অবুঝ প্রেম-পর্ব ৩০

1
682

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ৩০
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
দুজনেই পানি পানি বলে চিৎকার করছে,, তাদের থেকে কিছুটা দূরে মিনারেল ওয়াটার বোতল রাখা কিন্তু তারা কোন ভাবে তা স্পর্শ করতে পারছে না। পুরো শরীর ঝলসে যাচ্ছে তাপে। তুর্জ তাদের থেকে কিছুটা দূরে রাকিবের ক্ষত স্থান গুলো তে লবণ ছিটিয়ে দিচ্ছে,, রাকিবের আর্তনাদ গুলো হচ্ছে,,
তোর পায়ে পড়ি তুই আমাকে একেবারে মেরে ফেল,, নয়তো আমাকে একটা সুযোগ দে আমি নিজেই নিজের জীবন শেষ করে দিবো। তবুও এমন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই।
প্রায় পাঁচ মিনিট রাকিবের ক্ষত স্থানে লবণ থাকার পরে সেগুলো ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে দেওয়ার অর্ডার দেওয়া হয়। তুর্জের আরেকটা ইশারার সাথে সাথে রীতি আর তনিমাকে তুর্জের সামনে নিয়ে আসে। সাদা ফর্সা দেহ একদম কালচে হয়ে গেছে। ইস্পাতের তাপে চামরার উপরের পাতলা আবরণ পুড়ে কালো হয়ে গেছে। কিন্তু ফোস্কা উঠে নি। তুর্জ তনিমাকে বলে,,
ডার্লিং,, আমার প্রেমের অনেক জ্বালা তাইনা? তুমিই তো বলতে, আমার যতরকম অত্যাচার আছে সব তুমি পরম সুখে সহ্য করতে পারবে। তাহলে এতো অল্পতেই এমন করছো কেন? যখন তোমার খুব কাছে থেকে অত্যাচার করবো তখন কি মেনে নিতে পারবে জান?
প্লিজ তুর্জ হয় মেরে ফেলো নয়তো ছেড়ে দাও। আমি নিজের ভুল স্বীকার করছি, প্লিজ ক্ষমা করে দাও। কথা দিলাম যতদিন বেঁচে থাকবো তোমার ত্রী-সিমানায় আসবো না।
মনে থাকবে তো? নাকি ছাড়া পাওয়ার পরে আবারও নিজের আসল চরিত্রে ফিরে আসবে?
জীবনে প্রচুর পাপ করেছি এবং মিথ্যা কথা বলেছি । কিন্তু আমি এতোটাও পাগল না যে, স্বয়ং মৃত্যুর কাছে থেকে দুরে গিয়ে আবারও মৃত্যুর কাছে ফিরে আসবো।আমি বা আমরা কেউ আর ভুল করেও তোমার আশেপাশে আসবো না। প্লিজ একটা বার ক্ষমা করে দাও।
সাথে সাথে সবাই হাত জোর করে ক্ষমা চাইতে শুরু করে। তুর্জ কোন কিছু না বলে সেখান থেকে বেড়িয়ে চলে আসে।
সারা বাসায় ফিরে গিফট বক্স খুলে দেখে ভিতরে, একটা সাদা চিরকুট, দু গাছা কাচের চুরি, তিনটা কলম,চারটা গোলাপ,পাঁচ টা বিভিন্ন রকম টিপের প্যাকেট, আর কিটক্যাট, কিন্ডার জয়, গ্যালাক্সি, স্নিকার্স, টোবলেরন এবং ডেইরি মিল্ক,, এই ছয় রকম চকলেট।
এমন অদ্ভুত রকম গিফট পেয়ে সারা অবাক হয়ে গেছে। তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছে এমন স্পেশাল চকলেট দেখে। সারা আস্তে আস্তে চিরকুট টা খুলে তার ভিতর কি লেখা আছে তা দেখে,,
প্রিয় সুভাষিণী
পত্রের শুরুতে আমার অর্ধ শুকিয়ে যাওয়া ভালবাসার প্রতিক লাল গুলাপের শুভেচ্ছা নিও। এই ভেবে মাথার চুল ছিড়ার দরকার নাই, যে ফুলটা অর্ধ শুকাইলো কেমনে! আসলে সেই সকাল থেকে ফুলটা নিয়ে তোমায় পত্র লিখছি। কবিতার খাতা, গল্পের পাতা, পড়ার টেবিল, বইয়ের তাক; সবটা জুড়েই এখন তোমার অনিবার্য অস্তিত্ব চরমভাবে দৃশ্যমান। তোমাকে সরাতে পারি গায়ের জোরে এমন শক্তি সত্যিই আমার নেই। নেশাতুর, লোভাতুর আমি, আমি অসহায়। তোমার দর্শন পেতে অপেক্ষায় পার করেছি জীবনের ২৩ টা বছর।
বড্ড হ্যাংলামো করছি? একদম না, ভাবলাম, সত্যি অনুভবটুকু চিঠিকে বলে যাই। যদি এ লেখা কখনও তোমার দৃষ্টির দাখিণ্য পায়। তোমার চিরসংকুচিত স্বভাবের কাছে আমার কথারা কেবল ফানুসেই হারায়।তাই কতটুকুন বললে যথার্থ হয় তা ভেবে পাই না- রইল না হয় কিছু কথা খুব গোপনে তোলা, রইল না হয় কিছু কথা দুঃখ বেদন ভোলা।
বিঃদ্রঃ দীর্ঘদিন সিঙ্গেল থাকতে থাকতে বাধ্য হয়ে প্ল্যান করেছিলাম, নবীন বরণ অনুষ্ঠানে আমার ভাগ্যে যাকে বরণ করার দ্বায়িত্ব পড়বে তাকেই প্রোপজ করবো। যদি সে মেয়ে হয়ে থাকে।
ইতি
সিঙ্গেল লাইফের ইতি টানতে চাওয়া অসহায় প্রেমিক।
সারা লাইফে প্রথম কোন প্রেম পত্র পেলো তাও আবার এমন অদ্ভুত টাইপের। সে হাসতে হাসতে এক হাতে সেই চিঠি আর অন্য হাতে চকলেট এর প্যাকেট নিয়ে পাখির মতো ডানা মেলে মৃদু পায়ে হালকা দৌড়ে রুম থেকে সিরির কাছে এসে আবারও রুমে যাচ্ছে। তারপর খুশিতে মাথার উপরে ওড়নার এক প্রান্ত নাচিয়ে নাচিয়ে গুনগুনিয়ে গান গায়ছে,,,
প্রেমে পড়েছে মন প্রেমে পড়েছে
অচেনা এক মানুষ আমায় পাগল করেছে ,,,,
ময়না ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিল, সারার এমন লাফালাফি ছোটাছুটি দেখে ভয়ে রান্না ঘরে গিয়ে তুর্জের মা কে বলে,,
ওও আম্মাগো আম্মা, ওই সারা বউমুনিরে মনে হয় ভুতে ধরচে,, আইসা দেইখা যান ক্যামনে ছোটাছুটি করে,,
তুর্জের মা তর্ককারী নাড়া কুন্তী হাতে নিয়ে বাইরে এসে দেখে, সারা একেক সময় একেক রকম করে চকলেট মুখে দিচ্ছে আর কেমন উদাস মনে মনের আনন্দে নাচানাচি করছে। তুর্জ গেট খোলা দেখে ভিতরে এসে দেখে মা এবং ময়না সারার বেলে ড্যান্স দেখছে। তুর্জ গটগট করে উপরে উঠে গেছে তবুও সারা সেই একই ভঙ্গিমায় নেচে চলেছে। তুর্জ সারার সামনে এগিয়ে গেছে তবুও সারা দেখতে পাচ্ছে না। দেখবেই বা কিভাবে,, বড় বড় বিখ্যাত জ্ঞানী মনিষীগনরা বলেন, চোখ বন্ধ করে কল্পনার জগতে ডুব দিতে হয়। তাই সারা চোখ বন্ধ করে কল্পনার জগতে ডুব দিয়েছে।
তুর্জ ফাটা কণ্ঠে বলে,, সকালেও মনে হলো আগের জন্মের স্বাভাব ভুলে গেছো কিন্তু না, বানর কখনো মানুষ হয় না তা তুমি আবারও প্রমাণ করে দিলে,,,,
উউফফ সারার সব চেয়ে দুর্বল যায়গা তে আঘাত করেছে তুর্জ। এতো সুন্দর কল্পনার জগত থেকে এভাবে বের হতে হবে ভেবেই এক বোতল পিওর প্রাণ ম্যাংগো জুস খেয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
কি হয়েছে? এভাবে লাফাচ্ছিলে কেন? আর চকলেট দিয়ে নাক মুখ মাখিয়ে কি করেছো এইসব?
চকলেট এর কথা বলতেই সারার মনে পড়ে তার হাতে এখনো ওই চিঠি আছে তাই সাথে সাথে ওড়নার ভিতরে হাত লুকিয়ে ফেলে। তারপর অভিমানী ভঙ্গিতে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
রাতের ডিনার শেষে তুর্জ অফিসের জমে থাকা কাজ গুলো করছে। সারার মন এক অদ্ভুত ফন্দি আঁটতে শুরু করেছে। বারবার তুর্জের এমন ইন্সাল্ট সহ্য করতে পারছে না। এবার এর শেষ দেখে ছাড়বো হুহ্। সারা বিছানায় সুয়ে সুয়ে তুর্জের ঘুমানোর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু এই কুমড়ো পটাশ মহব্বত আলির ঘুমানোর কোন আগ্রহ দেখতে পাচ্ছে না। তাই সারা প্ল্যান B কাজে লাগাতে চলে যায়।
সারা তুর্জকে বলে,, সারাক্ষণ এতো কাজ করতে করতে কেমন শুকিয়ে গেছেন তা খেয়াল করেছেন একটুও? চোখ দুটো গর্তে ঢুকে গেছে,, আসুন তো আর এইসব কাজ করতে হবে না। এমনই যা কিছু আছে তাতে আমাদের নাতিপুতিরা বসে বসে জীবন পার করতে পারবে। আসুন সুয়ে পড়ুন আমি আপনার মাথা টিপে দিচ্ছি।
হঠাৎ করে সারার এমন স্বামী ভক্তির কারণ সহজ কিছু না তা তুর্জ ঠিকই বুঝতে পারে কিন্তু কারণ টা কি হতে পারে তা আন্দাজ করতে পারছে না। সারা তুর্জের হাত ধরে টানতে টানতে বিছানায় নিয়ে গিয়ে কম্বল মুড়িয়ে সুইয়ে দেয়। তারপর কপাল টিপে দিতে দিতে বলে,, তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন। এতো রাত জাগা সত্যিই স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ,, দেখুন না কি হাল করেছেন আপনার।
তুর্জ বুঝতে পারে আসল খেলা লুকিয়ে আছে তার ঘুমের মাঝে। তাই তুর্জ আসতে আসতে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ সুয়ে থাকে তারপর নাক দিয়ে ইচ্ছে করে শব্দ করে নিশ্বাস ফেলতে আরম্ভ করে। তা দেখে সারা মনে লাড্ডু ফুটতে শুরু করেছে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে।
সারা খুব সাবধানে তুর্জের কম্বলের নিচে নিজেকে ঢুকিয়ে নেয়। তারপর নিজের হাত তুর্জের নাকের আশেপাশে কয়েকবার এদিকে সেদিকে করে ঘুরিয়ে দেখে সত্যিই তুর্জ ঘুমিয়েছে নাকি। তুর্জ এখনো কাপটি মেরে সুয়ে আছে।
এই মুহুর্তে সারার বুকের ঢিপঢিপানি বেড়ে গেছে। নিজের হাত তুর্জের কোমড়ে উপর দিয়ে তার পিছনে নিয়ে যায়। তুর্জ সারার দিকে হয়ে সুয়ে আছে। তুর্জের নিশ্বাস গুলো সারার গলার ফাকা যায়তে পড়ছে। এই মুহুর্তে ফিল টা অন্য রকম হচ্ছে সারার। কিন্তু এভাবে দমে গেলে চলবে না।
বারবার কথায় কথায় ইন্সাল্ট করে তাকে সেই অপমানের চেয়ে এই ফিল টা বড় নয়। এইসব ভেবে মনে জোর ফিরিয়ে আনছে সারা। তারপর সারা নিজের হাত আস্তে আস্তে তুর্জের গেঞ্জির ভিতর দিয়ে তার পিছনে নিয়ে যায়। এতে সারা আরো কিছু টা এগিয়ে আসে তুর্জের দিকে। তুর্জ এখনো বিভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে। সারা এবার শেষ পদক্ষেপ নিতে উদ্ধত হয়। নিজের হাতটা আস্তে করে তুর্জের টাওজারের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়।
তুর্জের মনে হয় আর অভিনয় করে ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব না। সারার হাত একটু একটু করে নিচে নেমেই চলেছে। তুর্জ এবার কোন কিছু না ভেবেই সারার ঠোঁট দুটো দখল করে নেয়। একটা ছেলের পক্ষে এমন সিচুয়েশনে নিজেকে কন্ট্রোল করা অসম্ভব। তুর্জের ও সেইম অবস্থা।
কিন্তু সারা পুরোটাই ঘাবড়ে গেছে। সে প্রাণ পণ চেষ্টা করছে তুর্জের থেকে মুক্তি পেতে। প্রায় ১০ মিনিট পরে সারার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। আর তখনই সারা বলে উঠে,,,
বিশ্বাস করেন, আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম আপনি আগের জন্মে মানুষ ছিলেন নাকি বানর ছিলেন। অন্য কিছু না,,,,,
চলবে,,,,,

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here