অবুঝ প্রেম – পর্ব 10

0
387

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ১০
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
তনিমার সামনে তুর্জের গায়ে হাত তোলা এবং এতো গুলো কথা বলাতে তুর্জ ভিষণ লজ্জা পায়। আমার দিকে আড়ি চোখে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে, আমি হয়তো ইচ্ছে করে বলেছি কাল রাতের কথা। উনি ব্যাগ গুলো রেখে গটগট করে চলে গেছেন। উনি আমাকে একা পেলে এটার শোধ নিবেন তা আমি জানি।
দুপুরের আগে আবারও তুর্জ আসেন। উনি বাবাকে সত্যিই ভিষণ ভালোবাসেন তাই এতো কিছুর পরে আবারও ফিরে এসেছেন। ডক্টর প্রথমে দুইদিন হসপিটালে থাকতে বললেও এখন বাবার অবস্থা উন্নতির জন্য বিকালে রিলিজ দিবেন বলেছেন।
মেডিক্যাল ফর্মালিটি শেষ করে সন্ধ্যার আগেই বাসায় চলে আসছি আমরা। তারপর সুযোগ বুঝে সেই বিখ্যাত ন্যাপকিন চেঞ্জ করে বাইরে চলে আসছি। বাবাকে রুমে সুইয়ে দিয়ে আমি পাশে বসে আছি। বাবা আমাকে এটা সেটা প্রশ্ন করছে আর আমি উত্তর দিচ্ছি। মা রান্না ঘরে গেছেন। এতোক্ষণ কারো সাথে বসে গল্প করা যায়? কেমন যেন বোরিং বোরিং লাগছে। তাই বাবাকে বললাম, আপনি এখন একটু চোখ বন্ধ করে থাকুন আর আমি মা কি করছে তা দেখে আসি।
রান্না ঘরে মাকে বলি কিছু হ্যাল্প করবো নাকি। তখনই মা রেগে বলেন, বাসায় এসেছো সন্ধ্যার আগে আর এখন বাজে ন’টা , ফ্রেশ হবে কখন, ড্রেস চেঞ্জ করোনি কেন? এক্ষুনি যাও, ফ্রেশ হয়ে এসো।
ওরেএ বাবা, আপনি তো বুঝবেন না, কেন রুমে যাচ্ছি না।রুমের আমার জম অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে কি ভাবছো, যাও বলছি।
আমি মনে মনে আল্লাহর নাম স্বরন করে উপরের পথে হাটা শুরু করলাম। এই উপরে মানে সেই উপরে না হুহ্।রুমের দরজার ফাঁকে এক চোখ দিয়ে ভিতরে উনি আছেন কি না দেখার চেষ্টা করি। যদি উনি না থাকেন তাহলে আমি ড্রেস টা চেঞ্জ করেই টাটা বাইবাই করে মায়ের সাথে ঘুমানোর বায়না ধরবো।
নাহ্ মনে হচ্ছে উনি নাই। আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে যেই দরজা খুলছি ওমনি জমের মুখ দেখে চমকে উঠি।
আয়া আ আপনি??
উনি সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় ফেলে দেন। আমি আগে থেকেই জানতাম আমাকে একবার বাগে পেলেই, চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাবেন।
দেখুন আমি কিন্তু মাকে কিচ্ছু বলিনি। মা নিজে থেকেই এইসব বলেছেন।
ওও তুমি বলো নি কিন্তু মনে হয় আমি বলেছিলাম তা-ই-না?? কে বলে তোমার মাথায় বুদ্ধি নাই। কুটনিপণার বুদ্ধি তো মাথার মধ্যে গিজগিজ করে তোমার?
দেখুন আমি পুরো টা বলছি আসলে কি হয়েছিল,,,,
চুপ একদম চুপ। কি ভেবেছিস তুই হ্যাঁ,, তুই যা বলবি আমি তাই বিশ্বাস করবো। তখন ওই মুহূর্তে তনিমা কে দেখে তুই সহ্য করতে পারিস নি বলে, যা নয় তা লাগিয়ে সবার সামনে আমাকে অপমান করে নিলি??তুই সারাজীবন চেষ্টা করলেও তনিমার যায়গা নিতে পারবি না। তুই কি জানিস ওই শার্ট টা আমার কত প্রিয় ছিলো? ওইটা তনিমার দেওয়া প্রথম গিফট। আর তুই ওইটা দিয়ে কি করছিস হ্যাঁ? তোকে তো আরো বেশি কিছু করার উচিত ছিল। নিহায়েত ভালো মানুষ তাই কিছু বলিনি। সবার সামনে অপমান হলে কেমন লাগে তা তুই খুব তারাতাড়ি বুঝতে পারবি।
শুধু শুধু এতো গুলো কথা শুনিয়ে গেলো, অথচ আমি এইসব কিছুই করিনি। মন খারাপ করে রুমের লাইট অফ করে সুইয়ে আছি। মা আমাকে ডিনারের জন্য ডাকতে এসেছেন কিন্তু আমার খিদে নেই বলে ফিরিয়ে দিলাম।
মুখে খিদে নেই বললেও পেটের ভিতর ছুচো দৌড়াদৌড়ি করছে। ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঘুম পাচ্ছে না। কারো দরজা খোলার শব্দ পেলাম। হয়তো তুর্জ এসেছে। আমি কোন রকম নড়াচড়া না করে আগের মতোই সুয়ে আছি। আমি ঘুমিয়ে গেছি ভেবে তুর্জ আমার মুখের সামনে আসে। তারপর ফ্ল্যাশলাইট অন করে আমার মুখের দিকে ধরে, ঠোঁটের কাটা দাগ গুলোতে হাত দিয়ে দেখছে। তারপর বাম হাতের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে সেখানের কি অবস্থা তা দেখলেন।
আচ্ছা আমার ছোট্ট মনে একটা প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে,, উনি যদি আমাকে ভালো না-ই বাসেন তাহলে চুপিচুপি কেন আমাকে দেখছেন। যাক, আপাতত দেখি উনি কি কি করেন। উনি আমার কম্বল টা ঠিক করে দিয়ে, পাশ ফিরে সুয়ে পড়েছেন।
আজ স্কুল শেষের দুইটা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আমরা সবাই মিলে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিতে যায়। তখনই দেখি তুর্জ তনিমাকে সাথে নিয়ে আসছে। আমি সবাই কে চোখের ইশারায় লুকিয়ে যেতে বলি।সাথে সাথে সবাই বই খাতা যার সামনে বা হাতে যা ছিলো তাই দিয়ে মুখ ডেকে রাখি।
তনিমা তুর্জের খুব পাশাপাশি বসেছে, তনিমা তুর্জকে বারবার বলছে,,,
তুর্জ বাবু তুমি কিন্তু এখনো ওই মেয়েটাকে ফাইনালি ডিভোর্স দাওনি । আমার ফ্যামিলি থেকে আমার বিয়ের জন্য প্যারা দিচ্ছে। কিন্তু আমি তোমার কথা বলতে পারছি না। আর কতদিন তুমি এইসব নিছক খেলার মধ্যে থাকবে। অনেক হয়েছে এবার অন্তত লাইফের প্রতি সিরিয়াস হও প্লিজ। ঝেড়ে ফেলো ওই মেয়েটাকে,,,,,,,
তখনই মিঠি আমাকে বলে,,কিরে তোদের রোমান্টিক বিয়ের মুভিতে এই খলনায়িকা আছে তা আগে বলিস নি কেন?
রাহুল বললো,, ভাগ্য ভালো উনি আমার সিনিয়র নয়তো এই হাফপ্যান্ট পড়া বেটিকে বুঝিয়ে দিতাম আমার বান্ধবীর সংসার ভাঙার শাস্তি কাকে বলে।
কিরে এখনো তুই এখানে মুখ ডেকে বসে আছিস কেন,, ইন্ডিয়ান সিরিয়াল গুলোতে দেখিস না,,কিভাবে এইসব খারাপ মেয়েদের খপ্পর থেকে নিজের বর কে উদ্ধার করে। যা তুই ও যা,, এক্ষুনি ওই অর্ধনাঙ্গু বেটিকে এক থাপ্পড় মেরে তোর বর কে উদ্ধার করে চলে আয়।
হ্যাঁ যা যা, আমিও আছি তোর পিছনে।
আমাকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে সামনে পাঠালো সবাই আর আমিও বেকুবের মতো তুর্জের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।আমাকে দেখার সাথে সাথে তুর্জ বলে,,কি ব্যাপার, তোমার তো স্কুল আরো ৩০ মিনিট পরে ছুটি হবে তাহলে তুমি এখন এখানে কেন??
ওদের কথা মতো এতো বড় একটা মেয়ের গালে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে দিয়ে বললাম, আজ এখানে না আসলে তো আপনাদের এইসব কু-কীর্তির দৃশ্য দেখতে পেতাম না। আর এই হাফপ্যান্টয়ালী কি বললি তুই? আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তোকে বিয়ে করবে?তোদের মতো মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে পার্কে রিসোর্টে মজা নেওয়া যায় শুধু বিয়ে হয়েছে ঘরের বউ করা যায় না।
(ভাগ্যিস কোন একটা নাটকের ডায়লগ মুখস্থ ছিলো, মনে মনে বললাম )
তুর্জ সাথে সাথে আমাকে পালটা থাপ্পড় মারে আর সবার সামনে বলে, ছোট বলে কিছু বলি না দেখে বেশি বেড়ে গেছো? কোথায় কার সাথে কি আচরণ করতে হয় সব ভুলে গেছো?
কাল দিনের মধ্যে তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে তনিমাকে বিয়ে করে নিবো। রেস্টুরেন্টে হঠাৎ করে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আশেপাশের মানুষেরা আড় চোখে আমাদের দেখছে। তুর্জের এমন জবাব শুনে তনিমা হয়তো আরো সাহস পেয়েছে, তাই সেও আমাকে থাপ্পড় মেরে বলে,,
শুধুমাত্র তুর্জের কথা রাখতে তোর মতো পুচকে মেয়েকে এতো দিন কিছু বলিনি। রাস্তার মধ্যে চার পাঁচজন মিলে তোর শরীরের মজা নিয়েছে সেই নোংরা শরীরের মোহে তুর্জকে বশ করার চেষ্টা করছিলি তা আমি ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারি নি। কি বললি আমাকে?? রেস্টুরেন্টে পার্কে আর রিসোর্টে আমাকে নিয়ে মজা করে?? আর তোকে নিয়ে তো রাস্তায় আর ব্রিজের নিচে সবাই মজা করে।
আমার উত্তর দেওয়ার মতো কোনো কথা জানা নেই। খুব করে চেয়ে ছিলাম তুর্জ অন্তত নিষেধ করুক কিন্তু আমার ধারণা ভুল, তুর্জ একবারও নিষেধ করে নি।
তাই বাধ্য হয়ে, আমি তুর্জের শার্টের কলার ধরে ঝাকিয়ে বলি,, কিচ্ছু বলবেন না আপনি?? দুনিয়ার কেউ জানুক আর না জানুক আপনি তো জানেন সেদিনের প্রকৃত সত্যটা? কিভাবে চুপ করে আছেন আপনি? একটুও কি লজ্জা করছে না আপনার, আপনার বিয়ে করা স্ত্রীকে অন্য একটা মেয়ে যা নয় তা বলছে, তাও আবার আপনার সামনে? কি ভেবেছেন আমাকে হুম? যখন চাইবেন বিয়ে করবেন আবারও যখন চাইবেন ডিভোর্স দিবেন। দেশে এখনো আইন কানুন আছে, চেষ্টা করতে পারেন আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কিন্তু সফল হবেন না,, কারণ আপনি বাল্যবিবাহ করেছেন। ঘৃনা করি আমি আপনাকে,,শুনেছেন ঘৃণা করি ঘৃণা। হ্যাঁ অনেক ভালোবাসতাম আপনাকে,, জীবনের প্রথম যাকে ভালোবেসেছি আল্লাহ যেভাবেই হোক তার সাথে আমার জীবন বেধে দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে,, আমি নিজে থেকেই আপনাকে ডিভোর্স দিবো,, মুক্ত করে দিবো আপনাকে।
পুরো বিকাল এই কথা গুলো মনে করে কান্না করেছি। এখন তুর্জ যখন বাসায় থাকে তখন ওর সামনে যায় না। এক্সাম শেষে দূরের কোন কলেজে ভর্তি হয়ে আমি নিজেই তুর্জকে ডিভোর্স দিবো ভেবেছি। এক সাথে এক রুমে থাকতে গেলে মাঝে মাঝে দুই একটা কথা হয়। কিন্তু সেগুলো নিছকই প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া অন্য কিছুই না।
আজ আমি গোসল শেষে চুল আঁচড়ানোর জন্য চিরুনি নিচ্ছিলাম। ঠিক তখনই না চাইতেও চোখ দুটো তুর্জের ল্যাপটপে যায়। তুর্জ আর তনিমার ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ছবি ভেসে আছে। ছিহ্ কতটা খারাপ এরা ভাবতেই গা গুলিয়ে আসছে। তুর্জ ল্যাপটপ অফ করে ফোন হাতে বাইরে চলে যায়। এইসব আজাইরা বিষয় নিয়ে মন খারাপ না করে চিল মুডে থাকি ভেবে চিরুনি নিয়ে বাইরের বারান্দায় গেলাম। নিচে তুর্জ কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। ওকে দেখে বুঝা যাচ্ছে কোন সিরিয়াস বিষয় নিয়ে রেগে রেগে কথা বলছেন।
অন্য মনষ্ক হয়ে মাথায় চিরুনি দিতেই হাত থেকে নিচে পরে গেছে। আমি চিরুনি নিতে নিচে আসতেই তুর্জের কণ্ঠ শুনতে পায়,,
তনি এখনো বলছি, ভালো হয়ে যাও,কেন এইসব করছো,,তুমি জাস্ট আমাকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছো। তুমি এইসব করবে বলে প্ল্যান করে ওইদিন আমাকে ড্রিংক করিয়েছো ।
বুঝেছি,, তনিমা কোন কারণে হয়তো তুর্জকে ব্ল্যাকমেইল করছে ওই ছবি দিয়ে। যা করে করুক, যেমন কর্ম তেমন ফল। আমি আমার কাজে মন দিলাম। তুর্জ উপরে এসে রেডি হয়ে আবারও কোথায় যেন চলে গেছে।
রাত অনেক হয়েছে অথচ এখনো তুর্জ বাসায় আসে নি। মা বাবা সবাই বারবার ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু কোন রেসপন্স নাই। সবাই অনেক চিন্তিত। আমি বললাম হয়তো কোন কাজে আটকে গেছেন তাই আসতে দেরি হচ্ছে। অফিস, ম্যানেজার সহ সবার কাছে ফোন করেন বাবা। কিন্তু কেউ কোন হদিস দিতে পারে নি।
রাত প্রায় ২ টার দিকে এলোমেলো চুলে ব্যাজার ঘাড়ে তুর্জ বাসায় আসে। বারবার সবাই জিজ্ঞেস করছে, এতোক্ষণ কই ছিলি, কেন ছিলি?
তুর্জ চুপচাপ উপরে চলে গেছে। আমি মা বাবা কে ঘুমাতে বলে রুমে চলে আসছি। তুর্জ জুতা পড়া অবস্থায় সুয়ে পড়েছে। আমাকে রুমে আসতে দেখে তুর্জ বলে,,, এতোক্ষণ ঘুমাও নি কেন??
আপনি বাসায় নাই তাই মা বাবা খুব টেনশন করছিলেন, আর আমি তাদের এই অবস্থায় রেখে কিভাবে ঘুমায়?
আচ্ছা সারা!! তুমি কি টেনশন করেছিলে?
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here