রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 09

0
1911

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_০৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
আমান:শখ তুই তো আঠারো রে পা দিলি।আমাদের ট্রিট দিলি না।
–আঠারো তে পা দিয়েছে আঠারো বছর পূর্ণ হয় নাই। আচ্ছা তোদের একটা দারুণ জিনিস খাওয়াবো।তোরা সবাই যেটা একবার খেলে আর কোনোদিন খেতে চাইবি না।
সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে বললো।কিরে।
–তাড়াতাড়ি বল শখ আমার যে আর সয্য হচ্ছে। খাবারের নাম শুনলেই আমার পেটের ভেতরের ইঁদুরটা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয়।বলল কাব্য।
–ছি তুই কতো ময়লা।পেটের ভেতরে ইঁদুর পালিস।বলল আয়েশা।
–একদম বাজে কথা বলবি না।
–আমি বাজে কথা বলি না।আমি ভালো মানুষ। তাই সব সময় ভালো কথা বলি।
–ওরে আমার ভালো মানুষ আইছে রে।তোর মধ্যে ভালোর ভ আছে তো।
–তোরা চুপ করবি নাকি আমি চলে যাব।বলল শখ।
–না না তুই যাইস না বইন তুই গেলে আমাদের খাওয়াবে কে।বলল কাব্য।
–হ্যাঁ,আসল কথাই চলে আসি।আমি তোদের এখন যা খেতে বলবো তাই খাবি।বল প্রমিস।
–প্রমিস এর কি আছে তুই আমাদের বিশ্বাস করতে পারিস।বলল মেধা।
–তোদের বিশ্বাস করি না জন্যই প্রমিস করতে বলছি।
–দেখলি সিয়াম আমাদেরকে বিশ্বাস করে না শখ।
–ঠিকি বলছে তোদের বিশ্বাস করার থেকে রাস্তার কুত্তারে বিশ্বাস করা অনেক ভালো। বলল সিয়াম।
–কি বললি সিয়ামের বাচ্চা। তোর আজ খাইছি।
–প্রথমত আমার কোনো বাচ্চা নেই। তবে ভবিষ্যতে হবে।আর আমি কোনো খাওয়ার জিনিস না।তুই আমাকে খাবি।আর তোর দ্বারা সব-ই সম্ভব পেতনী বলে কথা।
–কি আমি পেতনী।তোর বউ পেতনী।তোর বাচ্চা পেতনী। তোর চৌদ্দ গুষ্টি পেতনী। তুই আমারে পেতনী কস শালা।
–আপনি আমার কোন বোনকে বিয়ে করছেন দুলাভাই।
সিয়ামের বাচ্চা বলেই সিয়ামকে কিল ঘুষি মারতে লাগলো।
–তোরা থামবি।কি শুরু করে দিয়েছিস।
–তুই ওদের কথায় কান দিস না।তুই বল কি খাওয়াবি। বলল আমান।
–আমি এখন তোদের যা খাওয়াবো মানে খেতে বলবো তোরা খাবি তো।
সবাই মিলে একসাথে বলে উঠলো হ্যাঁ খাবো।
এবার শখ বলে উঠলো। তোরা সবাই কসম খা আর কোনোদিন আমার কাছে থেকে খেতে চাইবি না।বলেই শখ হাসতে শুরু করলো। সবাই শখের দিকে রাগি চোখ নিয়ে তাকিয়ে।
–এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো।তোরাই তো বললি আমি যা খেতে বলবো তোরা সবাই তাই খাবি।
সবাই মিলে বললো হ্যাঁ খাবো তো এখন আমরা সবাই মিলে তোকে খাব।
শখ বাঁচতে চাইলে পালা বলেই শখ দিলো দৌড় শখের পেছনে পেছনে ওরা সবাই দৌড় দিলো।
–শখ দ্বারা বলছি।তুই পালিয়ে যাবি কোথায় আজ আমাদের হাত থেকে রক্ষে নেই তোর।তুই আজ শেষ।এত বড় ধোঁকা।বলল কাব্য।
দৌড়াতে দৌড়াতে কখন যে রাস্তার মাঝে চলে এসেছে শখ সেদিকে খেয়ালই নেই। রাস্তার মাঝখানে দুই কোমরে হাত দিয়ে হাঁপাচ্ছে শখ।
ঠিক তখনি সবাই রাস্তার কিনারে এসে শখকে দেখতে পায়।প্রচন্ড বেগে একটি গাড়ি শখের দিকে এগিয়ে আসছে।
–শখ দূরে সরে যা গাড়ি আসছে।বলল আমান।
রাস্তায় অনেক গাড়ির আওয়াজে শখ শুনতে পেলো না।উল্টো বললো আমি আজ কিছুতে-ই তোদের কাছে ধরা দিব না পারলে ধরে দেখা।
বলে সামনে ঘুরতে-ই দেখে গাড়িটি শখের কাছে চলে আসছে।আমান দৌড়ে আসতে আসতে-ই গাড়িটি দ্রুত গতিতে চলে আসলো।ভয়ে সবাই চোখ বন্ধ করে নেয়।ঠিক তখনি।কেউ এসে শখকে বাঁচিয়ে নেয়।
শখ ভয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো এখন মনে হচ্ছে কেউ ওকে ধরে আছে কে ধরে আছে।তা দেখার জন্য চোখ খুলে তাকিয়ে দেখতে পেলো একটি সুদর্শন যুবক।দেখতে বেশ লম্বা। শ্যাম বর্নের দেখতে।ছেলেটি এবার বললো।
–তুমি কি পাগল। মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার। কেউ এভাবে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে।
–আসলে…
–কি দিনকাল আসলো আজ কাল কার ছেলেমেয়ে গুলো’ও না। একটা কিছু হতেই পারে না।নিজেকে শেষ কর দেওয়ার চেষ্টা করে। আরে বাবা সমস্যা যখন আছে।তখন তার সমাধান’ও আছে।তুমি চাইলে তার সমাধান করে নিতে পারো।নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কি আছে।
–এই যে মিস্টার তখন থেকে ফালতু বকে-ই যাচ্ছেন।আগে আমার হাতটা ছাড়ুন। তারপরে আমাকে বলতে দেন।
ছেলেটি এবার শখের হাত ছেড়ে দিলো।
–আপনি যেটা ভাবছেন সেরকম কিছুইনা ওকে।আমি আমার ফ্রেন্ডদের খাওয়াইতে চেয়ে ছিলাম। পরে ওরা বলছে কি খাওয়াবি।আমি ওদের বলছি কসম খা আর কোনোদিন আমার থেকে খেতে চাইবি না।এটা বলার জন্য ওরা আমাকে তাড়াচ্ছে মারার জন্য। সবকিছু শুনে ছেলেটি বোকা বনে গেলো।
এতক্ষণ দূরে থেকে সবকিছু দেখছিলো আয়ান।রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে। রাগে কপালের রগ গুলি ফুলে উঠেছে। ফর্সা শরীলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কেনো ওর রাগ হচ্ছে ও নিজেও জানে না।গজগজ করতে করতে চলে গেলো।
আমান আগে শখের কাছে এসে পৌঁছালো। তারপরে সবাই একসাথে শখের কাছে এলো।
–তুই কি পাগল তোর কোনো কমনসেন্স নেই। তুই রাস্তার মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে ছিলি।তোর যদি কিছু হয়ে যেতো।
–তাহলে আরো ভালো তোরা সবাই খেতে পারতি।
–দিব এক থাপ্পড় সব দাঁত খুলে পরে যাবে।বলল আয়েশা।
–আমরা কি তোকে মেরে ফেলতাম নাকি রে।যে তুই নিজে চলে এলি মরার জন্য।
–হ রে তোদের আমার একদমই বিশ্বাস হয় না।মেরে ফেলতে’ও তো পারিস।
–তোকে আজ…
–থাম তোরা কি শুরু করলি।ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে আমার ফ্রেন্ডকে সাহায্য করার জন্য।বলল আমান আরো অনেক কথা ব’লে সবাই চলে গেলো।
এদিকে।
তোমাদের দিয়ে একটা কাজ ভালো করে হয় না।কতো সুন্দর একটা সুযোগ ছিলো এমন সুযোগ আর পাবো আমরা। কেনো মারতে পারলে না মেয়েটিকে। ইচ্ছে করছে তোমাদের সবাইকে শেষ করে দেই।
বলেই লোকটি চিৎকার করতে শুরু করলো পাগলের মতো করছে রুমে সবকিছু ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।
–মেয়েটিকে বাঁচিয়ে দিলো কে।
–স্যার বড় সাহেব এসে পড়েছিল তাই জন্য মেয়েটিকে মারতে পারি নাই।যদি মেয়েটিকে মারতে যেতাম তার সাথে বড় সাহেব ও……
–এই চুপ কর।আমার কলিজার কিছু হলে তোকে আমি শেষ করে ফেলবো।গলা টিপে ধরে বললো।আমার কলিজার গায়ে একটা আচর পড়লে তোদের সবাইকে আমি লাশ বানিয়ে ফেলতাম।এবারের মতো মাফ করে দিলাম।পরের বার ভুল হলে তোদের মৃত্যু নিশিত। মনে রাখিস।আর তৈরি থাক সবাই। আমি যে কতটা খারাপ আর ভয়ংকর হতে পারি তোদের ধারণা নেই।বলেই লোকটি হাসি দিলো।
সবাই লোকটির হাঁসি দেখে ভয়ে কেঁপে উঠলো সবাই জানে এই হাসির মানে কি।কতোটা ভয়ংকর হতে পারে।তা বারো বছর ধরে দেখে আসছে এরা।এবার ভুল হলে এদের মৃত্যু নিশিত।
পরের দিনসকাল বেলা সবাই আগে কলেজে চলে আসলো আজকে ফ্রাস্ট ক্লাস নতুন বর্ষে উঠেছে। তাই কেউ জানেনা।কোন স্যারের কোন ক্লাস।আগে কোন স্যারের ক্লাস।সবাই ক্লাস রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এখনো ক্লাস শুরু হতে দেরি আছে।সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো।ঠিক তখনি সেদিনের ছেলেটা আসে।
–হেই তুমি কেমন আছো।তুই এই কলেজে পড়ো আমাকে বলো নাই তো।
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো,আপনি কেমন আছেন।আর আমি তো এই কলেজে পড়ি এটা বলার কি আছে মামা।
–এ্যাঁ মামা।আমাকে তোমার কোন দিক দিয়ে মামা মনে হয়।
–এ্যাঁ নয় হ্যাঁ ভাইয়া আমাদের শখের প্রত্যেকটি ছেলেই নাকি তার মামা হয়।সব ছেলে নাকি জাতির মামা।বলল আমান।
–এটা কোনো কথা। তোমরা সবাই কোন ইয়ারে পড়ো।
–আমরা ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে উঠলাম ভাইয়া।
–গুড আমি অর্নাস ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করছি।আমি তোমাদের সিনিয়র। তো আমি যা বলবো তোমরা আমার কথা শুনতে বাধ্য।
–তা তো অবশ্য-ই ভাইয়া।আর তুৃমি(শখলে উদ্দেশ্য করে)তুমি আমাকে মামা ডাকবে না। ভাইয়া বলে ডাকবে।বলেই চলে গেলো।
–এই নাকি অর্নাসে পড়ে বোন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না জানিস।মনে হচ্ছে আজ থেকে দশ বছর আগে এই লোক পড়াশোনা শেষ করছে।লোকটির নাম’ও জানা হলো না।বলল আমান।
–নাম জেনে কি করবি তোর বোনের সাথে বিয়ে দিবি। বলল শখ।
–খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তো আমার। এই বুইড়া বেটার লগে আমার ওত সুন্দর ফুলের মতো বোনরে বিয়ে দিমু।
আমানের কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো।
চর্তুথ পিরিয়ডে আয়ানের ক্লাস কেউ জানতো না।সবাই মিলে গল্প করছে।এমনিতেই শখের ওপরে রেগে আছে। তার ওপরে শখ একটা ছেলের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।ছেলেটি নতুন এসেছে। শখদের সাথে বেশ ভালো মিল হয়েছে।
–গল্প বাহিরের গিয়ে করতে পারেন।এটা ক্লাস রুম গল্প করার জায়গা না।
শখ না তাকিয়ে বললো।
–আমাদের ক্লাস রুম আমরা কি করবো না করবো এখন তুই বলে দিবি নাকি রে।
আয়ান আরো রেগে গেলো।
আয়েশা শখকে হাত দিয়ে বারবার মানা করছে কথা না বলতে।সামনে তাকাইতে কিন্তু শখ তো শখই ত্যারার মতো বসেই আছে।
–তাই নাকি।বলল আয়ান।
এই তুই কেডারে এভাবে বিনা পয়সায় এক বস্তা জ্ঞান দিতে আইছু।
–মুখের কি ভাষা এগুলো শখ।এখনি আমার ক্লাস থেকে বেড় হয়ে যান।
–হ্যাঁ হয়েছে শালা বজ্জাত ব্যাডা হনুমান ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো কথা বলতে হবে না । এমনি এক বছরে জীবটা ত্যানাত্যানা করে দিয়েছে এখন মুক্তি পেয়েছি শান্তিতে থাকতে দে ভাই।
–আয়ান এবার চিৎকার করে উঠলো শখ……
শখ এবার সামনে তাকিয়ে আকাশ থেকে পড়লো।
–আল্লাহ,স্যার আপনি না মানে আমি কিছু বলি নাই। সামনে আমাদের কলেজে অনুষ্ঠান তো তাই কৌতুক শিখছিলাম। সরি স্যার ইনোসেন্ট ফেইস করে বললো।
আয়ান জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে এটা ক্লাস রুম এখানে কোনো ভুল করা যাবে না।নিজেকে শান্ত করে নিয়ে বললো।
–ব্যাগ ব্রেঞ্চে উঠে দাড়ান মিস শখ।
–কেনো স্যার।
আয়ান শান্ত দৃষ্টি নিয়ে শখের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ানের এমন শান্ত দৃষ্টি শখের কলিজা কেঁপে উঠলো।আর কোনো কথা না বলে উঠে দাড়ালো।
–এবার দুই কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে পুরো ক্লাস।এবার আর এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বললো না।কারন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকলে পড়ে যাবার সম্ভবনা আছে। শখ পড়ে যেতে পারে বলে।তাই দুই কান ধরতে বললো।
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here