মধ্যবিত্ত – Part 28

0
169

#মধ্যবিত্ত
#পর্ব_২৮
#নুসরাত_রিতু
সাদকে ফজরের পর আর দেখেনি রিমি। সেই ফজরের পর থেকে অপেক্ষা করছে সাদের জন্য কিন্তু সাদের দেখা নেই। সকালের নাস্তার সময় আয়শা রহমান এর কাছ থেকে জানতে পারে সাদ সকাল সকাল কমিউনিটি সেন্টারে চলে গিয়েছে । ওয়ালিমা বেশ বড় করে হবে তাই ঝামেলাও বেশি।
কমিউনিটি সেন্টারে সকল কাজ সাদকেই দেখতে হচ্ছে। কিছু ভাই বন্ধু সাহায্য করছে বটে কিন্তু দায়িত্ব দেয়ার মতো কেউকে খুজে পায়নি সাদ। মুসলিম পরীবারের বিয়েতে কমিউনিটি সেন্টার যেমন হওয়া উচিৎ এখানেও তেমনই করার চেষ্টা করেছে সাদ।
নিচতলায় রান্না বান্না হবে। দোতলায় বরের স্টেজ আর ছেলেদের বসার ও খাওয়ার জায়গা। তিন তলায় কনের স্টেজ আর মেয়েদের বসার ও খাওয়ার জায়গা। তিন তলার বিভিন্ন জায়গায় লেখা আছে “কনের ছবি তোলা নিষেধ। যদি তুলে থাকেন তাহলে আল্লাহর কাছে জবাব দিতে প্রস্তুতি নিন।”
যদিও আয়শা বেগমের পরামর্শে কনের বসার জয়গার চারপাশে রঙিন কাপড়ের ডেকোরেশন করা হয়েছে। এতে করে দূর থেকে সরাসরি কনেকে দেখাও যাবে না আর ছবিও তোলা যাবে না। যখন কেউ কাছাকাছি যাবে তখন যেনো ছবি তুলতে না পারে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সাদের দুই বিচ্ছু কাজিনকে। যারা দুষ্টুমির তালে তালে খেয়াল রাখবে কনের কেউ ছবি তোলে কিনা। যদি তোলে তাহলে সাথে সাথে আয়শা বেগমকে খবর দেয়া হবে এমনই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের। বিনিময়ে তারা পাবে মজার মজার চকলেট আর রকমারি উপহার।
সাদ যখন বাসায় ফিরলো তখন বেলা এগারোটার বেশি হবে। সকালের নাস্তা তখনও করা হয়নি তার। ঘেমে নেয়ে বাসায় ফিরে দেখে সদ্য গোসল থেকে বোড়িয়ে রিমি আয়নার সামনে চুল শুকানোর চেষ্টা করছে। দড়জার কাছেই স্থির হয়ে গেলো সে। কি কারনে জানা নেই রিমি এখন একটা শাড়ী পরে আছে। হালকা কচুপাতা রঙের শাড়ি, হাতে তোয়ালে, শরীরের দৃশ্যমান জায়গা গুলোয় বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা দেখে জমে গিয়েছে সাদ। নিজের জায়গা ছেড়ে নড়ার শক্তি পাচ্ছে না। বহু বছরের সংযোম এর পর নিজের জন্য হালাল রমনীর দিকে যেকোনো দৃষ্টিতে তাকানোর অধিকার তার আছে। তবুও লুকিয়ে দেখছিলো ভেবে নিজের কাছেই লজ্জিত অনুভব করলো সে।
মৃদুস্বরে কাশির শব্দ করে রুমে প্রবেশ করে সালাম দিলো সাদ। রিমি দ্রুত তোয়ালে ছুড়ে আঁচল টেনে মাথায় তুলে সালামের জওয়াব দিলো। সাদ শুরুতেই অপ্রস্তুত বোধ করায় তেমন কথা না বাড়িয়ে দ্রুত তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। এদিকে রিমি মন খারাপ করে চলে গেলো বারান্দায়। সে ভেবে পেলো না কেনো সাদ তাকে এড়িয়ে চলছে। গতোকাল কি সে ভুল কিছু করেছে। সকাল থেকে খোজ নেই এখন ফিরে এসেও কথা না বলে চলে গেলো দেখে বেশ অভিমান হলো সদ্য প্রেমে পরা রিমির।
গোসল করার পর সাদের মনে পরলো সে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে আসেনি। রিমিকে ডেকে যখন জবাব পেলো না তখন তাওয়েল পরেই বাইরে চলে এলো সে। রুমে ঢুকে অনুষ্ঠান এর উপলক্ষে কেনা পানজাবিটা হাতে নিতে না নিতেই বারান্দা থেকে রুমে প্রবেশ করলো রিমি। সাদকে এমন অবস্থায় দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছে রিমির। এরপর দ্রুত বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়েছে সে।
সাদ প্রথমে একটু লজ্জা পেলেও পরে ভাবলো আজ সেও রিমিকে অপ্রস্তুত ভাবে দেখেছে আর রিমিও সাদকে অপ্রস্তুত ভাবে দেখেছে। শোধবোধ।
___________________________
সকালের নাস্তা করেই রাফি বেড়িয়ে গিয়েছে। উদ্দেশ্য রাহির জন্য ভালো কোন বোরখা কেনা। অনুষ্ঠান উপলক্ষে সবার জন্য টুকটাক কেনাকাটা করা হলেও রাহির জন্য কিছু কেনা হয়নি। অনেক খুজে একটা কালো রঙ এর লং গাউন, ডিজাইনার হিজাব আর একটা সুন্দর নিকাব কিনেছে সে। সকাল সকাল দোকান খোলা না থাকায় তার দেরী হয়ে গিয়েছে। দোকান খোলার পরও পছন্দসই বোরখা পাচ্ছিলো না সে। এদিকে সাড়ে এগারোটার বেশি বাজে তাই যথেষ্ট তাড়াহুরো করেই বাসায় ফিরছে সে।
বাসায় ফিরে দেখে খুশি তৈরি হয়ে তাদের রুমে বসে আছে। রাফিকে দেখেই বললো, “আসসালামুআলাইকুম সার। ওহ সরি আসসালামুআলাইকুম দুলাভাই।”
রাফি মুচকি হেসে বললো, “ওয়াআলাইকুমুসসালাম। কেমন আছো খুশি।”
খুশি: ভালো আছি সার, আমনে কিরম আছেন?
রাফি: কখন এলে তুমি?
খুশি: ইট্টু আগে সার।
রাফি : আচ্ছা বসো তাহলে আমি দ্রুত গোসল সেড়ে নেই।
খুশি: আইচ্ছা।
রাফি দু পা আগানোর পর পুনরায় ফিরে এসে বলল, “আচ্ছা রাহিকে দেখছি না। ও কোথায়?”
” রাহি আপায় তো গোসলে গেছে। খালাম্মা এতো মানা করলো শুনলোই না। খালাম্মা তো কইছিলো সকালে গোসল করছে এহন আর করা লাগবে না কিন্তু আপার নাকি গরম লাগে। বাইরের বাথরুমে সবাই যায় আয় এই জন্য খালাম্মায় আপারে হেগো রুমের বাথরুমে নিয়া গেছে। আর আমারে কইছে রুম পাহারা দিতে। আপায় রেডি হয়ে এক্কেবারে বের হবে।” এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলল খুশি।
রাফি হাতের ব্যাগটা বিছানার এক পাশে রেখে বললো, “আচ্ছা তুমি তাহলে গিয়ে তোমার আপাকে সাহায্য করো কেমন? আমি একটু বিশ্রাম নেবো।”
খুশি “আইচ্ছা ” বলে দৌড় দিলো। সে তার মোবাইল দিয়ে এখন গেমে ঢুকে গেছে। কথা বলে নষ্ট করার মতো সময় তার নেই।
রাফি রাহির জন্য কেনা চুড়িগুলো থেকে কালো চুড়িগুলো বের করে বোরখার ব্যাগে রাখলো। ব্যাগটা খুশির মাধ্যমে রাহির কাছে পাঠাতে পারলে ভালো হতো। সময় মতো কথাটা মাথায় না আসায় সে নিজেই নিজের উপর বিরক্ত বোধ করছে এখন। রাহি যদি বুঝতে না পারে উপহার গুলো তার এটা ভেবে একটা চিরকুটে “তোমার জন্য ” লিখে ব্যাগের উপরে রেখে দিলো রাফি।
পানজাবি পাজামা নিয়ে বাথরুমে ঢোকার সময় একবার উকি দিয়েছে সে আব্বা আম্মার রুমে। কিন্তু রাহিকে দেখতে পায়নি সে। দরজা বরাবর সামনে একটা চেয়ার পেতে মনোযোগ দিয়ে ফোন ঘাটছে খুশি। তাই রাফির এই গোপন অভিযান চোখ এড়িয়ে গেলো তার।
খুশি আসার সময় রাহির জন্য কেনা বোরখা নিয়ে এসেছিলো। রিমির বিয়েতে পরবে করে রাহির জন্য হালকা পিংক রঙ এর বোরখা সাথে ম্যাচিং হিজাব নিকাব কিনিয়েছিলেন সেলিনা চৌধুরী। সেগুলোই পাঠিয়েছেন তিনি।
রাফি গোসল শেষে রুমে গিয়ে দেখে ব্যাগটা আগের জায়গায়ই রাখা। ব্যাগটা তুলে পুনরায় জায়গা মতো রেখে দিলো সে। কিন্তু এই তোলা আর রাখার মধ্যে চিরকুটটা ব্যাগের নিচে পরে গেলো।
বারোটায় রওয়ানা হওয়ার কথা থাকলেও সবার তৈরি হতে হতে সাড়ে বারোটা বেজপ গিয়েছে। সবাই বের হওয়ার জন্য ড্রয়িং রুমে একত্রিত হওয়ার সময় রাফি দেখলো রাহি একটা হালকা গোলাপি রং এর বোরখা পরে আছে। নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here