পুতুল খেলা পর্বঃ৯

0
218

#পুতুল_খেলা
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃদিশা মনি
মোর্শেদের বোনের ব্যাপারে আমান বলে,
‘আমি মোর্শেদ আর ওর বোনকে নিয়ে এখানে চলে আসার এক বছর পর যখন মেয়েটার মাত্র ৪ বছর বয়স ছিল তখন আচমকা একদিন রাতে ও নিখোঁজ হয়ে যায়। মোর্শেদ ওর বোনের সাথে এক রুমে থাকত। একদিন সকালে উঠে মোর্শেদের কান্না শুনে আমি আম্মুর সাথে ওদের রুমে গিয়ে দেখি মোর্শেদ একা বিছানায় বসে কাদছে। আম্মু জানতে চাইলে বলে ওর বোন পুতুলকে নাকি খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তখন আম্মু আর আমি আশেপাশে অনেক খোজ করি বাট কোন লাভ হয়না। পুলিশ কেস পর্যন্ত হয়,,,,ফলাফল শুণ্য।’
রিপ্তি মনযোগ সহকারে সব কথা শোনে। মোর্শেদের জন্য তার মধ্যে খারাপ লাগা কাজ করছিল। আমান বলে,
‘শুনলে তো সব। এখন চলো আমাদের বাড়িতে না দেখলে সে সন্দেহ করতে পারে।’
‘”সে” বলতে আপনি কার কথা বলছেন?’
‘কারো না। চলো এখন।’
রিপ্তি আর কোন প্রশ্ন না করে আমানের সাথে যেতে থাকে। আমান রিপ্তির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
‘তুমি খুব শীঘ্রই সবকিছু জানতে পারবে। জানি তুমি আমায় বিশ্বাস করো না। আমাকে তুমি যতোটা ঘৃণা করো আমি তোমাকে ততোটাই ভালোবাসি। জানি না কখনো তোমার মনে নিজের জন্য ভালোবাসার সঞ্চার করতে পারব কি পারব না। বাট আমি নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোমাকে রক্ষা করার চেষ্টা করব রিপ্তি।’
১৭.
রিপ্তি বাড়িতে এসে আবার সেই অজানা লোকটার সাথে যোগাযোগ করে। লোকটা ফোন রিসিভ করতেই রিপ্তি বলে,
‘আমি মোর্শেদের ব্যাপারে সমস্ত খোজ খবর নিয়েছি। আমার তো মনে হয় এটা করার কোন দরকারই ছিল না। আপনি তো সবকিছুই জানতেন তাহলে অযথা আমাকে কেন এভাবে সবকিছু জানতে হলো?’
বিপরীত দিক থেকে কড়া গলায় বলে,
‘আমি চেয়েছিলাম তুমি নিজে সবকিছু জেনে নাও। যাইহোক এখন তোমাকে কি করতে হবে সেটা শোন। তোমাকে মোর্শেদের কাছে যেভাবেই হোক এটা প্রমাণ করতে হবে যে তার আসল মায়ের মৃত্যু এবং তার বোনের নিখোজ হওয়ার পেছনে সিতারা বেগম ও আমানের হাত আছে। তুমি যদি এমনটা করতে পারো তাহলেই তোমার কাজ সহজ হয়ে যাবে।’
‘বাট আমি কিভাবে এটা প্রমাণ করব বলুন? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।’
‘আমার কথাটা মনযোগ দিয়ে শোন। তাহলেই তোমার কাছে সবটা পরিস্কার হবে।’

মোর্শেদ আজ কি যেন মনে করে ভার্সিটিতে এসেছে। এমনি তে তো তার আসতে ভালো লাগে না। আজ তার মন চাইছিলো একবার এইখানে আসতে।
মোর্শেদের আসার খবর পেয়ে প্রেমা সাজুগুজু শুরু করে। মেকআপ বক্স বের করে ভালো করে সাজে। সাজার পর তার এক বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করে,
‘এই আমায় কেমন লাগছে রে?’
‘তোকে একদম ডানা কা’টা পরি লাগছে। যেই ছেলে দেখবে সেই ক্রাশ খেয়ে যাবে।’
‘আমার যেইতেই ছেলে চাইনা। আমার শুধু মোর্শেদরেই চাই। ওরে পাওয়ার জন্যে আমি সাত সমুন্দর তেরো নদী পার হতে রাজি।’
‘ঐ দেখ তোর মোর্শেদ এই দিকেই আসতেছে।’
মোর্শেদকে আসতে দেখে প্রেমার হার্টবিট বেড়ে যায়। নিজের বুকের এই আওয়াজ নিজের বান্ধবীদের শুনতে বলে,
‘ও মাই গড,,,আমি তো মরেই যাবো আল্লাহ। ওরে কেউ আমায় ধর রে,,,, আমি কেমনে কি বলব। মোর্শেদরে দেখলেই তো আমার জান বেরিয়ে যায়।’
প্রেমার বান্ধবীরা তাকে ঠেলেঠুলে মোর্শেদের দিকে পাঠাতে চায়। প্রেমাও নিজের মনের সব ভয়ভীতি দূর করে মোর্শেদের সামনে গিয়ে দাড়ায়।
মোর্শেদ আচমকা প্রেমাকে দেখে বিরক্ত হয়। কিছু বলতে যাবে তার আগেই মোর্শেদের ফোনের রিংটনটা বেজে ওঠে। দ্বিগুণ বিরক্ত হয়ে মোর্শেদ ফোনটা রিসিভ করে। ফোনে খুব গম্ভীরভাবে কথা বলছিল সে। ভীষণ চিন্তিত দেখাচ্ছিল তাকে। ফোনটা কা’ট করেই কোন দিকে না তাকিয়ে কাউকে কিছু না পেলে নিজের বাইক নিয়ে কোথাও যেন চলে যায় মোর্শেদ।
মোর্শেদকে এভাবে যেতে দেখে রাগে দুঃখে কেদে দেয় প্রেমা। গালি দিয়ে ফোনকারীর চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে বলে,
‘ফোন করার আর টাইম পেলো না। ও মাই গড,,,,,আমার কত টাকার মেকআপ,,,সব শেষ করে দিলাম। ঠাডা পড়ুক যে ফোন করেছে তার উপর। আমি অভিশাপ দিচ্ছি যে ফোন কইরছে তার বর তাকে ফেলে এভাবে পালিয়ে যাবে। বজ্জাতের বজ্জাত। ও মাই গড।’
বলেই বাচ্চাদের মতো কাদতেছে প্রেমা। তার বান্ধবীরা অনেক চেষ্টা করেও প্রেমাকে সামলাতে পারতাছে না। শেষে বাধ্য হয়ে প্রেমার বান্ধবী মিনা বলে,
‘আমার কাছে এমন উপায় আছে যার মাধ্যমে তুই দুই দিনেই ঐ মোর্শেদের মনে নিজের জন্য যায়গা করে নিতে পারবি।’
‘কি আইডিয়া বল।’
মিনা অনেক ভেবে কিছু একটা বলে। যা শুনে প্রেমা আনন্দে লাফিয়ে ওঠে। মিনার গালে চুম্মা দিয়ে বলে,
‘তোর মতো বান্ধবী আমার শত্রুরও হোক।’
১৮.
মোর্শেদ হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে এসে দেখে বাড়িতে পুলিশ এসেছে। শুধু তাই নয় আমান, সিতারা বেগম সবার হাতে হাতকড়া। মোর্শেদকে আসতে দেখে রিপ্তি বলে,
‘এসে গেছ তাহলে। তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম। তোমার অপরাধীরা শাস্তি পাবে আর তুমি থাকবা না সেটা কি হয়?’
মোর্শেদ হতবাক হয়ে বলে,
‘কি বলছ তুমি? আম্মু আর আমান ভাইয়াকে পুলিশ গ্রেফতার কেন করেছে? আর আমার অপরাধীই বা কে? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারতাছি না। আমায় একটু স্পষ্ট করে বলো।’
রিপ্তি সিতারা বেগমের দিকে তাকায়। তিনি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছেন। রিপ্তি নজর ঘুরিয়ে বলে,
‘তোমার মা ও বোনের খু’নি এরা। তাই এদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে।’
মোর্শেদের মাথায় যেন বা’জ পড়ে। এক্ষুনি নিজের কানে যেটা শুনল সেটা কি সত্যি? মোর্শেদের নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছে না।
‘এটা হতে পারে না। আম্মু আর আমান ভাইয়া আমার মা-বোনের খু’নি হতে পারে না। তুমি সব মিথ্যা বলছ।’
‘মিথ্যা কি সত্য সেটা তোমার আম্মুকেই জিজ্ঞেস করো।’
মোর্শেদ সিতারা বেগমের কাছে যাচ্ছিল। সিতারা বেগম ইশারা করে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
‘রিপ্তি যা বলছে তা একদম ঠিক। আমিই তোর মা-বোনের খু’নি। আমার কাছে আসিস না।’
মোর্শেদ আর নিজেকে কোনভাবেই সামলাতে পারে না। রাগে ক্ষোভে চিৎকার করে কেদে ওঠে। মোর্শেদের এই অবস্থা দেখে রিপ্তির খুব খারাপ লাগে। সেই বা কি করতে পারে।
সিতারা বেগম পুলিশের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আমাদের নিয়ে চলুন অফিসার।’
‘এই তোমরা ওনাদের নিয়ে এসো।’
মোর্শেদ শুধু নির্লিপ্তভাবে সিতারা বেগম ও আমানের দিকে তাকায়। যাওয়ার সময় সিতারা বেগম রিপ্তির দিকে তাকিয়ে বাকা হাসে। রিপ্তিও সিতারা বেগমের দিকে তাকিয়ে হাসে। ইশারায় যেন তারা কিছু কথা বলে নেয়।

আশরাফুল রহমান আজ খুব খুশি। শেষ অব্দি তার পথের সব কা’টা দূর হলো। সিতারা বেগমের স্বামী, আমান-সিরাজ ও মোর্শেদের বাবা আশরাফুল ইসলাম। যিনি এই খেলার মূল নায়ক তথা খলনায়ক।
আশরাফুল নিজের প্রশংসা নিজেই করে বলে,
‘কি ভালো অভিনেতা আমি। সবাই ভেবেছিল ঐ মোর্শেদের আঘাতে আমি বোধহয় সত্যি কোমায় চলে গেছি,,,হা হা হা। আমি তো এই দিনের অপেক্ষাতেই ছিলাম। আজ আমি সবার উপর প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হয়েছি। হ্যা আমিই সেই ব্যক্তি যে রিপ্তিকে ভুল বুঝিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছি। আমি এখনো সেইদিন ভুলিনি যেদিন ঐ মোর্শেদ নিজের মা আর বোনের মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ি করে আমায় র’ড দিয়ে একের পর এক আঘা’ত করে। সেদিন আমার স্ত্রী সিতারা আমার ছেলে আমান সবাই চুপ করে সব দেখছিল। যেন তারা নিরব দর্শক। একমাত্র সিরাজই আমাকে বাচাতে এসেছিল। যদিও বাচাতে পারেনি। আজ আমি সেসবের প্রতিশোধ নিলাম সিতারা ও আমানের উপর। এবার ঐ মোর্শেদের পালা। রিপ্তির কথা আর কি বলব,,, ঐ মেয়েটা তো সবথেকে বোকা। সেদিন রাতে যখন আমি ওর বাড়িতে গিয়ে বানিয়ে বানিয়ে একডালা মিথ্যা কথা ওকে বললাম ও আমার সেইসব কথা বিশ্বাস করে নিল হুহ। বোকা মেয়েটা তো জানেই না যে ওর বাবার আসল খু’নি আমিই।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here