#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ২৪
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
এই স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসাকে অটুট রাখার জন্য আজকে আমরা একে অপরের খুব কাছে এসে সম্পর্কটার পরিপূর্ণতা দিতে পারি না??
এই পিচ্চি!! কতগুলো Coca-Cola খেয়ে মাতাল হয়েছো?
প্লিজ, ফান করছি না,, আমি সিরিয়াসলি বলছি।
আচ্ছা তুমি তাহলে এইসব ভাবো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
(তুর্জ উঠে যেতেই সারা দুই হাতে তুর্জের জেল দিয়ে আটকানো চুল গুলো ধরে নিজের বুকে চেপে ধরে)
মোটেও আমি পিচ্চি না,,দেখুন আমিও বুঝি স্বামী স্ত্রীর মাঝে কেমন সম্পর্ক থাকে। কেন এমন দূরে দূরে থাকেন?
সারা প্লিজ শান্ত হও,, দেখি ছাড়ো?
(দুজনে টানাটানি করতে করতে তুর্জ খাটের নিচে পড়ে যায় আর সারা তুর্জের উপরে। সারার পাগলামিতে তুর্জের মাইন্ড চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তুর্জ কখনো চাই না এমন অবুঝ অবস্থায় সারার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন হোক )
সারা কিছুক্ষণ তুর্জের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজে থেকেই উঠে চলে আসে। তারপর বারান্দায় গ্রীলের ফাঁক দিয়ে রোড লাইটের দিকে তাকিয়ে অঝোরে চোখের পানি ফেলে। তুর্জ বুঝতে পারছে না মেয়েটা হটাৎ কেন এমন করছে। এই মুহুর্তে সারাকে কিছু বলা ঠিক হবে না। তাই তুর্জ ফ্রেশ হতে যায়। তুর্জ ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে ফোন চাপছে তবুও সারা সেই গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
সারা ওখানে দাঁড়িয়ে কান্না করছে তা তুর্জ বুঝতে পারছে,,, এতো সময় নিয়ে কান্না করতে দেওয়া টা নিজের কাছে কেমন যেন লাগছে। তাই তুর্জ সারার কাছে গিয়ে বলে,,,
কেন এমন বাচ্চামি করছো? কি হয়েছেন বলো তো?
এতোক্ষণের ফিসফিসানি কান্না, আওয়াজে পরিনত হয়।
কেন আমাকে ইগ্নোর করেন,, সত্যিই খুব ভালোবাসি আপনাকে। কখনো আপনাকে ছাড়া অন্য কিছু বুঝিনা। অন্যদের মতো আমিও আপনার সাথে বুড়ো হয়ে নাতিনাতনিদের সাথে গল্প করতে চাই। প্লিজ এভাবে আমাকে অবহেলা করেন না,, আমার খুব কষ্ট হয়।
হ্যাঁ জানি তো,,,আমি তো তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি,, কিন্তু ভালোবাসি বলেই কি তোমার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করতে হবে?? এইসব উদ্ভট চিন্তা কিভাবে তোমার মাথায় আসে। হ্যাঁ মানলাম তুমি অনেক বড়। কিন্তু তুমি তো আরো বড় হবে। তখন না হয় যা হওয়ার হবে,,ফাঁকে তোমার পড়াশোনা শেষ হোক,, তারপর দুজনে প্ল্যান করে ফুটবল টিম গঠন করার জন্য ব্যবস্থা করবো।
সত্যিই তো আপনি আমাকে ভালোবাসেন?
হ্যাঁ এ-ই যে গ্রীল ছুয়ে কসম করে বলছি, তোমাকে আমি ভালোবাসি।
কসম টা মনে হচ্ছে আমার মতো হয়ে গেছে?
তোমার এ-ই ছোট্ট মাথায় থুক্কু বড় মাথায় এতো চিন্তা নিতে হবে না। এবার এসো ঘুমিয়ে পড়বে।
দুপুর ১২ টা,,, তুর্জ অফিসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো, এমন সময় রীতি বলে,,
স্যার আমাদের নেক্সট প্রজেক্টের ফাইল কমপ্লিট করেছি। আপনি একটু দেখে সিগনেচার করে দিয়েন।
ওকে, রেখে যান,,,
রীতি হয়তো এমন কথা আশা করে নি। তাই রেখে যাও শব্দ টা শুনে চমকে উঠে। তারপর বলে,,
স্যার ফাইল টা অলরেডি আমি দুবার চেক করছি। ম্যানেজার সাহেব দুপুরের আগে ফাইল টা চেয়েছিলেন। তাই যদি এখন ই দেখতেন,,,,
(যেহেতু রীতি সচারাচর বেশি কথা বলে না,,শুধু মাত্র ইমার্জেন্সি কথা ছাড়া তাই তুর্জ বলে)
আচ্ছা কোথায় কোথায় সাইন করতে হবে বলেন,,
স্যার আপনি একটু দেখে সিগনেচার করেন,,
আরে দেখতে সময় লাগবে,, আপনিই তো বললেন তারাতাড়ি ম্যানেজার কে দিতে হবে,,
রীতি কোথায় কোথায় সাইন করতে হবে তা দেখিয়ে দিয়ে ম্যানেজার এর রুমে চলে যায়।
কেন যেন তুর্জের মুখে শয়তানি কুটিল হাসি ফুটে উঠেছে। হয়তো এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো সে। কাউকে ফোন করে তুর্জ বলে,,
আমি যেভাবে যা যা বলেছি ঠিক সেভাবে রীতি কে পরিচালনা করবে,, একটু ভুল হলে বুঝতে পারবে এই তুর্জ কতটা ভয়ানক।
কিছুক্ষণ পরেই রীতি আবারও ফিরে এসে নিজের যায়গা তে বসে কাজে মনযোগ দেয়।তখনই তুর্জ রীতিকে বলে,,
আপনার মায়ের কি অবস্থা এখন??
জ্বী এখন ভালো,,
শুনেছিলাম আপনার নাকি মা ছোট বেলায় মারা গেছেন, তাহলে উনি আপনার কেমন মা?
ইইইয়েএ মমমানে স্যায়ার,, উনি আমার সৎ মা,, উনি আমাকে সৎ মেয়ে ভাবলেও আমি উনাকে নিজের মা মনে করি।
ওহ দ্যাটস গুড,,, তা আপনি আজ অফিসে না আসলেও পারতেন। উনি অসুস্থ, একটু সেবাযত্ন করতেন।
তা কি করে হতো স্যার, আমি তো জানতাম আজ আমাদের কোম্পানির ১ কোটি টাকার ডিল ফাইনাল হবে। আর আমি না থাকলে ফাইল কমপ্লিট হতো না। কিভাবে আমি জেনে বুঝে কোম্পানির এতো বড় ক্ষতি করি বলুন।
তুর্জ কিছু একটা বলতে যাবে তখনই রীতির ফোনে হয়তো কোন টেক্সট আসে আর ফোন স্ক্রিনে ওয়েস্টার্ন পোশাকে ভিষণ সুন্দরী একটা মেয়ের ছবি দেখা যায়। রীতিও চোখের পলক পড়ার আগে ফোন নিজের হাতে নিয়ে নেই ।
গল্পটার সুচনা বেশ কিছু দিন আগেই তুর্জের জানা ছিলো। এখন শুরু শেষ টার জন্য অপেক্ষা করছে। তুর্জ শুধু থ্যাংকস জানিয়ে বাইরে চলে যায়। তুর্জের হাতে অনেক কাজ,, সব কিছুতে বিচক্ষণ নজর দিতে হবে। নয়তো এক নিমিষেই সব কিছু লন্ড ভন্ড হয়ে যাবে।
সারা বারবার তুর্জকে ফোন দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু নো রেসপন্স। ফোন পিক না হওয়ার কারণে সারার রাগ চরম পর্যায়ে যায়। তুর্জ কিভাবে সারার ফোন ধরবে? তুর্জ ভুল করে ফোন রেখে বাইরে চলে গেছে। এতো বার ফোন আসা দেখে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রীতি ফোন রিসিভ করে, হ্যালো বলতেই সারা ফোন রেখে দেয়।
এটা কি হলো,, আমি কি ভুল নাম্বারে কল দিলাম,, না তো নাম্বার তো ঠিক ই আছে। তাহলে কে ওই মেয়ে। তাহলে কি আমার সন্দেহ ঠিক? এই বেটা লুচ্চা আবারও অন্য কারো সাথে,,, কসম এই ফোনের,, যদি এমন কিছু হয় তাহলে কলিকাতা হারবাল থেকে মেডিসিন নিয়ে এসে খাওয়াবো তুর্জ কে।এইসব ভাবতে ভাবতে আবারও কল করে কিন্তু রীতি বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে দেয়। নাহ্ এভাবে আমার ঘরে বসে থাকলে চলবে না। এখনই যাবো তুর্জের অফিসে।
তুর্জ বাইরে যাওয়ার পরে খেয়াল করে সে ভুল করে ফোন রেখে এসেছে। তাই সে আবারও ব্যাক করে অফিসে। দুর্ভাগ্যবশত সারা অফিসে পৌঁছানোর একটু আগেই তুর্জ অফিসে এসেছে। আর রীতির থেকে ফোন নিয়ে তাকে সরি বলতেই সারা দেখে তার প্রাণের ভন্ড বর এক হিজাবির সাথে হেসে কথা বলছে।
সারার খুবই খারাপ লাগছে এখন,, সে মনে মনে জিদ চেপে ধরে, কে এই মেয়ে তা না দেখে আজ বাসায় যাবে না। তুর্জ আবারও ফোন হাতে বাইরে চলে আসে আর সারা অফিসের বাইরের একটা দোকানে অপেক্ষা করতে থাকে কখন অফিস শেষ হবে তার জন্য। বিকাল ৫ টাই সেই হিজাবিকে বাইরে আসতে দেখে সারা পিছু নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেই। সামান্য একটু দূরে গিয়ে দেখে একটা ছেলে মাথায় হেলমেট পড়ে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর এই হিজাবি ছেলেটার কাছে গিয়ে হাগ করে। সারা সাথে সাথে নিজের ফোন বের করে তাদের ছবি তুলে নেই।
সারা আরো কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করে কিন্তু বাইক স্টার্ট করে ওরা চলে যায় তাই বাধ্য হয়ে পিছনে থেকেই ক্লিক করে। সারা বাসায় এসে তুর্জের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
অনেক অপেক্ষার পরে তুর্জ বাসায় ফিরে ডিনার শেষে রুমে আসে।
আপনি জন্য একটা স্পেশাল গিফট আছে,,
তাই কি গিফট?
চোখ বন্ধ করুন,,
কেন?
আহ্ করুন না,,
হুম করলাম।
এবার চোখ খুলুন,,
য়্যায়্যা তুমি এই ছবি কই পেলে?
আপনার নিউ হিজাবি প্রেমিকার খোঁজ আমি না পেলে কে পাবে বলুন?
আমার নিউ প্রেমিকা মানে কি? তোমার কি মনে হয় আমি সারাদিন শুধু প্রেম করে বেড়ায়??
তুর্জ খুব মনযোগ দিয়ে ছবিটি জুম করে কি যেন দেখছে,,এভাবে এতো মনযোগ দিয়ে ছবিটি দেখা দেখে সারার মেজাজ তুঙ্গে উঠছে। ইচ্ছে করছে হাতের কাছের বালিশ দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিতে।
তুর্জ হঠাৎ করে সারাকে জরিয়ে ধরে বলে,, আমার অবুঝ কচি টুকটুকে তরমুজ বউ আমার ভাপা পিঠা রস সুন্দরী,, এত্তোও গুলো থ্যাংকস তোমাকে? আমার পাটিসাপটা বউ গো, সোনা বউ, পিচ্চি বউ রে, আমার কাজ টা এতো সহজে কমপ্লিট হবে বুঝতেও পারিনি।
সারা এই মুহুর্তে জেগে জেগে অজ্ঞান হয়ে গেছে। এমন আদর এ জীবনে কাউকে করা দেখে নি সে,, এগুলো আদর নাকি অন্য কিছু তাও জানে না।
তুর্জ ফোন নিয়ে আবারও কাউকে ফোন করে ছবি থেকে বাইকের নাম্বার টা দিয়ে বাইকের মালিকের খোঁজ নিতে বলে। এই রাতের মধ্যে ফুল ডিটেইলস বের করতে বলে।
চলবে,,,