#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ১২
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
কুত্তার বাচ্চা তোর চোখ তুলে নিবো, তুই আর একবার সারা দিকে তাকালে। তুই যেই জিভ দিয়ে এই কথা গুলো বললি আল্লাহর কসম ওই জিভ কেটে কুত্তা দিয়ে খাইয়ে দিবো।
আরে যাহ্ যাহ্ যা করার পরে করিস,, আগে আমি মজা নিই। তওনিইমায়া ডার্লিং তুমি কি মন খারাপ করছো?
আরে না,, আমি আরো খুশি হবো, যদি তুমি আমার তুর্জ বাবুর সামনে মজা নাও।
ওয়াও, আমার মাথায় আসেনি এমন আইডিয়া। আমার কিন্তু আর ধৈর্য্য নেই,,
উনি কেমন যেন দৃষ্টিতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। আমি পিছনে যাচ্ছি। তুর্জ বাধন খোলার জন্য নিজের সব শক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে। আমি হাতের সামনে একটা ভাঙা কাঠের টুকরো পাই,, সেটা হাতে নিয়ে উনাকে আঘাত করতে চাই কিন্তু ব্যার্থ হলাম। উনি আমার হাত থেকে কাঠের টুকরো নিয়ে বললেন, সুন্দরীর হাতে এইসব মানায় না,,,
তুর্জ বারবার শাসিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোনভাবে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলছি তা বুঝতে পেরে আশেপাশে তাকিয়ে রাহুল কোথাও আছে নাকি দেখার চেষ্টা করছি। না রাহুল নেই। তাহলে কি বিপদে বন্ধু চেনা যায় কথা টা কি সত্যিই। আজ আমাদের এমন পরিস্থিতিতে আমাদের এভাবে রেখে চলে যেতে পারলো ওরা। তনিমা তুর্জের মুখের সামনে এসে বলছে, বাহ্ এতো প্রেম বউয়ের জন্য? অথচ তুমি বলতা তুমি তাকে সহ্য করতে পারো না। তা তলে তলে কত রাত ছোট মেয়ের সাথে রোমান্স করছো?
ওই লোকটা আমাকে খুব বাজে ভাবে স্পর্শ করতে আসলে আমি তার হাতে কামড় বসিয়ে দিলাম। উনি আমাকে একটা থাপ্পড় মারেন আর আমি পরে গিয়ে মাথা কেটে যাই। সাথে সাথে উনি আবারও আমার কাছে আসে। তুর্জ আমাকে এই লোকের নোংরা ছোবল থেকে রক্ষা করতে প্রাণপন চেষ্টা করছে কিন্তু কোনভাবেই এই শক্ত বাধন থেকে বেরুতে পারছে না।
মনে মনে বিরক্ত লাগছিলো,, কেন তুর্জ মুভির নায়কের মতো চেয়ার টেবিল ভেঙে, লোহার শিকল ছিড়ে আমাকে রক্ষা করতে আসে না। মনে মনে ভাবতাম আমার ক্র্যাশ নায়কের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
উনি আমার উপর নিজের অধিকার ফলাতে চেষ্টা করছে আর আমি রেগে তুর্জকে বললাম,,, কিসের সিক্সপ্যাক বডি আপনার হুম?? যদি এমন বিপদের সময় সব কিছু ভেঙে চুরে নিজের বউকে রক্ষা করতে না পারেন? কেন যান প্রতিদিন জীমে যদি এই সামান্য রশি ছিড়ে এদের মতো ভিলেনদের ডিসুম ডাসুম না দিতে পারেন??
তুর্জের কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই রাহুল আর শিমুল পুলিশ নিয়ে চলে আসে। উউফফ কি বাঁচা বাঁচলাম রে বাবা। ভাগ্যিস বুদ্ধি করে ওদের সাথে আনছিলাম। নয়তো এমন হিরো ফিগার বর দিয়ে কাচকলা হতো। আমি উঠে দৌড়ে গিয়ে রাহুল শিমুল কে ধন্যবাদ দিয়ে নিজের জামাকাপড় থেকে ধুলাবালি ঝাড়তে থাকে। তুর্জ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
ওহ আল্লাহ আমার তো মনেই ছিলো না,, এই মুহুর্তে হিরোইনরা দৌড়ে গিয়ে হিরোর বাধন খুলে দেয়। তাই আমিও দৌড়ে গিয়ে তুর্জের বাধন খুলে দিলাম। তুর্জ ছাড়া পেয়ে ওদের ফোন ল্যাপটপ নিয়ে নেই।
পুলিশ ওদের দুজন কে নিয়ে যাওয়ার সময় শিমুল,,পানি নিয়ে আসার সময় যে লোক ছিলো, সেই লোককেও ধরিয়ে দিলো।
উনারা চলে যাওয়ার পরে তুর্জ রাহুল শিমুল কে ধন্যবাদ দিতে গেলে রাহুল বলে,,,
ছোট বলে কাউকে অবহেলা করতে হয়না বস!! ছোটরাও অনেক সময় অনেক বড় বড় কাজ করে।
তুর্জ আবারও লজ্জায় পড়ে যায়। সে বুঝতে পারছে কেন রাহুল এমন কথা বললো। রাত অনেক হয়ে গেছে। তাই যে যার মতো বাসায় চলে যায়। সারাকে আসার সময় মেডিক্যাল নিয়ে যায়। কপালে অনেকক্ষানি কেটে গেছে। যদি ও সারা বারবার বলছিল, এমন একটু আটটু কাটাফাটা কে সে আমলেই নেই না। অযথা ডক্টর দেখিয়ে টাকা নষ্ট, তার চেয়ে বরং আমাকে বাসায় দিয়ে আপনি মেডিক্যাল যান। কিন্তু তুর্জ সারার বকবকানিতে সারা না দিয়ে সারা রাস্তা চুপচাপ ড্রাইভ করে। মেডিক্যাল আসার পরে সারা আর গাড়ি থেকে নামছে না। তুর্জ জিজ্ঞেস করে,,,
আবারও কি হলো,, বসে আছো কেন?? পায়েও আঘাত পেয়েছো নাকি??
আমি আঘাত পাই নি,, আঘাত পেয়েছেন আপনি,, আপনার মাথায় আঘাত লেগেছে। প্লিজ আমার কোন মেডিসিন লাগবে না। শুধু আপনার জন্য নেন,, আচ্ছা!!
তুর্জ, সারাকে আগে ডক্টরের কাছে নিয়ে যায়। বেশ অনেকটা যায়গা কেটে গেছে। দুই তিনটা সেলাই দিতে হবে। কথাটা শোনা মাত্রই কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে সারার। সে চারিদিকে তাকিয়ে পালানোর জায়গা খুঁজতে থাকে। কিন্তু আবারও ফাটা কপাল,, পালানো সম্ভব না।
সারা বুদ্ধি করে ডক্টর কে বলেন,, ডক্টর সাহেব,, আগে আপনি উনার ট্রিটমেন্ট শুরু করেন। উনি আমার চেয়ে বেশি আঘাত।
হ্যাঁ তা ঠিক,, নার্স,, শেলী,, রুবি, রোজ এই কেউ আছো?
সাথে সাথে দুজন সুন্দরী নার্স এসে হাজির। ডক্টর উনাদের বলেন,, উনার কোথায় কোথায় আঘাত লেগেছে দেখুন। এখন তো নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে। এই বুইড়া ডক্টর থাকতে কেন এমন সুন্দরী নার্স দিয়ে উনার ট্রিটমেন্ট করাতে হবে ।
তুর্জের শার্টের নিচে বেশ কয়েক যায়গা তে কেটে গেছে আর অনেক যায়গাতে কালশিটে পড়ে গেছে। ইচ্ছে ছিলো উনার ট্রিটমেন্ট শুরু হওয়ার সময় সুযোগ বুঝে পালাবো মেডিক্যাল থেকে। কিন্তু এইসব ঢং মার্কা নার্স দেখে নিজের একমাত্র বর কে একা রেখে আর পালালাম না। উনি আমার চেয়ে আঘাত বেশি পেলেও আমার মতো গভীর ক্ষত নাই।
ডক্টর একটা সুচ বের করেন। আমি বুঝতে পারছি না এটা কার জন্য আমার নাকি তুর্জের জন্য। একজন নার্স আমার কপালের শুকনো রক্ত গুলো পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। ঠিক তখনই ডক্টর বলেন,,
এই ইঞ্জেকশন টা মাংসে পুস করো। আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করি!!
এএএটা কায়ার জন্য??
কেন,, তোমার জন্য মামুনি,,এটা পেইন কিলার ইঞ্জেকশন। সাথে সাথে পেইন ভালো হয়ে যাবে।
আচ্ছা কে বললো আপনাকে আমার পেইন হচ্ছে?? আমি কি একবারও বলেছি??
এতটা কেটে গেছে আর পেইন নাই!! আজিব তো””
হ্যাঁ নাই,, আর আমার এইসব ইঞ্জেকশন ফিঞ্জেকশন লাগে না। আগেও এর চেয়ে বড় বড় ফাটাফাটা আমার এমনই ভালো হয়ে গেছে।
তুর্জ নার্সদের বললেন,, নার্স আপনারা ওকে ধরুন। আর যতগুলো ইঞ্জেকশন লাগে করুন। আর একটা ইঞ্জেকশন মুখে করে দিবেন,, যেন এই অতিরিক্ত বকবকানি গুলো বন্ধ হয়।
কি রকম ব্যবহার এটা বুঝলাম না!! আমার কাটা কিন্তু ব্যাথা অন্যের। নার্স আমার কাছে এগিয়ে আসতে আমি বললাম,, দেখুন ভালো করে বলছি আমার কাছে আসবেন না। আমি কিন্তু অনেক জোরে জোরে কামড় বসিয়ে দিতে পারি। সত্যিই কিন্তু কামড় বসিয়ে দিবো। আহ্ কাজ হয়েছে। নার্স ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখন তুর্জ বলেন,, ডক্টর আমি ধরে আছি আর আপনি পুস করেন।
তুর্জ আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরতে আসেন কিন্তু অতিরিক্ত ভয়ে আমিই তাকে শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছি । না চাইতেও মুখ দিয়ে ননস্টপ বেড়িয়ে আসছে,,
ওওঅঅ ওওহহ আল্লল্লায়াহ গোও, তুমি এইবার বাচিঁয়ে দায়াওঅঅ গোও, আমি সত্যিই তোমার জন্য পাকিস্তানি মুরগী কোরবানি দিবোওওওও। ওহ ওহ ওবাবারেএ, ওমা মা, মারে আমিই আরর বাচবোওনায়ারেএ,,
তুমি চুপ করবা নাকি থাপ্পড় আরেকটা দিবো?
আমি এক চোখ সামান্য খুলে দেখি ডক্টর এখনো উনার চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে মিটিমিটি হাসছে।আমার এই ফাটা কপালের কসম!! এই টাকলুর মাথা যদি রুটি না বেলছি তো আমি সারা না হুহ্।
মামুনি, এতো ভয় পাচ্ছো কেন। তুমি তো অনেক সাহসী মেয়ে। তোমাকে দেখলেই বুঝা যায় তুমি অনেক বড় বড় কাজ একাই শেষ করে দাও। সামান্য ইঞ্জেকশনে কিছু হয়না। তুমি অন্য দিকে একটু তাকাও আমি ইঞ্জেকশন পুস করবো তুমি বুঝতেও পারবে না।
এক সাথে এতো গুলো প্রসংশা করলে যে কেউ অটোমেটিক ফুলে যাবে। আমার অবস্থাও তাই। আমি তুর্জের দিকে মুখ করে বসে আছি। তুর্জ তার বাম সাইডে আমাকে হালকা জরিয়ে আছে। ডক্টর আমার হাতে হাত দিয়ে পজিশন খুঁজতে শুরু করে আর আমি দাঁত কিরমিরিয়ে, চোখমুখ খিচে তুর্জের বাম সাইডে ভয়ে খামছে ধরি। বেচারার পিঠে আমার হালকা বড় নখের আচঁড়ে অনেক টা কেটে গেছে।
সারা সারা সারা,, হয়ে গেছে, এবার চোখ খুলো। আমি তো বুঝলাম না কখন পুশ করছে। তাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি শেষ??
জ্বী শেষ।
ডক্টর বেশ কিছু মেডিসিনের নাম লিখে দিলেন। তুর্জ আগেই বাসায় ফোন করে বলে দিয়েছে আমি উনার সাথে আছি। তাই বাসায় থেকেও কেউ ফোন করছে না।
রাত প্রায় ১ টার সময় বাসায় ফিরে আসি। ময়না আমাদের ড্রেসে রক্ত দেখে মা বাবাকে ডাকতে চাইলে তুর্জ নিষেধ করেন, অযথা টেনশন করবে তাই।
রুমে আসার পরে আমি আগে ফ্রেশ হতে যায় তারপর তুর্জ। গোসল শেষ করে বাইরে এসেছে,, পিঠে নখের দাগ গুলো দেখে মনে হচ্ছে কোন বাঘের আঁচড় দিয়েছে।
কি দেখছো? নখ গুলো তো যায়গা মত বসাতে পারো না।কিন্তু আমার বেলায় ঠিকই পারো। আমি একটা মুখ ভেঞ্চি কেটে বিছানায় গিয়ে বসলাম।
তুর্জ ফ্রেশ হয়ে পাশে সুয়ে পড়ে। তারপর জিজ্ঞেস করে,,
আচ্ছা সারা তুমি কেন এতো রিক্স নিয়ে ওখানে গেলে??
ইচ্ছে করছিলো তাই। আর আপনি কেন আমাকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন।
তা তোমার মতো পিচ্চি মেয়ে বুঝবে না। আগে বড় হও তারপর সব বুঝবা।
কিহ আমি পিচ্চি, আমি এই পিচ্চি থেকে বড় হতে হতে আপনি না!!আপনি বুড়ো হয়ে যাবেন। সামনের দুটো দাঁত পড়ে ফোকলা হবেন।
কিহ আমি বুড়ো হয়ে যাবো, আমি ফোকলা হবো? দাড়াও দেখাচ্ছি।
তুর্জ সাথে সাথে ওর হাত দুটো দিয়ে আমার হাত চেপে ধরে মুখে উপর উনার মুখ রাখেন। উনার প্রতিটি নিশ্বাস আমার চোখে মুখে পড়ছে।
কি করছেন? ব্যাথা পাচ্ছি,, প্লিজ ছাড়ুন।
সাথে সাথে উনি পাশ ফিরে চুপচাপ সুয়ে পড়েন। আপাতত কারো মুখে আর কোন কথা নাই। এমন নিরব শুনশান রাতের আধারে ঘুমিয়ে পড়লাম দুজন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট এর জন্য নিচে যেতেই মা বাবা আমাদের ব্যান্ডেজ দেখে হাজারটা প্রশ্ন জুড়ে দেয়। কেবল আমি পুরো গল্পটা রসিয়ে রসিয়ে বলবো ঠিক তখনই তুর্জ উপর থেকে নামতে নামতে জবাব দেয়,, হালকা একটা এক্সিডেন্ট, তেমন কিছুই না।
মা আমাকে আজ স্কুলে যেতে নিষেধ করেন। তাই আমি ব্রেকফাস্ট শেষ করে উপরে উঠে যায়।
চলবে,