স্মৃতিতে তোমার বন্দনা – Part 3

0
196

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৩
#Saji_Afroz
.
.
হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ছে ছোঁয়া । এমন সময় বাড়ির মালকিন রাজিয়া খাতুন এসে বললেন-
কই যাও ছোঁয়া?
-হাসপাতালে যাচ্ছি ।
-মায়ের অসুখ শুনলাম ।
-জ্বী,।
-তা মাসের কয় তারিখ আজ মনে আছে? ভাড়াটা বাকি আছে ।
-এই মাসে খরচা বেশি হয়েছে আন্টি তাই…
-এই এলাকায় ভাড়া কম । শহরের দিকের বাসা গুলোর ভাড়া জানো? তাও যদি সঠিক সময়ে না দিতে পারো ।
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ছোঁয়া বললো-
আমি আপুকে বলবো ভাড়ার কথা ।
-তাড়াতাড়ি দিতে বলিও । আমার শপিং করতে হবে ।
.
পেছন থেকে নয়নতারা বলে উঠলো-
আন্টি আপনার ভাড়াটা নিন ।
.
পেছনে ফিরে নয়নতারা ও আফিয়া জান্নাতকে দেখতে পেলেন রাজিয়া খাতুন ।
একগাল হাসি নিয়ে বললেন-
চলে এসেছো তোমরা!
-হু, ভাড়াটা নিন ।
.
নয়নতারার হাত থেকে টাকা নিয়ে চলে গেলেন রাজিয়া খাতুন ।
ছোঁয়া বললো-
তোমরা চলে এলে যে?
-মা জেদ করে চলে এসেছে । ওতো দামী হাসপাতালে থাকতে চায়ছেনা ।
.
ভেতরে প্রবেশ করতে করতে আফিয়া জান্নাত বললেন-
আমি ঠিক আছি । ওখানে থেকে রাফসানের টাকা নষ্ট করে কি লাভ । সেতো আমাদেরই ঘরের ছেলে ।
.
ছোঁয়া জিজ্ঞাসা করলো-
সব খরচ উনি দিয়েছে আপু? কেনো?
-আমি দিলে বাড়ি ভাড়া দিতাম কি করে! আচ্ছা এসব কথা পরে হবে । ফ্রেশ হয়ে আসি আমি ।
.
ছোঁয়ার রাগ হতে থাকলো নিজের উপর । আর কতো রাফসানের সাহায্য নিবে তারা!
.
.
সেই দুপুর থেকে কতোবার যে পরশ ৭০৩কেবিনের সামনে গিয়েছে তার হিসেব নেই । একটা বারের জন্যও ছোঁয়ার দেখা পেলোনা সে । বেশকয়েকবার নয়নতারাকে দেখেছে, আর দেখেছে বন্ধ দরজা! তবে কি ছোঁয়া এখনো আসেনি?
চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো পরশ । আবার উপরে উঠে ৭০৩ এ যেতে হবে তার ।
দরজা খুলতেই দেখতে পেলো, তার রোগীরা লাইন ধরে বসে রয়েছে । এখন তার রোগী দেখার সময়!
ভেতরে ঢুকে পড়লো পরশ । রোগী দেখেই নাহয় যাওয়া যাবে ।
.
.
উঠোনে বসে আছে ছোঁয়া । হঠাৎ আগমন রাফসানের । রাফসানকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো সে । রাফসান বললো-
নয়নতারা কেনো আন্টিকে নিয়ে আসলো বলোতো? আজকের রাতটা অন্তত থাকতে পারতো ।
.
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে ছোঁয়া বললো-
আপনি একটু এখানেই দাঁড়াবেন? ভেতরে আসবেন না প্লিজ এখন ।
-কেনো?
-দাঁড়ানই না প্লিজ!
-ওকে ।
.
ছোঁয়া দুই মিনিটের মধ্যেই এসে, রাফসানের দিকে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো-
এখানে পাঁচ হাজার টাকা আছে । টিউশনিতে পেয়েছিলাম । জমিয়ে রেখেছি । এগুলো রাখুন ।
-কেনো?
-হাসপাতালের খরচ । প্লিজ বাসায় কাউকে বলবেন না ।
.
মুচকি হেসে রাফসান বললো-
তুমি কি জানো কতো খরচ হয়েছে? পাঁচ হাজারে কি হবে!
.
কথাটি শুনে ছোঁয়ার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো ।
তার মুখের দিকে তাকিয়ে রাফসান বললো-
বড় হয়ে নাও । আস্তেধীরে শোধ করবে । সমস্যা নেই ।
-এখন থেকেই শুরু করি । এগুলো রাখেন ।
-পিচ্চি মানুষের কাছ থেকে এসব নিতে নেই ।
-কে বলেছে আমি পিচ্চি? আমার সমান মেয়েদের বিয়ে হয়েছে কতো!
.
রাফসানকে নিশ্চুপ দেখে মিনমিনে স্বরে সে বললো-
বাচ্চাও আছে ।
.
এবার রাফসান শব্দ করে হেসে উঠলো । তার হাসির শব্দে নয়নতারা বেরিয়ে এসে বললো-
রাফসান কখন এলে?
-এইতো এখুনি । তোমার ছোট বোন কি করছে দেখো ।
-কি?
.
ছোঁয়া ইশারায় রাফসানকে এসব বলতে নিষেধ করলেও সে বলতে শুরু করলো-
টিউশনী করে টাকা জমিয়েছে, এসব আমায় দিতে চায়ছে । হাসপাতালের খরচ হিসেবে । আচ্ছা নয়নতারা? আমি কি তোমাদের পর?
.
ছোঁয়া দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো ।
নয়নতারা বললো-
তুমি তো জানোই ছোঁয়ার স্বভাব । কিছু মনে করোনা ।
-শুধু ছোঁয়া না । তুমিও পর ভাবো । আজই আন্টিকে নিয়ে আসলে কেনো?
-আন্টি নিজেই এসেছেন । বাদ দাও এসব । ভেতরে এসোতো ।
.
.
রোগী দেখার পরে ৭০৩কেবিনের সামনে এলো পরশ । কিন্তু শূন্য কেবিন দেখে তার মনটায় খারাপ হয়ে গেলো । আশেপাশে তাকিয়ে একজন নার্সের উদ্দেশ্যে সে বললো-
উনারা কখন গিয়েছে?
-বেশকিছুক্ষণ হচ্ছে স্যার ।
-ওহ!
.
কিছুক্ষণ খালি কেবিনটার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে পড়লো পরশ । আজ সারাদিন এতো ধকলের পরেও ছোঁয়ার একটু দেখা পেলোনা সে । তবে কি আর কখনো ছোঁয়া নামক মেয়েটির দেখা পাবেনা পরশ?
.
.
রাফসান বেরুতেই আফিয়া জান্নাত চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন-
ছিঃ ছিঃ ছিঃ! ছোঁয়া এটা কি করলো? ছেলেটা কি মনে করবে? আমরা কি ওর টাকা শোধ করতাম না! এসব করার কি দরকার ছিলো ছোঁয়ার?
.
নয়নতারা বললো-
আহ মা! অসুস্থ শরীর নিয়ে এতো উত্তেজিত হয়ে কথা বলো নাতো ।
-কি করবো তাহলে? এই মেয়ের মাথায় কি বুদ্ধিসুদ্ধি কিছু নেই! কদিন পরেই এই বাড়ির জামাই হবে ছেলেটা । এমন ব্যবহার কেউ করে?
-রাফসান কিছু মনে করেনি ।
-ও ভালো ছেলে বলেই কিছু মনে করেনি । এতো টাকা খরচ করে মাত্র ৫হাজার টাকা দিচ্ছে মেয়ে তাকে । আমি হলে ওর মুখের উপর ছুঁড়ে মারতাম ।
.
নিজের রুমের দরজা শব্দ করে বন্ধ করলো ছোঁয়া ।
তার মা বললো-
দেখেছিস নয়ন? দিন দিন কেমন বিগড়ে যাচ্ছে মেয়েটা!
.
বিছানার উপরে বসলো ছোঁয়া । চোখ বেয়ে পড়ছে পানি । সেতো কারো দয়া নিতে চায়না। তাহলে বারবার কেনোই কারো না কারো দয়ায় দিন পার করতে হয়? এসবের থেকে কি কখনো মুক্তি পাবেনা সে! আজ মা আর বোনও ভুল বুঝলো তাকে। তাকে বুঝবে, এমন কারো দেখা কি সে কখনো পাবেনা?
তার মায়ের চেঁচানোর শব্দ এখনো ভেসে আসছে । দুহাতে কান চেপে ঝুঁকে পড়লো সে বালিসের উপরে ।
.
.
হতাশ মনে বাসায় ফিরে আসলো পরশ ৷ তাকে ঢুকতে দেখেই সাফিনা আহম্মেদ এসে বললেন-
কেমন কাটলো রে দিন আজ?
-তিন তলা থেকে সাত তলায় উঠতে নামতে অবস্থা কাহিল আমার । যদিও লিফট ছিলো ।
-সে কি রে! আমি ভেবেছি প্রেমিকার সাথে বাইরে ঘুরছিস ।
-তুমিও না মা! প্রেমিকা হলে বলতাম তোমায় ।
-হয়নি?
-না ।
-তবে কাহিনী কি?
.
নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে পরশ বললো-
দুপুরে খাইনি আমি । ক্ষিদে পেয়েছে ।
.
সাফিনা আহম্মেদ কিছুই বুঝতে পারলেন না । শফিউল আহম্মেদ এসে হেসে বলে উঠলেন-
ছ্যাকা খেয়েছে তোমার ছেলে । বলেছিনা, মেয়ে পটানো এতো সহজ নয় ।
-তুমি এতো খুশি হচ্ছো যে?
-কারণ আমি চাই, আমার পছন্দের কোনো মেয়েই পুত্রবধূ হয়ে আসুক ।
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here