একজন দায়িত্ববান পুরুষ

0
437

(বাসর রাত)
বিয়ে টা জোর করে দেয়া হয়। পরিবারের চাপে ও বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে কাউকে বুঝতে দেইনি আমি ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করছি।
বিয়ের দিন রাতে আমার স্বামী যখন রুমে আসে ভয়ে আমি কাঁদতে থাকি। এই দৃশ্য দেখে সে ভাবে হয়তো পরিবারের জন্য। তখন সে সান্ত্বনা দেয়। আমার স্বামী দেখতে মোটা কালো এটা দেখে আরও মন ভেঙে যায়।
কলেজের সবার ক্রাশ, স্কুলের সবচেয়ে সুন্দরী, এমন নাম পেয়ে আসা মেয়েটার কপালে এরকম একজন জুটবে কখনো কল্পনাও করিনি। ভয় কাটিয়ে উঠে তাকে স্পষ্ট বলে দেই আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা টাও যেনো না করে।
অবাক হলাম সে কিছু না বলে চুপচাপ ফ্লোরে শুয়ে পড়লো। কেমন যেনো একটা খারাপ লাগা কাজ করলো। রাত প্রায় ৩টা বাজে তখন ঘুম আসছিলো না। হঠাৎ শুনতে পাই হাল্কা কান্নার শব্দ।
বুঝতে বাকি রইলো না সে কাঁদছে। তখন প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছিলো। পুরুষ হয়ে আবার নেকা কান্না কাঁদবে কেন। জিজ্ঞেস করলাম সমস্যা কি দেখি একদম চুপ হয়ে গেছে। আবার জিজ্ঞেস করলাম উত্তর নাই।
নিজেই নিচে গিয়ে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম কান্না করার কি আছে?- “আমি কখনো রিলেশন করার কথা চিন্তাও করিনাই কারণ আমি জানি আমাকে কেউ পছন্দ করবেনা। পরিবার থেকে বার বার মেয়ে দেখতো আর মেয়ে পক্ষ আমাকে দেখ মানা করে দিতো৷ আমি খুবই অপমানিত ফিল করতাম। তারপর বাবা মা কে অনুরোধ করি আর মেয়ে না দেখতে আমি বিয়ে করবো না। আজকে আপনার সাথে আমার সব ঠিক করেছে। কিভাবে কি হয়েছে আমি কিছুই জানিনা। তবে এতটুকু আমি নিশ্চিত যে আমাকে দেখার পর আপনি রাজি হবেন না। আর আপনার মতামত জানতে চাইবো সেই যোগ্যতাও আমার নাই। আমাকে সৃষ্টি করছেন আল্লাহ্ এখানে আমার কোনো হাত নাই তবুও আমাকে প্রতিনিয়ত ভুগতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে তাই আমি কাঁদছি।)
উনার এমন কথা শুনে কেমন জানি একটা মায়া কাজ করলো৷ তবে তখনও উনাকে মেনে নিতে পারিনাই। এভাবেই চলতে থাকে সব। বেশ কিছুদিন পার হয়ে যায়। বন্ধুবান্ধবদের অনেকেই দেখতে চায় কিন্তু আমি লজ্জায় দেখাতাম না।
একদিন খবর পাই আমার কাজিনের ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওরা তো ভালোবেসে বিয়ে করেছে তাহলে ডিভোর্স কেন? পরবর্তীতে জানতে পারলাম ছেলে প্রায়ই তাকে অ’ত্যা-চার করতো। সেদিন থেকে একরকম ডিপ্রে-শনে চলে যাই। একটা সময় অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে যাই যে হাসপাতালে এডমিট করতে হয়।
যেদিন রাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেদিন পুরো একটা রাত আমার স্বামী না ঘুমিয়ে আমার পাশে বসেছিলো। উনাকে একবার বলেই দিলাম গিয়ে ঘুমান উনি কোনো উত্তর না দিয়ে বসে রইলো। এর মাঝে আমার অক্সিজেন লেভেল অনেকটা কমে যায়।
প্রায় ১২ঘণ্টা মৃ-ত্যুর সাথে ফাইট করি। এরপর যখন কিছুটা স্বাভাবিক হই দেখি আমার চোখের সামনে সবাই। সবাই আমাকে কিছুটা স্বাভাবিক হতে দেখে সুস্থির নিশ্বাস ছাড়লো। কিন্তু খেয়াল করলাম আমার স্বামী বাচ্চাদের মত কাঁদছে সেই বাসর রাতের মতই।
সেদিন প্রথম বার সে আমাকে স্পর্শ করে কারণ আমি নিজেই তাকে কাছে আসতে বলি এবং বসে থেকেই জড়িয়ে ধরি। সেদিন থেকে টানা এক সপ্তাহ সে নিজ হাতেই আমাকে খাইয়ে দিয়েছে আমার প্রতিটা কাজ সে বলার আগেই করে দিচ্ছে।
হঠাৎ খেয়াল করলাম এই মানুষটার প্রতি কেমন যেনো একটা ভালোবাসা ও দুর্বলতা কাজ করছে। আর যাকে একরকম ঘৃ-ণা লাগতো দেখতে তাকেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ লাগছে। সেদিন খাওয়াতে যখন আসলো হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে আমি নিজেই খাওয়া শুরু করি সে কিছু না বলে মন খারাপ করে চলে যাচ্ছিলো।
আমি মুচকি হেসে ডাক দিয়ে বললাম এদিকে আসেন, বসেন। এরপর আমি তাকে খাইয়ে দিলাম। সেদিনও সে আবার কান্না করে দিয়েছে। মানে এই মানুষটা শুধু কাঁদেই কাঁদেই। এরপর আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম আজকের পর থেকে যদি আর কোনোদিন কাঁদতে দেখি একদম ছেড়ে চলে যাবো।
সবশেষে একটা কথাই বলবোঃ- একজন সুদর্শন পুরুষ থেকে একজন দায়িত্ববান পুরুষ হাজার গুণ সুন্দর।💘

THE END

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here