#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_২৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
রাত্রি বাজে তিন’টা,সবাই গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছে। ঘুৃম নেই শুধু তিন’টি মানুষের চোখে। শখ,আয়ান,মুনতাহা।
ঘুম আসছে না,দেখে শখ পুরো রুম জুরে ছটফট করছে। কি করবে,কিছু ভালো লাগছে না। কোনো কিছুতে’ই শান্তি পাচ্ছে না,সে।তাই ডায়েরি নিয়ে বসে ছিলো।শখের যখন খুব বেশি মন খারাপ হয়,তখন সে ডায়েরি লিখতে খুব ভালোবাসে।
মুনতাহা বার বার শুভকে কল করে যাচ্ছে। শুভ’র ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। এর আগে’ও অনেক বার কল করেছে। কিন্তু মুনতাহার কল বার বার কেটে দেওয়া হয়েছে। এখন ফোন বন্ধ, মুনতাহা কি করবে,কিছু বুজতে পারছে না।মাথা কাজ করছে না।তবে কি শেষ আশা’ও শেষ। বলেই বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলো।
শখ বসে বসে লেখালেখি করেছিলো। হঠাৎ করে’ই পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে, পেছনে তাকালো।এত রাতে আয়ান’কে শখ কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে যায়।অন্য সময় হলে ভয়ে চিৎকার করে,পুরো বাসা এক করে ফেলত।আজ কেনো জানি ভয় পেতে ইচ্ছে করছে না।
–একি স্যার আপনি এত রাতে,এখানে কেনো।কি করতে আসছেন।কোনো সমস্যা হয়েছে। আপুর সাথে কি কথা বলবেন।
আয়ান শখের ঠোঁটে হাত দিয়ে বললো।
–হুসস,একদম চুপ একটা কথা বলবে না।এত জোরে জোরে কথা বলছো কেনো।সবাই জাগা পেয়ে যাবে।আস্তে কথা বলো।
শখ এবার শান্ত হয়ে আস্তে করে বললো,
–কি হয়েছে স্যার,এত রাতে কি করতে আসছেন।
–শখ চলো না,আমরা পালিয়ে যাই।
আয়ানের কোথায় অবাক হয়ে বললো।
–স্যার আপনি পাগল হয়ে গেছেন।এই কথা বলতে এত রাতে আসছেন।স্যার আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন।
আয়ান এবার শখের দুই গালে হাত দিয়ে বললো।
–আমি তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি শখ।আর তোমাকে ছাড়া আমার পক্ষে অন্য কাউকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা সম্ভব না। প্লিজ চলো না,আমরা পালিয়ে যাই।এখনো সময় আছে দেরি হয়ে যাবার আগেই চলো আমরা চলে যাই।আমি তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি বিশ্বাস করো তোমাকে না পেলে,মরে বেঁচে থাকতে হবে আমার। যাকে চলে জীবন্ত লাশ।
আয়ানের কথা গুলো শখের কলিজা ছেদ করে বেড়িয়ে যাচ্ছে। না সয্য করা যাচ্ছে। না আয়ানের কথাগুলো মেনে তার সাথে যাওয়া যাবে।সবটা শেষ। আমি নিজে-ই সবকিছু শেষ করে ফেলছি।সেদিন যদি আমি রাজি হতাম,তাহলে আজ এতকিছু হতো না।
–আপনি পাগল হয়ে গেছেন স্যার।আপনি আমাকে ভালোবাসেন,আমি না।আর আমি যাকে ভালোবাসি না। তার সাথে সারাজীবন কিভাবে সংসার করবো।
–তাহলে তুমি’ও একটু বুঝো।আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাহলে মুনতাহার সাথে কিভাবে সারাজীবন সংসার করবো।আমি আর পারছি না শখ।সত্যি আমি হেরে গেছি।আমি রাগ করে মুনতাহার সাথে বিয়েতে রাজি হলে-ও ভালো তো তোমাকে-ই বাসি।তোমাকে-ই চাই আমি।এখন আমি কি করবো।বাবা মায়ের সন্মানের দিকে তাকিয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম।
–আপনার বাবা মায়ের সন্মান আছে।আর আমার বাবা মায়ের সন্মন নেই। যে,সেটা আমি আপনার জন্য নষ্ট করে দিব।আমি চলে যান। এখানে থেকে না হলে সবাই-কে ডাকতে বাধ্য হব।
–প্লিজ শখ আমার সাথে চলো।আমি ভালো থাকতে পারবো না।তোমাকে ছাড়া।জানো শখ আমার না বাঁচার অনেক ইচ্ছে। আমি না অনেক গুলো বছর তোমার সাথে বাঁচতে চাই।
নাহ এভাবে কথা বলতে থাকলে আমি আর নিজেকে উনার সামনে ধরে রাখতে পারবো না।যে,করেই হোক উনাকে সরাতে হবে।
–আপনি যাবেন।নাকি আম্মুকে ডাকবো।বলেই শখ আম্মু,আম্মু বলে চিৎকার করতে শুরু করলো।
–শখ একটা বার ভেবে দেখো,একবার যদি মুখ ফিরিয়ে নেই,না। ফিরে’ও তাকাবো না আর তোমার দিকে।
–তাতে আমার কোনো যায় আসে না।আপনি চলে যান।
–কি হয়েছে রে শখ।চিৎকার করছিস কেনো। দরজার ওপাশ থেকে বললো শখের আম্মু।মুনতাহা জাগা ছিলো চিৎকার শুনে মুনতাহা’ও শখের রুমে আসলো।
–একি আয়ান বাবা তুৃমি এখানে।কোনো সমস্যা হয়েছে বাবা।
আমি যাহ ভেবে ছিলাম তাই হলো স্যার শখকে ভালোবাসে।আগে আমাকে পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে।মনে মনে বলল মুনতাহা। আয়ান মাথা নিচু করে আছে।কথা বলার মতো শক্তি নেই তার।
–আরে আম্মু তুমি যা-ও তো।আমি ওনাকে ডেকেছি।আর শখ তোর কোনো কান্ড জ্ঞান নেই। গরুর মতো চিৎকার করছিস।
–আসলে আপু…
–চুপ কর বেয়াদব মেয়ে আর একটা কথা বললে মেরে সব দাঁত ফেলে দিব। বড়দের মুখে মুখে কথা বলিস বেয়াদব মেয়ে।
রাহেলা বেগম আর কিছু না,বলে চলে গেলেন।
রাহেলা বেগম চলে যেতে-ই মুনতাহা দরজা লাগিয়ে দিলো।
–শখ তুই বেলকনিতে যা,স্যারের সাথে আমার কিছু কথা আছে।
মুনতাহার কথা মতো শখ চুপচাপ চলে গেলো।
–তুমি মিথ্যা কথা বললে কেনো মুনতাহা। তুমি তো আমাকে ডাকে নিয়ে আসো নাই। আমি তো নিজে থেকে-ই এসেছি।
–স্যার আপনি শখকে ভালোবাসে তাই না। তাহলে আমাকে কেনো বিয়ে করছেন বলেন তো।আমার জীবন টা এভাবে নষ্ট করে দিবেন না।আমি আপনাকে ভালোবাসি না।আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।প্লিজ আপনি বিয়েটা বন্ধ করে দিন।
–তাহলে তুমি কেনো রাজি হয়েছ।
–স্যার আমি বাড়ির বড় মেয়ে সব দায় ভাড় তো আমারি।শখ না বলে বেঁচে গেছে। কারন ও ছোট মেয়ে।আমি না বলে কোথায় যাব আমার তো আর শখের মতো বড় বোন নেই তার ওপরে চাপিয়ে দিব।আমাকে বাঁচান।এই বিয়েটা হলে আপনি আমি কেউ সুখি হব না।আপনি সেটা ভালো করে-ই বুজতে পারছেন।
–সব বুজলাম এখন বিয়েটা ভাংব কি করে।
–আপনি শখকে বিয়ে করে নেন।তাহলে-ই তো হয়।
আয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগে-ই শখ বললো আপু আমি একটু নিচে যাব।বলেই চলে গেলো।
–শখ আমাকে ভালোবাসে না,মুনতাহা ও আমাকে বিয়ে করবে না।জোর করে কোনো সম্পর্ক তৈরি করা যায় না।তুমি আমাকে বিয়ে করে না-ও। বিয়ের পরে ডিভোর্স দিয়ে তোমার ভালোবাসার মানুষের কাছে চলে যাবে।কেই আটকাবে না।
–কিন্তু স্যার…
–কোনো কিন্তু না।আমাকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে।(মেয়েটারে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ কিন্তু মেয়েটা না।মনে মনে বলল আয়ান)
–তুই আমার মাথায় হাত দিয়ে বল,মুনতাহা আর আয়ানের বিয়েতে কোনো রকম বাঁধা সৃষ্টি তুই করবি না।বলল শখের আম্মু।
–তুমি পাগল হয়ে গেছো।কি সব যা-তা বলছো।আমি কেনো আপুর বিয়েতে বাঁধ সৃষ্টি করতে যাব।
–নাটক করবি না।আমি জানি আয়ান তোকে ভালোবাসে,আর তুই’ও আয়ানকে ভালোবাসিস।যদি উল্টা পাল্টা কিছু করছিস আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
–আম্মু তুমি এভাবে কথা বলছো,কেনো।একটা কথা ভুলে যাবে না।আমার জন্য-ই আপুর বিয়েটা আয়ান স্যারের সাথে হচ্ছে। আমি যদি এখনো আয়ান স্যারকে বলি আমি ওনাকে বিয়ে করতে রাজি তাহলে উনি এখনি আপুর সাথে বিয়ে ভেঙে দিবে।
–তুই যদি এমন’টা করিস তাহলে তুই তোর মরা মায়ের মাথা খাবি।
–মানে..(অবাক হয়ে।)
–মানেটা খুব সহজ তুই আমার মরা মুখ দেখবি।
–আম্মু এসব কি বলছো তুমি।তুমি আমার আম্মু হতেই পারো না।আমি আমার আম্মুকে নতুন করে দেখছি।কই আগে তো আমার আম্মু এমন ছিলো না।
–মারে কষ্ট পাস না।আমার বড় মেয়েটার সুখ দেখার আমার অনেক ইচ্ছে তাই জন্য, আমি তোকে এত গুলো কথা বললাম কষ্ট পাস না মা।
শখ কোনো কথা না বলে উপরে চলে আসলো।
–শখ তুই চলে এসেছিস।আর একটা কথা বলবি না।তুই এখন স্যারের সাথে যাবি।
–এত রাতে কোথায় যাব আমি।
–কথা কম বল গেলে-ই দেখতে পাবি।স্যার ওকে আপনার সাথে নিয়ে যান।
মুনতাহার কথা মতো আয়ান শখের হাত ধরে বেলকনির দিকে যাবে ঠিক সেই সময়ে রাসেল বেগম এসে বলেন।
–দারা’ও কোথায় যাচ্ছো,তোমরা আর শখ তোকে একটু আগে কি বললাম।
— আমি কিছু জানি না আম্মু।আপু স্যারের সাথে যেতে বললো,কি জানি কাজ আছে।
–রাত চারটার সময় কি কাজ থাকতে পারে মুনতাহা।
–আসলে…আর কিছু বলতে পারলো না।রাহেলা বেগম থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মুনতাহার গালে।
–খুব বেশি বড় হয়ে গেছো তাই না।বেশি পাকনামি করলে তোমার আদরের বোনকে আর পাবে না।হ্যাঁ,বলে দিলাম। বলে-ই রেগে চলে গেলেন উনি।
–আচ্ছা আপু আম্মু এমন করছেন কেনো।আমি এই আম্মুকে চিনি না।এটা অন্য কেউ আমার আম্মু এমন হতেই পারে না।
–সব তোর জন্য হয়েছে। তুই আমার জীবন টা শেষ করে দিলি রে শখ।তুই কবে নিজের ভালোটা বুজবি রে।স্যার আপনি চলে যান।এই মেয়ে ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।আপনি ভুল মানুষকে ভালোবাসছেন।হতভাগা মেয়ে কোথাকার।
–শখ শেষ বারের মতো বলবো।যাবে আমার সাথে। বলল আয়ান।
–লজ্জা করে না।কাল আপনার বিয়ে আর আজ আমাকে এসব কথা বলছেন।আপনারা ছেলে মানুষ এমনি একটা দিয়ে হয় না। হাজার-টা চাই। সব আপনার জন্য আজ এতগুলো কথা শুনলাম।আপনি এখনি চলে যান আমার মুখের সামনে থেকে লজ্জা থাকলে।
–শখ….বলেই মুনতাহা শখের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
আয়ান সেখানে আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না চলে আসলো।মুনতাহা শখকে হতভাগা মেয়ে বলে চলে আসলো।এখন সব দোষ আমার সবাই গল্প আমি দোষী আমার কথা-টা কেউ একবারো ভাবলো না।কেউ আমাকে একটুকু’ও বুজলো নারে।বলেই কান্না করতে শুরু করে দিলো শখ।
না পাওয়ার যন্ত্রনা তোমরা সবাই কি করে বুজবে।আমার তো কিছু একটা গন্ডগোল লাগছে। তবে কি সেটা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে।তবে কি আয়ান স্যারকে আমি কোনোদিন পাব না।এভাবে হেরে যাব।নাকি আয়ান স্যারের কাছে চলে যাব কিছুতে-ই মাথা কাজ করছে না।
হঠাৎ করেই কেউ শখের মুখ চেপে ধরলো তারপরে শখের আর কিছু মনে নেই।
চলবে…..