# প্রনয়
#নুসরাত সুলতানা সেজুথী
পর্ব – ১২
কাঁচের দরজাটা মৃদু ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো সেঁজুতি।এমনিই নার্ভাস সে।সাথে এসির ঠান্ডার মাত্রায় গুটিয়ে আসছে আরো।সেঁজুতি কাঁপা কাঁপা শরীর, আর চোখ তুলে সামনে তাকাতেই চমকে উঠলো।অভ্রও একিভাবে চেয়ে আছে।মুখ দেখে মনে হলো সেও অবাক হয়েছে।
সেঁজুতি উদ্বেগ নিয়ে বলল,
মিঃ অভ্র?? আপনি?
অভ্র বসা থেকে সটান উঠে দাঁড়ালো ‘ সেঁজুতি যে! আপনিই কী সেই ক্যান্ডিডেট?
সেঁজুতি এক পাশে মাথা নাঁড়লে অভ্র হাসলো। দম নিলো,
‘ এক মিনিট’
সময় টুকু চেয়ে টেবিলের ওপর থেকে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেলো অভ্র।পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বসলো।সেঁজুতি কে বলল” বসুন।
সেঁজুতি এগিয়ে এলো বসার জন্যে।কৌতুহল তার মুখ চোখে।অভ্রকে এখানে আশা করেনি একদমই।অভ্রর অবস্থাও তাই।সেও সেঁজুতি কে আশা করেনি।গতকাল থেকে রুদ্রর হাবভাব ভালো লাগছিলোনা।যেখানে শত শত গ্রাজুয়েট লোক লাইনে থাকে ‘আর -আর -সিতে একটা চাকরী পেতে,সেখানে অফিসের বস নিজে যেচে একজন কে চাকরী দিচ্ছে।এমনকি এপ্যোয়েন্টমেন্ট লেটার অব্দি নিজে বানিয়েছে।অফিসের নেম প্লেট পাল্টেছে।ম্যানেজার কে পাঠিয়ে ভুঁড়ি ভুঁড়ি মিথ্যে বলিয়েছে।অভ্র তখনও জানতোনা যার জন্যে এসব, সে আদৌ ছেলে নাকী মেয়ে।রুদ্র তার সামনেই ম্যানেজার কে সব শিখিয়ে পড়িয়ে দিচ্ছিলো।তখনও সে বোঝেনি মেয়েটি আসলে সেঁজুতি হবে।কিন্তু সেঁজুতির জন্যে ভাইয়ের এত কর্মকাণ্ডের মানে কি? শুধুই কী ঋন শোধ? অভ্র যখন গভীর ভাবনায়, সেঁজুতি বলল,
— তার মানে এটা আপনাদের অফিস?আমি কিন্তু জানতাম না আপনি এখানে থাকবেন।
‘ আমিওনা।
সেঁজুতি এতক্ষনে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো,
‘যাক! ব্যাপার টা তাহলে আপনার ইচ্ছাকৃত নয়।
“একদম ই নয়,,
সেঁজুতি মৃদূ হাসলো ‘ তাহলে ঠিক আছে। ইচ্ছেকৃত হলে হয়তো কাজটা করা হতোনা আমার।
অভ্র পালটা হেসে বলল ‘ জ্বি জানি। একদিনে আপনাকে এত টুকু বুঝেছি।কারো দানপত্র নেয়াতে আপনার খুবই এলার্জি।বলেছিলেন আপনি!
অভ্র মনে মনে ভাবলো,’ হয়ত এইজন্যেই ভাই এত কাহিনী করলো আপনাকে চাকরী টা পাইয়ে দিতে।ভাইয়ের বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারছিনা।মেয়েটা টাকা নেয়নি দেখে এইভাবে তার ঋন শোধ করার উপায়টা কিন্তু দারুন!
সেঁজুতি জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো,
‘তো এখন কি আমি সিলেক্টেড?
অভ্র দৃঢ় কন্ঠে বলল
‘অবশ্যই…
‘ ইন্টারভিউ?
‘ আমাদের ম্যানেজার আপনাকে বলেনি কিছু?
‘ বলেছিলো।মার্কের ওপর ডিপেন্ড করে চাকরীটা পাচ্ছি কিন্তু এখানে এসে ভার্সিটির কাউকে দেখলাম না যে! আর মার্ক ভালো হলেই গ্রাফিক্স বা ডিজাইনিং ভালো পারব তাও কিন্তু নয়।
অভ্র প্রসন্ন হেসে বলল ‘ সেঁজুতি! আপনি নিঃসন্দেহে একজন বুদ্ধিমতি মেয়ে।আপনার যাচাই করার ধরন টা কিন্তু ভালো।আসলে ব্যাপারটা হলো আমরা এক ডিপার্টমেন্ট থেকে যে কোনো একজন কে বাছাই করি।আপনাদের ডিপার্টমেন্টে মোট চারজন করে করা হয়।এরপর তন্মধ্যে লটারি করা হলো।আর লাকিলি আপনার নাম উঠলো।বুঝতে পারলেন?
ভেতরে ভেতরে হাফ ছাড়লো অভ্র।এত গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারায় বাহবা দিলো নিজেকে।
‘ ওহ! তাই ভাবি কাউকেই এখানে পেলাম না।
অভ্র চট করে বলল
‘ আপনি একটু পরেই আরো একটা প্রশ্ন করে বসবেন আমি জানি।তাই আগেভাগে উত্তর দিচ্ছি শুনুন, আপনাদের লটারি করার দায়িত্ব কিন্তু আমার ছিলোনা,তাই আমি জানতে পারিনি যে সিলেক্ট হলেন তার পরিচয় কী! বা তিনিই আপনি।
সেঁজুতি হেসে ফেলল।হাতের ফাইল ঠেলে দিয়ে বলল ‘ এখানে আমার সব ডকুমেন্টস আছে।ওখানে যা যা লেখা ছিলো এনেছি সব।
অভ্র নাটকীয় ভাবে সেগুলো নিলো বিনাবাক্য ব্যায়ে।সেঁজুতি একটু ইতস্তত করে বলল
‘ আমার কী কাজ এখানে? মানে কী পদ?
অভ্রর সহজ উত্তর,
‘ পি এ… আই মিন পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট।
‘ আপনার?
‘আমার ভাইয়ের…
সেঁজুতি চোখ বড় করে বলল,
‘ ওই যে উনি? যিনি চেহারা ঢেকে রাখেন সব সময়?
‘ জ্বি।অত্র অফিসের মালিক উনিই।আমিতো সামান্য ভার বহন করছি।
সেঁজুতি অন্যমনস্ক হয়ে বলল ‘ কী কাকতালীয় ব্যাপার। গত পরশুই উনি আমার চাকরীর কথা জানতে চাইলেন।আর আজ ওনার কোম্পানি তেই চাকরী পেয়ে গেলাম আমি?
,
একেই বলে ভাগ্য!
অভ্র দাঁত বের করে হেসে নীল রংয়ের একটি ফাইল এগিয়ে দিলো।
‘ আপনার জয়েনিং কিন্তু কাল থেকে।আপাতত এটাতে একটা সই করে দিন।
সেঁজুতি ফাইল খুলে পড়তে গেলে অভ্র তটস্থ হয়ে বলল’ তেমন কিছুই না।আসলে এতে লেখা আছে যে আগামী তিন মাসে আপনি যদি একদিন ও অফিসে অনুপস্থিত থাকেন তবে আর এই চাকরী টা আপনার থাকবেনা।এখনও তিন মাস সময় লাগবে আপনার স্থায়ী হতে।অন্যান্য অফিসেও যে রুলস হয় আরকী।আর দ্বিতীয় শর্তটা হলো আপনি যে এখানে এসে জয়েন করেছেন সেই ব্যাপারে একটা ছোট্ট দস্তখত।আপনার তো আবার শিরায় শিরায় সন্দেহ।চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
সেঁজুতি একটু লজ্জ্বা পেয়ে বলল
‘কোথায় সাইন করতে হবে বলে দিন আমি করে দিচ্ছি।
‘একদম নীচে।
না পড়েই পেপার্স গুলোতে একে একে সাইন করে দিলো সেজুথি।কাজ শেষে যথারীতি ফাইল টা আবার এগিয়ে দিলো অভ্রর দিকে।হ্যান্ড ব্যাগ কাঁধে চাপিয়ে বলল’ এবার তাহলে আসি।
‘এক সেকেন্ড!
সেঁজুতি থামলো।অভ্র একটা মোটা টাকার বান্ডিল টেবিলের ওপর রেখে বলল, এটা আপনার এডভান্স।
সেঁজুতি ভ্রু কোঁচকালো,
— এডভান্স??
অভ্র স্পষ্ট কন্ঠে বলল,
‘ এই চাকরীটার ক্ষেত্রে এই নিয়ম টা চলে এসছে।যেহেতু প্রত্যেকে স্টুডেন্ট হয় ভাই -ই সেজন্যে নিয়ম টা বানিয়েছিলো।
সেঁজুতি আর ভাবলোনা।এত বড় কোম্পানিকে সন্দেহ করার কী আছে?প্রসন্ন হেসে টাকা গুলো ব্যাগে ভরলো।কিন্তু মন বড় নাছোড়বান্দা। হাটতে হাটতে ভাবছিলো,
‘ জয়েন হওয়ার আগেই স্যালারি দিয়ে দেয়া? এটা ঠিক কেমন অফিস? তবে টাকা পেয়ে মন্দ হয়নি।এটা এই মুহুর্তে ভীষণ দরকার ছিলো।অন্তত বাসা ভাঁড়ার ব্যাপার টা তো চুঁকে যাবে।
___
আমি ও এটা বুঝতে পারছিনা যে সব কিছু এতটা কাকতালীয় কিভাবে হয়?চাকরীর বাজারে সামান্য একটা চাকরীর জন্যে যেখানে মারামারি লেগে যায় সেখানে পায়ে হেটে এত ভালো একটা অফার এসে গেলো তোর কাছে?তাও আবার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট এর পোস্টে? মানে এত বড় পদ? তাও ওই সেই চেনা লোকের।কি হচ্ছে কিছুইতো বুঝতে পারছিনা।
সেঁজুতি বাবার পায়ের কাছে বাবু হয়ে বসেছিলো।গালে হাত দিয়ে বলল ‘আমিও নাহ.
আমির কিছুক্ষন ভেবে বললেন, ‘তোর ওখানে কাজ করার দরকার নেই,যেতে হবেনা তোকে।
সেঁজুতি তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে ওঠে,
— এটা আবার কি কথা? টাকা নিয়ে এলাম।মার্ক শীট থেকে শুরু করে সব ডকুমেন্টস জমা দিয়ে এলাম।আর এখন বলছো যাবোনা? পরমুহূর্তে বসে পরলো আবার। নরম স্বরে বলল’ এত ভেবোনা তো।যা হবে ভালোই হবে।এখন একটা জব এমনিতেই দরকার ছিলো।তাতে তো ভালোই হলো যে ওনারা আমার পরিচিত ছিলেন।তাছাড়া আমি নিজে গেলাম অফিসে, কত্ত বড় অফিস না দেখলে বুঝবেনা।শয়ে শয়ে লোক কাজ করছিলো।এত কিছুতো আর মিথ্যে হবেনা বলো!
,,
দ্যাখ যেটা ভালো মনে করিস৷
সেঁজুতি আবার উঠে দাঁড়ায়।
” খন্দকারের টাকা টা দিয়ে আসি।ব্যাটার মুখে টাকা গুলো ছুড়ে মারব আজ।
আমির চোখ পাঁকালেন ‘ এই না,কোনও বেয়াদবী করবেনা তুমি।
,,
আচ্ছা বাবা আচ্ছা।
______
রুদ্রর মুখে বিস্তর হাসি।চিকিমিক রোদ খেলছে মুখ জুড়ে।নিঁচের ঠোঁট চেপে রেখে ফাইল থেকে পেপার্স গুলো বের করে উল্টে পালটে দেখছিলো এতক্ষন।সব শেষে বাঁকা হেসে ভাবলো, মেয়েটা নিজেকে যতটা চালাক ভাবে অতটা নয়।বরং অনেক বেশি বোঁকা।আর কতটা বোকা হলে একটা এডুকেটেড মেয়ে না পড়েই পেপার্স এ সাইন করে দেয়?এভাবেতো জমিজমাও লিখে নেবে কেউ।অবশ্য এটাকী মেয়েটির বোঁকামী নাকী তার চতুরতা? সে এমন কোনো ক্লুই ছাড়েনি যাতে সেঁজুতির সন্দেহ হতো।
রুদ্র হাত মেলে দিলো কাউচের ওপর। ওপর দিক তাকিয়ে ভাবলো
‘মিস সেজুথি! আপনি জানেন ও না আপনি ঠিক কোন জালে আটকে পরেছেন।স্বয়ং রুদ্র রওশনের বোনা জাল। এখান থেকে বের হওয়া আপনার সাধ্যের বাইরে।আসল খেলা তো কাল জমবে।যখন আপনি আর আমি মুখোমুখি হবো।
,
রুদ্রর সামনেই বিছানার ওপর বসে আছে অভ্র।
পেপার্স গুলো দেখে দেখে রুদ্রর এমন হাসির কোনও মানেই খুজে পাচ্ছেনা সে।
,,
এই ভাইয়ের যে কি হলো কে জানে।প্রথমেত হোটেলে মেয়ে আসাই বন্ধ করে দিয়েছে।মেয়েদের ধারেকাছে আর ঘিষবেনা ভাবলাম।অথচ এখন কিনা আরেকটা মেয়েকে নিয়েই এত কান্ড করছে?একেবারে নিজের পি এর পোস্টে চাকরী দিয়ে দিলো? ভাইতো নিজেই মেয়ে এসিস্ট্যান্ট রাখতে চাইতোনা।সব সময় ছেলেদের রাখতো।হঠাৎ কি এমন চৈতন্য হলো ভাইয়ের? যে একেবারে এতদিনের নিয়ম জারি জুরি সব ভেঙে দিলো?অভ্রর ভাবতেই অবাক লাগছে যে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ুয়া একটা মেয়ে কিনা এতো বড় অফিসের বসের পি এ হবে?ভাইয়ের আগের এসিস্ট্যান্ট ছেলেটাই তো ঠিক ছিলো।স্মার্ট, ভদ্র,গুছিয়ে কথা বলতো।যদিও ভাই তাকে অন্য কোম্পানি তে চাকরীর ব্যাবস্থা করে দিয়েছে।তারপরেও একটা কিন্তুতে এসে সব থেমে যাচ্ছে অভ্রর।সেঁজুতি ভাইয়ের পি এ কী করে হবে? হাউ ক্যান ইট বি!কিভাবে হ্যান্ডেল করবে সব? কোনো অভিজ্ঞতা নেই কিচ্ছুনা।কম্পিউটার ঠিকঠাক চালাতে পারে কীনা কে জানে!এমন চাকরী পাওয়ার জন্যে কত শিক্ষিত লোক ও কপাল চাপড়াচ্ছে।আর সেখানে মিস সেজুথির কোনও রিয়্যাকশন ই ছিলোনা।উনি হয়তো বুঝতেই পারেন নি উনি ঠিক কি পাচ্ছেন?তবে তার থেকেও এখন তার ভাইয়ের ব্যাপার টা জানা জরুরি।ভাইয়ের জায়গায় অন্য কেউ হলে তো এতক্ষনে এটা ধরে নিতাম যে মেয়েটার প্রেমে পড়েই এসব করছে।,কিন্তু ভাই আর প্রেম?ব্যাপারটা উত্তর -দক্ষিন।
তবে এর মধ্যে ঠিক কি কারন থাকতে পারে?
— আমাকে নিয়ে এত না ভেবে নিজের কাজে যা অভ্র।
অভ্র ভূত দেখার মতোন তাকালো।এতক্ষন আকাশ পাতাল ভাবনায় ছেদ পরায় পিলে চমকালো তার।সেতো মনে মনে ভাবছিলো,রুদ্র বুঝলো কি করে? কি অদ্ভূত! রুদ্র তার মুখ দেখে মনের কথা বুঝে যায়।এরকম গুন যদি তার ও থাকতো তবে এখন এত হাসফাস করতে হতোনা।সব উত্তর জেনে নিত।তারপর নাকে সরষে তেল দিয়ে ঘুমাতো।
অনেকটা চুরি করতে এসে ধরা পরে যাওয়ার মত মুখ করে নিশব্দে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো অভ্র।
ওহ গড! ( ওপর এর দিকে তাকিয়ে) কেনো এতটা গাঁধা বানালে আমাকে তুমি?ভাইয়ের মত একটু বুদ্ধি দিলেও তো পারতে!সব থেকে বেশি কষ্ট তো তখন হয় যখন ভাইয়ের আশেপাশে এতো এতো মেয়ে দেখেও নিজের বেলায় একটা গার্লফ্রেন্ড পাচ্ছিনা…..ভাবা যায়!
_______
দরজা খুলে সেঁজুতি কে দেখতেই আঁতকে উঠলো খন্দকার।ধড়ফড় করে ফাঁটা নাক, কাটা ঠোঁটে হাত বোলালো।ব্যাথা এখনও আছে।বরং বেশিই আছে।বড় বড় চোখ করে বলল ‘ ততুমি?
সেঁজুতি কোনো কথা না বলে টাকা এগিয়ে দিলো।
খন্দকার একবার সেদিকে তাকিয়ে বলল ‘ কী এটা?
সেঁজুতি মুখ কুঁচকে বলল ‘ আপনার ভাঁড়া।নিন ধরুন।পুরো দুমাসের আছে কীনা দেখে নিন।
খন্দকার আর্তনাদ করে বলল ‘ না।আমি নেবনা।
সেঁজুতি ভঁড়কালো।কপাল গুছিয়ে বলল ‘ নেবেন না? কেন?
খন্দকার তোঁতলালো ‘ এমমনি এএওমনি! তুমি যাও যাও।আজ থেকে বাসা ভাঁড়া দিতে হবনা তোমাদের।
সেঁজুতি অবাক হয়ে বলল ‘ আপনার মাথা ঠিক আছে? সেদিন এতো অপমান করে এলেন। আর আজ বলছেন বাড়ি ভাড়া নেবেন না?
খন্দকার অত্যধিক নরম কন্ঠে বললেন,
‘না মা বললাম তো।তোমাদের ভাড়া দিতে হবেনা,তুমি টাকা টা নিয়ে যাও।আজ থেকে বাসা টা তোমাদের জন্যে ফ্রি।
‘ ফ্রি কেন? আপনি ফ্রি দিলেও কী আমরা ফ্রিতে থাকব নাকী?
খন্দকার থতমত খেয়ে বললেন ‘ আসলে ফ্রি বলতে বোঝালাম,নিয়ম ফ্রি।মানে এক তারিখ টাকা দিতে হবে এরকম কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম মানতে হবেনা।যখন তোমাদের সুবিধে তখন টাকা দেবে।
সেঁজুতি চেঁতে গেল এবার।
,
আজব লোক তো আপনি!,সেকেন্ডে সেকেন্ডে রং বদলাচ্ছেন।না সেকেন্ডে নয়, একদিন পর পর রং বদলাচ্ছেন।কিন্তু এমন করলে তো হবেনা কাকা।টাকা আপনাকে নিতেই হবে,বাড়ি বয়ে এসে টাকা দিচ্ছি এমনি এমনি নাকি? সেদিনের কথা ভুলে যাইনি আমি।কি কুৎসিত কথা শুনিয়েছিলেন আপনি আমাকে।
খন্দকার হা- হুতাশ করে উঠলেন।
,
দোহাই তোমার!,টাকা টা নিয়ে যাও,দরকার হলে এসো তোমার পায়ে ধরি আমি।
সেঁজুতি ছিটকে দুহাত পিছিয়ে গেলো। হতভম্ব হয়ে বলল
‘ এ কী! কি করছেন?
খন্দকার কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“সেদিনের সব কথা আমি ফিরিয়ে নিলাম।আজ থেকে ওই ফ্ল্যাট শুধুই তোমাদের।আমি কেউনা৷, কেউনা,,তাও আমাকে টাকা দিতে এসোনা।হাত জোর করছি।
সেঁজুতির চোয়াল ঝুলে এলো খন্দকারের অদ্ভূত আচরনে।
‘এ আবার কেমন বাড়িওয়ালা রে বাবা?ভাঁড়া নেবেনা বলে পায়ে অব্দি ধরতে এলো?
— এত ভাবতে হবেনা মা,,টাকা নিয়ে যাও,,আমাকে বাঁচাও.. তোমার পায়ে ধরি আমি। পায়ে হাত দিতে দিতে)
— আরে আরে কি করছেন ছি! ছি। আপনি গুরুজন।বারবার পায়ে হাত কেনো দিচ্ছেন?
,,
তাহলে বলো টাকা তুমি দিচ্ছোনা??
,,
ঠিক আছে দিচ্ছিনা।তবে হ্যা আবার যদি অপমান করতে যান, তখন কিন্তু….
খন্দকার তড়িঘড়ি সোজা হলেন,
‘না না আমার ঘাঁড়ে কটা মাথা যে আমি তোমাদের অপমান করবো?
নাক মুখ কুঁচকে চলে এলো সেজুথি,,
‘এই লোক নির্ঘাত পাগল হয়ে গেছে,।সুস্থ হলে আবার টাকা চাইতে আসবে।টাকা টা বরং রেখে দেবে।এলেই বের করে দেয়া যাবে।
,,
সেজুথি যাওয়া মাত্রই ঘরের দরজা ধঁড়াম করে বন্ধ করলেন খন্দকার।ভাগ্যিশ বাড়ি ফাঁকা।নাহলে ব্যাপারটা ম্যানেজ করতে হিমসিম খেতো।খন্দকার দোয়া পড়ে বুকে ফুঁ দিলো দুবার।
বাপরে! প্রানের মায়া বড় মায়া।আগে তো বাঁচি।এই টাকা নিলে তার ঘাঁড় টা থাকতো তবে ঘাঁড়ের ওপর এর মাথা টা আর থাকতো নাহ।সেদিনের সেই ঘুষি, থাপ্পড় এখনও জীবন্ত মনে হয়।আর তারপর? তারপর যখন ছাদে চোখ মেলে রক্তচক্ষু দুটো দেখলো,আত্মা শুকিয়ে এসছিলো তার।লোকটা কি ভয়ানক ভাবে শাসিয়েছিলো।লাইটার দিয়ে চুলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখালো।আর শেষে?ছুড়ি দিয়ে ঠোঁটের পাশে টান মারলো।কথাগুলো ভেবেই ঠান্ডা হয়ে এলো খন্দকারের হাত পা।চোখ খিচে ঠোঁটে হাত রাখলো ‘ কি ব্যাথা! উফ!
চলবে….