#মধ্যবিত্ত
#পর্ব_২২
#নুসরাত_রিতু
চারজন একসাথে একটা ছিমছাম রেস্তোরাঁয় গিয়েছে সকালের নাস্তা করতে। এখন কেবল সারে নয়টা বাজে। এটা যে খোলা পেয়েছে এই ভাগ্য।
এতো ভোরে সাধারণত টং জাতীয় দোকান বা কিছু খোলা হোটেল বাদে বড় কোন রেস্তোরাঁই খোলে না। আর সাধারণ হোটেলে মেয়েদের নিয়ে যেতে চায় না রাফি। রাহি ও রিমি দুজনই যেহেতু পর্দা মেইনটেইন করার চেষ্টা করছে সেহেতু তাদেরকে যতোটুকু পারা যায় সাহায্য করা উচিৎ বলেই মনে করে সে।
রেস্তোরাঁর ইন্টোরিয়র পছন্দ হয়েছে রাহির। সকালের ঝকঝকে পরিবেশে রেস্তোরাঁটা যেনো আরো নান্দনিক লাগছে। রাহি ফোন বের করলো ছবি তোলার জন্য। সাদ আর রাফি তখন বেয়ারার সাথে মেনু নিয়ে কথা বলছিলো। যেহেতু আজ বাইরেই খাওয়া হচ্ছে সুতরাং আজ একটু অন্যরকম খেতে চায় তারা। রিমিকে কি খাবে জিজ্ঞেস করা হলে সে দ্রুত পাস্তা অর্ডার করলো। কারন নুডলস বা পাস্তা তার খুব পছন্দের।
রাহিকে জিজ্ঞেস করার জন্য তাকিয়ে দেখে রাহি ভিডিও করায় ব্যাস্ত।
রিমি রাহিকে ডাক দিলে রাহি বলে, “শশশ একটা শর্ট ভিডিও করছি।” একটু থেমে রিমির দিকে তাকিয়ে বলে, “এডিট করে সাউন্ড কেটে দিবো নে পেরা নাই চিল।”
সাদ একটু অবাক হয়। রাহিকে সে পুরোদস্তুর গম্ভীর ভেবেছিলো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার ধারনা ভুল।
রাফি রাহির মধ্যে পুরোনো রাহিকে খুজে পাচ্ছে। রাফি একটু গলাটা পরিষ্কার করে বললো, “তুমি কি খাবে? রিমিতো পাস্তা খাবে বললো। তুমিও অর্ডার দিয়ে দেও।”
রাহি: ট্রিট কে দিচ্ছে?
রাফি: কেউ না।
রাহি : তাতো হবে না। এই যে আমি রিমির থেকে দূরে গিয়ে ভাইয়াকে রিমির সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিলাম এজন্য তো ভাইয়ার আমাকে ট্রিট দেয়া উচিৎ তাইনা?
রাফি একটু জোড়েই কেশে উঠলো। সাদও একটু অপ্রস্তুত হলো। কিন্তু মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, “ছোট বোনের আবদার না রেখে উপায় আছে? ঠিক আছে ট্রিট নাহয় আমিই দিবো। এবার অর্ডার করুন।”
রাফি: কি বলো! আজকে সবাইকে আমি খাওয়াবো। ও তো বাচ্চা ওর কথা ধরতে হবে না।
রাহি মিন মিন করে বললো, “আমি মোটেও বাচ্চা না।” কিন্তু এই কথা রাফির কান পর্যন্ত পৌছালো না।
সাদ: মোটেও না। আজ আমি অনেক খুশি। আর এই খুশিতে একটা ট্রিট দেয়াই যায়।
উৎফুল্ল রিমি পুনরায় লজ্জা পেলো। সাদও একবার তার দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসলো।
রাফি: এবার তো বলো কি খাবে?
রাহি: ডাবল চিজ বার্গার।
রাফি: নিকাব পরে তুমি বার্গার কিভাবে খাবে?
রাহি: ওহ, তাই তো। তাহলে ক্রিমি পাস্তা।
এভাববেই সময় কেটে গেলো। ফিরে এসে যে যার বাসায় চলে গেলো।
____________________________
রাত তখন দশটার বেশি। খাওয়াদাওয়া আজ আটটায় সেড়ে ফেলেছে তারা। আজও সেলিনা চৌধুরী ইশার আগে রাতের খাবার খেতে বসেছিলেন। একটু পর দেখে বাবা মেয়েও পাশে বসেছে। খুশিও দক্ষ হাতে সবাইকে খাবার তুলে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো।
রাহি এখন দরজা আটকে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই সে নামাজ শেষ করেছে। আজ রাফির সাথে কিছুক্ষণ থাকার পর রাহির শুধু কান্না পাচ্ছে। যদিও রাফির সাথে থাকা পুরোটা সময়ই সে উপভোগ করেছে। কিন্তু ফিরে এসে পুরো দিনই কিছুক্ষণ পর পর কেঁদেছে। মা সন্দেহ করবে তাই নামাজে বেশি কেঁদেছে।
কাঁদার কারনও আছে। ফেরার পথে রিক্সা নিয়েছিলো রাফি। রাহি আর রিমি এক রিকশায়, সাদ আর রাফি এক রিকশায় ছিলো। তখন রিমি রাহিকে সকালের চুড়ির ঘটনা বলেছে। আর তার পর থেকেই পৃথিবী অসহ্য লাগছে রাহির।
___________________
কেটে গেলো চারটি দিন। আগামীকাল রিমির বিয়ে। সাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন রাফি আর জামান সাহেব। সব ঠিকঠাক করে এসেছিলেন ঐদিনই।
খুব ছোট করে আকদ হবে তাদের। তবুও আত্মীয় স্বজনে গিজগিজ করছে বাড়ি। কিছু আত্মীয়রা হলুদ এর অনুষ্ঠান করার জন্য খুব জোর দিচ্ছিলেন। অনেক কষ্টে সব সামলে নিয়েছে রাফি।
শুক্রবার সকাল সকাল রেনু বেগমের সাথে সেলিনা চৌধুরীও কাজে লেগে পরেছেন। রাহি মাথা ব্যাথার অযুহাত দিয়ে গতকাল আসেনি। আজ জোড় করে সেলিনা চৌধুরী নিয়ে এসেছেন।
বাড়িতে ঢুকেই সে চলে গিয়েছে রান্নাঘরে আর রাহিকে পাঠিয়েছে রিমির ঘরে। রিমির ঘরে ঢুকে দেখে রিমির কাজিনরা রিমিকে পার্লারে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোড়াজোড়ি করছে। রিমি রাহিকে দেখে ইশারায় কাছে ডাকলো। রাহিও ধীরে গিয়ে রিমির পাশে বসলো।
রিমি রাহির কানে আস্তে করে বললো, “এখনি গিয়ে ভাইয়াকে ডেকে আনো প্লিজ। ওরা আমাকে পার্লারে নিতে চাচ্ছে। ছবি তোলার জন জোড় দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি যাও। ”
রাহি উঠে বাইরে চলে আসলো। কেউ কেনো বোঝে না সে ঠিক কতোটা কষ্ট পাচ্ছে রাফির সামনে যেতে?কেনো তার ঘুরে ফিরে রাফির সামনে পরতেই হচ্ছে। তবুও রিমির অস্বস্তির কথা ভেবে রাহি রাফির ঘরে গেলো।
রাহি: আসসালামুআলাইকুম স্যার। আসবো?
রাফি: ওয়াআলাইকুমুসসালাম। কে রাহি?
রাহি: জি স্যার।
রাফি: ওহ, দাড়াও আমি আসছি।
রাহি বাইরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছে কি এমন আছে ভিতরে যে তাকে ঢুকতে পার্মিশন দিলো না। এই ছোট্ট বিসয়টা নিয়েও তার কান্না পাচ্ছে। রাফি বাইরে এসে বললো, “হ্যা বলো কি বলবে? আসলে.…”
লাইনটা শেষ করতে পারেনি রাফি। তার আগেই রাহি বললো, ” রিমি ডাকছে আপনাকে। সবাই ওকে পার্লারে নিতে চাচ্ছে, জোর করে ছবি তুলছে।” কথাটা বলেই এক ছুটে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো সে।
রাফি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। কি হলো কিছুই বুঝলো না সে। সে স্পষ্ট দেখেছে রাহির টলমনে চোখ। এরমানে রাহি কাঁদছিলো! বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার। কেউ কি কিছু বলেছে? কিন্তু বিয়ে উপলক্ষে আসা অনেক ছেলেরাই তো তার রুমে। এজন্য রাহিকে ভিতরে ঢুকতেও বাড়ন করলো।
বিসয়টা নিয়ে ভাবার বেশি সময় পেলো না সে। রিমির ঘর থেকে শুনতে পেলো একজন বলছে, “বিয়ের দিন এতো পদ্দা পদ্দা করো না তো। একদিন একটু সাজলে কিছু হবে না। চলো পার্লারে যাই। টাকা তোমার বরের থেকে উশুল করবো নে দেখো।”
রাফি রুমে ঢুকে বললো, “পর্দা ফরজ। আর সেটা প্রতিদিনের জন্যই ফরজ। রিমি কোথাও যাবে না। আর তোমরাও কেউ সাদের সামনে যাবে না। সাদের এসব পছন্দ না। ”
কথাটা বলেই রুম ত্যাগ করলো সে। ভিতরে বসে থাকা দুজন কাজিনই মুখটা থমথমে করে রেখেছে। হাফ ছেড়ে বাঁচলো রিমি।
________________________
জাফর সাহেব আর জামান সাহেব একসাথে গিয়েছিলেন কাঁচা বাজার করতে। সব মিলিয়ে পঞ্চাশ জনের আয়োজন। খুব ছোট করে আকদ করতে চায় তারা। কারন যে বিয়েতে খরচ যতো কম সে বিয়েতে রহমত ততো বেশি।
ছেলেরা খাবে ছাদে আর মেয়েরা বাসায়ই। খাবার বাইরে থেকেই আসবে। তবুও কিছু পান, আর সালাদের সামগ্রী কিনে এনেছেন জামান সাহেব। বাসা থেকে বেড়িয়ে দেখে জাফর সাহেব তাদের বাসার দিকেই আসছে। তাই তাকে নিয়েই রিকশা চেপে বাজারে গিয়েছেন তিনি।
ফেরার পথে জামান সাহেব বলেন, “এবার ছেলেটার জন্য একজনকে খুজে পেলেই আমি নিশ্চিন্ত”
জাফর সাহেব: রাফিকে বিয়ে করানোর চিন্তা করছেন?
জামান সাহেব: হ্যা, ওর ও তো বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। আগে মেয়ে বিয়ে দিবো তাই এতোদিন খুজিনি। কিন্তু এবার খুব দ্রুত ছেলেকে বিয়ে করিয়ে ঘরে বউ নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।
জাফর সাহেব: কেউকে পছন্দ করা আছে?
জামান সাহেব: না। আপনার পরিচিত কেউ আছে নাকি?
জাফর সাহেব: খুব পরিচিত একজন আছে।
জামান সাহেব : কি বলেন? কে সে?
জাফর সাহেব: মেয়ে সহ মেয়ের পুরো পরিবারকে আপনি চেনেন।
চলবে……….