মধ্যবিত্ত শেষপর্ব (প্রথম অংশ)

0
180

#মধ্যবিত্ত
#নুসরাত_রিতু
#শেষপর্ব_(প্রথম অংশ)
রাহিরা পৌছে দেখে রিমি সহ বরপক্ষের অনেকেই সেখানে উপস্থিত। মেয়েদের জন্য আলাদা ব্যাবস্থা থাকায় নিকাব খুলে ফেলেছে রাহি। তবে রিমির সাথে খুব বেশি কথা বলার সময় পায়নি।
সবাইকে নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে মাগরিব হয়ে গেছে। রিমির রুমকে যাওয়ার আগেই সাজিয়ে গিয়েছিলো রাফি। সেখানেই বসানো হয়েছে রিমিকে। বলা যায় আজ তাদের দ্বিতীয় বাসর। কিন্তু বাসার পরিস্থিতির জন্য বেশ লজ্জায় পরতে হয়েছে রাফি আর তার পরিবারকে। রিমির রুমে কোন বাথরুম নেই। তাড়াহুড়োয় রুম বদলানোও সম্ভব হয়নি। রাফি ইতিমধ্যে বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলে নিয়েছে। ভাগ্যক্রমে এই বিল্ডিং এর অন্য একটা ফ্লাট খালি হয়েছে এই মাসে। যদিও সেটায় দুটো রুমের সাথে বাথরুম আছে আর একটার সাথে নেই। ডায়নিং এর কমন বাথরুম ব্যাবহার করতে হবে ঐ লোকের বাসিন্দাদের। তবুও সুযোগটা হাতছাড়া করেনি রাফি।
রিমি বাসায় ফিরে গোসল করে নিয়েছে। মেহমান এখনো কিছু আছে। যদিও সবাইকে রাতের খাবারের পর জাফর সাহেবদের বাসায় পাঠানো হবে। প্রস্তাবটা জাফর সাহেব নিজে দিয়েছেন। বাসায় জায়গা সংকট থাকায় আর না করেননি জামান সাহেব। আগামীকাল খুব ছোট করে ওয়ালিমা করবে রাফি। বিভিন্ন খরচে তার পক্ষে সম্ভব না বড় করে অনুষ্ঠান করা।
সাদ রিমির রুমেই রিমির জন্য অপেক্ষা করছিলো। রিমি গোসল করে একটা তাতের শাড়ি পরেছে৷ রিমিকে দেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলো সাদ। কিন্তু পিছু পিছু একজন কাজিনকে ঢুকতে দেখে চোখ নামিয়ে নিয়েছে সে।
ঈশার নামাজ থেকে ফিরে এসে সাদকে জামান সাহেবের সাথে গল্পে জমিয়ে রাফি রিমির ঘরে আসে।
রাফি: উহু উহু। আসবো?
রিমি: হ্যা এসো
রাফি প্রবেশ করতেই সালাম দিলো রিমি। রাফি জবাব নিয়ে বললো, “জরুরি একটা কথা বলতে এসেছি। তুই কি ব্যাস্ত?”
রিমি: না তো, বলোনা।
রাফি: রাহি যে কেউকে ভালোবাসে এটা তোকে কে বললো?
রিমি সংকোচের সাথে বললো, “রাহি নিজেই বলেছে। বিষয়টাকে ভুলে যাও ভাইয়া। তবেই তেমরা সুন্দর ভাবে সামনে আগাতে পারবে।”
রাফি: এসব কথা পরে হবে আগে বল তার নাম বা ছবি কিছু জানো তুই?
রিমি: না ভাইয়া। রাহি বলেছে সময় হলে দেখবো।
রাফি: আমার সম্পর্কে তুই ওকে কি বলেছিস?
রিমি একটু থমকে গেলো। তারপর নরম গলায় বললো, “কি বলেছি আমি? যা দেখেছি তাই বলেছি। যদিও তা তোমাদের বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে বলেছি”
রাফি: ওহ বুঝলাম। আচ্ছা শোন আর একটা জরুরি কথা আছে। চুড়িগুলো আমি রাহির জন্যই এনেছিলাম।
রিমি উত্তেজিত হয়ে বললো, “মানে?”
রাফি: মানে পরে বুঝাবো। তবে এটা সত্যি যে ওগুলো আমি রাহির জন্যই এনেছি।।
রিমি: তুমি এই খবর আমাকে এখন বলছো? আমি এখনি রাহিকে বলছি।
রাফি: না তুই কিছু বলবি না। যা বলার আগামীকাল আমিই বলবো। আরও একটা কথা!
রিমি: হ্যা বলো!
রাফি: রাহিও হয়তো আমাকেই পছন্দ করে।
কথাটা বলে এক সেকেন্ডও দাড়ালো না সে। পেছনে রেখে গেলো রিমির অবাক চোখ।
___________________________
রাতের খাবার শেষ করে সাদ রুমে ঢুকে দেখে রিমি বাঙালি পেঁচে শাড়িটা পরে আছে।
সালাম বিনিময়ের পর সাদ বললো, “মাশাআল্লাহ, তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে বউ।”
রিমি মৃদু আওয়াজে বললো “জাজাকাল্লাহ খইরন”
সাদ : আজকেও তোমার মধ্যে জড়তা কেনো? আমাদের বিয়ের চব্বিশ ঘন্টা পেড়িয়ে গিয়েছে। এবার তো আমরা বন্ধু হতেই পারি। কি পারি না?
রিমি: হুম পারি। [কন্ঠে তখনো জরতার আভাস স্পষ্ট ]
সাদ: তোমার খাওয়া শেষ?
রিমি: হ্যা।
সাদ: এতো সুন্দর করে তোমাকে কে শাড়ী পরিয়ে দিলো?
রিমি: ইউটিউব দেখে দেখে রাহি আর আমার বোনেরা পরিয়ে দিয়েছে।
সাদ: ওহ সুন্দর হয়েছে খুব সুন্দর হয়েছে।
রিমি: জাজাকাল্লাহ খাইরান।
সাদ: ওয়া ইয়্যাকি। আচ্ছা আমরা কি আজ রাতটা গল্প করে কাটাতে পারি না?
রিমি: ইনশাআল্লাহ
সাদ: তুমি ক্লান্ত না তো? ক্লান্ত হলে দরকার নেই।
রিমি : ক্লান্ত না আমি।
_________________
রাফি রুমে ঢুকতেই রাহি সামনে এসে দাড়ালো। রাফি অবাক হয়ে বললো, “কি হলো? ”
একটা খাম রাফির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, “আগে এটা নিন।”
রাফি: কি এটা?
রাহি: আগে নিন তো।
রাফি খামটা নিয়ে বললো “এবার বলবে তো এটা কি?”
রাহি: এর মধ্যে পঞ্চাশ হাজার টাকা আছে।
রাফি: আমার কাছে কেনো দিচ্ছো?
রাহি: কালকের অনুষ্ঠানে কাজে লাগবে তাই। বাবার সাথে আলোচনা করে আরো কয়েকজনকে দাওয়াত করতে পারেন।
রাফি: কোন দরকার নেই। যাদেরকে দাওয়াত করার তাদেরকে এমনিই দাওয়াত করেছি। আর এতো রাতে দাওয়াত করলেও এক রাতের মধ্যে এতো বাড়তি কাজ গোছানো সম্ভব না।
রাহি: সম্ভব। আমার একটা বন্ধুর বাবার পার্টি সেন্টার আছে। সেটা বুক করে ফেলবো আমি। আপনি সবাইকে ফোন দিয়ে ঠিকানা দিয়ে দিন আর বাবুর্চিদের মেন্যু বুঝিয়ে দিন। ব্যাস কাজ খতম।
রাফি: সবকিছু ততটা সহজ না যতোটা আমরা ভাবি রাহি। আমরা কেনো হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নিবো? আজ রিমির ওয়ালিমা বড় করে হওয়ায় কি তুমি কষ্ট পাচ্ছো?
রাহি: বিষয়টা একেবারেই এমন না। রিমির ওয়ালিমা সুন্দর হওয়ায় আমি বরং খুশি হয়েছি। আমি ভাবছিলাম আমার কাছে টাকা থাকতেও আমরা কেনো ছোট করে করবো।
রাফি: কারন ওয়ালিমা করা আমার দায়িত্ব আর টাকাটা তোমার।
রাহি মুখ অন্ধকার করে বললো, “হুম”
রাফি রাহির দিকে দু পা এগিয়ে রাহির কাঁধে হাত দিয়ে বললো, “টাকাটা তোমার রাহি। আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি। এটা অন্তত নিজের কাছে রাখো। মন খারাপ করো না। ”
রাহি: আমি মন খারাপ করছি না সত্যি। কিন্তু কেউ যদি আপনাকে কিছু বলে সেটা আমার ভালো লাগবে না। তাই আমি এই টাকাটা দিতে চাচ্ছি।
রাফি: সমস্যা নেই। আমি একটা ব্যাবস্থা ঠিক করে নেবো।
রাহি: আচ্ছা আর একটা কাজ করি?
রাফি: কি?
রাহি: আপনি টাকাটা ধার হিসেবে নেন। পরে নাহয় আমাকে ফেরত দিয়ে দিয়েন!
রাফি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “আচ্ছা দেও, না নেয়া পর্যন্ত তুমি থামবে না।”
রাহি মিচকি হেসে বললো, “ঠিক বলেছেন।”
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here