রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 12

0
1928

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_১২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–আপু আমার না,একা একা ভালো লাগছে না। তুমি আমার সাথে যাবে।আসার পথে বাহিরে,একটা ফুচকার দোকান দেখেছি।খেয়ে আসি চলো না।যাই আপু।বলল শখ।
মুনতাহা ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো।শখের কথা শুনে চোখ গরম করে শখের দিকে তাকালো।
–এই তুই আমাকে একটু’ও শান্তি দিবি না নাকি।আমি তোর চাকর যে যখন যা বলবি আমার তাই শুনতে হবে।যা নিজে গিয়ে আয়।তুই তো ছোট বাচ্চা না।যথেষ্ট বড় হয়েছিস।
–আসলে আপু অচেনা জায়গা তো,তাই একটু ভয় হচ্ছে।তুমি চলো না আমার সাথে।
–এই তোকে বললাম না।আমি যাব না।তবুও কানের কাছে প্যান প্যান করছিস।থাপ্পড় খাওয়ার শখ না হলে যা এখান থেকে।
–আমার নাম এমনিতেই শখ আপু।আমার কোনো কিছু শখ করে খাওয়ার ইচ্ছে হয় না।বরং সবাই শখ করে শখকে খায়।
–বেয়াদব মেয়ে আবার কথা বলছিস।কিসব উলটা পালটা কথা বলছিস।তুই কি খাওয়ার জিনিস নাকি।যে,তোকে সবাই খাবে।
–এই বার বুজলে তো আমি তাহলে নিজে-ই নিজেকে কি করে খাব।
–শখ…
–কি হয়েছে তোমরা দুজন ঝগড়া করছো কেনো।বলল রুহি।
–আর বলো না। আপু আমি আসার পথে একটা ফুসকার দোকান দেখেছি।এখনো অনুষ্ঠান শুরু হতে অনেক দেরি আছে। সবাই সবার মতো ঘুড়ছে,মজা করছে।তাই আপুকে বললাম ফুসকা খেতে যাব।চলো খেয়ে আসি।আপু যাবে না বলছে।
–ওও আচ্ছা এই ব্যাপার।আচ্ছা চলো আমি যাচ্ছি তোমার সাথে। আমার এখন কোনো কাজ নেই। বলল রুহি।
–সত্যি আপু তুমি যাবে।
–হ্যাঁ,যাব।চলো।
তারপরে শখ খুশি হয়ে রুহির সাথে যেতে লাগলো।গেটের কাছে আসতেই দেখতে পেলো রুহির শশুর বাড়ির লোক সবাই চলে আসছে।এখন রুহি কি করে যাবে।
–বলছি কি শখ।আমার শশুর বাড়ির লোক সবাই চলে আসছে। এখন যদি ওরা আমাকে না পায় কি মনে করবে। আমরা একটু পরে যাই।
শখের মনটা খারাপ হয়ে গেলো ছোট করে বললো আচ্ছা আপু সমস্যা নাই। তুমি ওনাদের কাছে যাও।
তারপরে রুহি দেখলো আয়ান দাঁড়িয়ে আছে।রুহি একটা হাঁসি দিয়ে বললো।
–আমার ছোট আপুর বুঝি মন খারাপ হয়ে গেছে।
–না আপু মন খারাপ হবে কেনো।
–আমি না গিয়ে তোমাকে আমার পরিচিত কারো সাথে পাঠাই তাহলে তুমি যাবে।
–হ্যাঁ যাব।কিন্তু আমাকে নিয়ে গিয়ে আবার বিক্রি করে দিবে না তো আপু।
–হাহাহা,পাগলি মেয়ে একটা দিবে না।তারপরে রুহি আয়ানকে ডাক দিলো আয়ান ভাই এইদিকে আয় একটু শুনতো।
–কি হয়েছে আপু।কিছু বলবে।ডাকলে যে।
–তুই কি খুব ব্যস্ত।না আসলে তোকে একটা কাজে দিতাম।
–আপু বলো না।আমি তোমার জন্য সব সময় ফ্রী।
–আসলে তোর দুলাভাইয়ের বাসার সবাই চলে আসছে। এখন আমার ওদের কাছে যেতে হবে।তুই একটু শখকে ফুচকার দোকান থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আয় না ভাই। মেয়েটা একা একা বোরিং ফিল করছে।ওর ভালো লাগবে।
–অসম্ভব।
–আমি জীবনে’ও এই রাক্ষস টার সাথে যাব না।আমি না খেয়ে মইরা যামু।তাও ঐ বজ্জাত ব্যাডার লগে যামু না আপু।(ন্যাকা কান্না করে বললো)
–চুপ থাকো একদম কথা বলবে না।আর ভাই তুই আমার মুখের ওপরে কথা বলিস।তোর খুব সাহস হয়েছে তাই না।
বেচারা আয়ান বোনকে খুব ভালোবাসে।আবার খুব ভয় ও পায়।তাই আর না করতে পারলো।রাজি হয়ে গেলো।
–আপু আমি যাব না।এই রক্ত চোষা আত্না আমার ঘাড় মটকে দিবে।একা পাইলে।আমাকে এই রাক্ষস টার সাথে একা পাঠি’ও না।প্লিজ।
–কিহ আমি রক্ত চোষা আত্না।আমি রাক্ষস। তোমাকে তো আমি।
–আপু বাঁচা’ও আমাকে মেরে ফেললো। আমার এখনো বিয়ে হয় নাই। বাচ্চা কাচ্চার মুখ দেখি নাই। আমার হবু স্বামী বিধবা হয়ে যাবে।আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না আপু।
–থামবি তোরা।আমার ওপর তোমার বিশ্বাস নেই শখ।
–আছে আপু।
–তাহলে তুমি আমার ওপরে বিশ্বাস রাখ।আয়ানের সাথে যাও।ও যদি তোমাকে কিছু বলে।তোমাকে ভয় দেখায়।তারপরে এসে আমাকে বলবে।আমি বিচার করে দিব।কেনম।
রুহির কথায় কিছুটা ভরসা পেলো শখ।এখন যেতে রাজি হলো।
–শুন ভাই।শখকে একদম রাগ দেখাবি না।ভয় দেখাবি না।বকাবকি করবি না কেমন।আচ্ছা বোন।আমি আসি তাহলে দেখে শুনে সাবধানে যাবে কেমন।
তোমাকে একবার পাই খালি চান্দু আমি আয়ান কি জিনিস দেখিয়ে দিব।বলল আয়ান।
বলেই রুহি চলে গেলো।রুহির সামনে অবুঝ শিশুর মতো দাঁড়িয়ে ছিলো আয়ান।যেনো কিছু বুঝে না।অন্য সময় হলে পৃথিবী উল্টে দিতো।
–যাবে নাকি সং এর মতো দাঁড়িয়ে থাকবে এখানে।অবশ্য না গেলে আমারি ভালো বেঁচে যাই।
–আমি বলছি যাব না।চলুন।আসল রুপ চলে আসলো।আপুর সামনে এমন ভাব করলো যেনো।ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।
–শখ..রেগে গিয়ে জোরে চিৎকার করে বললো।
–যাচ্ছি যাচ্ছি আমি কোনো কথা বললেই খালি রাগ দেখায়।আমি ছোট বাচ্চা ভয় পাই না হ্যাঁ।
শখের কথায় আয়ানের হাঁসি পেলে’ও তা প্রকাশ করলো না আয়ান।
হেঁটে গেলে পাঁচ মিনিট সময় লাগে ফুচকা দোকানে পৌঁছাতে।
অর্ধেক রাস্তা আসতেই আয়ানের বন্ধুর সাথে দেখা হলো।
–হেই আয়ান কেমন আসিছ।কতদিন পরে দেখা বলতো।
–আরে আরিয়ান যে আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই কেমন আছিস।তা কি মরে করে দেশে ফিরলি।
–আরে তোর ভাবির খুব শখ বাংলাদেশ ঘুরে দেখার। তাই নিয়ে চলে আসলাম।
–বাহ খুব ভালো করসিছ।চল আমাদের বাসায় যাবি আজ।
–নারে আজ সময় নেই। আগে বাবা মার সাথে দেখা করবো।তারপরে কাল তোদের বাসায় আসবো।এটা ভাবি নাকি আয়ান। ভাবি দেখতে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর।
–আমার থেকে’ও বেশি সুন্দর। বলল বেলা।
আরিয়ানের কথা শুনে আয়ান বিষম খেলো হালকা করে।
–না বাবু তোমার থেকে বেশি নয়।তুমি তো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সুন্দর।
–aww baby. I love u baby.
–I love u too sweetheart.
–মরে যাই মরে যাই।ন্যাকা দেখলে বাঁচি না।মেছো বেড়ালের মতো দেখতে তাই আবার কি ভাব।আমার থেকে’ও বেশি সুন্দর বাবু।ডং ধরে বিরবির করে বললো শখ।
–আরিয়ান ও আমার ছাত্রী হয়।তুমি ভুল ভাবছো।
–বুঝি বুঝি আয়ান।ছাত্রীকে নিয়ে তুমি রাত আট টায় ঘুরতে বেড়িয়েছো।
–আরে আজ আমাদের….
–হয়েছে থাক আর বলতে হবে না।মিট মাই ওয়াইফ বেলা।আর বেলা মিট মাই ফ্রেন্ড আয়ান।
–হ্যালো আয়ান।আপনি কেমন আছো।
–আসলে আয়ান ও বাংলাটা পুরোপুরি শিখে উঠতে পারে নাই তুই কিছু মনে করিস না।
–আরে সমস্যা নেই। তুই ভাবিকে ইংরেজিতে-ই বলতে বল।আমার কোনো সমস্যা হবে না।
–না ওর বাংলা শিখতে হবে তাই না। তুই ওর কথার উওর বাংলাতে দে কেমন।
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবি।আপনি কেমন আছেন।
–আমি’ও ভালো আসি।
–আচ্ছা আয়ান থাক ভাই আজ আসি কাল তোর সাথে দেখা হবে।
বলেই চলে গেলো। ওরা চলে যাওয়ার সাথে সাথে শখ বলে উঠলো।
–এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাবু হেঁটে যাচ্ছে ওটা দেখবেন নাকি যাবেন।(কোমরে হাত দিয়ে রেগে বললো শখ)
আয়ান আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলো।অবশেষে শখ এসে ফুসকার দোকানে পৌঁছালো।
–একি মামা দোকান বন্ধ করছেন কেনো। আমি আসলাম ফুচকা খাবো।
–আমার দোকান বন্ধের সময় হয়ে আসছে যে মা।আমি এখন চলে যাব।
প্রায় অর্ধেক দোকান বন্ধ করে ফেলছেন উনি।শখের মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।না আসলেই মনে হয় ভালো হতো।
–চলুন স্যার।আমরা চলে যাই মামা বাসায় যাবে।দোকান বন্ধ করে ফেলছেন। শখের কথায় আয়ান পাত্তা না দিয়ে বললো।
–রহিম কাকা একটু পরে দোকান বন্ধ করলে কিছু হবে না আপনি ওকে এক প্লেট ফুচকা বানিয়ে দিন।
–আরে আয়ান বাবা তুমি।এটা বউ মা নাকি।বেশ মানিয়েছে দুটোকে একদম রাজযোটক।
–রহিম কাকা ও আমার ছাত্রী।আজ আমাদের আসায় অনুষ্ঠান আছে।ওরা আসছে এদিকে কিছু চিনে না তাই নিয়ে আসছি।
–ও বাবা।আমি বুঝতে পারি নাই কিছু মনে করো না বাবা।কিন্তু তোমাদেরকে দুজনকে বেশ লাগছে দেখতে।
–এই রাক্ষস যেনো আমার শত্রুর ‘ও স্বামী না হয়।দোয়া করে দিলাম। যার কপালে আছে।তার জীবন শেষ গো মামা।
–যদি তোমার কপালেই থাকে মা। তখন তুমি কি করবে।
–এমন কথা বলেন না মামা।আমি কচু গাছের সাথে ঝুলে পরমু।
আয়ান রেগে শখের দিকে তাকিয়ে আছে রহিম কাকার জন্য কিছু বলতে’ও পারছে না।আয়ানকে রাগানোর জন্য ইচ্ছে করে শখ উলটা পালটা বলছে।
–এমন কথা বলতে হয় না মা।কে কার ভাগ্যে আছে কেউ বলতে পারে না।
–উনি যেনো কারো ভাগ্যে না থাকে।কথা বলতে বলতে রহিম কাকা শখকে ফুচকা বানিয়ে দিলো ফুচকা দেখলেই শখে জিভে পানি চলে আসে।আর কোনো কথা না বলে।খেতে শুরু করলো।
–স্যার আপনি খাবেন।অনেক সুন্দর খেতে।সেই মজা।
–তুমি খাও বেশি করে। তাড়াতাড়ি চলো রাত হয়ে যাচ্ছে।
–মামা আরেক প্লেট দেন।বলল শখ।
–না কাকা আর দিবেন।এখম দোকান বন্ধ করে দিন।
–কি আপনি আমাকে আর খেতে দিবেন না।প্লিজ আর একটা প্লেট খাব তারপরে চলে যাব স্যার।
–না বেশি খেলে সমস্যা হবে।রাতে খেতে পারবে না।আর একটা কথা না বলে খেয়ে চুপচাপ চলো।
–রাক্ষস ব্যাডা আমাকে আপনি খেতে দিবেন না।আমি’ও যাব না।
–কি আমি…আর কিছু বলতে পারলো না।আয়ান।শখ একটা ফুচকা তুলে আয়ানের মুখে পুরে দিলো।যার জন্য আয়ান কথা বলতে পারছে না।
–এখন কেমন লাগে।আমাকে খেতে দেন নাই যেমন।বলেই রহিম মামাকে টাকা দিয়ে দে দৌড় শখ।
–এই মেয়ে একা একা যাবে না বলছি দাঁড়’ও।তারপরে আয়ান শখের দেওয়া টাকাটা নিয়ে নিজের মানিব্যাগ থেকে ফুচকার বিল মিটিয়ে শখের পেছনে পেছনে দৌড় দিলো।
এই মেয়েটা আমাকে এত জ্বালাই কোথায় গেলো।যদি কিছু একটা হয়ে যায়।কিছু টা ভয় পেয়ে গেলো আয়ান।
শখ শখ বলে জোরে জোরে চিৎকার করছে কিন্তু শখের কোনো সার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here