#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ৮
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
প্ররম আবেশে এবং উৎকণ্ঠিত মনে চোখ বন্ধ করে আছি বেশ কিছুক্ষণ। তারপর পায়ে হালকা মালিশের অনুভব করলাম। ঘটনা টা কি হচ্ছে বুঝার জন্য এক চোখের কোণা দিয়ে হালকা করে তাকালাম। দেখি উনি আমার ব্যাথার স্থানে পেইন রেলিএভের লাগিয়ে দিচ্ছেন। আমি অবাক হয়ে তাকাতেই উনি মেকি হেসে বলেন,, সব সময় মাথার মধ্যে এমন উদ্ভট চিন্তা ভাবনা আসে কিভাবে? কি ভেবেছিলে? ভ্রু নাচিয়ে বললেন।
আমি আবার কখন কি ভাবলাম, যা ভাবার আর করার সব তো উনিই করলেন, তবুও আমাকে দোষ দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,, নাও এখন চুপচাপ ঘুমিয়ে যাও।
আমি সকালে নাস্তা করতে করতে মা কে বলি, আজ স্কুল থেকে ও বাড়িতে যাবো। মামুনির জন্য মন খারাপ লাগছে।
আচ্ছা যেও, তুর্জ তোমাকে রেখে আসবে।
না না মা!! আমি একাই যেতে পারবো। উনার অফিস রেখে অযথা আমার জন্য এতো কষ্ট করতে হবে না।
দেখ, দেখে শিখ! এই পিচ্চি মেয়েটা কত বুঝে! এখনই বরের ভালো মন্দের খেয়াল রাখা শুরু করেছে। তুর্জকে বলে মা।
উউফ সব কথা ঠিক আছে, কিন্তু এই পিচ্চি মেয়েটা ঠিক নাই। আমি ঘোর প্রতিবাদ করে বললাম, মা আমি কিন্তু পিচ্চি না, আমি খেয়াল করে দেখছি, পাশাপাশি দাড়ালে আপনার চেয়ে একটু বেশি লম্বা হই।
আমি কোন লজিক দেখালেই সবাই হাসে কেন বুঝি না। তুর্জের দিকে চোখ পড়তেই দেখি, ঠোঁট কামড়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওবাবা, কাল রাতে এই নিজেকে বড় দাবি করার জন্য ওইসব করার ধান্দা করেছিলো। আজও মুখ ফসকে উনার সামনে বললাম আমি বড়। ইইশস, কবে যে ঠিকঠাক কথা বলা শিখবো।
যাও রেডি হয়ে আসো, প্রয়োজনীয় কিছু নেওয়া লাগলে নিয়ে নিও। মায়ের কথায় ধ্যান ভাঙে আমার। আমি উঠে উপরে যেয়ে, বই গুলো গুছিয়ে ব্যাগে রাখতেই উনি রুমের দরজা লাগিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে আর বলছে,,
কাল রাতে তো পায়ের ব্যাথার জন্য কত বড় হয়েছো দেখা হয় নি,, সেই জন্য বুঝি আজ আবারও মায়ের সামনে তুমি বড় সেটা জানান দিচ্ছিলে। আসো তোমার মনের আশা গুলো এক্ষুনি পুর্ণ করে দিই।
আয়ায়া–মি আবায়ার কি আ আসা করলাম। আর এভাবে দরজা বন্ধ করে দিলেন কেন?
কেন দিলাম তা দেখতেই পাবে এখন বলেই,উনি আমার সামনে এসে উনার বাম হাতে আমার চুল গুলো খামচে ধরে। উনার মুখ টা আমার মুখের উপর রেখে বলে,, কাল রাতে বলছিলে, আমার কাছে থেকে চলে যাবে,, তাই আজ ও বাড়িতে যাওয়ার প্ল্যান করছো তাই না?
তাতে আপনার কোন প্রব্লেম? আপনি চাইলেও যাবো, না চাইলেও যাবো তবুও আপনার মতো নোংরা মানুষের সাথে আর না। যে ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে ছি ছি ছি ছি ছিহ্ঃ!!!!
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে রেডি হতে শুরু করেন। আমিও রেডি হয়ে আগে নিচে চলে আসছি। মা আমাকে আদর করে দিচ্ছেন,, আমি চলে গেলে বাড়িটা নাকি আবারও ফাঁকা ফাঁকা লাগবে, এইসব বলে মন খারাপ করে আছেন। তুর্জ নিচে নেমে এসে হনহন করে গাড়িতে উঠে গেছে,, আমি আর মা পিছনে পিছনে আসলাম। স্কুলের সময় হয়ে গেছে তাই আর দেরি না করে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি। স্কুলের গেইটের সামনে দেখি সে তনিমা ফনিমা দাঁড়িয়ে আছে। ওমা বুঝলাম না উনি এখানে কেন। উনার ও কি আবার স্কুলে ভর্তি হওয়ার সখ জাগলো। মুখে একটা ভেঞ্চি কেটে আমি গেইট পার হতেই, আস্তে করে কানে আসছে,, কি করতে চাইছো তুমি?? এখানে কেন আসছো?
আস্তে সারা আস্তে,, আগে আড়িপেতে শোন ওরা কি বলে। মনে হচ্ছে ব্যাটা মহব্বত আলির প্রেমে ভাঙন ধরেছে। আহ্ঃ কি শান্তি কি শান্তি!!
তুমি আগে বলো কাল থেকে তুমি আমার ফোন পিক করছো না কেন? ওই পিচ্চি মেয়ের মায়ায় পড়ে গেলো। কচি মেয়ে দেখে লোভ সামলাতে পারছো না বুঝি??
তনিমা তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো,, কাল সারাদিন ব্যাস্ত ছিলাম, তার উপর মন খারাপ। একদিন কথা বলি নি বলে কি তুমি এইসব উল্টো পালটা কথা বলবা। তোমার কাছে এমন আশা করি নি।
আ-রিব্বাস, কাল থেকে কথা বলে নি মানে কি? রাতেই তো কি কি সব বললো,, সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তাহলে কি উনি আবারও কোন তনিমা নামের মেয়ের সাথে কথা বলে। ওও আল্লাহ গো আর কত কি দেখার বাকি রাখছো গো। ক্লাসের সময় হয়ে গেছে তাই এদের খাজুরে আলাপ না শুনে ক্লাসে চলে গেলাম।
স্কুল শেষে মিঠির সাথে বাইরে চলে আসি। তখন দুজন আমাদের এলাকারই ছেলে আমাকে দেখে বলে,, দেখ দোস্ত, নাক টিপলে এখনো দুধ বেরুবে কিন্তু তলে তলে ব্রিজের নিচে চলে গেছে। কতটা এক্সপার্ট হলে এমন ছেলেকে কন্ট্রোল করতে পারে ভাবছিস একটু!!হাহাহায়ায়া।
রাগে পুরো শরীর কাপছে আমার। আমি জুতা খোলার জন্য যে নিচু হতে যাবো তখনই মিঠি আমাকে জোর করে নিয়ে যায়। এদের সাথে ঝামেলা করলে বিষয়টি আরো খারাপ দিকে যাবে তাই আমাকে মিঠি কিছু বলতে দিলো না। কিন্তু আমার কান্না থামছে না। কত গুলো নোংরা কথা শুনিয়ে গেলো অযথা।
মামুনিকে আগেই জানিয়ে রাখা ছিলো আজ আমি আসবো সাথে তুর্জও আসবে। নতুন জামাই প্রথম আসবে বলে কথা। পুরো বাসায় স্পেশাল খাবারের গন্ধে মৌ মৌ করছে।
পুরো রাস্তায় কান্না করার জন্য চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। মামুনি দরজা খুলে দিতেই জরিয়ে ধরে আরো কান্না শুরু করি। মামুনি বারবার জিজ্ঞেস করছে, কি হয়েছে? আমি একা কেন, কে কি বলেছে এইসব। আমি একটু শান্ত হয়ে পুরো ঘটনা টা মামুনিকে বললাম। মামুনি শুধু মাত্র দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে চলে গেলো।
আমি ভেবেছিলাম, তুর্জ হয়তো আমার খোঁজ নিতে একবার হলেও এ বাড়িতে আসবে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল করে সে আসেনি এমনকি একবার ফোন ও করে নি। অথচ ওই শাকচুন্নি কে ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে খবর নেই। মাঝে মাঝে মা ফোন করে আমার সাথে কথা বলে। কবে ফিরবো জিজ্ঞেস করে। কিন্তু আমি বলি,, মামুনির সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে আরো ক’টা দিন। তাই আমাকে আর জোর করে না।
আজ বিকালে হঠাৎ করে মা ফোন করে বলে,, তুর্জের বাবা নাকি অসুস্থ। হসপিটালে আছেন এখন, আরো দু দিন থাকতে হবে সেখানে।
সংবাদ টা শোনা মাত্রই মামুনি আমাকে নিয়ে হসপিটালে রওনা দিলো। বাবাই নাকি আগেই ওখানে গেছে। অসুস্থ মানুষকে দেখতে গেলে কান্না কান্না ভাব করতে হয়। কিন্তু কেন যেন আমার কান্নার ফিলিংসটা আসছে না। মুখটা কাচুমাচু করে কান্না নিয়ে আসার ভান করছি। ওইযে একটা কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তুর্জ আর পাশেই মা বসে আছে,, উনাদের কাছে যেতে একজন নার্স সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা একটা লাশ নিয়ে বেড়িয়ে আসছে।
ওহ আল্লাহ তাহলে কি তুর্জের বাবা ইন্না-লিল্লাহ হয়ে গেছে। আহারে বেচারা, নাতী পুতীর মুখ না দেখেই চলে গেছেন। আরে সারা,, সারাক্ষণ এইসব আলতু ফালতু কথা চিন্তা না করে এখন কান্না কর,, সারায়ায়া কান্না কর,, জোরে জোরে চিল্লায় চিল্লায় কান্না কর। যেন সবাই বুঝতে পারে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি।
যেই ভাবা সেই কাজ,, ওওবাবাগো বাবা রে,আমি দুই-ই দিন হলো ওবাড়িতে যেতেএ নাআ যেতেই আপনি এভাবেএএ কেন ওপারে চলে গেলেএএন। ওও বাবা গো আমায়াকে মায়াফ করে দিইয়েন, আয়ামি আপনাকে দাদুউ ডাক শোনাতেএ পারলাম নাআয়া,,,,,,৷
মামুনি আমাকে টেনে পাশের কেবিনে নিয়ে গেলো। আমি হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি আর বলছি,, কি ব্যাপার মামুনি, তুমি এভাবে টানছো কেন। আমাকে আরো কান্না করতে হবে তো? নয়তো সবাই ভাববে, শশুর মারা গেছে তবুও ছেলের বউ কান্না করে নি। দেখি তারাতাড়ি ছাড়ো আরো কয়েকটি কথা মনে আসছে, সেগুলো বলেও কান্না করতে হবে।
মামুনি দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,, আরে ওইটা তোর শশুরের লাশ না। তোর শশুর জীবিত আছে।
উউফ কি একটা ভুল করে ফেললাম,, আচ্ছা মামুনি ওরা কি আমার কান্না দেখেছে। উত্তরে মামুনি ইয়ায়া বড় চোখ বের করে বলে,, আর একটা কথাও বলবি না তুই, চুপচাপ দেখে আমাকে উদ্ধার করবি।
আমি ও বললাম, এইযে আর একটা কথাও বের হবে না আমার মুখ থেকে। তুর্জ আর ওর মা আমার কান্না দেখে অষ্টমআশ্চর্যে পৌঁছে গেছেন। আমাকে দেখে তুর্জ কেবিনের সামনে টোলে বসে পড়ে। মা আমার মাথায় হাত দিয়ে বলে,, পাগলি মেয়ে, দেখেই বুঝা যায় কতটা স্নিগ্ধ নিষ্পাপ বাচ্চা মানুষ। তা কেমন আছো তুমি সারা?
,,,,,,,,,,,
স্কুলে গেছিলে আজ?আচ্ছা চলো তোমার বাবার কাছে নিয়ে যায়।
,,,,,,,,,,,,,,,
মামুনি উনাদের সাথে সালাম দিয়ে, বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন।আমার মৃত থুক্কু জীবিত শশুর মশাই ও কথা বলছেন। হঠাৎ করে নাকি বুকে ব্যাথা করছিলো। সাথে সাথে হসপিটালে নিয়ে এসেছেন। শশুর মশাই আমাকে জিজ্ঞেস করেন,,,মামুনি কেমন আছো??
,,,,,,,,,,,,,,,,
বাবার উপরে রাগ করে আছো?তোমাকে দেখতে যায় নি তাই??
,,,,,,,,,,,,,,,,,,
তুর্জ আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন। নতুন করে কি আমার রুপ গজিয়েছে। লুচ্চা ব্যাটা কোথাকার।আমার শশুর শাশুড়ী অনবরত এটা সেটা জিজ্ঞেস করে চলছে আমাকে। কিন্তু আমি কথা দিয়ে কথার বরখেলাপ করিনা তাই একদম চুপ।
মামুনি তখন রেগে আমাকে বলছে,, কি হলো? এটা কেমন অভদ্রতা? কথা বলছো না কেন??
নাহ্ এবার আর চুপ থাকা যায় না। তাই সরাসরি বলে ফেললাম। তুমিই তো আমাকে উনাদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছো। আমাকে চুপ থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে বললা একটু আগে, ভুলে গেছো এখনই।
মা মনে হচ্ছে ভুত দেখলো,, সবাই একে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,, মামুনি বলছে, আসলে হয়েছে কি ভাইজান,, সারা অন্য একজন কে আপনি ভেবে অনেক ইমোশনাল হয়ে পড়ে তাই, অতিরিক্ত কথা যেন না বলে তাই নিষেধ করেছিলাম। আসলে ছোট মানুষ সব সময় ভুলভাল কথা বলে,, কি বলতে কি বলে ফেলে সেই লজ্জায় বলছি চুপ থাকতে। আপনারা আবার আমাকে সহ ভুল বুঝবেন না প্লিজ!!
আমার শাশুড়ী তুর্জকে বললেন,, তুর্জ যা তো, সারাকে কিছু খাইয়ে নিয়ায়। স্কুল থেকে আসছে মেয়েটা। খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই।
উনি দাঁত কটমট করে বাইরে চলে গেছেন, সবাই আমাকে যাওয়ার জন্য জোরাজোরি করছে তাই আমি ও গেলাম। কেবিনের বাইরেই উনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি পাশাপাশি যেতেই বললেন,, খুব সখ আমার বাবাকে নাতি পুতি দেখানোর তাই না। তুমি কি জানো কিভাবে নাতি পুতির পয়দা হয়?
এটা আবার কে না জানে!! আমি সেই ক্লাস সিক্সে থেকেই জানি,,, ইইইইশস আবারও বেফাঁস কথা বলে ফেলছি।
উউফফ আল্লাহ _____
উনি আমাকে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসে সারাক্ষণ ফোনে গুতাগুতি করছে। মনে হচ্ছে দুনিয়ায় শুধু মাত্র উনার ফোন আছে আর কারো নাই। আমার যে খাওয়া শেষ সেই খেয়াল ও নাই উনার। অবশেষে আমি বাধ্য হয়ে উহুহুক উহুউ বলে গলা ঝাকুনি দিই।উনি তাকিয়ে বলেন খাওয়া শেষ?
হুম।
আচ্ছা চলো।
হসপিটালে ফিরার পরে আমার শাশুড়ী বলে,,
তুর্জ তুই সারাকে নিয়ে বাড়ি যা, আমি তোর বাবার সাথে আছি।
মানে সারা কে নিতে হবে কেন,, আমি একাই যেতে পারবো,, সারা ও বাড়িতে যাক।
না বাবা,, আমি জানি তুই কতটা তোর বাবা কে ভালোবাসিস। তুই একা বাসায় সব সময় অস্থির থাকবি চিন্তায়। পাশে কেউ থাকলে অন্তত কথা বলে একাকীত্ব কাটাতে পারবি।
মা এক কাজ করো, তুমি বাসায় যাও আমি বাবার সাথে আছি। কখন কি লাগে, বাইরে থেকে মেডিসিন নিয়ে আসাও লাগতে পারে। তাই আমি আছি তুমি যাও।
একটু আগে ডক্টর বলেছেন আর কোন মেডিসিন লাগবে না। আর কোন কথা না বলে, চুপচাপ বাসায় যা।
আমার ও মোটেও ইচ্ছে নাই উনার কথা বাসায় আসার তবুও আসতে হলো। বাসায় আসার পরে আমি উনার সাথে একটা কথা ও বলি নি।
রাতে সুয়ে আছি আমি আর তুর্জ সেই ফোনের ভিতর বিভোর হয়ে আছে।প্রচুর পেট ব্যাথা করছে। উনাকে বলতেও পারছি না আমার এমন হচ্ছে। মনে হচ্ছে পিরিয়ড শুরু হয়েছে। একটু নড়েচড়ে দেখি হ্যাঁ আমার ধারণা ঠিক। বেডশিটে দাগ বুঝা যাচ্ছে। এখন কি করি?
চলবে,,,