আমাকে এভাবে আঘাত কেনো করলে আপু।আমাকে ছোট বেলায় বলে দিতে।তাহলে ভালোবাসার মানুষদের কাছে।এভাবে আঘাত পেতে হতো না।
আসল লেখিকা ফাবিহা বুশরা নিমু।
মুনতাহা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।শখের কথা উত্তরে উত্তর দেওয়ার মতো ক্ষমতা তার নেই।
–শখ বোন আমার।আমাকে নিজের ভাই মনে করে হলে-ও মুনতাহা কে মাফ করে দাও।আজ তোমার কাছে ভাইয়ের অধিকার নিয়ে একটা আর্জি করছি।রাখবে না বোন।বলল শুভ।
–আপু আমাকে নিজে’ও বোনের মতো ভালো না বাসলে’ও আমি আপুকে নিজের বোনের মতো’ই ভালোবেসেছি।তাই আপুকে নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই।বারবার এভাবে মাফ চাওয়ার কোনো মানে’ই হয় না।আগের কথা বাদ দেন ভাইয়া।
–এখানে কি কথা হচ্ছে।আমাকে ছাড়া’ই সব গল্প শেষ করে দিলো রে।
–চলে আসছে।দেখছে একটু বোনের সাথে ভাব করছি।শত্রুতা করতে চলে আসছে।
–এই মেয়ে সাবধানে কথা বলবে।আমার বাসায় এসে আমাকে’ই কথা শোনাচ্ছ।
–আর আপনি যে আমার থেকে বেশি ভালোবাসা পান আমার বোনের থেকে তার বেলা।আমি বোন হয়ে কেমন সয্য করবো।
–বেয়াদব মেয়ে একটা।তোমার বোন এখন আর তোমাদের নেই।আমাদের বাসার সম্পদ হ’য়ে গেছে।এখন ও চৌধুরী বাড়ির বউ।তার মানে চৌধুরী বাড়ির আরেকটা মেয়ে।আর আমার বোন ক্লিয়ার।
ওদের টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া দেখে শখ আর শুভ হাঁসছে।
–শুভ তোর দাঁত ভেঙে দিব।না হেঁসে তোর বউকে সামলা।শখ তুমি হাসছো কেনো।অল্প বয়সে দাঁত হারানোর শখ হয়েছে বুঝি।
রুহির কথায় শখ তাড়াতাড়ি করে দুই হাত মুখে চেপে ধরলো।
সন্ধ্যা বেলা ড্রয়িং রুমে বসে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে।আয়ান ক্লান্ত শরীল নিয়ে বাসায় ফিরলো।
–শখ একটু রুমে আসোতো।বলে’ই আয়ান চলে গেলো।আস্তে করে বালতে শখ শুনতে পেলো না।বেশ কিছুক্ষণ পরে আয়ান ফ্রেশ হয়ে নিজে’ই নিচে চলে আসলো।আয়ানকে দেখে শখ বলে উঠলো।
–আপনি কখন আসলেন।আমাকে ডাকলেন না কেনো।
–ডেকে ছিলাম।তুমি শুনতে পাও নাই।বলে’ই সামনে আগাতে যাবে।তার আগে’ই মিহু পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।
–ধন্যবাদ মিহু।পানি’টা আমার খুব প্রয়োজন ছিলো।
–আমি জানতাম ভাইয়া তোমার এখন পানির প্রয়োজন।তাই আমি নিয়ে যাচ্ছিলাম।তুমি শখকে ডেকে যাওয়ার পরে-ও যখন শখ গেলো না।তাই ভাবলাম আমি নিয়ে আসি।
শখ অসহায় দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।নিজের কাছে বেশ খারাপ লাগছে।আয়ান কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।শখ আয়ানের কাছে যাবে।তার আগে’ই রুহির ডাক পড়লো।মুনতাহা’কে দেখিয়ে বললো।
–বোন আমার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।একটু মাথায় তেল দিয়ে দিবি রে।
–অবশ্য’ই কেনো না।কোথায় আছে বলো আমি নিয়ে আসছি।
–আমি’ও দিব একটু বেশি করে নিয়ে আসিস।
আড্ডা দিতে দিতে কখন যে সময় পেড়িয়ে গেছে কেউ বুজতে’ই পারে নাই।শখ রুমে আসছে না।রাত দশ-টা বেজে গেছে।তাই আয়ান বিরক্ত হয়ে নিচে চলে আসলো।এসে দেখে এখনো মজা করছে সবাই।রুহি আর মুনতাহা ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে আবার।আয়ান চুপচাপ গিয়ে শখের পাশে বসলো।শখ আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো মাথা নিচু করে বসে আছে।একবারো তাকাচ্ছে না শখের দিকে বেশ খারাপ লাগছে শখের।এদের জন্য একবারো আয়ানের কাছে যাওয়া হয় নাই।
–স্যার,,
–নো রেসপন্স!
–আপনি রাগ করছেন।আসলে..আর কিছু বলতে’ই পারলো না আয়ান উঠে চলে গেলো।শখ উঠে আয়ানের পিছু পিছু গেলো।তা দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।
–ভাই মনে হয় রাগ করেছে।তার বউকে এইবার’ও তার কাছে যেতে দেই নাই।বলে’ই সবাই হেঁসে উঠলো।
আয়ান পুরো ড্রয়িং রুমে গোল হয়ে ঘুরছে।শখ’ও আয়ানের পিছু পিছু ঘুরছে।শখ না পেরে আয়ানের হাত খপ করে ধরে ফেলল।
–সমস্যা কি তোমার এভাবে আমার পিছু পিছু ঘুরছো কেনো।হাত ছাড়ো।তোমার আড্ডা ফুরিয়ে গেলো যা-ও।
–বাপ রে জামাই আমার কি রাগ করছে।দশ-টা না পাঁচ-টা না একটা মাত্র জামাই আমার।তার পিছু পিছু ঘুরবো না।তাহলে রাস্তার বখাটে ছেলেদের পিছু ঘুরবো।
আয়ান রাগি চোখ নিয়ে তাকাতে’ই শখ কান ধরে বলল সরি।আয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগে’ই সবাই চলে আসলো ডিনার করার জন্য।আয়ান শয়তানি করে মিহুর পাশে বসতে যাবে,তার আগে’ই শখ আয়ানের হাত ধরে নিজের পাশে বাসলো।তা দেখে রুহি,শুভ,মুনতাহা মুখ টিপে হাসছে।সবাই চুপচাপ খাওয়া দাওয়া শুরু করলো।
–তা আমার ছেলে ফুপি।শুনালাম আমার ছেলে সংসার ভাংতে আসছো।বলি কি মানুষের ভালো একটু সয্য করতে শিখো।আমার ছেলেটার কপালে ভাগ্য করে বউ জুটেছে।রাগী ছেলে আমার কোনো মেয়ে বিয়ে করতে চাই না।কষ্ট করে একটা বিয়ে করে সংসার করছে।তোমার কেনো সংসার টা নষ্ট করা লাগবে।শুভর মাকে উদ্দেশ্য করে বলল রাফি।বেশ ভাব নিয়ে’ই কথা গুলো বলছিলে।
রাফির কথায় সবাই খাওয়া বন্ধ করে রাফির দিকে তাকিয়ে আছে।
–দেখছেন ভাইজান।এই টুকু ছেলে কি পাকনা পাকনা কথা বলছে।
–ভাইজান কি দেখবে।তুমি তোমার মেয়ে’কে দেখো আর ওকে সামলা’ও যাতে অন্যের সংসার নষ্ট না করে।
–রাফি,নানু ভাই,বাজে কথা বলতে হয় না।এসব বাজে কথা বলতে কে শিখিছে।
–কেউ শেখায় নাই নানু ভাই।আমি শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি।আর তুমি ওদের সার্পোট করছো তুমি’ও সমান দোষী।যে,অন্যায় করে আর সেই অন্যায়কে যে,পশ্রয় দেয়।সে-ও সমান অপরাধী।
রাফির কথায় আবরাহাম চৌধুরী চুপ হয়ে গেলেন।
–ভাইজান বুজলেন।আপনাদের আর নাতি নাতনীর মুখ দেখা লাগবে না।বাচ্চা একটা মেয়ে’কে বউ করে নিয়ে আসছেন।না পারবে আয়ানকে সুখ দিতে,না পারবে ভালো করে সংসার করতে।দেখা গেলো দু’দিন পরে কারো সাথে ভেগে চলে গেলো।তখন কি করবেন।
–ফুপি তুমি বরং তোমার ছেলের বউ’কে সামলা’ও।আমার বউকে নিয়ে তোমার না ভাবলে’ও চলবে।আমার বউ আমি বুঝে নিব।তুমি এখানে বেড়াতে এসেছো নাকি ভাইয়ের কাছে কূটনামি করতে আসছো।লজ্জা করে না অন্যারে সংসার ভেঙে নিজের মেয়ে’কে বিয়ে দিতে চাও।
–শোন আয়ান আমি তোর ফুপি।আমি তোর ভালো চাই।এ মেয়ে তোকে সুখ দিতে পারবে না।তুই জীবনে সুখী হতে পারবি না।তোর বাবা-মার’ও তো ইচ্ছে করে নাতি-নাতনীদের মুখ দেখতে।তুই যে ছোট মেয়ে’কে বিয়ে করেছিস।আদৌ তোকে বাচ্চা কাচ্চার মুখ দেখাতে পারবে তো।পড়াশোনা’ও কম।কোনোদিক দিয়ে’ই এ মেয়ে তোর যোগ্য না।রাগে আয়ানের চোখ লাল হ’য়ে গেছে।শখের দিকে চোখ পড়তে’ই স্তির হয়ে গেলো আয়ান।নিরবে কান্না করে যাচ্ছে শখ।আর সয্য করতে পারলো না শখ খাবার ছেড়ে উঠে দৌড়ে চলে গেলো নিজের রুমে।
–ঘাড় ধাক্কা খেয়ে বাসা থেকে যদি বের না হতে চাও ফুপি।এসব বাজে কথা আর কোনোদিন না শুনি।তুমি আমার ফুপি জন্য বেঁচে গেলে।তোমাকে তো আমি পরে দেখে নিচ্ছি।বলে’ই আয়ান শখের পেছনে চলে গেলো।
–সত্যি আমি ওনার যোগ্য না।মিহু আপু কত পড়াশোনা করছে। দেখতে কতটা সুন্দর।এই যুগের সাথে তাল মিলেয়ে চলাফেরা করে।যে কেউ পছন্দ করবে।আর আমি তো কোনো দিকে’ই স্যারের যোগ্য না।আমি চলে যাব।থাকবো না।স্যারের সাথে মিহু আপুকে’ই ভালো মানাবে।ফুপি সত্যি কথা’ই বলেছে।আমি থাকবো না।বলেই উঠে চলে যাবে।তার আগে’ই আয়ান এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।
–কোথায় যাচ্ছিলে তুমি।
–আমি বাসায় যাব।থাকবো না এখানে।ফুপি সত্যি কথা বলেছে।আমি কোনো দিকে আপনার যোগ্য না।কোনোদিন আপনাকে সুখী করতে পারবো না।আপনাকে ভালো রাখার মতো কোনো কাজ’ও আমি করি না।মিহু আপু আমার থেকে সবদিক দিয়ে এগিয়ে।আপনি বরং মিহু আপুকে’ই বিয়ে….আর বলতে পারলো না শখ তার আগে’ই আয়ান শখের ঠোঁটে জোরা নিজের দখলে করে নিলো।
শখ নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু আয়ানের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।এক পর্যায়ে ছোটাছুটি বন্ধ করে দিলো শখ।
বেশ কিছুক্ষন পরে আয়ান শখের ঠোঁটে ছেড়ে দিয়ে গালায় নেমে পড়লো।পাগলের মতো কিস করে’ই যাচ্ছে।নিজের সব রাগ ঝাড়ছে শখের ওপরে।কিছুটা শক্তি দিয়ে শখের গলায় কামড় বসিয়ে দিলো।শখ ব্যাথা হালকা আর্তনাদ করে উঠলো।
আয়ান নিজের টি-শার্ট খুলে ছুরে ফেলে দিয়ে। শখকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।শখের গলায় আবার মুখ গুজে দিলো।শখের হাতের ভাজে নিজের হাত এক করে দিয়ে নিজের সমস্ত ভরে শখের ওপরে ছেড়ে দিলো।ডুবে দিলো শখের মধ্যে।আজ’কে আর কোনো দূরত্ব নেই তাদের মাঝে।চাইলে’ও কেউ আলাদা করতে পারবে না।এভাবে’ই পূর্ণতা পেলো শখ আয়ানের ভালোবাসার।আজকের রাত শখ আর আয়ানের প্রথম মিলনের সাক্ষী হয়ে থাকবে।পূর্ণতা পাক পৃথিবীর সকল ভালোবাসা।
চলবে…..