বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব 01+02

0
909

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ০১+০২
#লিখাঃ মনা হোসাইন
স্কুল ড্রেসের সাদা স্কাটে পিরিয়ডের ছোপ ছোপ দাগ নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আদিবা। চোখ মুখে ভয়ের ছাপ কারন তার সামনেই হাতের মুট শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে তার চাচাত ভাই আদি।আদি আদিবার চেয়ে মাত্র একবছরের বড় কিন্তু আদিবা তাকে যমের মত ভয় পায় অবশ্য ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারন আছে । আদিবাকে সমসময় আদির কথা শুনে চলতে হয়। কথার একটু এদিক ওদিক হলেই ভয়ংকর শাস্তি পেতে হয়। যদিও আজ সে কোন ভুল করে নি তবু আজকেও তাকে শাস্তি পেতে হবে মনে হচ্ছে।
আদি চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে এমন একটা ভাব যেন পারলে এখনী খুন করে ফেলে আদিবাকে। কিছুক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে চোখ মুখ শক্ত করে আদি প্রশ্ন করল,
আদিত্যঃ কি রে কি বলেছিলাম তোকে?আমার সাথে স্কুলে আসবি চুপচাপ ক্লাস করবি তারপর আবার আমার সাথে ফিরে যাবি এর বাইরে তুই কিচ্ছু করবি না। বলি নি আমি?(ধমক দিয়ে) যেকোন দরকারে আমার ক্লাসে গিয়ে বলবি আমি সবকিছু করে দিব। তোকে আমি ক্যান্টিনে পর্যন্ত যেতে দেই না. নিজে তোর ক্লাসে গিয়ে টিফিন দিয়ে আসি। তবুও তুই ব্যাথা পেলি? কী করে পেলি বল।ক্লাস বাদ দিয়ে কি করেছিলি? ছুটাছুটি না করলে তো ব্যাথা পাস নি তাই না? বলেই এগিয়ে আসল আদি
সাথে সাথে ভয়ে পিছিয়ে গেল আদিবা। আদির দিকে তাকাতে পারছে না সে নিচে তাকিয়ে চুপ করে আছে,
আদিত্যঃ ব্যাথা পাওয়ার সময় মনে ছিল না? এখন ভয় পাচ্ছিস কেন? জবাব দে ব্যাথা পেয়েছিস কি করে…?
আদির এই প্রশ্নের কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না আদিবা। ক্লাস নাইনে পড়া একটা মেয়ে কি করে তার প্রায় সমবয়সী ভাইকে বলবে পিরিয়ডের কথা? তবে প্রশ্নের উত্তর না দিলে আদি থামবে না সেটাও সে জানে তাই কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে জবাব দিল,
আদিবাঃ ব্যাথা পাইনি ভাইয়া…
উত্তর দেয়ার সাথে সাথে আদিত্য আদিবার গালে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে বলে উঠল,
আদিঃ এমনি এমনি ব্লিডিং হয়? তুই এখন আমার সাথে মিথ্যে বলাও শুরু করেছিস। আজ একবার বাসায় চল তারপর তোর কি অবস্থা করি দেখে নিস।
বলেই টানতে টানতে নিয়ে বাইকে উঠতে বলল। গালে হাত দিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলতে ফেলতে আদির পিছনে বসল আদিবা।
থাপ্পড়ে আদিবা ব্যাথা পেয়েছে বেশ ভালই ব্যাথা পেয়েছে কিন্তু আদিত্যর মুখে মুখে কথা বলার সাহস তার নেই।
আদিত্য চোধুরী ডাক নাম আদি। আদিবার বড় চাচার ছেলে। ক্লাস টেনে পড়ে। আদিত্য তাদের পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী। পরিবারে ৩ চাচার ৫ মেয়ের মধ্যে ওই একমাত্র ছেলে তাই বয়সে ছোট হলেও পারিবারিক সব ব্যাপারে তার মতামতের গুরুত্ব দেয়া হয় সবার আগে। সবার চোখের মণি যেন সে। আদিবার ২ চাচা আদিত্যের বাবা বড় আর ছোট চাচা দেশের বাইরে থাকেন। ৩ ভাইয়ের মধ্যে আদিবার অবস্থা একটু খারাপ ছিল তাই আদিবারা এতদিন গ্রামে থাকতো কিন্তু হটাৎ বাবা মারা যাবার পর থেকে আদিবা আর তার ছোট বোন সাদিয়া আদিত্যের বাসায় থাকে তবে আদিবার মা গ্রামে থাকেন। আদিত্যের বাসার সবাই আদিবাদের ভালবাসেন তবে তাদের মধ্যে আদিত্য আদিবাকে একটু বেশিই আদর করে আর এই আদর করাটাই আদিবার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।অতিরিক্ত কেয়ারিং যেটাকে বলে। খেতে দেরি হলে বকা। ঘুমাতে দেরি হলে বকা এমন কি আদিবা কার সাথে বন্ধুত্ব করবে আর কার সাথে করবে না সেটাও আদি সিধান্ত নেয়। বাসার কেউ এতে বাধা দেয় না কারন বাসার মোটামুটি সবারেই ইচ্ছে আদি আদিবা বড় হয়ে জীবনসংগী হোক।
আদি আদিবাকে নিয়ে বাসায় ফিরে দেখল বাসায় কেউ নেই। আদিত্যের বোন অরিন আর সাদিয়া স্কুলে গিয়েছে তাদের নিয়ে গেছেন আদিত্যের মা আর বাবা অফিসে তাই বাসা খালি।
আদিত্য বাইক থেকে নেমেই আদিবাকে টানতে টানতে নিয়ে বাসায় ঢুকল। আদিবা জানে এখন তাকে শাস্তি পেতে হবে,কঠিন শাস্তি তাই নিরুপায় হয়ে বলতে লাগল,
আদিবাঃ আমি ব্যাথা পাইনি ভাইয়া ছেড়ে দাও প্লিজ আর কখনো এমন হবে না।
আদি আবারো চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
আদিঃ এই এক কথা শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে গেছে বুঝেছিস? তুই ভাল কথার মেয়ে না তাই আজ শাস্তি তোকে পেতেই হবে। একবার শান্তি পেলে ২য় বার এমন করার সাহস হবে না।
বলেই আদিবাকে নিয়ে গিয়ে বাথরুমে আটকে দিল আদিত্য।আদিবা এবার কেঁদেই দিল।কাঁদতে কাঁদতে বলল,
আদিবাঃ ভাইয়া আমি সত্যি ব্যাথা পাইনি। আমাকে আটকে রেখো না প্লিজ।
বলার সাথে সাথেই দরজা খুলে দিল আদিবা চোখ মুছে আদির দিকে তাকাল ভাবল হয়ত ক্ষমা করে দিয়েছে কিন্তু আদিবার সেই আশায় জল ঢেলে দিয়ে আদিবার হাতে ব্যান্ডেজ,এন্টিসেপটিক আর জামাকাপড় দিয়ে বলল,
আদিঃ ভাল করে বেন্ডেজ করে জামা বদলে নিবি। আমিই করে দিতাম কিন্তু এমন জায়গায় ব্যাথা পেয়েছিস সেটা সম্ভব না তাই নিজেই করে নে। আমি স্কুলে যাচ্ছি সামনেই এক্সাম তাই স্কুল মিস দেয়া যাবে না।ম্যাডাম বলেছে তোকে বাসায় রেখে যেন ফিরে যাই তাই আপাতত ২ ঘন্টা তুই বাথরুমেই থাকবি আমি স্কুল থেকে ফিরে খুলে দিব। বলেই দরজাটা লক করে দিয়ে আদিত্য বেরিয়ে গেল।
আদিবা ভিতর থেকে চেঁচাতে লাগল,
-আমাকে রেখে যেও না প্লিজ ভাইয়া.এখানে থাকব কি করে? যেও না প্লিজ।
কে শুনে কার কথা আদি বাইরে চলে গেল।
এদিকে, প্রায় ১ ঘন্টা পর আদিত্যের মা মিসেস মিনা বেগম বাসায় ফিরলেন সাথে অরিন আর সাদিয়াও ফিরেছে। অরিনের রুম আদির রুমের পাশেই তাই রুমে ঢুকতেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল অরিন সাথে সাথে দৌড়ে মায়ের ঘরে গেল।অরিনের অবস্থা দেখে মিনা বেগম বলে উঠলেন,
মিনা বেগমঃ কি হয়েছে অরিন..? এভাবে ছুটে আসলি কেন?
অরিন হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,
অরিনঃ বাসায় তো কেউ নেই তাই না মা? ভাইয়া আর আদিবা আপু স্কুলে তাহলে ওই রুমে কে…?
মিনা বেগমঃ ওই রুমে মানে..?
অরিনঃ ভাইয়ার রুমে কে যেন কাঁদছে মা আমি স্পষ্ট শুনেছি। কিন্তু রুম তালা বন্ধ।
মিনা বেগমঃ কি যাতা বলছিস? আদিবা আদি ২ জন একসাথে স্কুলে গেল এখনো ফিরার সময় হয় নি তাছাড়া আমরা তালা খুলে ভিতরে ঢুকলাম. একে তো বাইরে তালা থাকেই তাছাড়া
আদি বাইরে যাওয়ার সবসময় নিজের ঘর তালাবন্ধ করে যায় তাহলে ওর রুমে কে থাকবে? তুই হয়ত ভুল শুনেছিস।
এই সেই বলে অরিনকে শান্তনা দিয়ে নিজের ঘরে পাঠিয়ে দিলেন মিনা বেগম।এবার আর কান্নার শব্দ পায় নি তাই এই নিয়ে আর কেউ বাড়াবাড়ি করল না।
বেপরোয়া ভালবাসা
পর্বঃ০২
লেখনীঃ মনা হোসাইন
আদিবার সাথে আজ প্রথমবার এমন হয় নি। বুঝ হওয়ার পর থেকেই সে দেখে আসছে ভাইয়া নামক ব্যাক্তিটি তার সাথে এমন করে।
সেদিন বন্ধুদের সাথে ছাদে বসে ছবি তুলছিল আদিবা হটাৎ করে আদি কোথা থেকে এসে সবার সামনে থেকে তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে ছাদের চিলেকোঠায় ঢুকে পড়ে। তারপর আদিবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদিবা পরনে থাকা শাড়িটা টেনে খুলে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ছিড়ে ফেলেছিল।
সেদিনো ভয়ে কান্না করেছিল আদিবা। কিন্তু আদির সেদিকে কোন খেয়াল ছিল না। তার যেন কোন হুঁশ ছিল না সে কি করছে।
আদিবা কোনো উপায় না আদিকে বলেছিল,
– কি করছো ভাইয়া,আমার লাগছে। ছাড়ো প্লিজ শাড়িটা ছিড়ে ফেলছো কেন? প্লিজ শাড়িটা ছাড়ো আম্মু আমাকে মারবে।
আদিবা একমনে বলেছিল কিন্তু তার কথা যেন আদির কানেই যায় নি। সে আদিবার দিকে তাকিয়ে আরো অস্থির হয়ে টান দিয়ে পুরো শাড়িটা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে রক্তচোখে দিকে তাকিয়ে বলেছিল,
– “শাড়ি পরেছিস কেন..?
-” ভাইয়া আজ পহেলা ফাল্গুন…..
-“তো..? ফাল্গুন বলে শাড়ি পরতে হবে এমন কোথাও লিখা আছে?তোর সাহস কি করে হয় শাড়ি পরার?আমি তোকে শাড়ি পরার অনুমতি দিয়েছিলাম?
-“ভাইয়া সবাই তো পরেছে…
-“আদি সবার ভাই না শুধু তোর ভাই বুঝেছিস? তাই সবার অনুমতি না লাগলেও তোর লাগবে।
-“অরিন আপু সাদিয়া ওরাও তো পরেছে ভাইয়া…
-“চুপ,একদম চুপ সবাই পরলেও তুই পরবি না। আমার কথার বাইরে তুই কিছুই করবি না বুঝেছিস?
এ নিয়ে আর একটা কথা বললে এই শাড়ী তোর গলায় পেচিয়ে এখানেই ঝুলিয়ে দিব সবাই ভাব্বে সুসাইড করেছিস বুঝেছিস?
– আ আমি কয়েকটা ছবি তুলেই খুলে ফেলতাম ভাইয়া..
-” তুই মাত্র ক্লাস নাইনে পড়িস এখনো এতটা বড় হোস নি যে শাড়ি পরে ঢং করবি।আর এসব বান্ধুবীদের বাসায় এনেছিস কেন? বান্ধুবী মানেই কুটনীতিবীদ এসব মেয়েদের থেকে দূরে থাকবি বুঝেছিস..??
আর সহ্য করতে না পেরে আদিবা কেঁদে দিয়ে বলল,
“- আমি এতটাও ছোট নেই ভাইয়া ক্লাস নাইনে পড়া একটা মেয়ের পরনের শাড়ি যে এভাবে খুলে নেয়া যায় না সেটা কি তুমি বুঝো না?
আদি রক্তচক্ষুতে তাকালো আদিবার দিকে। ধমক দিতে গিয়েও থেমে গেলো। নিমেষেই অসহায় ভঙ্গিতে শাড়ীটা আবার কুড়িয়ে এনে আদিবার কোমড়ে গুজতে গুজতে বললো,
“” এভাবে কাদিস না,। মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা। তোর ভুল গুলো যেমন আমাকে কষ্ট দেয় তেমনি তোর কান্নাও আমাকে বড্ড জ্বালায়।
আদির কথা আদিবার কানে ঢুকলেও মাথায় ঢুকল না ও কি বুঝাতে চাইল তাও বুঝল না।
আদি জোরে ধমক দিয়ে বলল,
-“কান্না থামা…কিরে তোকে কান্না থামাতে বললাম তো কথা কানে যায় না..??
সেদিন আদির মা চলে আসায় আদিবা রেহাই পেয়েছিল।
এরপর যেদিন আদিবাকে স্কুলে ভর্তির কথা হল সেদিন আদির বাবা মানে বড় চাচা আদিবাকে প্রশ্ন করেছিল,
-“সে কোন স্কুলে ভর্তি হতে চায়
আদিবা উত্তর দিয়েছিল,
-“অরিন মানে আদির বোন যে স্কুলে পড়ে সেই স্কুলে।
কিন্তু আদির তাতেও আপত্তি ছিল। সে চেয়েছিল আদিবা যেন তার স্কুলে ভর্তি হয় আর তাই আদিবাকে হুমকি দিয়েছিল যদি সে অরিনের স্কুলে ভর্তি হয় তাহলে তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
উপায় না পেয়ে আদিবা, আদির স্কুলেই ভর্তি হয়। তারপর থেকে আদিবার জীবন থেকে স্বাধীনতা নামক শব্দটি হারিয়ে গিয়েছে। স্কুলে কোন মজা করা তো দূর ক্লাসের বাইরেও যেতে পারে না সে।
আদিবা যাই করে তাতেই আদির সমস্যা আদিবা কোন কারনে ব্যাথা পেলে সেটাও অন্যায়। আজ সে ব্যাথা পায় নি কিন্তু ব্লাড দেখে আদি ভেবেছে আদিবা ব্যাথা পেয়েছে আর শাস্তিস্বরুপ বাথরুমে বন্ধ করে রেখে চলে গিয়েছে।
প্রায় ২ ঘন্টা পর আদি বাসায় ফিরল। আদি একা ফিরেছে দেখে আদির মা বেশ অবাক হলেন কারন তিনি জানেন পৃথিবী উল্টে গেলেও আদিবাকে একা রেখে আদি ফিরবে না।
-“আদি তুই একা কেন…? আদিবা কোথায়?
-” যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে
-“এটা কেমন উত্তর…??
-” ও আগেই বাসায় রেখে গিয়েছিলাম
-“মানে কী বাসায় ফিরে ত দেখলাম না।
-“আমার রুমে আছে..
কথাটা শুনে আদির মায়ের আত্মাটা ধ্বক করে উঠল। তারমানে অরিন যা বলছিল তাই ঠিক আদির ঘরে আদিবা কাঁদছিলো..?
আদির মা অস্থির হয়ে প্রশ্ন করলেন,
-“মানে কী…?? কি করেছিস ওর সাথে..? আদি দিন দিন তুই সব সীমা পেরিয়ে যাচ্ছস।
বলেই একটানে চাবি নিয়ে দৌড়ে গেলেন আদির ঘরে। রুমে আদিবাকে না পেয়ে ডাকতে লাগলেন।
আদিবা বাথরুম থেকে সাড়া দিতেই ছুটে গেলেন। আদিবা কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। আদভেজা অবস্থায় ফ্লোরে বসে আছে দেখে আদির মা পুরোপুরি হতবাক হয়ে গেলেন।
আদিবাকে তুলে ঘরে নিয়ে আসলেন ততক্ষনে আদিও ঘরে এসেছে আদির মা মিনা বেগম ঘরে এসে আদিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঠাস করে থাপ্পর বসিয়ে দিলেন।
তারপর বললেন
-“তুই কী মানুষ…?? এমন অমানুষের মত কাজটা কী করে করলি।আজকে তোর বাবা বাসায় আসুক তারপর তোর হবে..
আদির ফর্সা গালে থাপ্পরের দাগ পড়ে গিয়েছে হয়ত ব্যাথাও পেয়েছে কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই সে একমনে আদিবার দিকে তাকিয়ে আছে।
সে তার মাকে অগ্রাহ্য করে আদিবার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
-“তুই ভিজেছিস কি করে..? আর ড্রেস চেঞ্জ করিস নি কেন?
আদিবা ভয় পেয়ে আদির মায়ের আড়ালে গিয়ে লুকাল। সাথে সাথেই আদির মা বলে উঠলেন,
-“থাম অমানুষের বাচ্চা, এখন আর দরদ দেখাতে হবে না।
-“মা আমি ওকে এমনি এমনি বাথরুমে আটকে রাখিনি ও স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা বাদ নাচানাচি করে আর তা করতে গিয়েই ব্যাথা পেয়েছিল তাই শাস্তি দিয়েছি যেন ভবিষ্যতে আর এমন করার সাহস না পায়। তুমি জানো কত ব্লিডিং হয়েছিলো…??
-“ব্লিডিং…?? আদিবা ও কি বলছে তুই ব্যাথা পেয়েছিস..?
আদিবা ফিসফিস করে মিনা বেগমকে কি যেন বলল। মিনা বেগম আর কিছু না বলে আদিবাকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
তার কিছুক্ষন পর তিনি একটুকরো কাগজ আর কিছু টাকা নিয়ে আদির ঘরে আসলেন। আদি মুখভার করে বসে আছে দেখে মিনা বেগমের মন খারাপ হল কারন এই প্রথম বার তিনি আদির গায়ে হাত তুলছেন। আদি ছোট থেকেই বুদ্ধিদীপ্ত সচারচর অন্যায় করে না শুধু আদিবার সাথেই একটু বাড়াবাড়ি করে। যতই হোক একমাত্র ছেলে
তাই মা বাবা তাকে সবসময় একটু বেশিই আদর করেন তাই অন্যায় করলে শাস্তি দিলেও অপরধ বোধ করেন।
মিনা বেগম এসে ছেলের পাশে বসলেন তারপর কাগজের টুকরো টা ছেলের হাতে দিয়ে বললেন,
-“ফার্মেসি থেকে নিয়ে আয় গিয়ে..
আদি অস্থির হয়ে প্রশ্ন করল,
-“অল্পই তো ব্লাড ছিল তাহলে ওষুধ লাগবে কেন মা? তারমানে কি ও অনেক বেশি ব্যাথা পেয়েছে…?ওর কোন ক্ষতি হবে না তো মা..? ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই?
-“এত অস্থির হওয়ার মত কিছু হয় নি। দেখ আদি তুই আদিবাকে আদর করিস সেটা আমরা সবাই জানি কিন্তু তুই কি বুঝতে পারছিস না তোর এই অতিরিক্ত কেয়ার আদিবার কষ্টের কারন হচ্ছে।
-“মা যে বিষয়ে আমাকে বলে লাভ নেই সেটা কেন বলতে আসো। আমি এর আগেও বলেছি আমি আদিবার ব্যাপারে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। হতে পারে এটা আমার মানুষিক সমস্যা। এতে আমার কোন হাত নেই।
বলেই কাগজ টা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল আদি।
-“স্কুল ড্রেস টা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে যা।এখনী আনতে হবে না।
-” কি বলছো মা আদিবা ব্যাথা পেয়েছে আর আমি এখন খাব..?
-“ও ব্যাথা পায় নি আদি। তোকে যেটা কিনতে বললাম সেটা কিনার পর প্যাকেটের গায়ের লিখা গুলো ভালভাবে পড়বি ঠিক আছে..?
-“কিসব যে বলছো কে জানে ব্যাথা না পেলে ওষুধের দরকার হয়..? যাইহোক আমি যাব আর আসব বলেই আদি বেরিয়ে গেল।
মিনা বেগম ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলেন এই আদির বেপরোয়া ভালবাসার শেষ কোথায়..??


LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here