স্মৃতিতে তোমার বন্দনা – Part 13

0
165

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_১৩
#Saji_Afroz
.
.
বাড়ির প্রায় কাছাকাছি চলে আসতেই পরশের উদ্দেশ্যে ছোঁয়া বলে উঠলো-
গাড়ি থামান ।
.
রাস্তার ধারে কার থামিয়ে পরশ জিজ্ঞাসা করলো-
চলে এসেছি?
-হ্যাঁ ।
.
সকলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো । পরশ আশেপাশে তাকিয়ে বললো-
এখানেতো কোনো বাড়িঘর দেখছিনা ।
-আরেকটু সামনে বাড়ি আমাদের । এদিকটায় নেমে গেলাম । কেননা আমরা চাইনা এতো রাতে কোনো ছেলের গাড়িতে আমাদের কেউ দেখুক ।
আপনি এখন আসতে পারেন । আমাদের সাথে আসার জন্য ধন্যবাদ ।
-আমি এখন আসতে পারিনা ।
-মানে? আমি কিন্তু বাড়িতে নিয়ে চা নাস্তা খাওয়াতে পারবোনা আপনাকে ।
-দরকার নেই ।
-তবে?
-আপনাদের সাথে আমিও যাবো । আমরা ঘরে ঢুকলেই আমি এখান থেকে যাবো ।
-কিন্তু কেনো?
-না মানে অপরিচিত কোনো মেয়েকে নিজের বাড়িতে কাজ দিচ্ছি, একটা সিকিউরিটির ব্যাপার আছেনা! তাই কোথায় থাকে জেনে রাখা ভালো ।
.
কিছুক্ষণ ভেবে ছোঁয়া বললো-
চলুন । তবে সাথে নয়, কোনো কথা নয় । পিছুপিছু আসবেন ।
-ঠিক আছে ।
.
ছোঁয়া ও রুপালি হাঁটতে শুরু করলো । তাদের পেছনে রয়েছে পরশ ।
রুপালি গলারস্বর ছোট করে বললো-
এসব বাহানা । আসলে আমার সঙ্গ উনার ছাড়তে ইচ্ছে করছেনা ।
.
কিছুদূর এসে চারদিকে তাকিয়ে কেউ আছে কিনা দেখে নিলো ছোঁয়া । কাউকে না দেখে
পরশের দিকে তাকিয়ে, একটা বাড়ি দেখিয়ে ছোঁয়া বললো-
ওই যে ওটা আমার বাসা, ওখানে ভাড়া থাকি । রুপালির বাড়ি আরো পরে । ওর বাড়িও কি দেখতে হবে?
-কাজ করবেন আপনি, রুপালি নয় । আসছি আমি ।
.
পরশ চলে যেতে থাকলো । রুপালি বললো-
কখন সকাল হবেরে? আমার আর তর সইছেনা পরশ বাবুর বাসা দেখার জন্য!
-পাগলের ডাক্তার থেকে বাবু?
-হু । কাল তোর প্রথমদিন । সাথে কিন্তু আমি যেতেই পারি । নিবিনা?
.
মুচকি হেসে ছোঁয়া বললো-
অবশ্যই । তোর জন্যইতো কাজটা পেয়েছি ।
.
.
রাগ-ক্ষোভ, হাসি-কান্না, হতাশা-স্বপ্নভঙ্গ যেমন জীবনের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি, তেমনি প্রেম-ভালোবাসাও! প্রেম-ভালোবাসা সবার জীবনে কোনো না কোনো সময়ে আসে । পরশের জীবনেও এসেছিলো । যা সে ভাগ্যের কাছে হার মেনে হারাতে বসেছিলো । কিন্তু সেই ভাগ্যের জোরেই আজ সে তার ভালোবাসাকে ফিরে পেলো । বাকি রইলো প্রেম! দুজন দুজনকে ভালোবাসলেই তো প্রেমের সূচনা হবে । ব্যাপার না । এতোদিন যখন সে ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করতে পেরেছে, আর কিছুদিন নাহয় প্রেমের জন্য করবে…..
.
.
মোবাইলের গ্যালারিতে পরশের সাথে নিজের অনেক ছবিই রয়েছে তোহার কাছে । অনেক বছরের বন্ধুত্ব তাদের । তোহার ইচ্ছে ছিলো নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বিয়েটা করবে । আজ সে সফল । ইসলামি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করে সে । বয়সের দিক থেকে বড় হলেও মা বাবার বাধ্য মেয়ে সে । তার মা যখন পরশের সাথে বিয়েতে রাজি হন, তোহাও এতে দ্বিমত পোষণ করেনি । পরশকে তোহার ভালো লাগে তবে তার মনে ভালোবাসার জন্ম নেয়নি তার জন্য । ভালোবাসার মতো মানুষ পরশ না, এমনটাও নয় । এসব নিয়ে ভাবার যেনো সময়টা পায়নি সে । জীবনসঙ্গী হিসেবে তার জন্য পরশ মন্দ হবেনা । কিন্তু পরশের জন্য?
হ্যাঁ, পরশ ছোঁয়া নামক একটি মেয়েকে ভালোবাসে । যদিও মেয়েটির কোনো খোঁজ সে পাচ্ছেনা কিন্তু তার মনতো ছোঁয়াতেই!
তোহা চেয়েছে পরশ যেনো খুঁজে পায় তার ছোঁয়াকে । কিন্তু নিজের সাথে বিয়েটা ঠিক হবার পরে এই কামনা কি সে এখনো করতে পারে?
ভাবতে ভাবতেই তোহার ফোনে পরশের কল আসলো । রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে হাসতে হাসতে পরশ বললো-
তোহা আজ কি হয়েছে জানিস?
-কি?
-দেখি আইডিয়া করে বল ।
-আমি আইডিয়া করতে পারছিনা তুই বল ।
-ট্রাই কর, পারবি । এমন কিছু একটা হয়েছে, যেটার অপেক্ষায় আমি ছিলাম ।
-উম্মম….
-এমন কিছু একটা হয়েছে, যেটার জন্য তোর আর আমাকে বিয়ে করতে হবেনা ।
.
উচ্চশব্দে হাসতে থাকলো পরশ । তোহার বুঝতে বাকি রইলোনা কি হয়েছে । সেও হেসে বললো-
ছোঁয়ার দেখা পেয়েছিস?
-হ্যাঁ রে!
-কি বলিস! কিভাবে?
.
পরশের মুখে সবটা শুনে তোহা বললো-
অনেক খুশি লাগছেরে তোর জন্য ।
-আমি জানতাম তুই খুশি হবি । তাই তোকেই আগে জানালাম ।
-আন্টিকে কবে জানাবি?
-এখন না । আমি চাই ছোঁয়াই তার মন জিতে নিক । তোর বাবা আসতে আরো মাসখানেক আছে । ততোদিন নাহয় এই অভিনয়টা চালিয়ে যা প্লিজ ।
-ব্যাপার না । বাট যা করার তাড়াতাড়ি করবি । তোর জন্য নাহয় আমাকে বুড়ি হয়ে থাকতে হবে ।
-একমাসে এতো বেশিও বুড়ি হবিনা বান্ধবী ।
.
দুজনেই হাসলো । কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন রেখে দিলো পরশ ।
তোহা বোঝার চেষ্টা করলো তার খারাপ লাগা কাজ করছে কিনা । না! করছেনা । বরং পরশের খুশিতে খুশিই লাগছে তার । এটাই বুঝি বন্ধুত্ব!
.
এদিকে বিছানায় হামাগুড়ি খেয়ে পরশ বললো-
এই রাত? প্লিজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যা । সকালে যে আমার হবু বউ তার হবু শ্বশুড়বাড়িতে পা রাখবে!
.
.
সকালে বাগানে হাঁটছিলেন সাফিনা আহম্মেদ । এমন সময় দুই রমনীর দেখা পেয়ে একটু অবাক হয়েই তিনি বললেন-
তোমাদের চিনলাম না?
.
রুপালি বললো-
সে কি? ডাক্তার সাহেব আমাদের কথা আপনাকে বলেনি?
-পরশের কথা বলছো?
-জ্বি ।
-না বলেনি ।
.
এরইমাঝে পরশ এসে ছোঁয়াকে দেখিয়ে দিয়ে বললো-
তোমার বান্ধবী প্রয়োজন ছিলো, এনেছি ।
-মানে?
-মানে তোমার সময় কাটানোর সঙ্গী এনেছি । যে তোমাকে চা খাওয়াবে, মাথা টিপে দিবে, তোমার সাথে হাঁটবে, চুল আঁচড়ে দিবে, গল্প করবে ।
.
পরশের কথা শুনতে শুনতে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে দেখছেন সাফিনা আহম্মেদ ।
রুপালিও সুন্দরী তবে ছোঁয়ার সৌন্দর্য্য আলাদা । স্নিগ্ধ একটা ভাব আছে তার রূপের মাঝে ।
মায়াভরা মুখটা যেকারো নজর কাড়তে বাধ্য । এতো সুন্দরী একটা মেয়েকে পরশ ভালোও বাসতে পারতো । তা না করে আয়া হিসেবে নিয়োগ দিলো? অদ্ভুত তার ছেলেটা ।
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
আমার কোনো দরকার নেই বান্ধবীর । তুই আমার কথা ভেবেছিস এটাই অনেক ।
.
তার কথা শুনে সবার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো ।
পরশ বললো-
কিন্তু মা..
-বললাম তো দরকার নেই । তুই আগে আমাকে বললে তখনি নিষেধ করে দিতাম । মেয়েটাকে আর কষ্ট করে আসতে হতোনা । যাক, এসেছেই যখন চা নাস্তা করে যাক ।
.
ছোঁয়া বললো-
থাক আন্টি । আজ আমরা আসি ।
-না সে চলবেনা । আমার বাড়ির উঠোনে আসলে, ভেতরেও যেতে হয় । চলো ।
.
ড্রয়িংরুমে এসে বসলো সকলে ।
কাজের মহিলা এসে চা নাস্তা দিয়ে গেলেন ।
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
চা নাও তোমরা ।
.
রুপালি ছোঁয়ার দিকে চা বাড়িয়ে দেয়ার সময় বেখেয়ালি বশত তার হাতে চা পড়ে যায় ।
রুপালি বলে উঠলো-
সরিরে!
.
সাফিনা আহম্মেদ তাড়াহুড়ো করে বললেন-
পরশ ওকে বেসিনে নিয়ে হাতটা ধুইয়ে আন ।
.
ছোঁয়াকে নিয়ে পরশ ডাইনিং রুমের দিকে গেলো । রুপালি করুণস্বরে বললো-
আন্টি এই কাজটি ছোঁয়ার ভীষণ দরকার । আসলে ওর বাবা নেই । বোনটার চাকরীটাও নেই । নিজেদের কোনো বাড়িও নেই । এই অবস্থায় ওর একটা চাকরী ভীষণ প্রয়োজন । বিশ্বাস করেন আন্টি সংসার খরচ, পড়াশোনার খরচ, বাড়ি ভাড়া এসবের জন্য এই চাকরীটা ছোঁয়ার দরকার । আপনি ঠাঁই না দিলে আমার বান্ধবীর পথেপথে ঘুরা ছাড়া উপায় থাকবেনা । আপনার ছেলে যখন বলছে, নিশ্চয় আপনার ওর মতো একজন কাউকে দরকার এখন । আপনাদের তো অনেক টাকা । অন্তত ওর বোন চাকরী জোগাড় না করা পর্যন্ত কাজে রাখুন ওকে? ভীষণ ভালো মেয়ে ছোঁয়া ।
.
.
হাতটা ধুয়ে ছোঁয়া বললো-
হয়ে গিয়েছে আমার ।
-আমি দুঃখিত ।
-কেনো?
-আমার মা…
-আপনার আগে আন্টিকে জানানোর প্রয়োজন ছিলো । যাক, উনি যখন চায়না থাক ।
-আমি মায়ের সাথে কথা বলছি…
-না প্লিজ ।
.
ছোঁয়া হনহনিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে গেলো । পরশ ভেবেছে তার মা সহজেই মেনে নিবে এসব । কিন্তু এমনটা হবে সে ভাবেনি । ছোঁয়া নিশ্চয় মনে কষ্ট পেয়েছে । আরেকবার কি মায়ের সাথে কথা বলে দেখবে সে?
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here