#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_১৪
#Saji_Afroz
.
.
ছোঁয়া ও পরশ এসে বসলো । সাফিনা আহম্মেদ ছোঁয়ার দিকে তাকালেন । মেয়েটির চোখের নিচে কালি পড়েছে আর কপালে চিন্তার ভাজ । মনেহচ্ছে মানসিক অশান্তিতে আছে সে । মানসিক অশান্তির কারণে মানুষ শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ে ।
রুপালি খারাপ বলেনি । যথেষ্ট টাকা-পয়সা আছে তাদের । ছোঁয়ার মতো একজন অসহায় মেয়েকে সাহায্য করতেই পারে । তাতে যদি মেয়েটার পরিবারের একটু সাহায্য হয়…
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
আমি ভেবে দেখলাম আসলেই আমার একজন বান্ধবীর প্রয়োজন । ছোঁয়া সেটা হতেই পারে । আমার আপত্তি নেই । কিন্তু এই বুড়ির সাথে বন্ধুত্ব করতে কি ছোঁয়া রাজি?
.
সাফিনা আহম্মেদের মুখে কথাগুলো শুনে যতটা না খুশি হয়েছে ছোঁয়া, তার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছে পরশ ।
এটার অপেক্ষায় যেনো ছিলো সে!
.
ছোঁয়া মৃদু হেসে বললো-
আমি রাজি বলেই কিন্তু এসেছি ।
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
তা তোমার বেতন নির্ধারণ হয়েছে?
-আপনি খুশি হয়ে যা দেন ।
-বিশ হাজার চলবে?
.
রুপালি চোখ বড়বড় করে বললো-
বিশ হাজার?
-হুম । তবে আমি গ্যারান্টি দিতে পারছিনা কদিন স্থায়ী থাকবে । তাই তোমার বোনকে যতো দ্রুত সম্ভব চাকরী জোগাড় করতে বলবে ।
.
ছোঁয়া বুঝতে পারলো রুপালি তাকে এসব বলেছে । আর রুপালির জন্যই এই কাজটা সে পেয়েছে । মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো ছোঁয়া ।
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
তবে কাল থেকে এসো তুমি ।
-ঠিক আছে আজ যাই ।
.
পরশ তাদের ড্রাইভার কে বললো, ছোঁয়াদের পৌঁছে দেয়ার জন্য ।
ছোঁয়া কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
ধন্যবাদ ।
-ধন্যবাদের কিছু নেই। নিজের জন্যই সবটা করা ।
-মানে?
-ইয়ে মানে মায়ের জন্য আরকি । কাল সকালে গাড়ি যাবে আপনাকে আনতে আবার দিয়েও আসবে।
.
রুপালি বললো-
ফ্রি সার্ভিস?
-হু।
.
ছোঁয়া বললো-
আজ আসি…
.
.
বাড়ির ভেতরে এসে নয়নতারাকে তাড়াহুড়ো করে বেরুতে দেখলো ছোঁয়া ও রুপালি । তাকে থামিয়ে ছোঁয়া জানতে চায়লো কোথায় যাচ্ছে সে । উত্তরে জানলো –
খালার সাথে গামেন্টর্স এ যাচ্ছি । দেরী হয়ে গেলো বড্ড ।
.
নয়নতারাকে টেনে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসলো ছোঁয়া ।
সে রেগেমেগে বললো-
আমি জানি ছোঁয়া তুই কি বলবি । ওখানে যেনো কাজের জন্য না যাই আমি । এইতো?
-হ্যাঁ ।
.
পাশ থেকে আফিয়া জান্নাত বললেন-
আর দুটো দিন পার হলেই না খেয়ে চলতে হবে ৷
-হবেনা । আমার চাকরী হয়েছে ।
.
ছোঁয়ার কথা শুনে তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো ।
নয়নতারা বললো-
চাকরী হয়েছে মানে?
-মানে আমি চাকরী পেয়েছি ।
-কিসের?
-একজন আন্টিকে দেখাশোনা করতে হবে ।
-দেখাশোনা মানে? আয়া?
-আয়া হলে আয়া ।
.
আফিয়া জান্নাত তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে জানতে চায়লেন-
বেতন কতো?
-মাসে বিশ হাজার ।
.
বিশ হাজার শুনে তিনি কাশতে শুরু করলেন । নয়নতারা তাকে পানি খাওয়ালো । তিনি বললেন-
ছোঁয়া মজা নিচ্ছে আমাদের সাথে?
.
রুপালি বললো-
না আন্টি ৷ আসলেই ও এই চাকরীটা পেয়েছে ।
.
নয়নতারা বললো-
আমার বোন আয়ার কাজ করবে! অসম্ভব ।
-উফফ নয়ন আপু! তুমিনা কিছুই জানোনা । আয়ার কাজ নয় । ছোঁয়া জাস্ট তার সাথে সাথে থাকবে ৷ ওর কাজ কি জানো? উনার সাথে থাকা, চা বানানো, মাথা টিপে দেয়া, হাঁটাহাঁটি করা আর কি যেনো বলেছিলো রে ছোঁয়া?
-গল্প করা ।
.
আফিয়া জান্নাত বললেন-
ব্যস! এসবের জন্য বিশ হাজার?
-হ্যাঁ । প্রতিদিন তাদের গাড়িতে চড়েই ছোঁয়া যাবে আর আসবে । বুঝলেনা? বড় লোকের বড় লোকী কারবার এসব ।
.
নয়নতারা বললো-
কাদের বাড়ি? তোরা এসব কি বলছিস আমি কিছুই বুঝছিনা ।
.
রুপালি সবটা খুলে বললো তাদের । সব শুনে আফিয়া জান্নাত বললেন-
নয়ন তুই আর দ্বিমত করিস না । ভালো ফ্যামিলিতে যেতে অসুবিধে কিসের? শুনলিনা? ওখানে আরো কাজের লোক আছে । আমাদের ছোঁয়া তো ওই মহিলার পাশেপাশে থাকবে শুধু ।
-তবুও আমি যেতে চাই একবার ।
.
ছোঁয়া বললো-
হুম কাল যেও ।
.
.
পরশের দিকে তাকিয়ে সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
আমার জন্য এতো ভাবিস তুই?
-ভাবিনা?
-তা ভাবিস । তবে এখন এসবের প্রয়োজন ছিলোনা । কদিন বাদেই তোহা এই বাড়ির বউ হয়ে আসবে । এমনিতেই মেতে থাকবে বাড়িটা ।
-তোহা কিন্তু শিক্ষিকা । ভুলে যাচ্ছো তুমি । সেই সকালে যাবে সন্ধ্যে হয়ে যাবে বাসায় আসতে আসতে । কেননা যে ভার্সিটিতে পড়ায় ও, এখান থেকে দূরেও ।
.
মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো সাফিনা আহম্মেদের । পরশ হেসে বললো-
ছোঁয়াকে প্রয়োজন তোমার । তুমি ওর মতোই কাউকে খুঁজছো ।
.
পরশ নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো । সাফিনা আহম্মেদ গম্ভীরমুখে বসে রইলেন । শফিউল আহম্মেদ এসে বললেন-
মিসেসের মুড অফ মনে হচ্ছে?
-আমি চেয়েছি দিন কাটানোর সঙ্গী, পুত্র বঁধু নয় বান্ধবী । কিন্তু তোহা তো ব্যস্তই থাকবে । আমার জন্য সময় কোথায় হবে ওর?
-এই যুগের হয়ে এসব কি ভাবছো তুমি?
-যুগ বদলায় কিন্তু আশাতো না!
-তুমি আদিম যুগের শ্বাশুড়ীর মতো কথা বলছো । তোহার মতো মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে পেয়ে তোমার গর্ব করা উচিত । ও বাইরেও সামলাবে তোমাকেও সামলাবে ।
-আমি বাচ্চা নাকি?
-ওসব ছাড়ো । এখন তোমার বান্ধবীর কথা বলো । কখন থেকে আসবে?
-কাল ।
.
.
ক্লাস করিয়ে বের হলো তোহা । এমন সময় পরশের ফোন । ফোন রিসিভ করতেই পরশ বললো-
মা রাজি হয়েছে । কাল থেকে প্রতিদিন ওর দেখা পাবো ।
-গুড নিউজ!
-তুই দেখা করবিনা ওর সাথে?
-নিশ্চয় করবো । ছুটির দিনে আসবো । নাকি ছুটির দিনে ছোঁয়ারও ছুটি?
-না । ওর কোনো ছুটি নেই । প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত থাকবে । পারলে ওভার টাইম করাবো ।
-ইশ! এতো ভালোবাসা? বউ করে নিয়ে আয় ।
-আনবোরে আনবো । সময় হোক । আমি চাইনা হুটহাট করতে । ওর আশেপাশে থেকে মনে জায়গা করতে চাই ।
-খুব তাড়াতাড়ি পারবি ।
.
পরশের সাথে কথা বলা শেষে ভার্সিটির শিক্ষিকা নীলার সাথে দেখা হয় তোহার । নীলা তার বান্ধবীর মতোই । তোহার ব্যাপারে সবটা জানে সে ।
নীলা বললো-
পরশের সাথে কথা বলছিলে বুঝি?
-হ্যাঁ । ছোঁয়া কাল থেকে ওদের বাসায় আসবে ।
-এতে তুমি খুশি হচ্ছো?
-হবোনা কেনো!
-বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে তোহা? পরশকে তুমি ভালোবাসো না?
-বাসি । তবে বন্ধু হিসেবে । ছেলেমেয়ে বন্ধু হতে পারেনা এটা ভুল ধারণা । আমার মনে যেমন ওর জন্য অন্য কিছু নেই তেমনি ওর মনেও তাই । তুমিতো সবই জানো নীলা । তুমি অন্তত এসব বলোনা!
-আচ্ছা মানলাম সেসব । কিন্তু পরশের মতো ছেলেকে হাতছাড়া করা ঠিক হচ্ছে? আমি হলে কখনো করতাম না । পরশের মায়ের কাছে প্যাঁচ লাগিয়ে ওকে বিদায় করতাম ।
-আমি ওদের লাইফে ভিলেন হতে চাইনা । শুভাকাঙ্ক্ষী হতে চাই । আমার আর পরশের বন্ধুত্ব বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই ।
.
.
রান্নাঘরে বসে পেয়াজের খোসা ছাড়াচ্ছে নয়নতারা । এভাবে ছোঁয়া কারো বাসায় কাজ করবে মেনে নিতে পারছেনা সে । যতই মুখে বলুক তারা শুধুমাত্র পাশে থাকলে হবে, বান্ধবী হবে । আদৌ এসব হবে কিনা এটা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে নয়নতারা । ছোঁয়া কি মিথ্যে বললো? আর সত্যি হয়ে থাকলেও কতোটুক সত্যি? কালই ওবাড়ি যেতে হবে তার । ছোঁয়ার বদলে নিজে কাজটি নিতে চায়বে । তার ছোট্ট বোনটি মানুষের বাড়িতে গিয়ে কাজ করবে, এটা সে মানতে পারছেনা…
.
চলবে