এ তুমি কেমন তুমি-অন্তিম পর্ব

0
540

#এ_তুমি_কেমন_তুমি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
অন্তিম পর্ব
ছাদে দাড়িয়ে কফি খাচ্ছে লিজা আর তুলি। লিজা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তুলি তাকিয়ে আছে লিজার দিকে। তুলি একটু চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। এমন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা তার ভালো লাগছে না। লিজাকে কিছু বলবে তার আগেই হাতের ফোন বেজে উঠলো। ভিডিও কল দিয়েছে তুলির ভাইয়া।
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, কেমন আছো তুমি?”
লিজা একবার ঘুরে তাকালো তুলির দিকে তারপর আবার সামনে তাকালো। বাড়ির সবার কথা খুব মনে পড়ছে তার। আজ দু’দিন হলো লিজা এখানে আছে। বাবার সাথে কথা হলেও মা একবারও কল দেয়নি তাকে। হয়তো রাগ করে আছে।
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি বোনু। তুই কেমন আছিস সেটা বল?”
“আলহামদুলিল্লাহ আমিও অনেক ভালো আছি।”
ভ্রু কুঁচকে তাকালো তুহিন। তুলির বড় ভাই তুহিন মাহমুদ। তুলির থেকে প্রায় আট বছরের বড় তুহিন। বছর পাঁচেক আগে গাড়ি এক্সিডেন্টে তুলির বাবা-মা দু’জনেই মারা গেছে। তারপর থেকে দুই ভাইবোন একে অপরের সব। তুহিন নিজেও ডাক্তার, ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করেই দুই বছরের জন্য দেশের বাইরে গেছে। কেবল চার মাস হয়েছে তুহিন বাইরে গেছে। এই চারমাসে আজ প্রথমবার তুলিকে খুশি লাগছে তুহিনের কাছে।
তুহিন মুচকি হেসে বললো, “কী ব্যাপার বোনু? তোকে আজ একটু বেশি হ্যাপি লাগছে? আমি গত দুইদিন তোকে কল করতে পারিনি। ভেবেছি অনেক রেগে আছিস কিন্তু এখন তো দেখছি উল্টো।”
তুলি একটু মন খারাপ করে বললো, “তুমি কল দাওনি তার জন্য একটু খারাপ লেগেছে তবে বেশি না। কারণ আমি তো একা ছিলাম না।”
“একা ছিলি না মানে?”
তুলি বেশ উৎফুল্লের সাথে সব ঘটনা খোলে বললো। বোনের কথা শুনে মুচকি হাসলো তুহিন।
“বোনু এত খুশী হয়ে লাভ নেই। মেয়েটা রাগ করে এসেছে বাড়ি থেকে। রাগ পরে গেলেই চলে যাবে। তখন তোর খারাপ লাগবে। আমি তো শায়লা আন্টিকে বলেছিলাম সে যেনো আমাদের বাসায় থাকে। সে থাকছে না নাকি?”
“শায়লা আন্টি থাকে আবার মাঝে মধ্যে বাসায় চলে যায় দুই একদিনের জন্য। এখন লিজা আছে তাই আমিই বলেছি উনাকে বাসায় থাকতে আর বলেছি কাজগুলো করে দিয়ে গেলেই হবে।”
ভাইবোন নিজেদের কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। এদিকে লিজা নিজের মতো কফি খাচ্ছে আর আকাশ দেখছে। হঠাৎ তুলির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি হলো। বিকেলের শেষ আলোয় লিজাকে খুব মিষ্টি লাগছিল দেখতে। তুলি খুব সাবধানে ক্যামেরা লিজার দিকে করলো। তুহিন কাজ করতে করতে কথা বলছিলো। কাজ করে আবার ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে তুলির জায়গায় অন্য একটা মেয়েকে দেখতে পেলো। নীল রঙের থ্রীপিস পরা এক মেয়েকে দেখা যাচ্ছে সাইড থেকে। তুহিন কিছু বলবে তার আগেই তুলি লিজার নাম ধরে ডাকলো। লিজা তুলির দিকে তাকালে তুহিন এবার স্পষ্ট দেখতে পেলো লিজাকে। মাথায় ওড়না, হাতে কফির মগ, দৃষ্টি প্রশ্নবোধক।
তুহিন নিজের মনে বলে উঠলো, “মাশাআল্লাহ।”
এদিকে অনু গালে হাত দিয়ে বসে কিছু চিন্তা করছে আর তার পাশেই বসে আছে কণা। একজনের ফাইল দেওয়া হয়েছে তাদের। লোকটা সমাজের চোখে প্রচন্ড রকমের ভালো আর দয়ালু একজন মন্ত্রী। কেউ তার কাছে সাহায্যের জন্য গিয়ে খালি হাতে ফেরত এসেছে এমন রেকর্ড নেই। এই অসম্ভব ভালো লোকটার আরো একটা জঘন্য রুপ আছে। সেটাই খোঁজে বার করতে হবে অনু আর কণাকে। কাজটা একটু রিস্কি কিন্তু একবার করতে পারলে ওদের পত্রিকা আর ওরা রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যাবে। কাজটা করার জন্য তাদের টিমে একটা ছেলেও দেওয়া হয়েছে নাম ফয়সাল।
কণা বললো, “আচ্ছা ফয়সাল তোমার কী মনে হয়?”
ফয়সাল চিন্তিত গলায় বললো, “আমি যতদূর জানি নাসিম শিকদার অনেক ভালো মানুষ।”
“মানুষ নিজেকে যা দেখায় সবসময় সেটা হয় না।”
অনুর কথা শুনে ফয়সাল ভীতু গলায় বললো, “প্রথমবারের মতো কাজ করছি আমরা তিনজনই। ঠিকঠাক করতে পারবো কিনা আল্লাহ জানে।”
কণা নাক ছিটকে বললো, “তুমি ক্রাইম রিপোর্টার হতে এসেছো কেনো? তোমার জন্য স্পোর্টস বা বিনোদন নিয়ে কাজ করাটা ভালো ছিলো।”
ফয়সাল কটমটে চোখে তাকালো কণার দিকে আর কণা তা দেখে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিলো। অনু ওদের থামিয়ে কাজে লেগে পড়ার জন্য বললো।পরিকল্পনা শেষে যা যার কাজে লেগে পড়লো।
অফিস শেষে অনু বাসায় ফিরলে নুরজাহান বললো, “এতক্ষণ কোথায় ছিলি?”
অনু পায়ের জুতা খোলে জুতার তাকে রেখে মায়ের দিকে তাকালো, “ভার্সিটি গিয়েছিলাম সেটা তুমি ভালো করেই জানো।”
নুরজাহান রাগী গলায় বললো, “ভার্সিটি থেকে ফিরতে সন্ধ্যা হয় না সেটাও আমি ভালো করেই জানি।”
“দু’টো টিউশনি নিয়েছি। প্রতিদিনই একটু দেরি হবে আসতে।”
নুরজাহান অবাক হলো, “টিউশনি করাতে হবে কেনো? তোর কী টাকার অভাব হয়েছে? বাপ ভাই দু’জনে ইনকাম করছে আর তুই একা খরচ করবি। তোর টিউশনি করাতে হবে না।”
“মা আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে চাই।”
“তার জন্য অনেক সময় আছে সামনে।”
“সময় থাকতেই তা কাজে লাগাতে হয় মা।”
অনু নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। একটা সাকসেস পাওয়ার আগে তার জবের কথা কাউকে জানাতে চায় না। অনু ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই ফোনটা বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখলো স্কিনে ফারহানের নামটা ভাসছে। এই অসময়ে কল দেওয়ার কারণ খুজতে লাগলো অনু।
নাসিম শিকদারের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক। চোখে তার অসীম ক্রোধ। পারলে চোখ দিয়ে জ্বালিয়ে দিতো ছবিখানা।
“তোমাকে নিজের হাতে শাস্তি নাই বা দিতে পারলাম নাসিম শিকদার। তুমি কৌশলে নাহয় আমার হাতটা বেঁধে দিয়েছো কিন্তু এবার কীভাবে বাঁচবে তুমি? আমার আর আমার মায়ের সাথে করা অন্যায়ের মূল্য দিতে হবে তোমায়। আমার হাতে না হোক, আমারই প্রিয় কারো হাতে তোমার শাস্তি হবে, অবশ্যই হবে।”
ক্রোধের মাঝে তৃপ্তির হাসি দেখা গেলো যুবকের ঠোঁটের কোণে।
২৩.
মন্ত্রী নাসিম শিকদারের মুখোশ খোলে পড়েছে। জনপ্রিয় নেতার আড়ালে এমন জঘন্য রুপ লুকিয়ে ছিলো সেটা কেউ কোনোদিন কল্পনা করতে পারেনি। দীর্ঘ একটা সময় কাজ করার পর মন্ত্রী নাসিম শিকদারের মুখোশ খোলে দিতে পেরেছে অনু, কণা আর ফয়সাল। মাদকদ্রব্যের ব্যবসা, দুর্নীতি, খুন এসব নাসিম শিকদারের কাছে যেনো ডাল ভাতের মতো। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় নাসিম শিকদার নিজের প্রথম স্ত্রীকেও খুন করেছে কৌশলে, যেটা সবার কাছে সাধারণ মৃত্যু হিসাবে প্রমাণ করেছে। নাসিম শিকদারের প্রথম পক্ষে আহনাফ শিকদার নামের এক ছেলেও আছে সেটা সবার কাছে গোপন করে গেছে। পুনরায় বিয়ে করেছে নিজের হাঁটুর বয়সী এক মেয়েকে। সেই ছেলে এখন কোথায় আছে সেটাও সবার অজানা।
কণা গভীর ভাবনায় ডুবে বললো, “আহনাফ শিকদার নামটা প্রথম থেকেই আমার কাছে খুব চেনা চেনা লাগছে অনু।”
“সেটা তো আমার কাছেও লাগছে কিন্তু আহনাফ শিকদার নামে আমি কাউকে চিনি বলে মনে পড়ছে না৷ কিন্তু নামটা ঠিকই চেনা চেনা লাগছে।”
হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো কণা, “অয়ন ভাইয়া নয় তো?”
চমকে উঠলো অনু, “অয়ন ভাইয়া? কী বলছিস?”
“মনে করে দেখ ভালো করে। অয়ন ভাইয়ার ভালো নাম আহনাফ শিকদার। কিন্তু তাকে আমরা সবাই সবসময় অয়ন নামেই চিনতাম।”
অনু ভালো করে একটু চিন্তা করলেই মনে পড়লো। হ্যাঁ অয়নকে সে তালপাতার সিপাহি বললে সে বলতো তার একটা ভালো নাম আছে। তবে কী অয়নই এই আহনাফ শিকদার?
অনু একটু চিন্তিত গলায় বললো, “হ্যাঁ অয়ন ভাইয়ার নামও তো আহনাফ শিকদার। কিন্তু এই আহনাফ শিকদারই যে অয়ন ভাইয়া সেটা কীভাবে বুঝবো?”
কণা মলিন গলায় বললো, “একবার ভাব এই আহনাফ শিকদার যদি অয়ন ভাইয়া হয় তাহলে তার জীবনে সে কতটা কষ্ট পেয়েছে। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।”
ফয়সাল এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে, “স্যার তোমাদের ভেতরে যেতে বলেছে।”
অয়নের আলোচনা চাপা পড়ে গেলো। তিনজন স্যারের কাছে চলে গেলো। পত্রিকা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একজন মন্ত্রীর নামে এসব প্রচার করা নিয়ে অনেকটা ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তবে শেষমেশ সত্যের কাছে হার মেনেছে মিথ্যে, প্রমাণসহ প্রচার করায়। ভেঙে গুড়িয়ে গেছে মিথ্যের রাজত্ব। অনু ঠিক করেছে এবার তার জবের কথা বাড়িতে জানাবে। কাজ শেষে খুশী খুশী বাড়ি ফিরে দেখলো সবাই এসে হাজির বাড়িতে। সবার সাথে কুশলাদি বিনিময়ের পর নিজের রুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখতে পেলো ফারহান তার বেডে বসে আছে।
অনু ব্যস্ত গলায় বললো, “আপনি এখানে কী করছেন?”
ফারহান এগিয়ে এসে অনুর হাত মুচড়ে ধরলো, “কেনো অন্য কারো আশায় ছিলি নাকি?”
অনু ব্যাথায় মৃদু আওয়াজে চিৎকার করে উঠলো, “এসব কী বলছেন? কী হয়েছে আপনার?”
ফারহান দাঁতে দাঁত চেপে বললো, “বড় মামা বলেছিল কিছু সময় দিতে। আমিও মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি দিনদিন তোর ভাব বেড়ে যাচ্ছে। আমি খেয়াল করেছি বেশ কিছু মাস ধরে তুই আমাকে এড়িয়ে চলছিস।”
কাজের জন্য অনু কিছু মাস খুব ব্যস্ত ছিল। আসলেই ফারহানকে কিছুটা এড়িয়ে চলেছে কাজের খাতিরে। সেই সামান্য এড়িয়ে চলা ফারহান ধরে ফেলবে বুঝতে পারেনি অনু।
অনু হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো, “এমন কিছুই না।”
ফারহান হাত ছেড়ে দিলো অনুর, “এমন কিছু না কেমন কিছু সেটা আজ রাতেই বুঝতে পারবি।”
অনু অবাক কণ্ঠে বললো, “মানে?”
“সেটা একটু পরই বুঝতে পারবি তুই। আজ বুঝবি আমাকে এড়িয়ে চলার ফল।”
ফারহান হনহনিয়ে বের হয়ে গেলো অনুর রুম থেকে। অনু চিন্তায় পড়ে গেলো কী করতে চাইছে ফারহান। কিন্তু তাকে বেশি সময় চিন্তা করতে হলো না। তার মা নুরজাহান একটা লাল বেনারসি এনে পড়তে বললেই সবটা পরিষ্কার হয়ে গেলো।
অনু কিছু বুঝে উঠার আগেই নিজের বাসরঘরে বসে আছে। এটাকে অবশ্য বাসরঘর বলা যায় কিনা সেটাও ভাবার বিষয়, একটা ফুলের চিহ্ন নেই। অনু যখন নিজের ভাবনায় ডুবে আছে তখনই রুমে ঢুকলো ফারহান। অনু মৃদু আওয়াজে সালাম জানালে গম্ভীর গলায় উত্তর নিলো সে। অনুর বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে অজানা ভয়ে। ফারহান অনুকে কিছু না বলে নিজের পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টাওয়েলে মুখ মুছতে মুছতে বললো, “মুর্তির মতো বসে আছিস কেনো? যা ফ্রেশ হয়ে নে।”
অনু তাকালো ফারহানের দিকে। নতুন বউয়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে জানা ছিলো না অনুর।
অনুকে তাকাতে দেখে ফারহান বললো, “এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো? কী বললাম শুনতে পাসনি?”
অনু কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। বেনারসি চেঞ্জ করে একটা নরমাল শাড়ি পড়ে বের হলো। ফারহান তখন ল্যাপটপে কাজ করছে বেডে বসে। অনু কী করবে বুঝতে পারছে না তাই চুপচাপ কিছু সময় দাঁড়িয়ে রইলো ওয়াশরুমের সামনে। ফারহানের কোনো হেলদোল না দেখে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো।
ফারহান গম্ভীর গলায় বললো, “ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?”
অনু থমকে দাঁড়ালো, “বেলকনিতে?”
“এতো রাতে বেলকনিতে কী তোর? এদিকে আয়, আমার পা দুটো খুব ব্যাথা করছে। একটু টিপে দে তো ভালো করে।”
রসগোল্লার মতো চোখে তাকালো অনু। বাসর রাতে কেউ পা টিপে দিতে বলতে পারে অনু ভাবেনি কখনো।
“রসগোল্লার মতো চোখ করে তাকালে, কাঁটাচামচ দিয়ে তুলে খেয়ে নিবো চোখ দু’টো। যা করতে বললাম তাই কর। বিয়ের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পার হয়েছে আর এরমধ্যেই বরের অবাধ্য হতে শিখে গেছিস?”
ফারহানকে আর কথা বাড়াতে দিলো না অনু। চুপচাপ কাছে এসে ফারহানের পায়ের কাছে বসলো। হাত দু’টো পায়ের কাছে আনতেই পা গুটিয়ে নিলো ফারহান। অনুর কাছে এসে হাত দু’টো ধরে ফেললো, পকেট থেকে একটা রিং বের করে অনামিকা আঙ্গুলে পড়িয়ে চুমু খেলো তার উপর। প্রথমবারের মতো ফারহানের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো অনু।
ফারহান আবেগ মাখা গলায় বললো, “অনামিকা?”
অনু মাথা নিচু করে বললো, “হুম?”
“চল দু’রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে একটা নতুন জীবনের সূচনা করি। যেখানে মান-অভিমান হবে, দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া হবে কিন্তু কখনো বিচ্ছেদ হবে না। ঝগড়ার পর ক্লান্ত হয়ে তুই আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়বি আর আমি তোর কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে শান্তির শ্বাস নিবো। সকাল হলে নাহয় বাকি ঝগড়াটা আবার করে নিবো। তোকে আমি হারাতে গিয়েও ফিরে পেয়েছি। সারাজীবন বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখবো এভাবেই।”
অনু চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে ফারহানের কথা শুনলো। দু’জনে নামাজ আদায় করে শুয়ে পড়লো। মুখে আর কথা হলো না, কিছু কথা নিরবতায় হয়ে গেলো। দু’জনে হারাতে গিয়েও আবার নিজের ভালোবাসা ফিরে পেয়ে শান্তির ঘুম দিলো আজ।
সকালে আগে ঘুম ভাঙলো অনুর। ফজরের নামাজও দু’জনে একসাথে পড়েছে তারপর আবার ঘুমিয়েছে, এখন প্রায় সকাল সাতটা। অনু নিজেকে পেলো ফারহানের বুকে তার দু’হাতে আবদ্ধ। অনু তাকালো ফারহানের মুখের দিকে। নিজের ভাগ্য মেনে নিয়ে ফারহানের সব স্মৃতি মুক্ত করে দিয়েছিল নিজের থেকে। সেই ভাগ্য আজ তাকে ফারহানের বাহুডোরে আবদ্ধ করেছে। ফারহানের কপালে নিজের নরম ঠোঁটের ছোঁয়া দিলো অনু। আবার তাকালো ঘুমন্ত মুখখানার দিকে, চোখ থেকে টপ করে একফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো ফারহানের ঠোঁটের উপর। মুচকি হাসলো ফারহান, তার ঘুম তো অনেক আগেই ভেঙেছে। অনুর রিয়াকশন জানার জন্যই ঘুমের ভান ধরে ছিলো। ফারহান নিজের হাতের বাঁধন শক্ত করলো।
এ তুমি কেমন তুমি চোখের তারায় আয়না ধর
এ কেমন কান্না তুমি আমায় যখন আদর কর
এ তুমি কেমন তুমি চোখের তারায় আয়না ধর
এ কেমন কান্না তুমি আমায় যখন আদর কর।
অনু লজ্জায় ফারহানের বুকে মুখ লুকালো আবার।
পরিশিষ্ঠঃ লিজা আজ চলে যাচ্ছে তুহিনের সাথে। তুলিও আছে তাদের সাথে। লিজা আর তুলির বাকি পড়াশোনা সেখানেই হবে। তুলির ভাবি লাগবে আর সেটা লিজাই হতে হবে আর লিজার পরিবারেরও যথেষ্ট পছন্দ হয়েছে তুহিনকে তাই কেউ আপত্তি করেনি প্রস্তাব পেয়ে। এদিকে তুলি সবার আগে রাজি করিয়েছে লিজাকে তাই আর প্রবলেম হয়নি। অন্যদিকে তানিশা এসব প্রেম ভালোবাসায় জড়াতে চায় না আর তাই মন দিয়ে পড়াশোনা করছে। নিজের স্বপ্ন পূরনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সুখে আছে ফারহান আর অনু। মন দিয়ে সংসার করছে অনু, সাথে পড়াশোনা আর জবও। বেশ নাম হয়েছে তার, রিপোর্টার হিসাবে অনেকেই চেনে। দুই পরিবারের সবাই লিজাকে বিদায় জানাতে এসেছে। কিন্তু কিছু মানুষ কখনো শোধরাবার নয় আর সেটা হচ্ছে লাবণি। ফারহানের থেকে ভালো ছেলের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে সেই অহংকারে যেনো আকাশে উড়ছেন তিনি। লিজা চলে যেতেই সবাই একে একে বাড়ির দিকে চলে গেলো।
ফারহান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো, “নিজেকে আজ খুব হালকা লাগছে। লিজা নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছে। ওর সামনে গেলে নিজেকে অপরাধী মনে হতো এতদিন।”
ফারহানের কথায় মলিন হাসলো অনু। ফারহান একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো অনুকে। তখনই ছোট একটা বাচ্চা এসে অনুর দিকে একটা ফুলের তোড়া এগিয়ে দিলো। অনু সেটা হাতে নিয়ে বাচ্চাটাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই সে দৌড়ে চলে গেলো। ফারহান প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকালো অনুর দিকে। অনু ফুলের তোড়ায় একটা চিরকুট পেয়ে সেটা খোলে দেখলো ছোট একটা কথায় লেখা।
“ধন্যবাদ ধুলাবালি”
অনু বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “অয়ন ভাইয়া?”
আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না। দূর থেকে কেউ একজন মলিন হাসলো অনুর খোজাখুজি দেখে। চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে হেঁটে চললো নিজের ঠিকানায়।
সামনে আগাতে আগাতে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “যেখানেই থাকো খুব ভালো থাকো প্রিয়।”
★সমাপ্ত★
(আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। গল্পটা নিয়ে হয়তো অনেকের অনেক অভিযোগ আছে তার জন্য আমি দুঃখিত। গল্পের ছন্দ হারিয়ে ফেলেছি আমি। গল্পটা গুছিয়ে নিতে যে সময়ের প্রয়োজন তা আপাতত আমার হাতে নেই। আজ থেকেই হসপিটালে দৌঁড়ানো শুরু হয়ে গেছে আমার। কতদিন হসপিটালে চক্কর কাটতে হবে জানি না। তাই তাড়াতাড়ি শেষ করে দিলাম গল্পটা। সবাই দোয়া করবেন যেনো তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারি আর সুস্থ থাকতে পারি। একটার পর একটা অসুস্থতা যেনো লেগেই আছে আমার। মাঝে মাঝে নিজের উপর বিরক্তি এসে যায়। গল্পটার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। আমার লেখা সবচেয়ে বাজে গল্প মনে হয় এটা হয়েছে। সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে। আমি জানি গল্পটা বাজেভাবে শেষ হয়েছে তাই দয়া করে কেউ বাজে কমেন্ট করবেন না। সেটা নেওয়ার মতো মানসিকতা বর্তমানে আমার নেই। সবাই ভালো থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here