গোধূলি লগ্নে সেই তুমি – পর্ব 17

0
628

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_সতেরো
রাস্তার মাঝে লোক জনের ভীড়ে আচমকা কেউ একজন হাত ধরে টান দিতেই কোনো পুরুষের শক্ত দেহের সাথে বা’রি খেলো ফাইজা। কলেজ ছুটির পর বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলো ও এর মধ্যে কোনো এক আগুন্তকঃ এসে হাত টান দেওয়ায় বিরক্তি’তে কপাল কুচকে রাগী ফেস করে সামনে তাকালো। মাস্কের আর সানগ্লাসের আড়ালের মানুষ’টাকে চিন’তে একটু বেগ পেতে হলো ও’কে। লোক’টা সানগ্লাস’টা খুলতেই ফাইজা’র মুখের হাসি ফুটলো। উৎফুল্লো মনে বলে উঠলো…..
–আপনি এখানে? যদি কেউ দেখে ফেলে…..
ফারদিন ফাইজা’কে এক হাতে বুকের সাথে মিশিয়ে অন্য হাতে সানগ্লাস’টা আবার চোখে পড়ে নিয়ে পকেটে গুঁজলো হাত’টা। ফাইজা চারদিকে নজর বুলিয়ে দেখলো কয়েক’জন ওদের দিকে হা করে তাঁকিয়ে হাসচ্ছে। আজকে ফারদিনের হাতের ব্যান্ডেজ’টা না থাকায় ক্ষ’ত দেখা যাচ্ছে। বুকের ব্যান্ডেজ’টা আছে কিনা তা বুঝতে পারলো না। কপাল প্যাচানো সাদা ব্যান্ডেজে’র উপরে ছেয়ে আছে সিল্কি চুল গুলো। ছেলে’টা আজো সাদা শার্ট পড়েছে। এই ছেলে’টার সাদা রঙ একটু বেশিই প্রিয়। সাদা সুজ’ সাদা শার্ট আর ব্লাক জিন্স দেখতে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে অন্যদিনের তুলনায়। কি ব্যাপার এই সৌন্দর্য দিয়ে কি আমাকে মে/রে ফেলার চিন্তা ভাবনা করেছে নাকি? দিন দিন বেশিই সুন্দর হয়ে যাচ্ছে। এর রহস্য কি? অসুস্থ হওয়ার পর আগের তুলনায় একটু শুকিয়েছে বটে তবে সৌন্দর্য বেড়ে গেছে। লজ্জা শরমের মাথা খে’য়ে ফারদিনের বুকের সাথে মিশে মুখ উঁচু করে তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। ফারদিনের দৃষ্টি সামনের দিকে। আশে পাশে যে মানুষ রয়েছে সেদিকে তাদের খেয়াল নেই। দৃষ্টি সামনের দিকে রেখে’ই ফারদিন হালকা কেশে বলে উঠলো…..
–এইভাবে দেখলে তো নজর লেগে যাবে জান।
ফারদিনের কথায় হুশ ফিরে আসে ফাইজা’র। মনে পড়ে যায় ওরা রাস্তায় বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে। তাড়াতাড়ি সরে আসে ফারদিনের থেকে তা দেখে ফারদিন অবশ্য একটু হাসলো কিনা বোঝা গেলোনা মাস্কের আড়ালে। লজ্জায় ওর মুখ’টা লাল হয়ে গেলো। থুতনি’টা গলার সাথে লাগিয়ে নিচে তাঁকিয়ে রইলো। আড় চোখে চারদিকে দেখলো। ইসস লজ্জায় ওর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ফারদিন ফাইজা’র অবস্থা দেখে হাসচ্ছে। ফাইজা মাথা নিঁচু করেই ফারদিনের পাশ ঘেষে গিয়ে দাড়ালো। কিছুক্ষন দুজনের মাঝে নিরব’তায় কেটে গেলো। বাস আসতে’ই ফাইজা নিরব’তা ভেঙে বলে উঠলো….
–আমি তো আপনার কাছে যাব বলে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এখন যখন আপনি এসেই পড়েছেন তাহলে চলুন না আজ একটু বাসে ঘুরে আসি। প্লিজ প্লিজ…..
ফাইজার কথা শুনে ফারদিন অমত করতে পারলো না। অনিহা স্বত্তেও ফাইজা’র হাত’টা শক্ত করে ধরে উঠে পড়লো বাসে। কিন্তু এত’ ভীড় যে একটাও সীট ফাঁকা নেই। তা দেখে ফারদিন নেমে যেতে চাইলে ফাইজা নামতে চাইলো না। দুইটা মেয়ে বসেছে সেই সীটের সামনে দাড়িয়ে পড়লো দুজন। বাস ছেড়ে দেওয়ার পর ঝাঁকুনি’তে বার বার টাল খাচ্ছিলো ফাইজা’ তাই ফারদিন এক হাতে ফাইজা’কে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। ফাইজা ও দুই হাতে ফারদিন’কে আকঁড়ে ধরে বুকের সাথে মিশে চোখ বন্ধ করে নিলো। এই জায়গা’টাই ওর এক মাত্র শান্তি’র জায়গা। এখানে নেই কোনো ভয়, নেই কোনো অশান্তি। আছে অফুরন্ত ভালোবাসা। বাসের অনেকে ওদের দেখে মুচকি হাসচ্ছে। সামনে বসা মেয়ে দুটো অবাক চোখে দেখছে ওদের। দুজন ওদের কিছুক্ষন দেখে বলে উঠলো….
–কি সুন্দর মানিয়েছে তাইনা।
অপরজন ফিসফিসিয়ে বললো…..
–ভালোবাসা সুন্দর স্নিগ্ধ। এর চেয়ে শান্তি’র কিছু হতে পারে না….
ফারদিন ওদের দুজনের কথা শুনে হাসলো। ফাইজা’র কান অব্দি বোধহয় ওদের কথা পৌঁছালো না। প্রায় ঘন্টাখানেক পর নিজেদের গন্তব্যে এসে বাস’টা থামতে’ই ফারদিন ভীড় ঠেলে খুব যত্ন সহকারে ফাইজা’কে আগলে নিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লো। এত ভীড়ের মধ্যেও অন্য পুরুষের ছোয়া অব্দি লাগতে দিলোনা ফাইজা’র গাঁয়ে। ওরা বাস থেকে নেমে সামনের একটা নদীর পাড়ের দিকে পা বাড়ালো। ফাইজা’র হাত’টা শক্ত করে ধরে পাশাপাশি হেটে যাচ্ছে দুজন। বাতাসে বার বার ফাইজা’র খোলা চুল গুলো উড়ে এসে মুখে পড়ায় বিরক্ত হয়ে ফাইজা চুল বাঁধার জন্য হাত ছাড়াতে নিলে ফারদিন বাঁধা দিয়ে বলে উঠলো…..
–এভাবেই সুন্দর লাগছে। উড়ুক না নিজের আপনমনে খোলা চুল…….
প্রতি উওরে ফাইজা মুচকি হাসলো। নদীর সামনে এসে দুজনেই ঘাসের উপর বসে পড়লো। ফাইজা আপনমনে মাথা হেলিয়ে দিলো ফারদিনের কাঁধে। আকড়ে ধরলো দুইহাতে ফারদিনের বাহু। ওদের দুজনের দৃষ্টি আটকে আছে নদী’তে চলমান ছোট বড় কয়েক’টা নৌকার মাঝে। দুজনের মাঝে চলছে নিরবতা।
–এই মুহূর্ত’টা যদি না কা’টে কেমন হবে মিস্টার অভ’দ্র…
ফারদিন শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো……
–তোমা’তেই আমার বসবাস প্রতিক্ষন। না কাটুক ভালোবাসাময় মুহূর্ত। আমি ডুবে থাকতে চাই শুধু তোমাতে’ই। তুমিই আমার কেশবতী, তুমিই আমার জান…….
ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা একটু শব্দ করে হাসলো। একটু দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বলে উঠলো…..
–বাহ বাহ কবি সাহেব হয়ে যাচ্ছেন তো…..
ফারদিন মুখের থেকে মাস্ক’টা খুলতে খুলতে বলে উঠলো……
—প্রেমে পড়লে যে কেউ কবি হয়ে যাবে। আর মেয়ে’টা যদি তুমি হও তাহলে তো আমি সব হতে রাজি জান…..
বলেই ফাইজার’ কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ফাইজা পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিয়ে একটু হাসলো। তারপর ফারদিনের হাত’টা আকড়ে ধরে ক্ষত স্থানে একটা চুমু খেলো। ফাইজার কান্ডে ফারদিন মুচকি হেসে বলে উঠলো…..
— ঠোঁটে চুমু খেলে কি হতো জান।
ফাইজা উওর না দিয়ে ফারদিনের হাত’টা গালের সাথে চে’পে ধরে চোখ বন্ধ করে বলে,উঠলো…….
—আচ্ছা ধরুন, কখনো যদি আমি আপনার জীবন থেকে দূরে চলে যাই। তাহলে কি আমাকে খুঁজবেন?
বেশ খানিক সময় কেটে যাওয়ার পর ফারদিনের উওর না পেয়্ব ফাইজা চোখ খুলতেই ফারদিনের রাগী চেহারা’টা ভেসে উঠলো। চোখ লাল করে তাঁকিয়ে আছে ফাইজার দিকে। তা দেখে ফাইজা একটু মেঁকি হেসে উঠতে’ই ফারদিন দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে শান্ত ভাবে বললো….
— নেক্সট টাইম ছেড়ে যাওয়ার কথা শুনলে তোমার দাত খুলে হাতে ধরিয়ে দিব…
ফারদিনের হু’মকি পূর্ণ কথা শুনে ফাইজা হেসে নিজেই ফারদিনের হাত’টা কাঁধের উপর দিয়ে গুটিশুটি মে/রে ফারদিনের বুকে লেপ্টে রইলো। তার ফারদিন’কে অবাক করে দিয়ে ওর গলায় চু’মু খেয়ে নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো…..
–মিস্টার অভ’দ্রের সাথে থাকতে থাকতে আমিও নির্লজ্জ হয়ে গেছি। যখন তখন আপনাকে চু’মু খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা জাগছে মনে….
ফাইজার কথায় ফারদিনের শব্দ করে হাসলো কিন্তু উওর দিলো না। দুজনেই বেশ সময় নিজেদের মতো করে কাটিয়ে রওনা হলো বাসার উদ্দেশ্যে। আসার সময় ও বাসে দুজন দাঁড়িয়ে এলো। ফাইজা’কে বাড়ির খানিকটা দূরে এগিয়ে দিয়ে ফারদিন চলে গেলো।
____________________________________________
বাসায় ফুরফুরে মেজাজে এসে কলিং বেল বাজাতেই জেহের দরজা খুলেই বলে উঠলো…
— হলো তোর ঘোরাঘুরি। কত কষ্টে বাবা’কে বুজিয়েছি আমি জানি…
ফাইজা দুষ্টুমি করে হেসে জেহেরের গাল টেনে বলে উঠলো….
— এইজন্যই তোমাকে এত্ত ভালোবাসিইই ভাইয়া…
বোনের দুষ্টুমি’তে জেহের হেসে হালকা করে ফাইজার মাথায় থা’প্প’ড় দিয়ে বলে উঠলো….
–হয়েছে পাম দিতে হবে না। এখন আগে বাবার সাথে দেখা করে আয়…
জেহেরের কথায় ফাইজা হেসে এক প্রকার লাফাতে লাফাতে বাবা মায়ের রুমের দিকে গেলো। দরজা দিকে এগিয়ে যেতেই ওর পা দুটো থেমে গেলো। মনে হলো মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ভেতর থেকে আবারো ভেসে আসলো….
— ফাইজা কখনো মা হতে পারবে না। কথা’টা ও’কে জানানো দরকার বলে তোমার মনে হচ্ছে না……
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here