স্মৃতিতে তোমার বন্দনা – Part 2

0
403

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_২
#Saji_Afroz
.
.
মধ্য রাতে হঠাৎ নয়নতারার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয় । তার মনেহচ্ছে কপালের রগগুলোতে রক্তের প্রবাহ হঠাৎ বেড়ে গিয়ে শিরাগুলো ফুলে উঠেছে । মাথা চেপে ধরে শোয়া থেকে উঠে বসলো নয়নতারা ।
এভাবে কতক্ষণ যে কেটে গেলো টের পেলোনা সে । যন্ত্রনার তীব্রতা যখন কমে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে এলো, তখন সে চেঁচিয়ে বললো-
আমার জন্য এক গ্লাস পানি এনে দে ছোঁয়া ।
.
পরক্ষণেই তার মনে পড়লো বাড়িতে কেউ নেই । হাসপাতালে রয়েছে মা ও বোন । তাই বাধ্য হয়ে নিজেই উঠলো ।
পানি পান করে বারান্দায় আসলো সে । এই শীতেও তার শরীর ঘেমে গিয়েছে । বাইরে ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে । চাঁদটা দেখতেও বেশ সুন্দর লাগছে আজ । তারাগুলো দেখলে মনেহয় তার সাথে কথা বলতে চায়ছে ।
নয়নতারা আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো-
ভালোবেসে বাবা আমার নাম দিয়েছিলো নয়নতারা! বাবা থাকতে কোনো কষ্ট পেতে হয়নি । কেনো বাবা ওপারে চলে গেলো? কেনো!
.
দুফোটা জল নয়নতারার চোখ বেয়ে ঝরে পড়লো । এই জল যেনো শেষ হবার নয়….
.
.
ঘুম আসছেনা পরশের । মাথায় শুধুই ছোঁয়ার নামই ঘুরপাক খাচ্ছে । এই কি হয়ে গেলো তার সাথে? প্রেমে পড়লো সে? তাও প্রথম দেখায়! সত্যিই কি পড়েছে? নাকি শুধুই মোহ?
.
শোয়া থেকে উঠে পড়লো পরশ । কেনো যে আজ সে বাড়িতে চলে এলো । হাসপাতালেই থেকে গেলেই পারতো । কোনো বাহানা বের করে ছোঁয়ার সাথে আবারো কথা বলতে পারতো সে ।
টেবিলের উপর থেকে ওয়ালেটটি হাতে নিলো পরশ । এই ওয়ালেটে ছোঁয়ার ছোঁয়া রয়েছে । এই ভেবে ওয়ালেটের উপরে চুমু খেলো পরশ । আয়নায় চোখ পড়তেই লজ্জা পেলো সে । আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে বললো-
ভালোবেসে প্রথম চুমু দিলি শেষমেশ এই ওয়ালেটকে?
.
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে হেসে ফেললো পরশ ।
মিনমিনে স্বরে বললো-
হ্যাঁ প্রেমে পড়েছি আমি, ছোঁয়ার প্রেমে পড়েছি । ভালোবাসি ওকে!
.
.
সকালের নাস্তা সেরেই বেরিয়ে যাচ্ছে পরশ । সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
এতো সকালে কোথায় যাচ্ছিস?
-হসপিটালে ।
-এখন! তোর পেশেন্ট দেখার সময় তো রাতে ।
-এখন না গেলে আমি নিজেই পেশেন্ট হয়ে যাবো মা ।
-মানে? শরীর খারাপ লাগছে? কি হয়েছে আমাকে বল । আমিও যাবো সাথে ।
-আরে তোমার ব্যস্ত হবার প্রয়োজন নেই । এই রোগ সেই রোগ না ।
-তবে কি রোগ?
.
বেরিয়ে যেতে যেতে পরশ জবাব দিলো-
প্রেম রোগ ।
.
পরশের কথা শুনে হাসতে লাগলেন সাফিনা আহম্মেদ ।
পেছন থেকে তার স্বামী শফিউল আহম্মেদ বললেন-
তোমার ছেলে কি প্রেমে পড়লো এই বুড়ো বয়সে?
.
স্বামীর দিকে তাকিয়ে মুখটা বাঁকিয়ে তিনি বললেন-
আসছে বুড়োর বাপ! হ্যাঁ পড়েছে । কোনো সমস্যা?
-তোমার প্রথম ছেলেও প্রেমের চক্করে পড়ে আমাদের ভুলে গিয়েছে কিন্তু ।
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
তাতে কি? সে ভালো থাকলেই হলো ।
-পরশও যদি…
-সবাই এক না । ফারুকের কর্মের জন্য আমরা পরশের ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে পারিনা । ভেবোনা এতো ।
.
.
অনেকক্ষণই হলো কেবিন ৭০৩ এর সামনে পায়চারী করে চলেছে পরশ । একজন নার্স এসে বললো-
স্যার বেশ কিছুক্ষণ হলো আপনাকে দেখছি । কোনো সমস্যা বা কিছু লাগবে?
-আমার আত্নীয় ৭০২ এ আছে । তাই আছি এখানে ।
-ওহ আচ্ছা! তা ডাকছেন না কেনো তাদের?
.
হালকা কেশে পরশ বললো-
আপনি আপনার ডিউটি পালন করুন । কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমি জানাবো ।
-ওকে ।
.
নার্স চলে গেলেও খানিকটা লজ্জা পেলো পরশ ।
আসলেই এভাবে কেবিনের সামনে হাঁটাহাঁটি করাটা দৃষ্টিকটু মনেহচ্ছে ।
কিছুক্ষণ নাহয় চাচার কেবিনেই সময় কাটানো যাক । এই ভেবে নক করলো সে ৭০২ এ ।
ভেতর থেকে দরজা খুলে দিলো তার চাচার ছেলে শহীদ ।
পরশকে দেখে সে বললো-
আরে ভাই তুই!
-চাচাকে দেখতে এলাম ।
-ভেতরে আয় ।
.
তারা ভেতরে প্রবেশ করে দরজা আটকাতেই, পাশের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো ছোঁয়া ও রুপালি ।
ছোঁয়া বললো-
আসার জন্য ধন্যবাদ রে । কাল থেকে এসব ভারী জামাকাপড় পরে থাকতে আমার কি যে অস্বস্থি কাজ করছে জানিস না । আমার বাসায় গিয়ে নিজের বাথরুমে গোসল না করা পর্যন্ত শান্তি লাগবেনা । তাছাড়া মায়ের জন্যও কাপড় আনতে হবে ।
-হ্যাঁ তুই ফ্রেশ হয়ে আন্টির জন্য কি কি আনবি নিয়ে আয় । আমি আছি এখানে । কোনো সমস্যা নেই ।
-ঠিক আছে, আমি গেলাম ।
.
পরশের মনেহচ্ছে ছোঁয়ার কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছে সে । তাড়াহুড়ো করে দরজা খুললো পরশ । কিন্তু ছোঁয়ার দেখা পেলোনা । রুপালিকে দরজার পাশে দাঁড়ানো দেখলো ।
পরশ বললো-
৭০৩ এর রোগী কেমন আছে?
.
কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে রুপালি বললো-
জ্বী জ্বী, আগের চেয়ে বেটার এখন ।
-ওহ! আপনি একা কেনো? সাথে কেউ নেই?
-ছোঁয়া মাত্রই বাসায় গেলো ।
.
হতাশ হয়ে পরশ বললো-
কবে ফিরবে?
-দুপুরের দিকে ।
.
পরশের উদ্দেশ্যে শহীদ বললো-
কিরে? কোনো সমস্যা? এভাবে তাড়াতাড়ি করে দরজা খুললি কেনো?
-না, কিছুনা ।
.
নিজের উপর রাগ হতে থাকলো পরশের । কেনো যে সে কেবিনে ঢুকে পড়েছিলো! অল্প সময়ের ব্যবধানের জন্য ছোঁয়ার দেখা পেলোনা সে ।
.
.
দুপুরের খাবার খেতে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে এলেন শফিউল আহম্মেদ ।
সাফিনা আহম্মেদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন-
তোমার ছেলে আসেনি?
-এতোক্ষণে নিশ্চয় প্রেমিকার সাথে রেস্টুরেন্ট বসে আছে লাঞ্চ করার জন্য ।
-মোটেও না ৷ এতো সহজ নাকি প্রেম! সবেতো প্রেমে পড়লো । পটাতে হবেনা মেয়েকে?
-তোমার এতো অভিজ্ঞতা কেনো? আমরা কিন্তু প্রেম করে বিয়ে করিনি ।
-বিয়ের আগে আমি প্রেম করেছি । কতো ছিলো আমার টিনা, মিনা, শিলা! তোমার ছেলেদের মতো নাকি! একটা মেয়ে নিয়ে উধাও, আরেকটা মেয়েই জোগাড় করতে পারলোনা এতোদিনে ।
.
স্বামীর কথার পিঠে কোনো জবাব না দিয়ে, পরশকে ফোন করলেন সাফিনা আহম্মেদ ।
এদিকে পরশ নিজের কেবিনে চেয়ারে বসে ঘুমোচ্ছিলো বেঘোরে ।
রিংটোনের শব্দে ঘুমটা ভাঙলে ফোন রিসিভ করে বললো-
হ্যাঁ মা বলো?
-তোরা কি রেস্টুরেন্টে?
-কারা?
-আরে তুই আর তোর প্রেমিকা ।
-রেস্টুরেন্টে কেনো হবো?
-লাঞ্চ করার জন্য ।
.
চোখ কচলাতে কচলাতে পরশ বললো-
দুপুর হয়ে গিয়েছে?
-মানে?
.
হঠাৎ পরশের মনে পড়লো ছোঁয়ার কথা । সে দুপুরে আসবে বলেছে হাসপাতালে । আর সে নিজেই কিনা বেঘোরে ঘুমোচ্ছে! রাতে ঘুম না হবার ফল এটা ।
মায়ের উদ্দেশ্যে পরশ বললো-
আমি পরে কথা বলছি মা । তোমরা খেয়ে নাও ।
.
ফোন রাখতেই শফিউল আহম্মেদ বললেন-
কি বললো?
-বিশেষ কিছু নয় । তোমার ছেলে প্রেমের তালে পড়ে ভুলেই গিয়েছে দুপুর হলো!
.
.
দ্রুতবেগে ৭০৩ কেবিনের সামনে আসলো পরশ ।
আর যেনো অপেক্ষা করতে পারছেনা সে । কিছু না ভেবেই দরজায় টোকা দিলো ।
ওপাশ থেকে নয়নতারা দরজা খুলে বললো-
কাকে চায়ছেন?
-ছোঁয়া নেই?
-আমি ওর বোন নয়নতারা । কোনো প্রয়োজন?
-পেশেন্টের কি অবস্থা জানতে এলাম ।
-আপনাকে ঠিক চিনলাম না ।
-কাল পরিচয় হয় আমার ছোঁয়ার সাথে । আমিও ডাক্তার ।
-ও আচ্ছা! ভেতরে আসুন না ।
-না থাক ।
.
চায়তেও ছোঁয়ার ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞাসা করতে পারলোনা পরশ । ছোঁয়া কেনো এলোনা!
এই ভাবতে ভাবতে হতাশ মনে চেম্বারে ফিরে এলো সে ।
.
আফিয়া জান্নাত জিজ্ঞাসা করলেন-
কে এসেছে নয়ন?
-ডাক্তার । ছোঁয়ার খোজ করলো । কাল পরিচিত হলো বললো । খবরাখবর নিতে এলো ।
-ওহ! তা তুই এলি যে? ক্লাস নেই আর?
-ছুটি নিয়েছি । তোমাকে হাসপাতালে রেখে ক্লাসে মন বসছেনা । তাই ছোঁয়ার বদলে আমিই চলে এলাম । সবাই একসাথে এখানে কি করবো । আমি গেলে নাহয় ও আসবে ।
-ভালো করেছিস । তবে আমার এখানে থাকার আর কি প্রয়োজন? ভালোই তো আছি ।
-রাফসান বলেছে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত থাকতে ।
-আমি সুস্থই আছি ।
-শরীর দূর্বল এখনো তোমার ।
-রাফসান টা কেনো যে আমার ছেলে হলোনা!
-মেয়ের জামাই তো হবে ।
.
কথাটি বলে মৃদু হাসলো নয়নতারা ।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here