#মধ্যবিত্ত
#নুসরাত_রিতু
#পর্ব_১৩
রাফি যখন খুব ছোট তখন থেকেই তারা এখানে ভাড়া থাকে। রাফিদের বাসার ঠিক অপজিটে বেশ অনেকটা জায়গা নিয়ে একটা নতুন বিল্ডিং উঠছিলো তখন। আশে পাশে অনেকটা জায়গা ফাঁকা ছিলো যেখানে তারা অনেক ফলের গাছ লাগিয়েছিল। তখন বাড়িটা সুন্দর লাগলেও মাত্র দু-তিন মাস আগে বাড়িটায় যখন পুনরায় কাজ করানো হলো তখন সেটা দেখার মতো হয়েছিল। সেই বাগানের পাশেই একটা সুইমিং পুল এর ব্যাবস্থা করেছে এবার। আর পুরো বাড়িতে লাগিয়েছে নানা ধরনের ফুলগাছ। এর আগে বাসাটা নাকি ভাড়া দেয়া ছিলো আর এবার বাড়িওয়ালা আর কেউকে ভাড়া দিবে না তাই এমন করে সাজিয়েছে বলেই জানত এলাকাবাসী।
রাফিদের বারান্দায় দাড়ালে সামনের বাড়িটা খুব সুন্দর দেখায়। সে দু একদিন দেখেছিলো। আর আজ সে সেই বাড়িটায় দাড়ানো। ছোটবেলা বন্ধুদের সাথে আসলেও বাড়ির কাজ পুনরায় করার পর এই প্রথম সে আসলো।
দারোয়ানই সদর দরজা খুলে দিয়েছিলো। ড্রাইভার, দারোয়ান আর রাফি তিনজন মিলে স্ট্রেচারে করেই জাফর সাহেবকে নিচতলার একটা রুমে নিয়ে গিয়েছে। তারপর এম্বুলেন্স বিদায় দিয়ে যখন সে পুনরায় বাসায় ঢুকলো তখন সে বাড়ির ভিতরটা প্রথমবারের মতো খেয়াল করলো সে। রাহি আর সেলিনা চৌধুরী জাফর সাহেবকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে তখনই বাইরে এসেছে। তিনজনই বাসাটা দেখছে মুগ্ধ হয়ে। চমৎকার করে সাজিয়েছেন বাসাটা জাফর সাহেব।
পুরো বাড়িটা সাদা রং। ভিতরে সাদা আর গোল্ডেনের এক অসাধারণ কম্বিনেশন। লাইটগুলো বিভিন্ন জায়গায় হলুদ আলো ছড়াচ্ছে আর সারা বাড়িতে সাদা আলো। বিশাল বড় ড্রয়িং এর মাঝকানে আছে রাজকীয় সোফা। কিচেনে সকল কিছু আছে কিনা সেটা আগেই দেখে নিলেন সেলিনা চৌধুরী। এবার শুধু রান্নার জিনিসপত্র কিনতে হবে তার। তার শরীর একেবারেই ভালো না দুপুরের খাবার সে বাইরে থেকে আনাবেন তা আগেই ভেবে রেখেছেন।
রাফিকে বসতে বলেছেন সেলিনা চৌধুরী। দু’দিনের চিন্তায় সে ছেলেটার সাথে একটু ঠিক করে কথাও বলতে পারেনি।
সেলিনা চৌধুরী : বাবা তুমি আমাদের যা সাহায্য করেছে তা কখনো ভুলবো না। আপন কেউ না থাকার যে কষ্ট তা এই দুদিনে আমি হারে হারে বুঝতাম যদি তুমি না থাকতে। তোমার এই ঋন আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না বাবা। আল্লাহ তোমার ভালো করুক বাবা।
রাফি: দোয়া করবেন আন্টি। আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।
সেলিনা চৌধুরী: হ্যা বলো?
রাফি: এই বাসার অপজিটে যে বাসাটা তার দো-তলায় আমরা থাকি। এই বাসাটা যে আপনাদের তা আমি জানতাম না যে এই বাসাটা আপনাদের। এখানে এসেই দেখলাম।
সেলিনা চৌধুরী: যাক নিশ্চিন্ত হলাম। আমি চিন্তা করছিলাম নতুন এলাকায় এতো বড় মেয়ে নিয়ে একা কিভাব থাকবো। তোমার আংকেলের অবস্থাও তো দেখছো। তোমরা আছো যেনে ভরসা পেলাম। তুমি বাবা তোমার মায়ের সাথে আমাকে একটু কথা বলিয়ে দেও তো।
রাফি একটু অবাক হলো। হঠাৎ তার মায়ের সাথে সেলিনা চৌধুরী কি কথা বলবেন বুঝলো না সে। তবুও ফোন করে তার মা কে বললো যে তাদের বাসার অপজিটের বাসাটা রাহিদের আর রাহির মা তার সাথে কথা বলতে চায়। রেনু বেগম একটু অবাক হলেন। কি বলবে বুঝলো না সে। তবুও কথা বলতে রাজি হলেন তিনি।
সেলিনা চৌধুরী : আসসালামুআলাইকুম আপা। কেমন আছেন?
রেনু বেগম: ওয়াআলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু আপা।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি কেমন আছেন?
সেলিনা চৌধুরী: আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
রেনু বেগম: ভাই সাহেবের শরীর এখন কেমন? রাফি বললো তার জ্ঞান ফিরেছে।
সেলিনা চৌধুরী: আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে এখন ভালো আছে। হাত আর পা ফ্রাকচার হয়েছে। আর একটা মাইনর এট্যাক হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে দুই মাসের মতো তো লাগবেই।
রেনু বেগম: আল্লাহ পরীক্ষা নিচ্ছেন আপা। ভরসা হারাবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।।
সেলিনা চৌধুরী : জি আপা। যা বলতে ফোন করা তাই তো বলা হলো না। আপা রাফি আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। আমি চাই আগামীকাল রাতের খাবারটা আমরা একসাথে খেতে। ছেলেটাকে নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ানের সুযোগ আমার হয়নি। আর কারা এমন ভালো ছেলের বাবা মা তাদের সাথে পরিচিত হতে চাই। তাই আপনারা সবাই কাল রাতে অবশ্যই আমাদের সাথে ডিনার করবেন আপা।
রেনু বেগম কি বলবেন বুঝতে পারলেন না। এতো বছরের সংসারে সে তার স্বামীর থেকে না জিজ্ঞেস করে কিছু করেননি। তার স্বামী বিচক্ষণ মানুষ তিনি যা বলেন রেনু বেগম সেই কাজই করেন।
রেনু বেগম: আপা আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না। আমি রাফির বাবার সাথে কথা বলি। সে কি বলে দেখি তারপর রাফির মাধ্যমে আমি আপনাকে জানাবো।
সেলিনা চৌধুরী : আমি তাহলে আপনার ফোন নাম্বার রেখে দিচ্ছি আপা। আমি রাতে আবার কল করবো ইনশাআল্লাহ।
রেনু বেগম : আচ্ছা আপা। রাখি তাহলে?
সেলিনা চৌধুরী : জি আপা। আসসালামুআলাইকুম। আশা করি জবার হিসেবে হ্যা শুনবো।
রেনু বেগম : ইনশাআল্লাহ। ওয়াআলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
ফোনটা কেটে সেলিনা চৌধুরী খুব জোড় দিয়ে বললেন রাফিকে। রাফি বললো কাল সে অফিসে জয়েন করবে। হয়তো আসতে আসতে দেরী হয়ে যাবে। প্রথম দিন কেমন যাবে সে সম্পর্কে তার কোন ধারনাও নেই। সেলিনা চৌধুরী তা মানলেন না। তিনি বললেন রাত বারোটায় আসলেও সমস্যা নেই। তবে আসতে হবেই। শেষে জোড় দিয়ে বললেন, “সবসময় তো এক মায়ের হাতের রান্না খাও, আজ অন্য মায়ের আবদার রাখবে না?” এর পরে রাফি আর না করতে পারেনি।
সেলিনা চৌধুরী দারোয়ানকে দিয়ে বাসার সকল বাজার করানোর জন্য গেলো। দারোয়ানকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে। নাহলে কি না কি রেখে আসে আল্লাহ জানে। ঐদিন রাহি অনেক বাজার করেছিলো। মেয়েটার প্রথম করা বাজার কেউ খেতে পারেনি ন্যান্সির জন্য৷ আল্লাহ ন্যান্সিকে হেদায়েত দান করুন। এসব ভাবতে ভাবতেই সেলিনা চৌধুরী বাড়ির সামনের দিকে গেলো।
ড্রয়িং রুমে এখন রাহি আর রাফি বসা।
রাহি: কংগ্রাচুলেশন স্যার।
রাফি: ধন্যবাদ।
রাহি: আপনি কিন্তু কাল অবশ্যই আসবেন। রিমিকেও নিয়ে আসবেন। ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।
রাফি: চেষ্টা করবো। তোমার পড়াশোনায় ফাঁকি দিও না। তোমার অন্য সাবজেক্টের টিচারদের ফোন করে এই বাসার ঠিকানা দিয়ে দেও। আবার পড়া শুরু করো।
রাহি: পরশু থেকে শুরু করবো ইনশাআল্লাহ।
রাফি: আচ্ছা।
এমন সময় সেলিনা চৌধুরী আবার ফিরে আসলেন।
রাফির দিকে তাকিয়ে বললো ” বাবা আরেকটু সাহায্য করতে হবে যে। রাহিকে সাথে নিয়ে একটা হুইল চেয়ার আর তোমার আংকেলের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসতে পারবে? আসলে দারোয়ানকে বাজারে পাঠিয়েছি। যেহেতু এখানে কিছুই নেই তাই অনেক বাজার করতে হবে তাকে। এগুলোর কথা বললে সে পারতো না”
রাফি: অবশ্যই আন্টি।
সেলিনা চৌধুরী : রাহি তুই তাহলে তোর বাবার সাথে একটু দেখা করে বেড়িয়ে পর। নাহয় তুই যাওয়ার পর তোর বাবা আবার তোকে খোজাখুজি করবে।
রাহি: আচ্ছা মা।
রাহি মনে মনে খুব খুশি। রাফি আশেপাশে থাকলেই সে খুশি খুশি থাকে। এমনিই মনটা ভালো হয়ে যায় তার। তাই সে জলদি গিয়ে বাবার সাথে কথা বলে আসলো। তবে বাইরে যাওয়ার কথাটা তাকে জানালো না। জানলে টেনশন করবে।
সেলিনা চৌধুরী এই ফাঁকে রাফির হাতে একটা খাম দিলো। খামটায় টাকা আর লিস্ট আছে। রাফি খামটা নিয়ে পকেটে ভরে রাখলো। আর সেলিনা চৌধুরী বলে দিলেন দুপুরের খাবার কিনে আনতে। শুধু জাফর সাহেবের জন্য দুপুরে রান্না করবেন তিনি। আর সবার জন্য বাইরের খাবার আনতে বলে দিয়েছে।
চলবে………