#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
কলেজে থেকে এসে শখের এত খারাপ লাগছিলো।টিভি দেখতে দেখতে কখন যে ড্রয়িং রুমে ঘুমিয়ে পড়েছে।সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। ঘুম ভাংলো কলিং বেল এর আওয়াজে। ঘুম ঘুম চোখে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো।স্যার আসছে। ঘুৃমের মধ্যেই বলে উঠলো।
–স্যার কিছু বলবেন।আপনার কিছু লাগবে।
–শখ তুমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখছো।কয়টা বাজে আর তুমি এখনো পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছো।
–কয়টা বাজে তা দেখে আমার কাজ নেই বাপু।আমার আগে ঘুম।আপনি যে কাজে আসছেন।সে কাজ করেন আমি বরং ঘুমোই।
–আয়ান এবার রাগি মুখ নিয়ে বললো।শখ আমি তোমার স্যার তোমার ফ্রেন্ড নই।এটা কেমন ধরনের ব্যবহার তোমার।
আয়ানের ধমকে শখের হুস আসলো ঘুমের মধ্যে কি বলে ফেলছে স্যারকে।
–সরি স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে। আসলে ঘুমের মধ্যে।
–পাঁচ মিনিট টাইম দিলাম। ফ্রেশ হয়ে আসো।আর যদি এর মধ্যে যদি আসতে না পারো।তাহলে আমি চলে যাব।
–না স্যার আমি এখুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।আপনি তাড়াতাড়ি আমার রুমে আসুন।বলেই শখ দৌড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
আয়ান এবার পড়লো মহা বিপদে এতদিন তো মুনতাহার রুমে পড়াইছে।শখের রুম কনটা সে তো চিনে না।এখন কি করবে।
একটু পরেই মুনতাহা রেডি হয়ে বেড়িয়ে আসলো।মনে হয় বাহিরে যাবে।আয়ানকে দেখে মুখ বেকিয়ে চলে গেলো।
কেনো জানি মেয়েটাকে দেখলেই আয়ানের রাগ মাথায় চরে বসে।তবুও কিছু বলে না। ওর স্যারের মেয়ে জন্য।
–একি বাবা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো।শখ তোমাকে ওর রুম দেখিয়ে দেয় নাই।
–আসলে আন্টি।ও ঘুমিয়ে ছিলো।আমি ওকে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে বলায় দৌড়ে চলে গেছে। আর এতদিন তো মুনতাহার রুমে পড়াইছি।তাই শখের….
–বুঝেছি বাবা আর বলতে হবে না দেখো আমার মেয়ের কান্ড। খালি হাত পায়েই বড় হয়েছে। কোনো জ্ঞান বুদ্ধি হয় নাই। তুমি কিছু মনে করো না বাবা।আসো আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।
বলেই শখের রুমে নিয়ে গেলো।আয়ান শখের রুমে গিয়ে পুরাই অবাক। মাথায় প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো।এটা মানুষের রুম নাকি মাছের হাট বাজার। পুরো রুমে চকলেট,আইসক্রিম,চিপস,আরো সব হাবি জাবি জিনিসের প্যাকেট পড়ে আছে।রুম তো না যেনো গরুর গোয়াল ঘর।
–তুমি কিছু মনে করো না বাবা।মেয়েটা আমার নিজের রুমে নিজের কোনো জিনিস কাউকে ঢুকতে দেয় না।ওর অনুমতি ছাড়া ওর রুমে প্রবেশ করলে খুব রাগারাগি করে।মা….কিছু বলতে গিয়ে’ও শখকে দেখে থেমে গেলো।
–তুই এসে গেছিস পড়াশোনা শুরু কর।আমি আয়ান বাবার জন্য নাস্তা তৈরি করে নিয়ে আসি।
–শখ এটা তোমার রুম।
–হ্যাঁ স্যার কিন্তু কেনো।বিশ্বাস হচ্ছে না।
–এটা নিশ্চয় কোনো গরু ছাগলের ঘর বলে আমার মনে হয়। আমি তো জানতাম মেয়েদের ঘর অনেক সুন্দর আর পরিপাটি হয়।এখন তো দেখছি পুরো গরুর গোয়াল ঘর।
–স্যার আপনি এভাবে বলতে পারেন না।দেখুন তো কতো সুন্দর আমার চার বাচ্চা। বিছানায় বড় বড় চারটা টেডি বিয়ার দেখিয়ে।
–হ্যাঁ যেমন গরু তেমন তার বাচ্চা। পাঁচ মিনিট সময় তার মধ্যে রুম পরিষ্কার করে ফেলো।
–আমি পারবো না।আমার আম্মু আমাকে কাজ করতে বলে না।আসছে উনি আমাকে কাজ করতে বলতে।
আয়ান রেগে চোখ গরম করে শখের দিকে তাকিয়ে আছে।
এবার শখ একটা সুন্দর হাসি দিয়ে বললো।
–আপনি রাগছেন কেনো স্যার আমি তো মজা করছিলাম। আপনি কতো ভালো।আমার গুরুজন আমি তাই আপনার কথা অমান্য করতে পারি বলেন।জানেনই তো আমি মেয়েটা খুব ভালো।একটু ভাব নিয়ে বললো শখ।
–আমি তোমাকে রুম পরিষ্কার করতে বলছি।তোমার থেকে কাহিনি শুনতে চাই নাই।
শালা বজ্জাত ব্যাডা,হনুমান,ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা। আমারে পাইছেটা কি কলেজে গেলে শান্তি দেয় না।শাস্তির ওপরে রাখে।বাসায় এসেও শান্তি নেই। আমার বাসায় এসে আবার আমাকেই হুকুম করছে।আমি কি তোর কেনা গোলাম নাকি তোর ঘরের বউ তুই আমারে এত জালাস শালা,তোর কপালে কোনোদিন বউ জুটবে না অভিশাপ দিলাম।
–আমাকে গালি দেওয়া শেষ হলে এবার কাজে লেগে পড়ো।সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
–শালা তুই আবার কথা বলছিস।মনে মনে কথা বলে’ও শান্তি নেই। শালা তা-ও শুনতে পায়।
শখের বিরবির করা দেখে আয়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে শখ কি বলছে হয়তো তা বোঝার চেষ্টা করছে।
–কি হলো আমার কথা তোমার কানে যাচ্ছে না।চলে গেলাম আমি।স্যার কি বললে বলবো তুমি আমার কথা শুনো নাই। তাই আমি আর তোমাকে পড়াবো না।
–এতবড় মিথ্যা কথা বলবেন আপনি।আল্লাহ আপনাকে এত বড় পাপ দিবে স্যার।আমি তাই ছাত্রী হয়ে স্যারের পাপ হতে দিতে পারি এখনি পুরো রুম পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
বলেই শখ পুরো রুম পরিষ্কার করে ফেললো।
–শখ আমি তোমার স্যার আর তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো।তাই এসব পোশাকে আমার সামনে আসবে না।আর এসব পোশাক আর পড়বে না।বড় হয়েছো সালোয়ার কামিজ পড়বে বুঝতে পারছো। মাথা নিচু করে বললো কথা গুলো আয়ান।
–লে শালা এখন আমার পোশাক নিয়ে পড়েছে। আমি কি সুন্দর কার্টুন আলা গেঞ্জি আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট এসব বাদ দিয়ে নাকি।আবুলের মতো সালোয়ার কামিজ পড়বো।পারমু না আমি।
–কিছু বললে।
–স্যার আপনি আমার সব বিষয়ে কথা বলতে পারেন না।আপনার কোনো অধিকার নেই। আমি পড়বো কি করবো।এসব বলতে তো আর আপনি আসেন নাই। আপনি আমাকে পড়াইতে আসছেন।তাই এসব না দেখে আপনি আপনার কাজ করুন।
আয়ান এবার রেগে উঠে দাড়ালো আস্তে আস্তে শখের দিকে এগোতে লাগলো।ভয়ে শখ শেষ। রেগে কি বলে ফেললো স্যারকে এখন কে বাঁচাতে।
শখ দেওয়ালের সাথে ঠেকে গেছে আর যাওয়ার জায়গা নেই শখের।এদিকে আয়ান শখের অনেকটা কাছে চলে আসছে।
এবার আয়ান দুই হাত দিয়ে দেওয়াল চেপে ধরলো। মাঝখানে শখ।বেশ ভয় লাগছে শখের।ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে।ভয়ে চোখ বন্ধ করে দিলো।
–আমি আয়ান চৌধুরী আমার কথা অমান্য করে এমন কেউ নেই তোমার সাহস হয় কি করে আমার মুখের ওপরে কথা বলার।
–সরি স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি এখনি চেঞ্জ করে আসছি।কথা দিলাম আর এমন পোশাক পড়বো না।
–গুড গার্ল।যাও তাড়াতাড়ি আসো সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আয়ান শখের থেকে দূরে সরে আসলে শখ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।দৌড়ে কোনোরকম ওয়াশরুমে চলে গেলো।
একটু পরে কালো রং এর সালোয়ার কামিজ পরে বেড়িয়ে আসলো।আয়ান আড়চোখে শখকে দেখছে।ফর্সা শরীলে কালো রংটা আরো আর্কষণীয় করে তুলছে।
–বসো আজ তোমার একটা পরিক্ষা নিব।ভালো ফলাফল করতে পারলে।তোমারজন্য একটা উপহার আছে।
–সত্যি স্যার কি উপহার।আগে দেখান তারপরে পরীক্ষা দিব।
আয়ান রাগি চোখ নিয়ে শখের দিকে তাকালো।
–আমি তো মজা করছি।আমি পরীক্ষা দিব।প্রশ্ন দেন আমি লিখা শুরু করে দেই।
–এই নাও।তোমার সময় ত্রিশ মিনিট।
তারপরে শখ লেখা শুরু করলো।লেখা শেষ করে স্যার কে দিলো।
–গুড খারাপ না।তোমাকে যতোটা খারাপ ভেবেছিলাম তোতোটা খারাপ কিন্তু তুমি নও।এই না তোমার উপহার। বলেই একটি কলম এগিয়ে দিলো আয়ান।
–শখ অনেক খুশি হলো কলমটি দেখে।স্যার এই কলম আপনি আমার জন্য এনেছেন। আপনি কোথায় পেলেন।জানেন আমি খুব খুশি হয়েছি।ওলে গুলুগুলু বলেই আয়ানের গাল টেনে দিলো।
আয়ান রাগি চোখ নিয়ে বললো।
–তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে ছোঁয়ার।আমি তোমার মজা করার ফ্রেন্ড নাকি হুম।
তখনি দরজার কাছে থেকে ফিয়াজ এসে বললো।
–দেখো আয়ান তুমি আমার বোনের সাথে এমন করে কথা বলতে পারো না।এটা কোনো স্যারের ব্যবহার।
–আমি আপনার বোনের সাথে খারাপ ব্যবহার করি নাই। ও যা করেছে তাই বলেছি।
–তোমাকে এখানে টাকা দিয়ে রাখা হয়েছে। এমনি এমনি রাখা হয় নাই। তাই তোমার সবকিছু শুনতে বাধ্য নই আমরা।
–শুনেন ভাইয়া আপনি বড় ভাই হন। তাই এর কথার কোনো উওর দিলাম না।আমি আয়ান আমার টাকার কোনো অভাব নেই।তাছাড়া আমি টিউশনি করায় না শুধু স্যারের সন্মান রক্ষা করতে পড়াইতে আসছিলাম। এই বাসায় আসার পর থেকে আমি যতো অপমানিত হয়েছি এর থেকে আর এই বাসায় পড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব না। শখ আমি আর কাল থেকে পড়াতে আসবো না।স্যারকে বলে দিও।
–হ্যাঁ যাও তোমার মতো টিচার রাস্তা ঘাটে কত্ত পড়ে আছে।ভাত ছিটিয়ে দিলে যেমন কাকের অভাব হয় না।ঠিক তেমনি টাকা ছিটিয়ে দিলে টিচারের অভাব হবে না।
এখানে থাকলে কিছু হয়ে যেতে পারে।তাই নিজের রাগটা দমিয়ে নিয়ে আয়ান রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।
–ভাইয়া তুমি স্যারের সাথে বাজে ব্যবহার করলে কেনো।স্যারের কোনো দোষ নেই আমি তো ভুল করছি।
–তুই চুপ থাক তোর থেকে শুনতে চেয়েছি।স্যারের হয়ে আসছিস সাফাই গাইতে।
–ভাইয়া।
–ফিয়াজ এবার শান্ত হয়ে বললো।দেখ তুই আমার আদরের ছোট বোন। তোর সাথে যদি কেউ রাগ দেখিয়ে কথা বলে আমার সয্য হয় না।
বলেই ফিয়াজ চলে গেলো।
–সত্যি সত্যি স্যার আমাকে কাল থেকে পড়াতে আসবে না।বলেই মন খারাপ করলো শখ।
অন্ধকার রুমে বসে আছে একজন অচেনা ব্যক্তি।সামনে দেওয়ালে সাথে বড় ফ্রেম বাঁধানোর দুই মানুষের ছবি।একটা মধ্যে বয়স্ক লোকের ছবি।আরেকটা তারচেয়ে পাঁচ বছরের ছোট মহিলার ছবি।দুইজনের দিকে তাকিয়ে অচেনা ব্যক্তিটি বলে উঠলো।
–তোমরা চলে যাওয়ার বারো বছর হয়ে গেলো।এই বারোটা বছর ধরে অপেক্ষা করছি।এইবার সময় এসে গেছে।
–তুমি সময়ের অপেক্ষা না করে।আগেই রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলেই তো পারো।ওর কেউ নেই দুনিয়ায়। মেরে ফেললে কেউ আসবে না দেখতে।বলল অচেনা ব্যক্তিটির ছেলে।
–তোর মতো আমি বকা নয়।এত বছর ধরে ধৈর্য ধরে আছি।এত বোকা কাজ করার জন্য।আমি কোনো কাঁচা কাজ করি না।আমার কাজের কোনো প্রমাণ আমি রাখি না।তাই চাইলে’ও কেউ আমাকে ধরতে পারবে না।হাহাহা।
–আমার আর সয্য হচ্ছে না বাবা।আমি ওকে আজ-ই শেষ করে ফেলবো। তারপরে ওর সবকিছু আমাদের হয়ে যাবে।
–দেখ বেশি বাড়াবাড়ি করবি না।আমার এত বছরের সাধনা তুই শেষ করে দিতে পারিস না।আর মাত্র দুটা বছর। তাহলে অপেক্ষার শেষ।
–থাকো তুমি তোমার অপেক্ষা নিয়ে আমি গেলাম।
বলেই ছেলেটা রেগে চলে গেলো।অচেনা ব্যক্তিটি ভয়ংকর হাসি দিলো।যে জিনিসের জন্য নিজের ভাই ভাবিকে হত্যা করতে দুইবার ভাবি নাই। সেখানে তুই তো আমার ছেলে তোকে কি করে ঠিক করতে হয়।আমার ভালো করেই জানা আছে। আমার কাজে যে বাধা প্রদান করবে।আমি তাকেই রাস্তা থেকে সরিয়ে দিব।
বলেই লোক রুমটি বাহিরে থেকে আটকে দিয়ে চলে গেলো।
পরের দিন সকাল বেলা শখ কলেজে গেলো আয়ানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।সরি বলছে তবু্’ও আয়ান কথা বলে নাই। শখের খুব খারাপ লাগছে ওর জন্য শুধু শুধু আয়ান অপমানিত হলো।আয়ান মাফ না করলে কেনো জানি শান্তি পাচ্ছে না শখ।
এদিকে শখদের ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষার সময় এগিয়ে এলো সবাই সবার মতো পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।দেখতে দেখতে পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো।
আজ রেজাল্ট দিবে।কে কত তম স্থান অধিকার করেছে দেখতে এসেছে সবাই।
আমান:ইয়ে আমি ফ্রাস্ট হয়েছি।
–আমি সেকেন্ড হয়েছি।বলল আয়েশা।
–আমি তৃতীয় হলাম কি করে।বলল শখ।
–তোরা তাও আগে আছিস আমরা কোথায় চলে গেছি দেখতো।বলল মেধা।
–তুই যেমন ছাত্রী তেমনি পেয়েছিস আমি ভাবছি তুই পাস করলি কি ভাবে।বলল আমান।
–সত্যি তো আমি পাস করলাম কিভাবে স্যার মনে হয় ভুল করে আমাকে পাস করিয়ে দিয়েছে। মেধার কথা শুনে সবাই হেঁসে উঠলো।
চলবে……