রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 01

0
1779

আম্মু আমাকে খেতে দাও।তাড়াতাড়ি। আজ কলেজে নতুন টিচার আসবে। শুনেছি চিটার নাকি খুব রাগী। এক সেকেন্ড দেরি হলে ক্লাস রুমে প্রবেশ করতে দেয় না।
ছিঁড়ি দিয়ে নিয়ে নামতে নামতে কথা গুলো বললো আফরিন আয়াত শখ।
তখনি শখের আম্মু বলে উঠলো।
–কেনো রে আরো একটু ঘুমাবি তাহলে তাড়াতাড়ি কলেজে যেতে পারবি।আমি বুঝি না তুই এত ঘুমাস কি করে।ঘুম পাগলি মেয়ে একটা।এখন তুই খাবি কখন আর কলেজ পৌছাবি কখন বলতো।
–আম্মু তুমি আমাকে টিফিন দিয়ে দাও আমি ব্রেক টাইমে খেয়ে নিব।
বলেই শখ তাড়াতাড়ি করে চলে যেতে লাগলে, শখের আম্মু বললো দাড়া দুইবার তো খেয়ে যাবি নাকি।আজ তোর ফিয়াজ ভাইয়া’ও নেই।যে,ওকে বলবো তোকে একটু দিয়ে আসতে।দেখি হা করতো।
–না আম্মু আমার খাওয়ার সময় নেই আসি,বলেই দৌড় দিলো শখ।শখের আম্মু’ও যায় কিসে সে’ও মেয়ের পেছনে পেছনে ছুটলো দুইবার খাইয়ে দিয়ে।তারপরে-ই মেয়েকে ছাড়লো।
শখের আম্মু ভেতরে আসতেই মুনতাহা রাগী চোখ নিয়ে মারের দিকে তাকিয়ে আছে।
তখন মিসেস রহিমা বেগম বললেন।
–কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো,যা খেয়ে নে।তোকে তো কলেজে যেতে হবে নাকি।আজ তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে না।
–বাবা বাহ আম্মু,ও মেয়েটার জন্য তোমার কি দরদ,আদর,ভালোবাসা।কই আমার জন্য তো এমন করো না।
–এসব তুই কি বলছিস আমি তোকে ভালোবাসি না।তুই বল তোকে কোন দিকে কম রেখেছি।
–ভালোবাসার দিকে কম রেখেছো মা।তোমরা আমার থেকে ঐ মেয়েকে বেশি ভালোবাসো।ও তো তোমাদের…..
–মুনতাহা কি ঐ মেয়ে ঐ মেয়ে করছিস।ও’তোর ছোট বোন হয়।ওর ওপরে সব সময় রাগ না করে ওকে একটু ভালোবাসলেও তো পারিস।
–ছোট বোন মাই ফুট।ও আমার কিসের ছোট বোন আমি ওকে নিজের ছোট বোন হিসেবে মানি না।ও কোনোদিন আমার কাছে থেকে বড়বোনের ভালোবাসা পাবে না।ওর জন্য আমি আমার সবকিছু হারিয়ে ফেলছি।ঐ মেয়ে মরে না,কেনো।ও’মরলে আমার শান্তি সবকিছু কেঁড়ে নিয়েছে আমার থেকে।
ঠিক তখনি মুনতাহার বাবা আহনাফ সাহেব এসে মনতাহাকে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
–তোমাকে এই শিক্ষা দিয়েছি।মেয়েটা তোমাকে কি করেছে কেনো ওকে দেখতে পারো না।তুমি।তোমাকে কতো ভালোবাসে মেয়েটা।আর তুমি ওকে সব সময় অপমান করো দেখতে পারো না।
–বেশ করি ওর জন্য আমি আমার সবকিছু হারিয়ে ফেলছি। ও যদি ওর….
–মুনতাহা……..
–তুমি উত্তেজিত হয়ো না,মুনতাহা একদিন ঠিক বুজবে,দেখো।একদিন ঠিক আমাদের শখকে আপন করে নিবে।
–ঐ’মেয়েকে আপন করে নেওয়ার আগে,আমি যেনো মরে যাই।
বলেই চলে গেলো মুনতাহা।
–মেয়েটাকে মানুষ করতে পারলাম না গো মুনতাহার আম্মু।বলল,আহনাফ সাহেব।
–তুমি চিন্তা করো না,দেখবে একদিন ঠিক আমাদের মুনতাহা আমাদের শখকে মেনে নিবে।বলল,মিসেস রহিমা বেগম।
আসুন এইবার পরিচয় পর্বে আসা যাক এখক্ষন ধরে যারা কথা বলছিলেন,তারা হলেন আমাদের গল্পের নায়িকা’ও তার পরিবার। আফরিন আয়াত শখ। আমাদের গল্পের নায়িকা।মধ্যবৃত্ত পরিবার থেকে বিলং করছে শখ।মিসেস রহিমা বেগম শখের,মিস্টার আহনাফ সাহেব।শখের বাবা মা।মুনতাহা শখের বড় বোন।আর ফিয়াজ শখের বড় ভাই। শখ এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে,পড়াশোনা করছে।দেখতে মাশাল্লাহ।দেখলে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে।
আসুন গল্পে ফিরে আসা যাক।
ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়েছে শখ।বেশ বিরক্ত লাগছে শখের।
–দুর,আজকে-ই,জ্যামে আটকা পড়তে হলো,এইদিকে ক্লাসের সময় হয়ে আসছে।নতুন টিচার আসবে।যদি সঠিক সময়ে কলেজে পৌঁছাতে না পারি।আমাকে ক্লাসে প্রবেশ করতে দিবে না।ভয় ও লাগছে নতুন টিচারের ক্লাসে প্রথম দিন-ই লেট করবো তাহলে।
প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে জ্যামে আটকে আছে শখ।
–নাহ,আর এভাবে বসে থাকা চলবে না।দেখি আমাকেই একটা ব্যবস্থা,করতে হবে।
বলেই শখ গাড়ি থেকে নেমে,গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে,হাঁটা শুরু করলো শখ।
ক্লাসের আর দশ মিনিট বাকি আছে।ঠিক মতো হাঁটা ধরলে পৌঁছাতে পারবে।শখ,কলেজের অনেক’টা কাছেই চলে আসছে শখ।
সময় মাত্র পাঁচ মিনিট শখ এবার জুতা খুলে দৌড় দিলো,হঠাৎ করেই একটা গাড়ি শখের সামনে চলে আসে,তাল সমলাতে না পেরে,নিচে পড়ে যায় শখ।পায়ে ব্যথা পেয়েছে। হাতে কিছু কিছু জায়গায় হালকা করে কেটে গেছে যার ফলে হালকা হালকা রক্ত দেখা যাচ্ছে কোনো দিকে না তাকিয়ে শখ,এক বস্তা বয়ান দিতে শুরু করলো।
শখ:ঐ কোন উগান্ডার বাচ্চারে, গাড়ি দেখে শুনে চালাতে পারিস না।চোখ কি মাথায় নিয়ে হাঁটিস রে।তোর ঘরে মা,বোন নেই।গাড়ি চালাস নাকি উড়োজাহাজ চালাস। সাধারন মানুষের কথা তো ভাবিস না বড়লোক বাপের বেটা কিছু হলে খালি টাকার গরম দেখাবি।তারপরে সবকিছু মাফ।
শখের এসব উলটা পালটা কথা শুনে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসলো আয়ান চৌধুরী। শখকে উদ্দেশ্য করে বললো।
–এই মেয়ে তোমার সমস্যা কি এভাবে উল্টো পালটা বকছো কেনো তুমি।আর একটা বাজে কথা বললে।আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।দেখি কি হয়েছে তোমার। কতটা ক্ষতি হয়েছে।আয়ান কিছু টাকা ছুরে শখের দিকে দিয়ে বললো।
–যা দিয়েছি আশা করি তোমার এতে হয়ে যাবে।যদি আরো লাগে তাহলে আমাকে বলবে কেমন আমি দিয়ে দিব।বলেই একটি কার্ড বের করে শখের দিকে এগিয়ে দিলো।
এতক্ষণ শখ হা হয়ে যুবকটির দিকে তাকিয়ে ছিলো,এত সুন্দর মানুষ হয়।নাকি আবার,বেশ লম্বা যুবকটি।ফর্সা শরীলে কালো রংটা যেনো আরো আকর্ষণী’ও করে তুলেছে।এতক্ষণ শখ ভালো করে যুবকটি পর্যবেক্ষণ করলেও টাকার গরম দেখানো কারনে বেশ রেগে গেলো শখ।
শখ:নিজেকে মনে করেন আপনি দয়া দেখাচ্ছেন আমাকে আপনার টাকা আপনি রাখুন আপনার কোনো কাজে লাগবে।এই জন্য আমি বড়লোক’দের দেখতে পারি না ছোট লোক কথাকার।
আয়ান:থাপরিয়ে তোমার সব দাঁত ফেলো জানো।এতটুকু মেয়ে এত পাকা পাকা কথা বলো কেনো তুই। কলেজে পড়ো এখনো ব্যবহার শিখলে না।
শখ:এখন আপনার থেকে ব্যবহার শিখতে,হবে আমার আসছে একে তো অন্যায় করছে তার ওপরে বড় বড় কথা বলছে। আমি আপনার খাই না পড়ি আপনার কথা আমাকে শুনতে হবে।
মূহুর্তেই আয়ান এর চোখ লাল টকটকে হয়ে গেলো রাগে কিন্তু কিছু বললো না।
–আজ আমার একটা কাজ আছে দেরি হয়ে যাচ্ছে।তা না হলে আজ তোমাকে দেখে নিতাম।তোমাকে তো আমি পরে দেখে নিবো।
বলেই গাড়ি নিয়ে হনহন করে চলে গেলো আয়ান।
শখ হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সময় মাত্র আর দুই মিনিট এখন কি করে যাবে সব হয়েছে এই বজ্জাত ব্যাডার জন্য।এখন কি করমু হায় আল্লাহ মালুম।
গাড়ি না নিলে পৌঁছাতে পারবো না।শখ তাড়াতাড়ি করেএকটা গাড়ি ডেকে নিয়ে বললো একটু তাড়াতাড়ি চলুন মামা।
আসুন এবার পরিচিত হই।এই যে এতক্ষণ ধরে শখ যার সাথে ঝগড়া করছিলো।সে,আমাদের গল্পলের নায়ক আয়ান চৌধুরী দেখতে মাশাল্লাহ।যাকে বলে ক্রাস বয়।দেখতে বেশ লম্বা।গায়ের রং ফর্সা।আয়ান বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলে।বাবা বিজনেস করে।আয়ানের বাবা নাম করা বিজনেস ম্যানদের মধ্যে একজন। আয়ানের মা গৃহিনী।আয়ানে বড় দুই বোন আছে।একজনের বিয়ে হয়েছে। (এখনই যদি সব বলে দেই তাহলে গল্পে কি লিখবো আসুন মূল গল্পে ফিরে আসি।)
শখ গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ক্লাস রুমের দিকে গেলো।
ক্লাস শুরু হয়ে গেছে হায় আল্লাহ মালুৃম আমাকে এখন রুমে প্রবেশ করতে দিব না গো।
শখ:মে আই কাম ইন স্যার।
–নো,আর অলরেডি লেট।
–সরি স্যার আর হবে না আসলে আজ রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো যার কারনে দেরি হয়ে গেলো।কাল থেকে আর লেট হবে না।
আয়ান এবার পেছনে ঘুরে শখকে দেখেই মাথা যেনো আগুন লেগে গেলো।
শখ:আপনি।
–তুমি এখানে।
–আজব আমাদের কলেজে আমি আসবো না তাহলে আপনি আসবেন।আচ্ছা খারাপ লোক তো আপনি। আমাকে ফলো করতে করতে এখানে চলে আসছেন লজ্জা করে না আপনার। আমাকে তো সেই বড় বড় জ্ঞান দিলেন।এখন আপনি করলেন।
শখরে আজ তুই গেলি আয়েশা মনে মনে বললো।
আয়ান আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো না রেগে শখকে ধমক দিলো ভয়ে শখ শেষ।
–এখনি আমার ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যাও।এমনিতে দেরি করে আসছো আবার উলটা পালটা কথা বলছো তোমাকে আমি এক সেকেন্ড আর ক্লাস রুমে দেখতে চাই না।
শখ এবার ভয়ে পেয়ে যায়।
–সরি স্যার আর হবে না।ভুল হয়ে গেছে এবারের মতো মাফ করে দিন স্যার আমি বুঝতে পারি নাই।
–আমি এক কথা বারবার বলা পছন্দ করি না।গেট আউট।এমনি তেই ক্লাসে অনেকটা সময় তুমি নষ্ট করে দিয়েছো।
আয়ান অনেক রেগে গেছে তাই আর শখ কোনো কথা না বলে চুপচাপ ক্লাসে বাহিরে হয়ে দরজার দাড়িয়ে আছে।
আয়ান:কি হলো তুমি ওখানে দাড়িয়ে আছো কেনো তোমাকে না বললাম চলে যেতে।
শখ:আমি তো রুমে নেই স্যার,আমি বাহিরে দাড়িয়ে থেকে তো আপনার ক্লাসটা দেখতেই পারি।
আয়ান:দাঁড়িয়ে থাকো কিন্তু দেখো আমার ক্লাসের সমস্যা না হয় বলে দিলাম।
বলেই আয়ান ক্লাস করা শুরু করে দিলো।
–শালা বজ্জাত ব্যাডা একে তো আমাকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরেই ফেলতে লাগছিলো।এখন আবার পুরো ক্লাসের সামনে অপমান করলো শালা তোরে দেইখা নিমু আমি।না হলে আমি নাম ও শখ না হুম।
চলবে…….
#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_০১
#লেখিকা_fabiha_bursha_nimu

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here