#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_১২
#Saji_Afroz
.
.
-হসপিটালে যেতে হবে ।
-কেমন দেখায় না?
-কেমন দেখানোর কি আছে! তুই উনার সাহায্য করেছিস উনি তোর করবেন ।
-আমি এমন কি সাহায্য করলাম!
-উফফ! যা তোর ইচ্ছে ।
-রাগ করছিস কেনো? আমি যাবো ।
-গুড । আমি খবর নিচ্ছি উনি কখন আসেন হাসপাতালে ।
-ঠিক আছে ।
.
রুপালিকে যাবেতো বলে ফেললো ছোঁয়া কিন্তু কেমন যেনো লাগছে তার । ডাক্তার পরশ যদি রেগে যান?
.
.
ছোঁয়াকে পরশ ভালোবাসে । অনেকবেশিই ভালোবাসে । কিন্তু কেনো ভালোবাসে সেটা এই পর্যন্ত খুঁজে বের করতে পারেনি । পথ চলতে কতো মেয়ের সাথেই তার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, মিশেছে, বন্ধুত্ব হয়েছে তবে কিছু সময়ের জন্য দেখা সেই মেয়েটিই কেনো তার মনে রাজ করছে?
পরশ জানে, আর কখনো হয়তো ছোঁয়ার দেখাও পাবেনা সে । তবুও ইচ্ছে করে ছোঁয়ার সঙ্গ পেতে ।
আর কিছুদিন পরে তোহার সাথে বিয়ের পিড়িতে বসতে হবে তার ।
ইশ! আরেকটাবার যদি দেখা পেতো ছোঁয়ার…
.
এদিকে সাফিনা আহম্মেদ এসে উঁকি মেরে গিয়েছেন বেশকয়েকবার । পরশ এক দৃষ্টিতে বারান্দার গ্রিল দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে দেখে তিনি কোনো কথা না বলে, চুপচাপ চলে গিয়েছেন । মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় পরশকে নিজের মতো ছেড়ে দিতে । কিন্তু পরক্ষণেই ভবিষ্যতের কথা মনে পড়তেই ধুক করে উঠে তার বুকটা । একমাত্র ভাইটিও পাশে নেই তার । তারাই বা কদিন বাঁচবেন! মৃত্যুর আগে ছেলে সুখে আছে দেখে যেতে চান।
.
.
নিজের রুমে দরজা বন্ধ অবস্থায় বসে ফেসবুক চালাচ্ছে ছোঁয়া । ফেসবুকের অবদান অস্বীকার করা যাবেনা । তার মতো অকাজের মানুষের জন্য আরো উত্তম । ভালোই সময় কাটানো যায় এখানে ।
ছোঁয়া পরশের নাম লিখে সার্চ করতে থাকলো । একসময় পরশের আইডি পেয়েও গেলো সে । ছবিটা দেখে চিনতে অসুবিধে হলোনা তার ।
ছোঁয়া বললো-
বেশ হ্যান্ডসাম তো! আমি কি রিকোয়েস্ট বা একটা মেসেজ করবো? না, আইডিয়াটা খারাপ । মনেহয়না তিনি কোনো জবাব দিবেন । কেননা আমার আইডি দেখলে মনেই হয়না এটা রিয়েল আইডি ।
.
নয়নতারা দরজায়য় টোকা দিয়ে বললো-
ছোঁয়া? এই ছোঁয়া? দরজা খোল । খাবার খেয়ে আয় ।
-যতোদিন না আমি কোনো কাজের ব্যবস্থা করতে পারছি, কিছু খাবোনা আমি তোমাদের টাকায় ।
-জেদ করিস নাতো!
-জেদ হলে জেদই । প্লিজ আপু যাও । আমি দরজা খুলবোনা এটা ফাইনাল ।
.
হতাশ হয়ে নয়নতারা বললো-
ক্ষিদে লাগলে খেয়ে নিস । আমি শুতে গেলাম ।
.
ফেসবুকে রুপালির মেসেজ আসলো-
ডাক্তার পরশ চেম্বারে আসেন সন্ধ্যায় । তখনি যেতে হবে ।
-চেম্বারে দেখা করবো কিভাবে? আমাকে চিনবেন এতোদিন পরে?
-সিরিয়াল নাম্বার নিয়ে রোগী হিসেবে যাবো । নিশ্চয় চিনবেন ।
-কে রোগী?
-উহু বোকা মেয়ে! কেউ না । ঢোকার জন্য এটা করতে হবে ।
-রেগে গেলে?
-আমাকে দেখে রাগতেই পারেন না । 😉
.
রুপালির মেসেজ দেখে আনমনে হেসে উঠলো ছোঁয়া । হাসতে হাসতেই টাইপ করলো-
পারবি সব সামাল দিতে?
-একদম!
-কিন্তু সন্ধ্যায় বাসায় কি বলে বের হবো?
-আমি বাসায় বলবো তোর বাসায় যাচ্ছি আর তুই বলবি আমার বাসায় । ব্যস হয়ে গেলো ।
-ঠিক আছে ।
-ওকে এখন নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমা । আমার উপর ফিদা হয়েই তোকে কাজের ব্যবস্থা করে দিবে । 💖 গুড নাইট ।
.
ছোঁয়া জানেনা কাল আসলেই কি হবে । তবে এই মুহুর্তে তার একটা কাজ ভীষণ প্রয়োজন ।
.
.
পরেরদিন সন্ধ্যায় পরশের চেম্বারের সামনে বসে আছে ছোঁয়া ও রুপালি । ছোঁয়া বললো-
এতোক্ষণ সময় লাগছে কেনো?
-আমিতো কাল সিরিয়াল নিতে পারিনি । এখানে এসেই নিলাম দেখিসনি? একেবারে শেষে আমাদের ডাকবে বোধহয় ।
.
ছোঁয়া চোখ বড়বড় করে বললো-
কি বলছিস? তাহলে তো বাসায় যেতে দেরী হবে অনেক । এর উপর বাস পাবো কিনা সন্দেহ ।
দুইটা মেয়ে রাত্রী বেলা এভাবে এতোদূর যাওয়া ঠিক হবে?
-রাস্তায় কতো মেয়ে দেখলি না? কিচ্ছু হবেনা । আমি ভাবছি অন্য কথা, পাগলের ডাক্তারেও এতো পেশেন্ট!
-উফ রুপালি । উনি…
-সাইকিয়াট্রিস্ট । ও একইভ।
.
রুপালির কথায় কোনো জবাব দিলোনা ছোঁয়া । নানাধরনের চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । ভয়ও লাগছে ভীষণ । শেষে না অপমানিত হয়ে হাসপাতাল থেকে বের হতে হয় তাদের!
.
এভাবে কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর তাদের ডাক পড়লো । আসলেই সবার শেষেই ছিলো তাদের সিরিয়াল । রুপালির উপর রাগ ঝাড়তে ইচ্ছে করলেও ঝাড়লোনা ছোঁয়া । দুজনে চুপচাপ প্রবেশ করলো চেম্বারে ।
.
পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে পানি খাচ্ছিলো পরশ ৷ এমন সময় সামনে ছোঁয়া ও রুপালিকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে গেলো সে । তার হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে যেতেই কেঁপে উঠলো ছোঁয়া ।
রুপালি ফিসফিস করে বললো-
আমাকে দেখেই বেচারার অবস্থা খারাপ । এতো সুন্দরী রোগীর আশা করেনি বোধহয় সে ।
.
ছোঁয়াকে পরশ কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা । এভাবে ছোঁয়ার সাথে দেখা হবে ভাবতেও পারেনি সে ৷ এ কি সেই ছোঁয়া? প্রথম দেখাতেই যাকে ভালোবেসেছে সে! এ কি সেই ছোঁয়া? যাকে নিয়ে মনের গহীনে হাজারো স্বপ্ন সাজিয়েছে সে! এ কি সেই ছোঁয়া? যার নাম তার মাথায় সবসময় ঘুরপাক খায়? এ কি সেই ছোঁয়া? যার জন্য অপেক্ষা করেছিলো সে!
.
নিজেকে প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে ছোঁয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে পরশ জিজ্ঞাসা করলো-
আপনার নাম?
-ছোঁয়া জান্নাত ।
.
হ্যাঁ, এইতো সেই ছোঁয়া! পরশের ছোঁয়া! এখন আর পালাতে দিবেনা তাকে সে ।
পরশ নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো-
প্লিজ বসুন না আপনারা ।
.
ছোঁয়া ও রুপালি বসতেই পরশ বললো-
রোগী কে?
.
রুপালি বললো-
আমি । মনেহচ্ছে হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে ।
-সরি?
.
ছোঁয়া গরম চোখে তাকাতেই রুপালি বললো-
এসব ছাড়ুন । আপনি আমাদের চিনেছেন?
.
পরশ একটু ভাব নিয়ে বললো-
নাতো!
-অকৃতজ্ঞের মতো কথা বলবেন না । ছোঁয়া কতোবড় উপকার করেছিলো আপনার । মনে নেই? আরে আপনার ওয়ালেট ফেরত দিয়েছিলো সে ।
.
পরশ মাথা নেড়ে বললো-
ও হ্যাঁ! মনে পড়েছে ।
-আপনি বলেছিলেন সেদিন, যেকোনো সাহায্য লাগলে আপনার কাছে আসতে ।
-হ্যাঁ । তাই বুঝি আপনার চিকিৎসা করানোর জন্য আমার কাছে এনেছে আপনাকে?
.
পরশের কথা শুনে রুপালি মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো-
তা নয় । আমি কোনো পাগল নই । অন্য সাহায্য ।
আসলে ছোঁয়ার একটা কাজের প্রয়োজন । ওর বাবা নেই । বড় বোন যেখানে শিক্ষকতা করতেন, স্কুলটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে । বিপদে পড়ে গিয়েছে তারা । আপনি যদি কোনো একটা কাজ দিয়ে সাহায্য করতেন? না মানে আপনাদের হাসপাতালে তো কতো কাজই আছে । ও অনার্স করছে এখন । আপনি একটু দেখুন না, কোনো কাজ দেয়া যায় কিনা?
.
ছোঁয়ার চোখের নিচের কালি পরশের চোখ এড়ায়নি । সেদিন তাদের কথোপকথন যতোটুক পরশ শুনেছিলো, ততটুকুতেই বুঝেছে অন্যের সাহায্যে চলার মেয়ে ছোঁয়া নয় । তাই ইচ্ছে থাকলেও সে এমনিতেই ছোঁয়াকে সাহায্য করতে পারেনা । ছোঁয়া তা গ্রহণ করবেনা ।
এদিকে পরশের জবাব শোনার জন্য অস্থির হয়ে আছে ছোঁয়া । অপরিচিত ব্যক্তিটির কাছে খুব বেশিই কি চেয়ে ফেললো সে? উপকার করে প্রতিদান চায়ছে ছোঁয় । এছাড়া আর কিইবা করতে পারে! বোনকে গামেন্টর্সে কাজ করতে দিতে পারেনা সে । এসব তার হবু শ্বশুড় বাড়িতে মেনে নিবেনা । আবার তার মা ভাবে, রাফসানকে ছাড়া তারা অচল । সবমিলিয়ে একটা কাজের তার ভীষণ প্রয়োজন । পরশ যদি ওয়াশরুম পরিষ্কার করার কাজও তাকে দেয়, হাসিমুখে করবে সে ।
.
কিছুক্ষণ ভেবে পরশ বললো-
দেখুন হাসপাতাল টা তো আমার নয় যে এখানে আমি কাজ দিতে পারবো । এখানে আমি নিজেই কাজ করি ।
-আপনার পরিচিত কেউতো থাকবে । কোনো উপায় নিশ্চয় থাকবে । আপনি চেষ্টা করলেই পারবেন ।
-তা পারবো । তবে অনার্সের যোগ্যতায় এখানে যে কাজ করে বেতন পাবে, আমি তার থেকেও ভালো একটা কাজের কথা বলতে পারি ।
-তাই! বলুন?
-আমার মায়ের দেখাশোনা করা ।
-মানে আয়া?
-না । আমার মায়ের বান্ধবী হতে হবে ।
.
রুপালি ও ছোঁয়া একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো ।
পরশ বললো-
আমার মা সারাদিন বাসায় একা থাকেন । সময় কাটানোর জন্য তার এখন এমন একজনকে প্রয়োজন, যার সাথে থাকলে তার সময়টা ভালো কাটবে । আমার মাকে খুশি করতে পারলে আমি আপনাদের বাসার সকলকেই খুশি রাখবো ।
.
রুপালি ধীরগলায় বললো-
ঝাড়ু দেয়া, টয়লেট পরিষ্কার করার চেয়ে আয়াতো ভালো অফার! সরি বান্ধবী । বড় লোকের বড় লোকী কাজ এসব ৷ তারা টাকা দিয়ে বান্ধবীও নিয়োগ করে । রাজি হয়ে যা রে ছোঁয়া ।
.
ছোঁয়া আর কিছু না ভেবেই বললো-
আমি রাজি ।
-বেশ ভালো! তবে কাল থেকেই আসুন আমার বাসায় । ফোন নাম্বারটি দিবেন আপনার, এড্রেস মেসেজ করে দিচ্ছি । আর হ্যাঁ, বেতন নিয়ে ভাবার দরকার নেই । যতো খুশি করতে পারবেন, ততো বেশি বেতন পাবেন ।
.
রুপালি বললো-
কতোক্ষণ থাকতে হবে আপনার মায়ের সাথে? না মানে আমাদের বাসা এই হাসপাতাল থেকেও দূরে । আপনার বাসা কোথায় এটাও আমরা জানিনা । সময়টা যদি ঠিক করে দিতেন ভালোহয় । বেতনের সাথে ছোঁয়ার গাড়িভাড়ার কথাও একটু ভাববেন ।
-বাসা দূরে? কোথায়?
-অক্সিজেনেরও পরে । নতুন পাড়ায় ।
-চলুন ।
-কোথায়?
-আপনাদের বাসা দেখে আসবো । তারপর এসব বিবেচনা করবো ।
-আপনি যাবেন আমাদের সাথে?
-হ্যাঁ । আমার আর পেশেন্ট নেই এখন । সমস্যা নেই । আপনার বাইরে ওয়েট করুন, আমি আসছি ।
.
রুপালিরা বের হতেই পরশ বিড়বিড়িয়ে বললো-
এতো রাতে একা ছাড়তে পারিনা ছোঁয়াকে । একটা দায়িত্ব আছেনা আমার ভালোবাসার মানুষের প্রতি!
.
পরক্ষণেই তার মায়ের কথা মনে পড়লো । ছোঁয়াকে এসব বলে ফেললো কিন্তু তার মা কি রাজি হবে? তিনি যদি এসবের দরকার নেই বলেন! বান্ধবী হিসেবে তার বউকে চেয়েছেন তিনি । তোহার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তার ৷ এদিকে ছোঁয়াও তাকে ভালোবাসে কিনা না জেনে মাকে নিজের ভালোবাসার কথাও জানাতে পারেনা সে । এখন জানানো যাবেনা কিছু । অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে ।
.
চলবে