রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 20

0
1839

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_২০(সারপ্রাইজ পর্ব)
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–জ্বী মা অবশ্য-ই বলতে পারো,এতে মনে করার কি আছে।
–আসলে স্যার আজ তো শখের আঠারো বছর পূর্ণ হলো আমরা সেই দুই বছর ধরে অপেক্ষা করছি।বলল মুনতাহা।
আয়ান রাগী চোখ দিয়ে রুহির দিকে তাকালো।
–মানে তুমি কি বলতে চাইছো মা।পরিষ্কার করে বলো সবকিছু।
রুহি আয়ানের রাগের মানে বুঝতে পরের বললো।
–না মানে আসলে আপনার মেয়ে শখকে আমাদের খুব পছন্দ,ওকে আমরা আমাদের বাড়ির বউ করতে চাই।আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমরা আয়ানের সাথে শখের বিয়ে দিতে চাই।
রুহির প্রস্তাবে আহনাফ সাহেব বেশ খুশি হলেন মনে হয় উনি এমন কিছুর অপেক্ষা-ই ছিলো।
আহনাফ সাহেব কিছু বলতে যাবে,তার আগে আয়ানের মা বললো।
–শখ তো ওনার মেয়ে না,তুই ওনার মেয়ে ওনার মেয়ে করছিস কেনো। উনার মেয়ে তো আস্ত একটা বেয়াদব। (আস্তে করে বললো)
–আহ মা চুপ থাকো না।আমাকে কথা বলতে দাও।
–দেখো রুহি মা,তুমি সবটা জানো তোমাকে সেদিন সবটা বলা হয়েছে তারপরে’ও যদি তোমরা শখকে তোমাদের বাড়ির বউ করতে চাও তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আয়ানের মতো সোনার টুকরো ছেলে কয়টা পাওয়া যায়।এখন চিন্তার বিষয় হচ্ছে শখ রাজি হবে কি,ও রাজি না হলে আমরা বেশি দূর আগাইতে পারবো না।সবটা নির্ভর করছে শখের ওপরে।
–শখ কে আমি বুঝিয়ে বললে শখ ঠিক রাজি হবে।
–কিন্তু বড় মেয়ে রেখে ছোট মেয়ের বিয়ে সমাজ কি চোখে দেখবে।বলল রাহেলা বেগম।
–তুমি চুপ করো আমার শখের জন্য যেটা ভালো হবে আমি তাই করবো।সমাজ সারাজীবন আমার শখের পাশে থাকবে না,যে আমার সমাজ এর কথা ভাবতে হবে।বলল আহনাফ সাহেব।
–মা তো ঠিকি বলেছে বাবা।পারলে তুমি আপুর সাথে ওনার বিয়ে দাও আমি মরে যাব তাও ওনাকে বিয়ে করবো না।আমারে যদি জোরজারি করো তাহলে আমি বাসা থেকে চলে যাব।বলেই গটগট করে চলে গেলো শখ।
মেয়েটা কখন যে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো কেউ বুঝতে-ই পারে নাই।
আয়ান ফ্যাল ফ্যাল করে শখের যাওয়ার প্রানে তাকিয়ে আছে।
–বেশ আমি’ও দেখতে চাই। তুৃমি কিরে আমাকে অন্য কারো হতে দেখতে পারো তোমার কথা মতো আমি মুনতাহাকেই বিয়ে করবো।ওর সাহস কি করে হয় আমাকে মুখের ওপরে না করে দেওয়ার।
–স্যার,আপনি চাইলে মুনতাহার সাথে আমার বিয়েটা দিতে পারেন আমার কোনো সমস্যা নেই। যদি কিছু মনে না করেন আমি শখের সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
আয়ানের কথায় রুহি বাদে সবাই অবাক হয়ে গেছে আয়ানের কথায়,যে মেয়েটাকে দেখতে পারে না,তাকে বিয়ে করে সারাজীবন কি করে সংসার করবে।
আয়ানের মা রেগে আয়ানকে বললো।
–তুমি কি পাগল হয়ে গেছো আয়ান।
–না মা পাগল হয় নাই, তোমাদের সন্মানের কথা চিন্তা করছি,সবাইকে আমার বিয়ের কথা বলে আসছো ভুলে গেছো।
আয়ানের কথায় মিসেস নিলিমা চৌধুরী মাথা নিচু করে ফেললো।
–আচ্ছা,মুনতাহা কি রাজি হবে।ও যে রাগি।বলল আহনাফ সাহেব।
–ওকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।বলল রাহেলা বেগম।
–তাহলে কি বিয়েটা মুনতাহার সাথে হবে।ফাইনাল।
–হ্যাঁ মুনতাহার সাথে-ই হবে।
আয়ান অনুমতি পেয়ে শখের কাছে গেলো।
মুনতাহাকে নিয়ে কথা হচ্ছিল তখন-নি মুনতাহা যাচ্ছিলো।
–তোর বিয়ে।তুই আমার সাথে এদিকে আয়।বলেই রাহেলা বেগম মুনতাহাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।
–শুন ওরা শখকে পছন্দ করেছে আয়ানের জন্য,কিন্তু বড় মেয়ে রেখে কি ছোট মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায়,তাই তোর সাথে বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। তুই এই নিয়ে একটা কথা বলবি না।সব কথা দেওয়া হয়ে গেছে।
–কিন্তু মা,আমাকে না জানিয়ে এত বড় সিদ্ধান্ত তোমরা কি করে নিতে পারো।লাইফ টা আমার তোমাদের না।সংসার সারাজীবন আমি করবো তোমরা না।তাহলে আমাকে না জানিয়ে তোমরা কিভাবে কথা দিতে পারো।আর আয়ান স্যার আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলো।
–হ্যাঁ আয়ান নিজেই বলেছে তোকে বিয়ে করবে।
–অবিশ্বাস্য আমি বিশ্বাস করি না।আমি এই বিয়ে কিছু তেই করতে পারবো না।(মুনতাহার ভেতর টা শেষ হয়ে যাচ্ছে,ভেতরে কার জানি শূন্যতা অনুভব করছে।এই মুহূর্তে যাকে সবথেকে বেশি মনে পড়ছে সে আর কেউ না শুভ।তাহলে সে-ও কি শুভকে ভালোবেসে ফেললো,না এ হতে পারে না আমি এই বিয়ে কিছুতে-ই করতে পারি না)
–আমাদের এই একটা কথা রাখ মা তোকে ছোট থেকে বড় করেছি,তোকে নিয়ে কি আমাদের আশা ইচ্ছা আকাঙ্খা থাকতে পারে না বল।তুই এভাবে আমাদের ছোট করে দিবি।এই দিন দেখার জন্য তোকে আমরা বড় করেছি।
মায়ের কথা গুলো মুনতাহার তীরের মতো বুকে গিয়ে লাগলো।সে যতই রাগারাগি করুক না কেনো বাবা,মায়ের অসন্মান হোক এমন কোনো কাজ তো সে করতে চাই না। এখন সে কি করবে।হ্যাঁ শুভ কে কল দেওয়া যেতে পারে উনি যদি কিছু উপায় বের করতে পারে।
–আচ্ছা মা তুমি যা-ও আমি ভেবে,দেখছি আমি এখন একটু একা থাকতে চাই। আমার ভালো লাগছে না কিছু।
মুনতাহার মা খুশি হয়ে বললো।
–আমি জানতাম মা,তুই ঠিক রাজি হবি,আমার মেয়ে যতই রাগী হোক না কেনো।আমার মেয়েটার মনটা খুব ভালো।যাই সবাই কে গিয়ে বলে আসি।
বলেই উনি চলে গেলেন।মুনতাহার মা যাওয়ার সাথে সাথে মুনতাহা দরজা লাগিয়ে দিলো,শুভকে কল করে-ই যাচ্ছে কিন্তু শুভ কল তুলছে না।এক পর্যায়ে মুনতাহা কান্না করতে করতে ফ্লোরে বসে পড়ল।
–আমি কি ভেতরে আসতে পারি।বলল আয়ান।
–আপনাকে আর কতোবার বলবো,আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।শুনতে পান নাই, সবার সামনে বলে আসছি।বাংলা কথা বুঝেন না নাকি।
–আমি কি তোমাকে বলছি,আমাকে বিয়ে করতে হবে।বা তোমাকে বিয়ে করানোর জন্য রাজি করাতে এসেছি।
–মানে…
–মানে এমন অভিমান করো না,যে অভিমানের শেষ আমাকে-ই না পা-ও।
কথা টা শুনা মা শখের ভেতরটা ধক করে উঠলো।
–জানো শখ অভিমান জিনিসটা খুব খারাপ।তাই বেশি অভিমান করতে নেই। নয়তো প্রিয় জিনিস টা হারিয়ে ফেলবে।
–দেখুন স্যার কি বলতে চান।সরাসরি বলেন।প্যাচানো কথা আমার ভালো লাগে না।
–দাওয়াত থাকলো সামনে মাসে আমার আর মুনতাহার বিয়ে।তোমাকে কিন্তু সব সময় সব কাজে আগে আগে থাকতে হবে বড় বোনের বিয়ে বলে কথা। এই খুশির খবর টা তোমাকে দিতে আসলাম। শালিকা হবে,তাই একটু মজা করলাম। হাহাহা।
আমার আর মুনতাহার বিয়ে কথাটা শোনা মাত্রই বুকে ভেতর টা কেমন জামি ব্যাথা অনুভব করছে। ভেতরটা ছারখার হয়ে যাচ্ছে। এমনটা তো চেয়েছি,তাহলে এখন কেনো কষ্ট হচ্ছে। তবুও মুখে জোর করে হাসি এনে বলল।
–বাহ তাহলে তো ভালো-ই,আমি খুব খুশি হয়েছি।খুব মজা হবে,তাই না বলেন।
–সত্যি তুমি খুব খুশি হয়েছ।শখ।
–হ্যাঁ হব না আমার বোনের বিয়ে বলে কথা।
–একটা কথা বলবো,রাখবে শখ।
আয়ানের এমন করুন ভাবে কথা বলাটা শখকে আরো শেষ করে দিচ্ছে। এত রাগী মানুষ এভাবে কথা বলা মানায় না।কথার মধ্যে নেই কোনো রাগ, আচ্ছা উনি এত শান্ত কেনো হয়ে গেছেন।আমার সাথে রাগারাগি করছেন না কেনো,বকছেন না কেনো,ঝগড়া করছেন না কেনো।আচ্ছা আমি এসব ভাবছি কোনো ওনার তো কোনো অধিকার নেই আমার ওপরে।
শখের থেকে কোনো উওর না পেয়ে আয়ান আবার আস্তে করে বলে উঠলো।
–শখ…
আয়ানের ডাক শুনে ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসলো শখ।
–জ্বি স্যার বলুন।
–আমি কি তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারি,শেষ বারের মতো প্লিজ একবার।কথা দিচ্ছি তোমার থেকে যতোদূর সম্ভব আমি দূরে থাকার চেষ্টা করবো।আর তোমাকে বকাঝকা করবো না,রাগ দেখাবো না,তুৃমি তোমার মতো স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করবে।প্রমিস।
আচ্ছা উনি এভাবে কথা বলছেন কেনো উনি কি বুঝতে পারছে না।উনার এই কথা গুলো আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। আমি চাইলেও আর নিজেকে ধরে রাখতে পারবো না।
শখ কোনো কথা বলছে না।মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক সময় নিরবতা সন্মতির লক্ষন হয়,তাই আর কোনো কিছু না ভেবেই আয়ান শখকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
শখ কি করবে বুঝতে না,পেরে এখনো আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।কেনো জানি এই মানুষটাকে তার সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়।মানুষটার কাছে থাকলে শান্তি পাই অনেক।পৃথিবীর সবথেকে শান্তির জায়গা এই মানুষটার বুক।সারাজীবন মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।না,নাহ আমি এসব কি ভাবছি।আমি এমন অন্যায় আবদার করতে পারি না,উনি তো এখন আমার বড় বোনের হবু স্বামী।আমি সব কি করছি। শখ যেই আয়ানে দূরে সরাতে যাবে। তার আগেই আয়ান শখকে ছেড়ে দিয়ে,শখের কপাল চুমু খেয়ে।শখের দিকে না তাকিয়ে বেড়িয়ে আসলো। ড্রয়িং রুমে এসে কোনো কথা না বলে চলে গেলো আয়ান।হয়তো নিজের চোখের পানি টা আড়াল করার জন্য, কাউকে দেখাতে চায় না।
সেদিনের পর থেকে আয়ান আর শখের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না, খুব একটা শখের সামনে’ও যায় না।আয়ানের এমন অবহেলা শখ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবু্’ও কাউকে কিছু বলতে পারছে না।এখন আয়ানের কথা মতো বোরকা পড়ে চলাফেরা করে।আয়ানের মন মতো চলে।তবু’ও শখের পরিবর্তন আয়ানের চোখে পড়ে না।আর আগেও মতো কেউ বলে না,শখ এটা করো না,ওটা করো না,কেউ রাগ দেখায় না।বকা দেয় না।তবে কি স্যারের কথা-ই সত্যি। এই অভিমানের শেষে আমি আর স্যারকেই পাব না।আমি এসব কি ভাবছি স্যার আমার বোনের হবু বর।কিন্তু স্যার তো আমাকে-ই ভালোবাসে উনি তো আমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। আমি না করার পরে আমার ওপরে রেগে আমার বোনকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। সেদিন যদি আমি হ্যাঁ বলতাম আজ অনেক কিছু সুন্দর হতো।এখন আমি কি করবো।মাথা কাজ করছে না আমার।
শখ মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লো।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here