দ্বিতীয় পুরুষ – পর্ব 10

0
214

#দ্বিতীয়_পুরুষ
পর্ব ১০
নীলাভ্র জহির
চিত্রা এখন নতুন বউ। তাই আত্মীয়-স্বজন সবার বাড়ি থেকে তার দাওয়াত আসছে। আজকে সে রূপকের বড় খালার বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাবে। সকালবেলা খাওয়া দাওয়া সেরে গোসল করে খুব সুন্দর একটা শাড়ী পড়ল চিত্রা। এই শাড়িটা সে বিয়েতে পেয়েছিল তবে কখনো পড়া হয়নি। রূপক তাকে গত রাতেই বলেছে বউ তোমার নীল শাড়ীটা পিন্দো। শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ ছিলনা তাই চিত্রা রূপককে জানিয়েছিল কথাটা। রূপক গতরাতে তার জন্য নীল রঙের ব্লাউজ পিস এনেছিল। সেই রাতেই স্বামীর সঙ্গে পাশের বাড়িতে গিয়ে এক মহিলাকে ব্লাউজ বানাতে দিয়েছিল চিত্রা। এক রাতেই মহিলা ব্লাউজ তৈরি করে দিয়েছে তাকে। একটু আগেই মহিলা ব্লাউজ দিয়ে গেছে। সেটা পরে এখন রানীর মত করে সাজবে সে। সে কোন রাজার রানী নয় সত্যি। তবে রূপক তো তার কাছে একজন রাজা। সে রূপকের রাজ্যের রানী ।
আজকে রূপক দোকানে গেল না। ভাত খেয়ে গোসল করার পর সে নিজেও তার সুন্দর একটা শার্ট পরে নিল। বিয়ে উপলক্ষে শার্ট টা বানিয়েছিল যত্ন করে। ভেবে রেখেছিল বউয়ের সঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সময় এই শার্টটা পরবে।
চিত্রা সুন্দর করে চুল বেঁধে মুখে একটু পাউডার লাগাচ্ছিল। রূপক এসে বলল, বউ তোমার ত্যালডা দাও তো।
চিত্রা বিয়েতে পেয়েছে একটা বড় নারিকেল তেলের বোতল। বোতলটা এগিয়ে দিল রূপকের দিকে। রূপক হাতের তালুতে তেল নিয়ে মাথায় মেসেজ করল। গোসলের পর মাথায় তেল দেয়াটা তার অভ্যাস। বেশিরভাগ সময়ই তার মাথাতে তেল জবজব করে। তৈলাক্ত হাত মুখে ডলতেই চিত্রা চেঁচিয়ে উঠল, আপনি এটা কি করতাছেন?
কেন বউ?
মুখে কেউ ত্যাল দেয়? মুখটা কালা হইয়া গেল।
তাইলে মুখে কি দেয়?
আপনি দেখি কিছুই জানেন না। মুখের স্নো লাগায়।
আমিও ছোনো লাগাবো?
হ, আমার এইখান থাইকা একটা ছোনো লাগান মুখে। একটু পাউডার দিয়া দিই আসেন।
রূপক শার্টের বোতাম খুলে হাত উচু করে তার বগলের নিচ এগিয়ে দিল পাউডার লাগানোর জন্য। চিত্রা রূপকের গলা ও বগলের নিচে পাউডার মাখিয়ে দিল। সাদা রংয়ের ধবধবে পাউডারে কাল শরীরটা একদম একাকার হয়ে গেল। রূপকের বুকের দিকে তাকালে চিত্রের শরীর কেমন টনটন করে ওঠে। চিত্রা নিজের চিরুনি দিয়ে রূপকের মাথাটা ব্রাশ করে দিল।
শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে রূপক বললো, আপনেরে একটা কথা কইতাম।
কও।
এখন ছেলেদের কিরিম পাওয়া যায়। আপনি একটা কিইনা আইনেন।
কেন আমি কি এমনিতে কম সুন্দর?
না, তাও। আপনি তো আল্লাহ দিলে অনেক সুন্দর। তাও কইলাম আরকি।
আইচ্ছা বউ ঠিক আছে।
চিত্রার ব্লাউজের উপর দিয়ে তার বুকের ওপরের অংশ বের হয়ে আছে। রূপকের দৃষ্টি সেখানে চলে গেল। সেখানে চোখ রেখে মিটমিট করে হাসতে লাগলো রূপক। চিত্রার ভরা যৌবন। সতেজ সৌন্দর্য্যে ভরপুর হয়ে আছে তার শরীর। রূপকের বড় ভালো লাগে তার বউকে দেখতে। বউয়ের দিকে তাকালেই তার শরীরে একধরনের জোয়ার আসে। নিজেকে তখন তাগড়া জোয়ান মনে হয়।
চিত্রার সাজগোজ শেষ হলে রূপক বলল তোমারে আইজ সুন্দর লাগতাছে। তুমি সবসময় এমন সাইজা গুইজা থাকবার পারো না?
লজ্জায় রক্তিম হয়ে ওঠে চিত্রার গাল। মাথার ঘোমটা দ্রুত সামনে টেনে দিলো। রূপক তার ঘোমটাটা পিছন দিকে সরিয়ে দিয়ে বলে, নিজেরে ঢাইকা রাখছো কেন? আমার একটু দেখবার দাও।
চিত্রার আরো লজ্জা লাগে। মুচকি মুচকি হাসি লেগে রইল চিত্রার ঠোঁটে। একটা অটো রিক্সা নিয়ে তারা দুজনে বেরিয়ে পড়ল খালার বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। চিত্রাকে সেখানে দুটো দিন থাকতে হবে। দোকান রেখে রূপক থাকতে পারবে না। তাই চিত্রার শুধু নিজের জন্য দুটো শাড়ি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে করে নিয়ে নিয়েছে।
মতির দোকানের সামনের রিকশা দাঁড় করালো রূপক। খালার বাড়িতে যাচ্ছে সে। এক কেজি জিলাপি নিয়ে যেতে হবে। রূপক জিলাপি কেনার ফাঁকে দৌড়ে এসে চিত্রা কে বলল, বউ তুমি জিলাপি খাইবা?
চিত্রা দুদিকে মাথা নাড়লো, না খামুনা।
সেদিন কইছিলা খাইবা। মাত্র গরম গরম জিলাপি ভাজছে। তোমারে দুইটা আইনা দেই খাও।
আরে না লাগবো না। আমরাতো জিলাপি লগে নিয়া যাইতেছি। ওইখানে গেলে ওরা খাইতে দিবো।
যদি না দেয়? তুমি এইখানে দুইটা খাইয়া লও।
ধুর আপনি যে কি কন? এ রাস্তার মধ্যে গাড়ি খাড়া করাইয়া আমি জিলাপি খামু।
আচ্ছা, ঠিক আছে। তাইলে বেশি কইরা নেই।
খালি জিলাপি নিয়া যাওয়া যাইবো না। এক কেজি আপেল না নিলে কেমন দেখায়? আপনে জিলাপি এক কেজিই নেন। বেশি নেওয়া লাগবো না।
আচ্ছা, বউ।
রূপক রাস্তা পেরিয়ে দৌড়ে গিয়ে মতির দোকান থেকে গরম গরম এক কেজি জিলাপি প্যাকেটে তুলে নিল। আবারো দৌড়ে এসে রিক্সায় উঠল সে। জিলাপির প্যাকেটটা রাখলও বউয়ের কাপড়ের ব্যাগের ভেতর।
চিত্রা লজ্জায় মুখ লাল টকটকে করে রেখেছে। রুপক তার প্রতি যে ভালোবাসা গুলো দেখায় সেগুলো ভালো লাগে তার। নিজের সৌভাগ্যকে এখনো তার খুব ঈর্ষা হচ্ছে।
ফলমূলের দোকানে দাঁড়িয়ে রূপক এক কেজি আপেল কিনল। বড় বড় দুই প্যাকেট বিস্কুট এক প্যাকেট চানাচুর ও কিনলো। তার খালাতো ভাইয়ের দুটো বাচ্চা আছে। বাচ্চাদের জন্য চকলেট কিনে নিল রূপক। চিত্রা রূপকের এত কিছু কেনা দেখে মুগ্ধ হলো। তার স্বামীর দিলটা অনেক বড়। এই মানুষটাকে সে তাই অনেক সম্মান করে।
বড় খালার পাকা বাড়ি। তিন ছেলে ও ছেলের বউ নাতিপুতি নিয়ে তার সুখের সংসার। উঠানে রিকশা এসে দাঁড়াতেই তারা দৌড়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলেন। বাচ্চা-কাচ্চারা হইচই করতে লাগলো। শুরু হলো নতুন বউকে বরণ করার তোড়জোড়। চিত্রা রিকশা থেকে নেমে খালা খালুকে সালাম জানায়। খালাতো ভাইয়ের বউ রা এসে সসম্মানে চিত্রাকে বাড়ির ভিতর নিয়ে গেল। সবার সঙ্গে বিয়ের দিনই পরিচয় হয়েছিল চিত্রার। তাই আজ কথা বলতে খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হলো না।
খালার বড় বউ তার ঘরে বসতে দিলে ওদের। খোলা দরজার বাইরে কিছু মহিলা এসে দাঁড়িয়েছে নতুন বউকে দেখতে। ছোট ছোট বাচ্চা কাচ্চারা চিত্রার আশে পাশে এসে ভিড় করছে। তাদের সবাইকে এড়িয়ে গিয়ে কেবলমাত্র চিত্রা ও রূপককে দুই গ্লাস শরবত দেয়া হলো। সবার সামনে শরবত খেতে চিত্রার লজ্জা লাগছিল। কিন্তু কিছু করার নেই। তারা অতিথি বলে তাদের বরণ করতেই শুধু দুইজনকে শরবত দেয়া হয়েছে। রূপক তার নিজের গ্লাসের শরবত ঢকঢক করে খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলল, শরবত টা ভালো হইছে। খাও বউ।
রূপকের কথা শুনে তার খালাতো ভাইয়ের বউ ফোড়ন কেটে বললেন, দেখছো বউয়ের জন্য পিরিতি দেখছো।
বউ দেখতে আসা মহিলারা হেসে ফেললেন। অনেকেই বউ দেখে তখন চলে যাওয়া শুরু করেছেন। কারণ মেহমানকে এখন নাস্তা দেয়া হবে। রুপকের ভাবি সবাইকে থাকতে বলছিলেন নাস্তা খেয়ে যাওয়ার জন্য।
বড় ট্রেতে করে বিস্কুট, চানাচুর, আপেল, জিলাপি ও পেয়ারা খেতে দেয়া হলো।
নাস্তা খাওয়ার পর চিত্রা বাইরে রান্নাঘরের পাশে এসে বসলো। আদা রসুন বাটার ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। বাড়িতে মেহমান এলে একসঙ্গে অনেকগুলো আদা রসুন পেঁয়াজ কাটা হয়। মসলা বাটাবাটির এই সুঘ্রাণ চিত্রার খুবই ভালো লাগে। বড় খালা একটা পাতিলে করে মুরগির মাংস ধুচ্ছেন। অন্য একটা গামলায় লাল টকটকে গরুর মাংস। কিছুক্ষণ আগে মাছ ভাজি হয়েছে। মাছ ভাজার ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে।
দুইটা চুলার একটা চুলায় খালা করাইতে তেল তুলে দিয়েছেন। তেল গরম হয়ে ধোয়া উঠতেই সেখানে ছেড়ে দিলেন পিঠা। নারিকেলের পুলি পিঠা। অন্য একটা পিঠা তৈরি করছেন ভাবীরা। পিঠা গুলো ভাজা হতেই একটা পিরিচে করে ঘরে রূপককে দিয়ে আসা হলো। রুপক বিছানায় শুয়ে তার মোবাইলের ছবি দেখছে। মচমচে পিঠা গুলো দেখে খুশি হয়ে উঠল রূপক।
খালা বললেন মা তুমি ঘরে যাও। পিঠা খাইয়া লও।
সমস্যা নাই খালা। আমি পরে খাব।
পরে কি খাইবা? একলগে খাইয়া লও। আমি আরো ভাইজা পাঠাইয়া দিতাছি। ঘরে যাও গা।
সমস্যা নাই তো খালা। আপনেরা আছেন। ভাবির আছে। আমি আপনের লগে খামু।
চিত্রার বড় ভাবী বললেন, আমরা তো আর মেহমান না।
চিত্রা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল আমারে মেহমান বানায়া দিয়েন না ভাবি। মনে করেন আমিও আপনেদের বাড়ির মানুষ।
ও তাই আর মনে করলে হইল। প্রথমবার আইসেন আমাগো বাড়িতে। যান ভাবি আপনি নাস্তা খাইয়া লন।
এখুনি তো নাস্তা খাইছি।
পিঠা গুলা গরম গরম খাইতে ভালো লাগবো।
খালা আরো এক বাটি পিঠা চুলা থেকে নামিয়ে দিলেন। সেগুলো চিত্রার হাতে দিয়ে বললেন, ঘরে যাও।
এবার আর চিত্রা মানা করতে পারলো না। নতুন শাড়ির আচল বারবার মাথা থেকে পড়ে যাচ্ছিল। এভাবে শাড়ির আঁচল টেনে ধরে রাখল সে। রূপক তাকে দেখে খুশি খুশি গলায় বললো, তুমি আইসো। একলা খাইতে মন চাইতাছে না।
হইছে। কইতে হইবো না। ভাবীরা আমারে শরম দিতাছে।
আমার বউরে খাইতে কইসি। মানসের বউরে খাইতে কই নাই।
চিত্রা মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে চৌকির উপর এসে বসলো। গরম গরম পিঠা খেতে শুরু করল। পিঠা গুলো খুবই মজা হয়েছে। লবণ একটু বেশি লাগলেও খেতে খুবই সুস্বাদু।
হঠাৎ গত সন্ধ্যার কথা মনে পড়ল চিত্রার। খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। রূপকের সব আত্মীয় স্বজন তাকে দাওয়াত দিচ্ছে। গতকালও একজন এসেছিলেন চিত্রাকে নিয়ে যেতে। রূপকের মা বলেছেন অন্য একদিন যাবে, যাওয়ার দিন শেষ হয়নি। কিন্তু তখনই কঠিন একটা কথা বলেছিলেন তিনি, বিয়ের এক মাস প্রায় হইয়া গেক। বিয়ের পরের দিন সেই যে একবার নাইওর নিয়ে গেল এরপর আর কোনদিনও দাওয়াত দিল না । আমার পোলাটার কপালটাই এমন খারাপ শ্বশুরবাড়িতে একবেলা কারো ঘরে দাওয়াত খাওয়ার সৌভাগ্য তার হয় নাই।
শাশুড়ির মুখের কাটা কাটা কথাগুলো শুনে চিত্রার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
সে বলেছে, মা আপনি মন খারাপ কইরেন না। আমার তো সেরকম কোনো আত্মীয়-স্বজন নাই।
হ, আমার চেয়ে পোলাডার কপাল খারাপ। অন্য জায়গায় বিয়া দিলে কত দাওয়াত পাই তো। খালি কি দাওয়াত কত আদরও পাইত।
চিত্রা তখন খুব বলতে ইচ্ছে করছিল তাহলে অন্য কোথাও বিয়ে দিতেন। কিন্তু সেটা বললে শাশুড়ি নিশ্চয়ই অনেক রেগে যাবে। তাই সে আর কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো।
মহিলা তখন বললেন পোলাডা আমার জীবনে শশুরের বাড়ির দাওয়াত পাবো না। জৈষ্ঠ মাসে আম কাঁঠাল খাইতে পারবো না। শ্বাশুড়ীর হাতের পিঠা পুলি খাইতে পারবো না। এমন কপাল কইরা জন্মাইছে।
চিত্রা কোন কথার উত্তর দেয়নি। চুপচাপ শুনেছে সবকিছু। এসব কথা শোনার পর তার নিজেরও আজকে খালার বাড়িতে যাওয়ার কোনো মন মানসিকতা ছিল না। কিন্তু গতরাতে রূপক তার জন্য ব্লাউজ পিস নিয়ে এসে তার হাতে দিয়ে বলেছে কালকে খালার বাড়ি যাইতে হইবো। তুমি খুব সুন্দর কইরা সাজবা। আমার অনেক দিনের শখ আছিল আমি খালার বাড়িতে বউ নিয়া যামু। খালা খুব ভালা মানুষ।
রূপকের কথা শুনে না করতে পারেনি। সকালবেলা খুশিমনে তাই তৈরি হয়ে নিয়েছে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর রূপক চিত্রা বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিয়েছিল। চিত্রার খুব লজ্জা লাগছিল। কিন্তু আর ভাবিরা তখন গোসল করতে গেছে। খালাও বাড়িতে নেই। তাই স্বামীর সঙ্গে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার জন্য শুয়েছে সে। অনেক মজার মজার খাবার খাওয়ার পর শরীরে এক ধরনের ভাব এসে গেছে। রূপক দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বলল, আমার খালা বড় ভালা মানুষ কইছিলাম না।
হ, আমার তো ভালোই লাগলো।
তোমারে ও তার ভালো লাগছে।
হাতের কাশিটা রূপক ফেলে দিয়ে চিত্রাকে তার বুকের মধ্যে টেনে নিল। চিত্রার থলথলে পেটে হাত দিয়ে মৃদু চাপ দিতে দিতে বলল, শইলডা কেমন জানি করতাছে?
কেমন করতাছে?
বুঝতাছ না? হইবো নাকি?
চিত্রা জিভে কামড় দিয়ে বলল মাথা খারাপ হইছে নি আপনার। মেহমানের বাসায় আইসা এগুলা।
রূপক চিত্রাকে আরো কাছে টেনে নিতে নিতে বলল তাতে কি হইছে? বেশীক্ষন লাগবেনা। অল্প একটু। তুমি দুবার আটকায় দিয়ে আসো।
আমি পারুম না। এখন ঐসব হইব না।
কেন? অল্প একটু।
কইলাম তো এখন ঐসব হইবো না। ভাত খাইছেন এখন শুইয়া একটা ঘুম দেন। আর যদি বেশি মন চায় তাইলে থাইকা জান। কাল বাড়ি যাই।
রূপক হতাশ হয়ে বউকে ছেড়ে দিল। তারত দু-একটা দিন মন আরাম আয়েশ করতে মন চায়। ইচ্ছে করছে খালার বাসায় একটা রাত থেকে যেতে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত দোকান করা আর এসবের মধ্যে থাকতে তার ভালো লাগে না। বউয়ের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটিয়ে ধান ক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াতে তার ইচ্ছা করছে। আজকে সে দোকান কামাই দিয়েছে। আগামী কাল যদি সে দোকানের না যায় তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে। তার বাবা এখন তাকেই সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছে। সে এখন একা নয়। ঘরে নতুন বউ এসেছে। বাপ মা-বোন নিয়ে তার সংসার। এতগুলো মানুষের দায়িত্ব নেয়াটা কম কথা না। সবকিছু ভেবে সে কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে দোকানে যাওয়া থেকে বিরত থাকে না। কিন্তু আজ তার খুব ইচ্ছা করছে বউয়ের সঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে। পুকুর পাড়ে গিয়ে কিছুক্ষন বসে গল্প করতে।
রূপক বলল, উঠ বউ। চলো পুকুর পাড়ে যাই। খালার বাড়ির পুকুর পাড় টা খুব সুন্দর। চলো টং এর উপর বইসা একটু বাতাস খেয়ে আসি।
ঘুমাইবেন না আপনি।
না, ঘুম ধরতেছে না। আইজ একটু ছুটি পাইছি। দিনটা ঘুমায়া কাটাইতে চাইতেছি না।
রূপকের কথা শুনে চিত্রে স্পষ্ট বুঝতে পারল আজকেই রূপক চলে যাবে বাড়িতে। তাকে এখানে একা রেখে যাবে। খালা শ্বাশুড়ীর বাড়ীতে সে দুইদিন নাইওর করবে। কিন্তু রূপককে ছাড়া থাকতে হবে ভেবেই চিত্রার কেমন যেন বুকের ভেতর ব্যথা করতে থাকলো। রূপককে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকার কথা সে ভাবতে পারেনা। রূপক দোকানে গেলে সারাদিন ছটফট করে কখন বাড়িতে ফিরবে। অথচ দুদিন দেখা হবে না তার প্রিয় স্বামীর সঙ্গে। চিত্রার বুকটা হঠাৎ করে ফাঁকা হয়ে যেতে লাগল। কিন্তু কিছুই করার নেই। সে দ্রুত বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলল, আসেন।
গল্প বরাবরই আমি পাঠকের চাহিদামতো করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি। সুতরাং যেমনটি মনে হয় মন্তব্য করুন নেক্সট না লিখে পরামর্শ কিংবা উত্সাহিত করবেন।
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here