মন পাথরে হঠাৎ ঝড় – পর্ব 05

0
461

#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_৫
Tahrim Muntahana
সময় বহমান! কারোর জন‍্যই অপেক্ষা করে না। নিজের নিজস্ব গতি ঠিক রেখে চলতে থাকে। কেটে গেছে ১৫ টা দিন। এই ১৫ দিনে পাল্টে গেছে অনেক কিছু। বিশেষ করে আতইয়াব-তারিমের জীবন! আজ ১৫ দিন হলো তারিম আতইয়াবের থেকে দূরে। হোস্টেল থাকছে। সেদিন আর ঘুম থেকে উঠে আতইয়াব তারিম কে পাইনি।তার আগেই তারিম বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। আদরকেও বলে যায়নি। এখন আগের সেই হাসিখুশি তারিম আর নেই। কেমন গম্ভীর হয়ে গেছে। আতইয়াব যে ভালো আছে তেমন না। সে মনের মধ‍্যে তারিমের শূণ‍্যতা অনুভব করে। শুধু নিজেকে বুঝাতে পারেনা। অর্ণাবি তাকে বিয়ের জন‍্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আতইয়াবের মন সাই দিচ্ছে না। মনে হচ্ছে কোথাও যেন ভুল হচ্ছে। আজ ১৫ দিন হলো তার বোন তার সাথে কথা বলে না। যে বোন তার হাজার ব‍্যস্ততায় নিজের জন‍্য সময় খুঁজে নিতো সে বোন এখন তার কাছেই আসে না। সে কি সত‍্যিই ভুল করেছে? ভালো থাকতে ভালোবাসার মানুষটার সাথে থাকতে চাওয়াটা অন‍্যায়?
অন‍্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলো আতইয়াব। ভাবনায় তারিম! পাশে বসে থাকা অর্ণাবি অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে আতইয়াব কে। তার দিকে তাকাচ্ছেই না। রাগ হলো তার। চেঁচিয়ে উঠলো একপ্রকার। আতইয়াব হটাৎ এমন হওয়ায় চমকে গাড়ি থামিয়ে দিলো। বিরক্তি নিয়ে তাকালো অর্ণাবির দিকে। অর্ণাবি বলে উঠলো,
এত কি ভাবছো তুমি? আমার দিকে খেয়াল আছে? দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছো তুমি আতইয়াব।
আতইয়াব কিছু বললো না আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। অর্ণাবি খানিকটা অপমানিত হলো। রাগ চেপে বসে রইলো। এখন রেগে গেলে ভুল হবে। আগে বিয়ে টা হোক! একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালো। আতইয়াব নিজেও ভাবলো, সে অর্ণাবিকে ঠকাচ্ছে। ভুল করে বিয়ে টা হয়েছে; আর এ সম্পর্ক থেকে তারিম নিজেই তাকে মুক্তি দিয়েছে তাহলে অর্ণাবির সাথে এমন করার মানেই হয় না। সম্পর্কটায় এগোনো উচিত। হাত ধরে ভেতরে চলল। অর্ণাবি তো অনেক খুশি। টেবিলে বসেই অর্ণাবি পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করলো। আতইয়াব মুখে হাসি আনার চেষ্টা করেও পারছে না। তিনটা মেয়ে তার মনের মধ‍্যে ঘুরঘুর করছে। আদর, তারিম, অর্ণাবি! অর্ণাবি কে বেছে নিলে সে ভালোবাসাকে পেয়েও ভালো থাকতে পারবে না কারণ তার বোন মেনে নিবে না। আর তারিম কে বেছে নিলে তার বোন তার পাশে থাকবে, তারিম বউ হিসেবে অর্ণাবিকেও হার মানায়, আতইয়াবের ব‍্যাপারে খুব কনসার্ন; ভাবতে পারছে না সে। ভালো লাগছে না। যত সমাধান করার চেষ্টা করে তত পেঁচিয়ে যাচ্ছে।
খাবার চলে আসতেই অর্ণাবি খাওয়া শুরু করে দিলো। তার সাথে যে একজন এসেছে বর্তমান খেয়াল নেই। আতইয়াব ব‍্যাপারটা আজ নতুন দেখছে না। তাই খুব একটা অবাক হলো না। খাবার নাড়াচাড়া করতে করতে এদিক ওদিক থাকালো। চোখ পড়লো তার দুই টেবিল দূরে একটা মেয়ে বসে আছে। যে মেয়েটি তার বউ। সাথে একজন ছেলে। বেশ হাসাহাসি করছে দুজনে। আতইয়াবের টনক নড়লো। কার সাথে এভাবে মিশছে তারিম! তাহলে কি তারিমের বয়ফ্রেন্ড আছে? অর্ণাবি যে বলল তারিম তাকে ভালোবাসে! অর্ণাবি মিথ‍্যে বলল? ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে গেলো তারিম দের দিকে। তারিম কথা বলায় এত ব‍্যস্ত ছিলো যে আতইয়াব কে লক্ষ‍্য করেনি। আতইয়াব আরেকটু এগিয়ে গিয়ে লক্ষ‍্য করলো তারিমের হাত ছেলেটির হাতের মুঠোয়। ধক করে উঠলো বুক! মনে হচ্ছে ওই হাত টা তার হাতের মুঠোয় থাকা উচিত ছিলো। রাগ হচ্ছে তার! তারিমের হাত কেন ছেলেটি ধরবে? কি সম্পর্ক দুজনের? ধপাধপ পা ফেলে এগিয়ে গেলো। ছেলেটির সামনে দাড়াতে আতইয়াবের মুখ বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলো। ছেলেটিও আতইয়াব কে দেখে দাড়িয়ে গেছে। তারিম গম্ভীর মুখে বসে রইলো। মুখ দেখেই মনে হচ্ছে আতইয়াব কে সে আশা করেনি এখন। আতইয়াব চেচিয়ে বলে উঠলো,
পরশ! তুইইইই?
আতইয়াবের বড় বড় চোখ দেখে পরশ লাজুক হাসলো। তারিমের দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,
ভাইয়া তুই এখানে? ভাবিকে নিয়ে এসেছিস?
আতইয়াব তখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পরশ আতইয়াবকে টান দিয়ে একসাইডে নিয়ে গেলো। ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
উল্টাপাল্টা কিছু বলিস না ভাইয়া। মেয়েটিকে ভালোলাগে খুব। সেটিং করার চেষ্টা করছি আরকি! তারিমও গলে গেছে প্রায়।
আতইয়াব শান্ত চোখে পরশের দিকে তাকালো। কিছু না বলেই অর্ণাবিকে একটা টেক্সট পাঠিয়ে বাইরে চলে গেলো। আতইয়াবকে এইভাবে যেতে দেখে পরশ বাঁকা হাসলো। এখন বুঝুক কেমন লাগে। নিজে যখন অন‍্য মেয়ের হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় তখন বুঝি তারিমের কষ্ট লাগে না! এখন বউ ছোট ভাইয়ের সাথে আছে বলে রাগ হলো! দু নৌকায় পা দিয়ে তো চলা যায় না! যে কোনো একজন কেই বেছে নিতে হবে।
আতইয়াবের মাথায় শুধু তারিমও গলে গেছে প্রায় এই কথাটি ঘুরছে। কি শুনলো সে? তারিম ভালো আছে তাহলে? জীবনসঙ্গীও বেছে নিয়েছে। সে কেন পারবে না? তাড়াতাড়িই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো। সেও ভালো থাকবে।
তারিম পরশের থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে। ১৫ দিন পর মানুষটিকে দেখলো সে। ভালো লাগছে না। কষ্ট গুলো কান্না হয়ে ঝরে পড়তে চায়ছে। বাট সে সবার সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করবে না। হোস্টেলে গিয়ে কাঁদবে সে, অনেকক্ষণ কাঁদবে। হোস্টেল বেশী দূরে না তাই হেটেই যেতে লাগলো। নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হয়। হিসেব করে চলতে হয় তাকে। রাস্তার পাশ ধরেই হাটছিলো সে। হঠাৎ খুব দ্রুত একটা গাড়ি একদম সামনে এসে থামাতেই ভয়ে দু’পা পিছিয়ে গেলো তারিম। হাত-পা কাঁপছে তার। অস্বাভাবিক ভাবে বুকটা ধকধক করছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে সামনের দিকে তাকাতেই তারিমের ভ্রু কুচকে এলো। রাগ হলো। গাড়ি আছে বলেই যেখানে সেখানে পার্ক করবে। রেগে তেড়ে যাবে তার আগেই নেমে আসা লোকটাকে দেখে তারিমের মুখ হা হয়ে যায়। কাকে দেখছে সে! আবার একরাশ ভয় এসে হানা দিলো। কারণ তার সামনে দন্ডায়মান হৃদান চৌধুরী! যে কারণ ছাড়া না কোথাও যায়, না কারো সাথে কথা বলে! তাহলে তার সাথে কি? তাকে কি মেরে ফেলবে? মেরে ফেলার কথা মনে হতেই তারিম ভয়ে জমে গেলো। চোখ থেকে আপনাআপনিই পানি বের হতে চায়ছে। হৃদান কিছুক্ষণ পানি ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার কেমন যেন মায়া হচ্ছে। আগের হৃদান হলে হয়তো কান্না দেখে বিরক্ত হতো কিন্তু আগের হৃদানের সাথে এখন কার হৃদানের অমিল দেখা দিয়েছে। হৃদান চৌধুরীর মনে এখন মায়া-ভালোবাসা নামক অনুভূতিটা জেগে উঠেছে। নরম সুরে বলে উঠলো,
ডন্ট ক্রাই! আমি কিছুই করবো না। ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই। তুমি আদরের বেস্ট ফ্রেন্ড তারিম তাইতো?
তারিম অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো হৃদানের মুখের দিকে। আদরের নাম হৃদান চৌধুরীর মুখে। আশ্চর্য! আদরের ক্ষতি করবে কি? ভেবেই মুখটা গম্ভীর করে নিলো। বিচলিত হয়ে বলে উঠলো,
আদর! আদরের কি হয়েছে? আপনি আদর কে কি করে চিনেন? আদর কিছু করেছে? বিশ্বাস করুন স‍্যার ও বাচ্চা। কখন কি করে নিজেই বুঝতে পারে না। প্লিজ ওকে কিছু করবেন না।
এবার বিষ্ময়ে হৃদানের মুখ হা হয়ে এলো। এতক্ষণ হৃদান চৌধুরী কে দেখে ভয়ে কাঁপছিলো আর যখনই বেষ্ট ফ্রেন্ডের কথা এলো তখনই এতটা বিচলিত! সবকিছু ভালোবাসা? যার জন‍্য একজন অন‍‍্যজনকে নিয়ে ভাবে? একজনের বিপদে অন‍্যজন বিচলিত হয়! সে ও তো তার জন‍্যই এখানে এসেছে। তাহলে কি হৃদান চৌধুরীর নিষ্ঠুর মনে ভালোবাসার উদ্ভব হয়েছে? এ আদও সম্ভব? ভালোবাসার কথা মনে হলেই হৃদানের চোখে আদরের মুখখানা ভাসে। একটু ছুয়ে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগে। হৃদানের ঠোঁটের কোণে অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো। তারিম যেন আজ অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। হৃদান চৌধুরীর মুখে হাসি? পৃথিবীর নবম আশ্চর্য! তারিম সহজ হলো। হৃদান বলে উঠলো,
গাড়িতে উঠো। নো মোর ওয়ার্ডস!
তারিম ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসলো। তার কেন জানি মনে হচ্ছে হৃদান চৌধুরী পাল্টে গেছে! যা যা শুনেছে তার সম্পর্কে তার মধ‍্যে কিছু ক্ষেত্রে মিল দেখছে না সে। কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলো না। গাড়ি এসে থামলো তারিমের হোস্টেলের সামনে। হৃদানের দিকে তাকাতেই হৃদান বলে উঠলো,
হৃদান চৌধুরী কাছে দুনিয়ার কোনো কিছুই অসম্ভব না সেখানে তোমার ঠিকানা বের করা নগন‍্য। নামো এবার!
হৃদান গাড়ি থেকে নেমেই হোস্টেলের ভেতর হাটা ধরলো। যদিও মহিলা হোস্টেলে ছেলে ঢোকা নিষেধ বাট হৃদান চৌধুরীকে আটকানোর সাধ‍্য কার আছে!তারিম যেন একটা ঘোরের মধ‍্যে আছে। আস্তে আস্তে পা ফেলে ভেতরে যেতেই দেখতে পেলো সবাই হোস্টেল হেডের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে। ভ্রু কুচকালো সে। পরে বুঝতে পারলো হৃদান চৌধুরীকে দেখতেই এসেছে। মেয়েদের চোখ যেন চকচক করছে। পাঁচ মিনিট পরেই হেড সহ হৃদান বের হয়ে আসলো। তারিমের দিকে হেড অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছু বুঝলো না সে।তাই চুপ করে রইলো। হৃদান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসো। আমি নিচে অপেক্ষা করছি!
তারিম হতভম্ব হয়ে তাকালো। জিনিসপত্র নিয়ে আসবে মানে কি? সে কোথায় যাবে? বাট এতো মানুষের মাঝে প্রশ্নটা করা উচিত হবে? ভেবে হৃদানের দিকে তাকালো। হৃদান যেন তারিমের চোখের ভাষা বুঝতে পারলো। চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করতেই তারিম উপরে চলে গেলো। হৃদানের কাছে নিজেকে খুব নিরাপদ মনে হয়। কিন্তু কেন? ওমন নিষ্ঠুর মানুষের কাছে নিজেকে নিরাপদ ভাবা ভুল নয় কি? তবুও মন যেন বলছে না ওই নিষ্ঠুর মানুষটা তোর কিছুই করবে না। প্রথম দেখায় এত বিশ্বাস! নিজের উপরেই আজ অবাক হচ্ছে তারিম। ভাবনা বাদ দিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিচে নেমে এলো। হৃদান সেখানেই দাড়িয়ে আছে। তারিম আসতেই হেড ভয় ভয়ে প্রশ্ন করলো,
মেয়েটি আপনার কে হয় স‍্যার?
তারিমের দিকে একপলক তাকিয়ে বলে উঠলো,
আমার বোন!
নিজেই যেন চমকে উঠলো! বোন! তার বোন! কিভাবে সম্ভব এটি। একটা মেয়ে হৃদান চৌধুরীকে এতটা পাল্টে দিলো? কিন্তু এই পরিবর্তনটা তাকে সুখ দিচ্ছে, শান্তি দিচ্ছে! তারিম এবার আর অবাক হয়নি ছলছল নয়নে তাকিয়ে ছিলো হৃদানের দিকে। আমার বোন কথাটা যেন তার মস্তিষ্কে ঘুরছে। কিছু একটা মনে হচ্ছে! হৃদান চৌধুরীর বোন তারিম এটা শুনেই হোস্টেলের কিছু মেয়ের মুখ চুপসে গেছে। নতুন পেয়ে অনেক বাজে ব‍্যবহার করেছে অনেকেই। করুন চোখে তাকালো তারা। তারিম তাচ্ছিল্য হাসলো। ক্ষমতা থাকলে সব সম্ভব!
গাড়িতে বসে আছে তারিম, হৃদান গাড়ি চালাচ্ছে। এর মাঝেই তারিম ইতস্তত করে বলে উঠলো,
আমি কি কিছু করেছি স‍্যার? আমাকে মেরে ফেলবেন আপনি?
হৃদান বিরক্ত হলো। মেরে ফেলবে কেন? সে কি শুধু মানুষ খুন করে? তখনই মনে হলো হ‍্যাঁ তার কাজ ই এমন। বিরক্ত হচ্ছে কেন সে! হৃদান নরম সুরে বলল,
মারবো কেন? আর স‍্যার বলছো কেন আজ থেকে ভাইয়া বলে ডাকবে!
তারিমের চোখ ছলছল করে উঠলো। ভাইয়া! এই ডাকটা তার কাছে অতি প্রিয়! কিন্তু এই পযর্ন্ত কাউকে সে ভাইয়া ডাকেনি। মি…. এমন নাম ধরেই ডেকেছে। ভাইয়া ডাকটা শুনলেই তার মাথায় অজস্র ভাবনা ঘুরে। কিছু দৃশ‍্যপট মাথায় কিলবিল করে। আর ভাবতে পারে না বাট হৃদান কে তার ভাইয়া ডাকতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে সে তার নিজের ভাই! এতক্ষণ হৃদানের সাথে মিশে এখন আর ভয় লাগছে না তার। এটা ওটা বলে হাসছে সে। হৃদান ও মাঝে মাঝে তাল মেলাচ্ছে। আহ কেমন সুখ সুখ লাগছে! কথার মাঝেই হৃদান হুট করে বলে উঠলো,
হোয়ার ইস আদর? আই নিড হার। পাগল হয়ে যাবো আমি!
তারিম প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে যখন বুঝতে পারলো তখন চমকালো সে। বড় সড় একটা চমক পেয়েছে। তার আর বুঝতে বাকি রইলো না আদর নামক বাদর মেয়ের পাল্লায় পড়েই হৃদান চৌধুরীর এমন হাল, এমন পরিবর্তন! মুচকি হেসে বলল,
১৫ দিন ধরে কথা হয়না!
১৫ দিন ধরে বাসা থেকে বের হয় না সে। কিন্তু কেন? পরে জানতে পারলাম ডক্টর আতইয়াব তাযিন ইততেয়াজের জন‍্য। রাগ হলো খুব। মানতে পারছিলাম না এমন পরিবর্তন। খুঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তোমার কথা। ব‍্যস আদরের বেস্ট ফ্রেন্ড ভালো থাকবে মানে আদর ভালো থাকবে! কিন্তু তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে আমার একজনের কথা খুব মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে তোমাকে আমি খুব চিনি। মায়া হচ্ছে খুব।
তারিম নিজেও গভীর ভাবনায় ডুবে গেলো। ১৫ দিন বাসা থেকে বের হয়না আদর! সে তো আদরের সামনে মুখ দেখাতে পারবে না বলে ফোন দেয়নি। এতকিছু হয়ে গেছে বুঝ ই আসেনি তার। হৃদানের শেষে কথা গুলোও তাকে ভাবাচ্ছে। বাট বেশী পাত্তা দিলো না। মুচকি হেসে বলল,
হৃদান চৌধুরী ফল ইন লাভ!
হৃদান যেন ঝটকা খেলো। সে আর ভালোবাসা অসম্ভব! কিন্তু মন যে বলছে সম্ভব। সে প্রেমে পড়ে গেছে। ওই বাচ্চা মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছে। তবুও সময় দিলো নিজেকে। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত সে নেয় না। চলল নিজের বাংলোর দিকে। আজ থেকে তারিম ও সেখানেই থাকবে। প্রথমে তারিম না করলেও পরে হৃদানের চোখ রাঙানিতে কিছু বলার সাহস হয়নি। আর হৃদান ভাবছে আদরের কথা! আন্ডাবাচ্চা একটা!
_________________________
ঘরের এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে আদর। একটু পর পর নেচে উঠছে, গুনগুনিয়ে গান করছে, আবার একটু পর পর ব্লাশিং হচ্ছে। এই ১৫ দিন আদর এমনিই বাসা থেকে বের হয়নি। মূলত ইচ্ছে করেই এমন করেছে। কিন্তু এই ১৫ দিন বাসা থেকে বের না হয়ে সে এত বড় ঝটকা খাবে ভাবতেই পারেনি।
একটু আগেই পরশ ফোন দিয়ে জানিয়েছে তারিম কে হৃদান চৌধুরী নিয়ে গেছে। সে বিচলিত হয়েছিলো একটু পরক্ষণে হোস্টেলে ফোন দিয়ে যখন জানতে পারলো হৃদান চৌধুরী তারিম কে নিজের বোনের পরিচয় দিয়ে নিজের সাথে নিয়ে গেছে তখন অবাক হয়েছিলো অনেকটা। ঝটপট ফোন দিয়ে তারিমের কাছে পুরো ঘটনা শুনে কিন্তু আদরের কথাগুলো বলেনি তারিম। এসব শোনার পর থেকেই এমন করছে।
ভার্সিটিতে উঠার পর সে হৃদান চৌধুরী নামের সাথে পরিচিত হয়। অল ডিটেইলস বের করে নিষ্ঠুরতার প্রমাণ ও কালেক্ট করে। প্রত‍্যেকটা মডেলিং ম‍্যাগাজিন নিজের কাছে রেখে দেয়। ভালো লাগে তার এমন করতে। অন‍্যান‍্য মেয়ের মতো সে ক্রাশ খাইনি, সুন্দর চেহারার প্রেমেও পড়েনি বরং সে প্রেমে পড়েছিলো হৃদান চৌধুরীর ব‍্যক্তিত্বের উপর। যা তার মনের মধ‍্যেই পোষণ করা ছিলো। তার মনে হতো এত এত নিষ্ঠোরতার মধ‍্যেই মানুষটার সুন্দর একটা মন আছে যা একজন মেয়ে কে সম্মান করতে বাধ‍্য করে। আর আজ তার প্রমাণ ও পেয়ে গেলো। তাই তো নতুন করে প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে! কিন্তু এর পরিণতি সে জানেনা! ভবিষ্যতে কি হবে ভাবতে চায় না সে। মনের কথা শুনতেই সে সদা প্রস্তুত!
________________
নিজের বাংলোতে এসে গাড়ি পার্ক করতেই পিয়াস সহ পান্চু এগিয়ে আসে। তাদের না নিয়েই বেরিয়ে গেছে। যদিও হৃদান একাই যথেষ্ট তবুও পিয়াস তার প্রতি একটু বেশীই কনসার্ন। হৃদানের সাথে একজন মেয়েকে দেখে ওরা আরো অবাক হলো। এর মধ‍্যেই হৃদান বলে উঠলো,
এই আধা টাকু পান্চু কাকু ব‍্যাগ গুলো নিয়ে উপরে আসো!
বলেই হাটা ধরলো সে। একটু যেতেই থেমে গেলো পা। কি বললো সে! আধা টাকু পান্চু কাকু! সে এসব ভাষায় কথা বলে! এটা তো আদর ডাকে! মেয়েটা তার মস্তিষ্কে জেকে বসেছে। পিছন ফিরতেই দেখলো পান্চু অজ্ঞান হয়ে পিয়াসের কাঁধে পড়ে আছে আর পিয়াস হতভম্ব চোখে হৃদানের দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদান কিছু না বলেই তারিম কে নিয়ে হাটা ধরলো। ঠোঁটের কোণে অপরিচিত হাসি!
পান্চুর মুখে পানি ঢালতেই লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালো সে। চেয়ারে বসানো হয়েছিলো। পিয়াস কে বলল,
স‍্যার উনি আমাদের বস না! অন‍্যকেউ! কেউ হয়তো বস কে আটকে গুম করে দিয়ে বসের চেহারা নিয়ে এসেছে। আমি মানতে পারছি না স‍্যার। ওই মেয়েটার মতো ডাক বস ডাকছে। এও সম্ভব?
পিয়াস জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই পান্চু এতদিনের ঘটনাগুলো সব বললো। পিয়াসের মুখে চওড়া হাসি ফুটে উঠলো। মদের নেশা ছুটাতে হৃদানের জীবনে অন‍্য নেশার আবির্ভাব হয়েছে। পরক্ষণেই নিজের কথা মনে হতেই একটা দুঃখী ভাব চলে এলো। আর কত সিঙ্গেল থাকবে সে! এই হৃদান চৌধুরীর ভয়ে তো কোনো মেয়ে তার কাছে ঘেসতেও চায় না। এ জীবন দিয়ে কি হবে! পিয়াস ও দুঃখী দুঃখী মুখ করে ভেতরে চললো আর পান্চু তার টাক মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বসের মনোভাব বুঝার চেষ্টায় আছে। তাহলে সারাজীবন তাকে আধা টাকু পান্চু কাকু নামটা শুনে যেতে হবে! জীবন তেজপাতা!
চলবে……?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here