#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব: ৫৭
কলমে :লাবণ্য ইয়াসমিন
নির্জন কক্ষে বসে আছে কহিনুর। পায়ের অবস্থা মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে তবে সবাইকে দেখানোর জন্য ব্যান্ডেজ খোঁলা হয়নি। সাইদ বাইরে গেছে বেচারা ক্ষুধা সহ্য করতে পারেনা। গতকাল রাতে এই বাড়িতে সম্পূর্ণ অচেনার এক শক্তির প্রবেশ ঘটেছিলো কহিনুর সেটা বেশ ভালো করে অনুভব করতে পারছে কিন্তু লোকটার উদ্দেশ্য কি বুঝতে পারছে না। মায়ের কক্ষে ছড়িয়ে থাকা র/ক্ত আর মাং/স থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এসেছিলো সে যেখানেই যাবে সেখানে এই চিহ্ন গুলো রেখে যাবে। কহিনুর হিসেবে করে ফেলল কিভাবে ওকে ধরতে পারবে। লোকটা মেয়ে হোক বা ছেলে কিছু যায় আসে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই দরজায় টোকা পড়লো। তবে কহিনুর জিঞ্জাসা করার আগেই পাথর ভেতরে প্রবেশ করলো। ছেলেটার সারামুখে রহস্যময় হাসি খেলা করছে। কহিনুর ভ্রু কুচকে জিঞ্জাসা করলো,
> মতলব কি? অনুমতি ছাড়া আমার কক্ষে আসার সাহস কে দিলো আপনাকে?
প্রশ্ন শুনে পাথর মজা পেলো। এলোমেলো চুলগুলোতে হাতের আঙুল পুরে বাঁকা হেসে কহিনুরের সামনে এসে দাঁড়ালো। পকেট থেকে একটা চেক বের করে সামনে মেলে ধরে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
> কাবিন পরিশোধ করছি এরপর নিশ্চয়ই কাছে আসা নিয়ে সুলতানা কহিনুর ফারুকীর কোনো অসুবিধা হবে না? যদি হয় তবে স্বামী হিসেবে আমি মানবো না। দরকারে বিশ্বের সব স্বামীদের নিয়ে হরতাল ডাকবো। অনশন ধর্মঘট চলবে তবুও দাবি আদায় করে তবে ছাড়বো। মোটকথা বউ চাই।
পাথরের কথা শুনে কহিনুর বিরক্ত হলো তাই উত্তর না করে সোজা ওর হাত থেকে চেকটা নিয়ে কয়েকটা টুকরো করে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
> ফালতু এসব না ভেবে ভালো করে পাহারা দিন। এই বাড়িতে গতকাল কে এসেছিলো খোঁজ করুন। হঠাৎ আগমনের কারণ নিশ্চয়ই সাধারণ হবে না?
কহিনুরের কথা পাথরের কান পযর্ন্ত পৌঁছালো না মুখটা গম্ভীর করে কহিনুরের মুখের দিকে খানিকটা ঝুকে এসে ফিসফিস করে বলল,
>কথা এড়িয়ে যাচ্ছো? ভীষণ চালাক তুমি । ঠিক তোমার বাবার মতো। যেমন বউ তেমনি শশুর খাপেখাপ। মাঝখানে আমার কপাল খারাপ।
কহিনুর উত্তর দিতে চাইলো তার আগেই পাথর কিছু একটা ভেবে বলল,
> নূর একটা জিনিস চাইবো দিবে? ভীষণ দরকার না হলে চাইতাম না।
কহিনুর পাথরের চোখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। লোকটা কি চাইতে পারে ওর মাথায় আসছে না। ভুলভাল কিছু চাইলে না দিতে পারলে কথা দিয়ে লাভ নেই। কহিনুরকে ভাবতে দেখে পাথর ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সামান্য চাপ দিয়ে বলল,
> ভরসা করতে পারো ঠকাবো না। প্লিজ সাহায্য করো আমাকে। কথা দিচ্ছি কাজশেষে ফিরিয়ে দিবো। আমাকে যেতে হবে।। হাতে সময় কম।
> কি চাই আপনার?
পাথর মৃদু কণ্ঠে উচ্চারণ করলো,
> জাদুলিপিটা আমার ভীষণ দরকার। বাবা বলেছেন ওটা তোমার কাছে আছে।
কহিনুর ভ্রু কুচকে ফেলল। জাদুলিপি পাথরের কোন কাজে লাগবে ওর জানা নেই। তাই জিঞ্জাসা করলো,
> কেনো?
> ওর অষ্টম পৃষ্টাতে আমি একজনের ভাগ্য লিপি নিজ হাতে লিখতে চাই নূর। প্লিজ সাহায্য করো। এটাই শেষ চাওয়া তোমার কাছে।
কহিনুর প্রশ্ন করলো না। চোখ বন্ধ করে করে জাদুলিপি ডেকে নিলো। এই লিপিতে যতগুলা আকাঙ্ক্ষা লিপিবদ্ধ হয় সেগুলো পূরণের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন রক্ষক আছে। সে নিশ্চয়ই পাথরের ইচ্ছে পূরণ করবে। কহিনুর মলিন হেসে ওর হাতে লিপিটা তুলে দিয়ে বলল,
> এটা আপনার বাবার ছিল সেই হিসেবে এটার উপরে আপনার অধিকার আছে। যেকোন কাজে ব্যবহার করার আগে দুবার ভেবে নিবেন। আবেগপূর্ণ হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন না যাতে পরবর্তীকালে আফসোস করতে হয়। আর দয়াকরে এটা কাউকে দিবেন না। খারাপ কাজে ব্যবহার হতে পারে।আশাকরি বুঝবেন আমার কথাগুলো।
কহিনুর থামতেই পাথর ওর হাত থেকে লিপিটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে ডান হাতে কহিনুরক নিজের সঙ্গে জড়িয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
> তোমাকে নিজের করতে পৃথিবীর যেকোনো অসাধ্য সাধন করতে আমি দুবার ভাববো না। তুমি আমার ছিলে আমারই থাকবে।
কহিনুর কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না। পাথর ওকে ছেড়ে দিয়ে সোজা জানালা দিয়ে বেরিয়ে পড়লো। সব কেমন অদ্ভুত লাগলো কিন্তু আপাতত কিছু করার নেই।
*****
মেঘমুক্ত নীল আকাশ। সূর্য পশ্চিম আকাশে হামাগুড়ি দিচ্ছে কিছুক্ষণ পরেই আঁধার নামবে ধরণীতে। কফির কাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে আদি। ওর পাশেই ঐশ্বর্য ছোট্ট একটা কারুকার্যমন্ডিত মিরর হাতে বসে আছে। মেয়েটা ভিবিন্ন অঙ্গভঙ্গি দিয়ে নিজেকে দেখছে। আদি আড় চোখে সেটা পর্যবেক্ষণ করে মৃদু কণ্ঠে বলল,
> কহিনুরের ধারালো রূপের আগুনে যার চক্ষু একবার ঝলসে গেছে পৃথিবীর আর কোনো মাদকতাই সেই চক্ষুতে আর নেশা আনতে পারবে না। আমিতো কবেই ম/রেছি আর ম/রতে পারবো না।তবে এমরণ যেনো আমার কাছে স্বর্গ অধিক সুখের।
আদি কথা শেষ করতে পারলো না ঐশ্বর্য অগ্নিমূর্তি ধারণ করলো। রাগে ওর শরীর মৃদু মৃদু কাঁপছে। সব নষ্টের মূলে কহিনুর। মেয়েটা এসে ওর সাজানো গোছানো জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। বাবার মৃ/ত্যুর প্রতি/শোধ ও যেভাবেই হোক নিয়ে তবে ছাড়বে। বাবার মৃ/ত্যুর যন্ত্রণা কেমন হয় কহিনুর ঠিক বুঝতে পারবে। ঐশ্বর্যের মনে ভয়ানক একটা পরিকল্পনা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। কথাগুলো ভেবে ওর ওষ্ঠে পৈত্রিক হাসি ফুঁটে উঠলো। তাই তর্ক না করে উত্তর দিলো,
> যে নিজ ইচ্ছেতে মৃ/ত্যুকে বরণ করতে চাইছে তার জন্য মৃ/ত্যু সই। তবে আমি আছি আর থাকবো ধরণীতে। আমি ছাড়া আর কোনো মোহ মায়া থাকবে না। দুদিনের অথিতিদের প্রতি এতোটা ভালোবাসা দেখানো উচিত নয়। দুঃখের সমুদ্রে অবগাহন করে মজা পাবে না। তারচেয়ে বরং আমার সঙ্গে আসো সুখের অমৃত সুধা পান করিয়ে অমর বানিয়ে দিবো।
আদি তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেসে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে উত্তর দিলো,
> নির্বোধ বালিকা,নিজেকে কতটা শক্তিশালী আর জ্ঞানী ভাবো জানিনা তবে কহিনুরের কাছে তুমি নেহায়েত শিশু বৈকি কিছুই না। মেয়েটার কাছে কি নেই ভাবো? শক্তি ক্ষমতা অর্থ সব আছে অথচ ওর বাড়িতে তুমি সামান্য একজন আশ্রিতা ছাড়া কিছুই না। অল্প বিদ্যা ভয়ংকারী কথাটা তোমার জন্য উপযুক্ত। সামান্য কূটবুদ্ধি নিয়ে ওর সঙ্গে লাগতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে। যাইহোক আমি কেনো এতোটা ভাবছি? তোমার যা ইচ্ছে করো আমার কি?আমিতো দুদিন পরেই চলে যাচ্ছি তারপর তোমার সঙ্গে আমি আলাদা। সময় মতো ডিভোর্স পেয়ে যাবে। বিয়ে যেহেতু বাংলাদেশের নিয়মকানুনে হয়েছে ডিভোর্সও সেই নিয়মেই হবে। তোমার মতো অসুস্থ মস্তিষ্কের মেয়ের সঙ্গে আমি থাকতে পারবো না। কুপিকে পযর্ন্ত আ/ঘাত করেছো, ছিঃ কতটা জ/ঘণ্য তুমি।
আদির কথাগুলো যেনো ঐশ্বর্যের শরীরে আগুন ধরিয়ে দিলো। কহিনুর, কিসের শক্তি ওর? ঐশ্বর্য জন্ম থেকে অর্ধমানবীর শক্তি বহণ করছে সেখানে কহিনুর সামান্য মানুষ। মানবি হয়ে অর্ধমানবির সঙ্গে শক্তি পরিক্ষা দিতে আসে সে? ঐশ্বর্যতো ভেবে নিয়েছে কহিনুর ওর ভয়ে নিজ বাড়িতে ফিরছে না। সবাই কেনো ওই সামান্য মেয়েটাকে এতোটা ভয় পাচ্ছে কে জানে। তাছাড়া এই বাড়ির বৃদ্ধ দাদুকে ও হাত করেছে। লোকটা কথা দিয়েছে সাহায্য করলে এই বাড়ির সব অর্থসম্পদ ওর হবে। তাছাড়া কহিনুরের কাছে থাকা পাথরের শক্তি নিয়ে ও আরও শক্তি অর্জন করবে। কথাগুলো ভেবেই ওর চোখ চকচক করে উঠলো। আদিকে ওর আর প্রয়োজন নেই। আদি সাধারণ একটা মানুষ সে কিভাবে ঐশ্বর্যের যোগ্য হবে? হঠাৎ ওর মনে হলো পাথরের কথা। পাথর খান সেতো ওরই বংশের ছেলে। যা কহিনুরের ছিল ঐশ্বর্য সেসব ছিনিয়ে নিবে। জুবায়ের মেয়েকে পেয়ে ওকে ভূলে যায়নি এখনো ভালোবাসে তবে পাথর নামের মহা পুরুষটাকেও তো ও পেতে পারে? যতই এসব ভাবছে ঐশ্বর্যের হৃদয় জুড়ে ততই ঠান্ডা বাতাসে শীতল হয়ে উঠছে।। আদি ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। মেয়েটা যে কোনো বদ বুদ্ধি আটছে বুঝতে বাকিনেই। তাই কফির কাপে ঠোঁট ডুবিয়ে বলল,
> লোভে পাপ আর পাপে মৃ/ত্যু কথাটা ভুলে না গেলেই মঙ্গল হয়। আসছি আমি।
আদি কথাটা বলে উত্তরের আশা করলো না চলে গেলো। ঐশ্বর্য মিরর হাতে নিয়ে বসে আছে। তবে মিররের মধ্যে থাকা এক রমণী এতোক্ষন ধরে ওকে যে পর্যবেক্ষণ করছিলো সেটা ওর অজান্তেই রয়ে গেলো। রমণীর শুকনো ওষ্ঠে রহস্যময় হাসি খেলা করছে। কতকাল এই মিররে ওকে আটকে রাখা হয়েছে তার হিসেব ও পইপই করে গুণে রেখেছে। ছাড়া পেলে প্রতি/শোধ নিতে ও দুবার ভাববে না। ঐশ্বর্য হঠাৎ মিররে দৃষ্টি রেখে মিষ্টি করে হাসলো। এই মিররটা ও সেদিন বৃদ্ধ দাদুর সঙ্গে গোপন আস্তানা থেকে কোনোরকমে চুরি করেই হাতিয়ে এনেছে। এই মিররটাতে যেমন অপূর্ব নিখুঁত কারূশিল্পের নির্দশন রয়েছে তেমনি এর গুণ। ঐশ্বর্য এতোদিন নিজেকে কহিনুরের থেকে কম সুন্দরী ভেবে আফসোস করতো কিন্তু এখন করেনা। মিররটাতে ওর সুন্দর ঝলমলে চেহারা কি সুন্দর ফুটে উঠে। যা অন্য কোনো মিররের ধারে কাছেও যায়না। ঐশ্বর্য রাতে ঘুমানোর সময়ও মিরর কাছাকাছি রাখে যদি হারিয়ে যায় তখন? হারালে চলবে না। কথাটা ভেবে ও চোখ বন্ধ করলো।
********
উভয় পাশে ঘন গাছের সারির মাঝখানে কালো পিচ ঢালা নির্জন রাস্তা ধরে গাড়ি চলছে শহরের দিকে। জুবায়ের এক ধ্যানে সামনের দিকে তাঁকিয়ে ড্রাইভ করছে। আজ ড্রাইভার আসেনি বিধায় ওকেই ড্রাইভ করতে হচ্ছে। ব্যবসার কাজে ওকে রাজধানীর বাইরে যেতে হয়েছিলো। শর্টকাট রাস্তা ধরে বাড়িতে ফিরতে ওকে জঙ্গলের রাস্তা ধরতে হয়েছে। মাঝেমাঝে একটা দুটো গাড়ি ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি কথাটা ভেবেই ও স্লোভাবে যাচ্ছে। অধরা ওর জন্য অপেক্ষা করছে। আলো ঝলমলে আকাশটা হঠাৎ করেই মেঘলা হয়ে উঠেছে। আবছায়া পড়ছে। সূর্য হয়তো মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে। জুবায়ের ডাম হাতে ফোনটা বের করে আবহাওয়ার অবস্থা দেখতে এপস অন করে বিরক্ত হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি হতে পারে। তারপর তুষারপাত। কেনো যে এতোটা দূরে আসতে গেলো। তাছাড়া সকালে সব ঠিকঠাক ছিল হঠাৎ সব পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। জুবায়েরের বিরক্তি রাগে পরিণত করতে হঠাৎ শব্দ করে গাড়ি থেমে গেলো। কিছুতেই আর চলে না। জুবায়ের মাথাটা সিটের সঙ্গে সামান্য হেলান দিয়ে অধরার নাম্বারে ডায়েল করলো। দুবারের পর রিসিভ হতেই জুবায়ের সবটা বলে দিলো। অধরা চিন্তিত হয়ে বলল,
> রাগারাগি করবেন না অপেক্ষা করুণ আমি ড্রাইভারকে পাঠাচ্ছি। গাড়ি থেকে নামবেন না ঠিক আছে?
অধরার কথা শুনে জুবায়ের হেসে ফেলল। উত্তর দিলো,
> আমাকে তোমার বাচ্চা মনে হয়? আচ্ছা গাড়িতে বসে থাকবো তবে ততক্ষন আমার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে হবে। এসো প্রেম করি।
জুবায়ের সাবলীল আকৃতিযুক্ত বাক্যে অধরা বিরক্ত হতে পারলো না। উত্তরের লাজুক হেসে বলল,
> সুলতান জুবায়ের ফারুকীর হৃদয় প্রেম রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে উঠেছে প্লিজ ভালো করে চিকিৎসা নিন। নয়তো ভয়ানক বিপদ হতে চলেছে।
> তুমি আছোতো চিকিৎসার জন্য। এতো চিন্তা কিসের? ফিরছি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আমি উতলা হয়ে আছি।
জুবায়ের আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু হলো না ওর গাড়িটা কেমন নড়ে উঠলো। মনে হলো উপরে ভারি কিছু এসে ভর করেছে। জুবায়ের ভ্রু কুচকে অধরাকে বলল,
> গাড়ির উপরে কিছু একটা পড়েছে মনে হচ্ছে।তুমি রাখো আমি দেখছি। নির্জন রাস্তায় আছি কোনো গাড়ি পেলে আমি উঠে যাবো চিন্তা করো না।
জুবায়েরে উত্তরের আশা করলো না ফোন রেখে দিয়ে বেরিয়ে আসলো। দেখলো গাড়ির উপরে কিছুই নেই। যেমন ছিল তেমনি আছে। ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়ছে। জুবায়ের গাড়িতে উঠতে চাইলো কিন্তু আরও একটা ঝামেলা এসে হাজির হলো। গাড়ির দরজা খুঁলছে না। বন্ধ হয়ে আছে। ও কয়েকবার ধাক্কা দিলো কিন্তু ফলাফল শূন্য। জুবায়ের ব্যার্থ হয়ে সামনে হাটতে শুরু করলো। মিনিট পাঁচের হাটার পরেই হঠাৎ ও পেছনে ফিরে হতভম্ব হলো। ওর গাড়িটা নিজে নিজেই চলছে। আর সেটা ক্রমাগত ওর দিকে এগিয়ে আসছে। গাড়ির মধ্যে কে আছে দেখার জন্য জুবায়ের এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থেকে ভ্রু কুচকে ফেলল। ভেতরে কহিনুর বসে আছে আর গাড়িটা ওকে চাপা দিতে চাইছে। কহিনুর ওকে মা/রতে চাইছে কিন্তু কেনো? কথাটা ভেবে ও দ্রুত সরতে চাইলো কিন্তু হলো না। চোখের নিমিষে গাড়িটা সোজা এসে ওর গায়ে ধা/ক্কা দিতে চাইলো কিন্তু পারলো না কেউ একজন ওকে হাওয়ার গতিতে সরিয়ে নিলো। গাড়িটা গিয়ে একটা গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বন্ধ হয়ে গেলো। জুবায়ের ছিটকে গিয়ে ঘাসের উপরে পড়েছিলো সেখান থেকে উঠে বসলো। ওর সামনে কহিনুর দাঁড়িয়ে আছে। জুবায়ে কিছু বলার আগেই কহিনুর বলে উঠলো,
> ড্রাইভার চলে এসেছে তুমি অপেক্ষা করো আমি এটাকে দেখে নিচ্ছি। চিন্তা করোনা।
কহিনুর কথাটা বলেই ওর রূপে গাড়িতে বসা মেয়েটার পিছনে ছুটলো। জুবায়ের হতভম্ভ হয়ে তাঁকিয়ে আছে। কহিনুরের রূপে আরও একজন আছে যেকিনা ওকে মা/রতে চাইছে কিন্তু কেনো?
************
গভীর অরণ্যে দাঁড়িয়ে আছে কহিনুর। একটুর জন্য ছদ্মবেশী মেয়েটাকে ও ধরতে পারেনি। যদিও সবটা জানে তবুও ইচ্ছে ছিল হাতেনাতে প্রমাণসহ ধরতে। কিন্তু হলো না। জুবায়েরের সঙ্গে সাঈদ ছিল তাই খবরটা পেতে ওর সময় লাগেনি। জুবায়ের ভেবেছিল ও একা আছে কিন্তু কহিনুর আগে থেকেই অনুমান করেছিলো কিছু একটা হবে তাই সাবধানতার জন্য সাঈদকে বাবার সঙ্গে পাঠিয়েছিলো। বুদ্ধিটা না করলে ভয়ানক বিপদ হতে পারতো। বাবার কিছু হলে মায়ের কি অবস্থা হতো ভেবেই ওর কলিজা কেঁপে উঠছে। কাউকে ছাড়বে না বলে ও মাটিতে পা আড়ছে হাতের মুঠো শক্ত করে নিলো। ঠিক সেই সময় আড়াল থেকে পাথর ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। ছেলেটার পরণে আলখেল্লা টাইপের পোশাক নেই। বরং কালো রঙের পোশাকে সজ্জিয় হয়ে আছে। বেশ স্মার্ট আর আকর্ষণীয় লাগছে। কহিনুর বাঁকা হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
> এখানে কি আপনার?
পাথর একপা দুপা করে সামনে এগিয়ে এসে ডান হাতে ওকে জড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু পারলো না। কহিনুর আলগোছে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আঙুল উচিয়ে বলল,
> দূর থেকে বলুন। কাছাকাছি আসতে হলে কাবিনের টাকা পরিশোধ করতে হবে। নগদ দুশো কোটি।
পাথর বাঁকা হেসে পায়ের সঙ্গে পা ঘেঁষে বলল,
> এ আর এমনকি? তোমার রূপের কাছে দুশো কোটি অতি নগণ্য। তুমি বললে অর্থের পাহাড় এনে তোমার সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে পারি। তোমার রক্তিম ওষ্ঠের সামান্য ছোঁয়া…
পাথর এগোতে পারলো না। তার আগেই কহিনুর ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
> কেনো এসেছেন এখানে?
> তোমার জন্য।
পাথরের সোজাসাপ্টা কথায় কহিনুর উত্তর দিলো না। সামনে এগিয়ে চললো। পাথর দৌড়ে গেলো ওর পিছু পিছু। কহিনুর আড়চোখে ওকে দেখে নিলো। ভাবলো মৃ/ত্যু নিকটবর্তী হলে বুঝি চিন্তা শক্তি লোপ পেয়ে এমনিই হয়।
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। অনেকদিন পরে লিখতে বসেছি জানি একটু এলোমেলো হয়েছে ইনশাআল্লাহ পরবর্তীপর্বে ঠিক করে নিবো।