#প্রনয়
# নুসরাত সুলতানা সেজুতি 🍁
পর্ব- ১৪
বাড়িতে ঢুকেই কাঁধ ব্যাগটা দূরে ছুড়ে ফেলে, বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পরলো সেজুতি।ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে।শরীর আর কাজ করছেনা যেন।
প্রথম দিনেই এতো এতো কাজ! বাপরে বাপ!এত কাজ তো কোনো পুরোনো এমপ্লয়িকেও দেয়া হয়না।সব যে রুদ্রর ইচ্ছাকৃত সেঁজুতি হাড়েহাড়ে বুঝেছে।পুরো দশটা ঘন্টায় তাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়লো লোকটা। চৌদ্দবার কেবিনে ডেকেছে,একবার এই ফাইল চেক করো তো আরেকবার অন্য ফাইল নিয়ে এসো।একবার ওই ডেস্কে এর কাছে যাও তো আরেকবার অন্য ডেস্কে আরেকজনের কাছে যাও।ছুটতে ছুটতে আজ অবস্থা দফারফা। পা গুলোর অবস্থাও করুন।এমনিতেই খুব বেশিক্ষন দাঁড়ানো বা ছোটাছুটি তার ধাতে নেই।ক্লাশ টেনে থাকতেই বাঁতের ব্যাথা শুরু হয়।তারপর থেকেই ছোটাছুটি বন্ধ।যাকে বলে একপ্রকার নিষিদ্ধ।সেঁজুতি বালিশে মুখ গুজে বিড়বিড় করলো ” বদের হাড্ডি, অসভ্য,বদমাশ।
তখনি রুমে ঢুকলেন আমির।মেয়ের ছুড়ে ফেলা কাঁধব্যাগ মাটি থেকে তুলে টেবিলের ওপর রাখলেন।মেয়ের দিকে নরম চোখে তাকালেন তারপর ।সেঁজুতি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে।আমির প্রশ্ন ছুড়লেন,
” অফিসের প্রথম দিন বোধ হয় খুব খাটুনী গেলো আম্মা?
বাবার স্বর শুনে ফিরে তাকালো সেঁজুতি। উঠে বসতে বসতে বলল ‘ ওই আরকি বাবা! খেয়েছো তুমি?
” না।একসাথে খাবো বলে তোর জন্যে বসে ছিলাম।
সেঁজুতি দেয়াল ঘড়িতে চোখ বোলালো,উৎকন্ঠা নিয়ে বলল
‘সেকি!দশটা বাজে এখনও খাওনি?
সেঁজুতি ব্যাস্ত ভঙ্গিতে নামতে নামতে বলল,
‘আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি গিয়ে টেবিলে বসো
” সব হবে।এত তাড়াহুড়ো করিস নাতো।ধীরে সুস্থে যা।
” আচ্ছা।
সেঁজুতি যেতে নিলে আমির পিছু ডেকে বললেন,
” বসের সাথে দেখা হলো? তা কেমন উনি? ভালো নাকী রাগী খুব?
এতক্ষন মেজাজ যেটুকু ভালো ছিলো এবার সেটুকুও উবে গেলো সেঁজুতির।লোকটার কথা মনে করলেও তার রাগে জ্বলে ওঠে শরীর।সেঁজুতি কিড়মিড়িয়ে বলল
— ওই বদ টার কথা আর বলোনা তো বাবা,,
আমিরের চোখ কপালে উঠে এলো মেয়ের সম্বোধন শুনে,
— সেকিরে!বদ? প্রথম দিনেই বসের নামে এমন নিন্দে করছিস?কি করেছেন কি উনি? খুব খাটিয়েছে?
— খাটিয়েছে কী?কি করেন নি তাই বলো,আমাকে দিয়ে এই এত্তগুলো কাজ করিয়েছে( হাত দিয়ে দেখিয়ে)
আমির মৃদূ হেসে বললেন,
— বেতন কি আর এমনি এমনি দেবে রে?কাজ তো করাবেই।
— তাই বলে এত্ত?সব ওই রুদ্র রওশনের ইচ্ছাকৃত, আমি জানি।তুমি জানোনা।
আমির ভ্রু কোঁচকালেন,
— কি নাম বললি?
সেঁজুতি ছাড়া ছাড়া কন্ঠে বলল,
— রুদ্র রওশন চৌধুরী।
“রুদ্র রওশন মানে, ওই বিজনেসম্যান রুদ্র রওশন?
— হু।
আমির মনে করার ভঙ্গিতে বললেন,
— দাড়া দাড়া,এই লোকটা তো,এই লোকটা তো সেদিন আমাদের বাসায় এসেছিলেন।
রীতিমতো তোকে শাসিয়ে গেলেন ওইদিন।
সেঁজুতি সতর্ক চোখে তাকালো।রুদ্রকে আমির চিনবে স্বাভাবিক। কিন্তু রুদ্রর বাড়িতে আসার ব্যাপারটা তো তার জানার কথা নয়।উনিতো পরিচয় লুকিয়ে এসেছেন।সেঁজুতি কৌতুহলী হয়ে বলল,
— আমাকে শাসিয়ে গিয়েছিলো? কবে?
— সেদিন তুই ছিলিনা।ওই যে তুই হাসপাতালে হোসাইনের কাছে ছিলি,তোকে একটা লোক পৌঁছে দিতে এসেছিলেন??
সেঁজুতি জোরে দুবার মাথা ঝাঁকালো ‘ হু হু
-ওইদিন সকাল বেলা এসেছিলেন।
সেঁজুতি চট করে এসে বিছানায় বাবু হয়ে বসলো।আগ্রহ নিয়ে বলল ‘ পুরোটা বলোতো বাবা।কেন এসেছিলেন উনি?
আমির একটা দমফেলে একে একে পুরো ঘটনাটাই খুলে বলল।সব শুনে ক্ষুব্ধ সেজুতি।রাগ না হয়ে পারলোনা।লোকটা বাড়িতে এসে শাসিয়ে গিয়েছেন।তাও আমার বাবাকে?? কি ভাবেন টা কি নিজেকে?শর্ট টেম্পারড লোক একটা।কোন কুক্ষনে যে ওনার বিপদে সাহায্য করতে গেলাম!
______
মিঃ নেহাল উদ্দিন এর সাথে কাল মিটিং ফিক্সড করবি।দুপুর ১২টা থেকে একেবারে দুটো অব্ধি।
অভ্র অবাক কন্ঠে বলল,
— টানা দু ঘন্টা?? উনি কি রাজী হবেন ভাই??
— টাকার জোরে হবে।
হাতে একটা কালো ব্রিফকেস নিয়ে অভ্রর সামনে রাখলো রুদ্র।ভেতর টা দেখতেই অভ্রর চোখ কোটর ছেড়ে বার হয় যেন।এতগুলো টাকা?রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল
‘ এটা ওনাকে দিবি।
অভ্র জিজ্ঞাসু মুখ চোখে কিছুক্ষন চেয়ে থাকলো।পরে মাথা নেঁড়ে বলল,
— ওকে ভাই।
বরাবরের মতো রুদ্রকে সে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারেনি।দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্রিফকেস সমেত নিজের রুমে এলো।জানলা গলিয়ে আকাশের দিক চেয়ে ভাবলো,
‘ আর খুব বেশি দেরি নেই।এবার মেন্টাল এসাইলোমে আমার জন্যে একটা সিট বুকিং দিতেই হবে।ভাইয়ের থ্রিলিং ক্যারেক্টরের মানে বুঝতে গেলে আমার আধপাগল হওয়া ছাড়া রাস্তা দেখছিনা।এতো গুলো টাকা দিয়ে একটা লোককে মিটিং এ ব্যস্ত রাখার কারন কী?
করুদ্র কফি মগ হাতে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।ঠান্ডা বাতাস আর কফির গরম ধোঁয়ায় মিশ্র অনূভুতি হচ্ছে। নেহালের সাথে মিটিং টা জরুরী।বিদেশী কোম্পানির সাথে অনেক গুলো ডিল ঝুলে আছে।নেহাল উদ্দিনের সই একান্ত প্রয়োজন। ব্যাবসার শুরুর দিকে এই লোকটা পার্টনারশিপে ছিলো।অল্প সময়েই রুদ্র হিসেবে পাকাপোক্ত হলো।তারপর আলাদা করলো কোম্পানি।আর রুদ্রর কোম্পানি এখন নেহাল কেও ছাড়িয়েছে।কিন্তু তাও,বিদেশে তাদের একচ্ছত্র কোম্পানির কথাই সবাই জানে।কারন,নেহাল মাঝবয়েসী, অভিজ্ঞ লোক।রুদ্রর মতো অল্পবয়সী দুদিন মাঠে নামা লোকের সাথে এত বড় বড় ডিল ফাইনাল করতে তাদের ভাবতে হয়।যদিও পরে, পার্ফমেন্সে প্রত্যেকে স্যাটিসফাইড হয়।তাও শুরুর দিকে ঝামেলা করতে মন চায়না রুদ্রর।এখনও কিছু ক্ষেত্রে নেহালের সাইন দরকার পরে।আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহারই করে লোকটি।প্রচন্ড ধূর্ত বলে হিউজ টাকা দাবী করে।কখনও মিটিং রাখতে গড়িমসি করে।রুদ্র অনেকবার অনেক টাকা অফার করেছিলো, কোম্পানি আলাদা হওয়ার একটা প্রমান হিসেবে নেহাল কে সই করতে বলে।নেহাল ইনিয়েবিনিয়ে এড়িয়েছে।রুদ্র ইচ্ছে করলেই করতে পারতো অনেক কিছু।কিন্তু মাঝেমাঝে তার ও আলসেমি লাগে।সব সময় সবাইকে ভয়ে তৎপর রাখতে ভালো লাগে?নেহাল চায়না রুদ্রর কোম্পানি তাকে আরও ছাড়াক।অথচ রুদ্রর ভয়ে মুখ ফুঁটে বলেনা।রুদ্র হাসলো।কফির মগে চুমুক দিলো।ভাগ্যিস আন্ডারওয়ার্ল্ডে একটা গুপ্ত যোগাযোগ আছে তার।যার দরুন ক্ষমতার সব ব্যাবহারই করে থাকে।আর এই ভয়েই অনেকে তার কোনো ক্ষতি করতে চেয়েও পারেনা।নেহাল অনেক ব্যাস্ততা দেখাবে কাল, রুদ্র জানে।তার পাঠানো কর্মচারীকেও ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করাবে কাজের ছুঁতোয়।কিন্তু তাও না বলতে পারবেনা।আর এই কাজের জন্যে এখন একমাত্র সেঁজুতির নামটাই মাথায় এলো রুদ্রর।মেয়েটির ধৈর্যের পরীক্ষা নেয়া যাবে এবার!
===
পরেরদিন🍁
সেঁজুতি আজ তিক্ত মেজাজ নিয়ে অফিসে ঢুকেছে।রুদ্রর অফিসে কাজ করতে হচ্ছে ভাবলেই তার গা গুলোয়।নারী সঙ্গে ডুবে থাকা একটি লোকের এসিস্ট্যান্ট সে মনে পড়লেই রাগ আসে।আর সেই রাগ কয়েকশ গুন বৃদ্ধি পেলো ডেস্কে গিয়ে।রীতিমতো চোখ কপালে উঠে এলো।
পুরো ডেস্ক এর টেবিল টা ফাইল দিয়ে ভর্তি।এক ইঞ্চি জায়গা যদি থাকে! হাত রাখাও দ্বায়।চেয়ারে বসার দরকার না পরলে হয়তো চেয়ারেও ফাইল রাখতো।সেঁজুতির মাথা ঘুরে এলো।খেয়াল করতেই দেখলো ফাইলের ওপর ছোট্ট একটা কাগজ লাগানো।এককথায় চিরকুট। সেঁজুতি হাতে নিয়ে পড়লো,
“এক ঘন্টার মধ্যে সব ফাইল জমা চাই।
এবার সেঁজুতির অজ্ঞান হওয়ার জোগাড়’ এত্তো গুলো? মাত্র এক ঘন্টায়?
সেঁজুতি মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসলো।
— কাল কম ছিলো কিন্তু আজ??এতো কম সময়ে এতো গুলো সলভ কি করে করবো?? হায় আল্লাহ!! কোন দিক থেকে শুরু করবো, কোনটা শেষ করব কিছুইতো বুঝতে পারছিনা।
” হ্যালো মিস…
সেঁজুতি যখন মন দিয়ে ফাইল ঘাটছে।পাশ থেকে ভেসে এলো পুরুষালী স্বর।সেঁজুতি ঘাঁড় বাঁকা করে ফিরলো।লম্বাচওড়া একটি ছেলে।মুখে হাসি লেপ্টে রেখেছে যেন।সেঁজুতি একে কশ্মিন কালেও দেখেছে বলে মনে পড়ছেনা।অফিসেরই কেউ হয়তো।সৌজন্যে হেসে বলল,
‘ জ্বি বলুন?
লোকটা ভ্রু নাঁচালো’ অফিসে নতুন??
‘জ্বি।
“আমি রুপক,,আপনার সামনের ডেস্ক টা আমার ডেস্ক।
‘ওহ আচ্ছা।আমি নুসরাত সুলতানা।
রুপকের বাড়ানো হাতে হাত মেলালোনা সেঁজুতি।সে ভীষণ ব্যাস্ত। রুপকের অস্বস্তি লাগলো।হাত গুটিয়ে এনে মেকি হেসে বলল,
‘ সুন্দর নাম।
সেজুতি বেশ ভালো বুঝলো রুপক ছেলেটি তার সাথে ভাব জমাতে এসেছে।অন্য সময় হলে এক কথা।কিন্তু এখন একটা সেকেন্ড তার কাছে অনেক কিছু।দুচার লাইন কথা বলতে গেলেও সময় নষ্ট হবে।
যা আগামী এক ঘন্টাতে একদম ই করা যাবেনা।
কিন্তু রুপক দাঁড়িয়েই আছে।উশখুশ করছে। কিছু বলবে বলবে ভাব।সেঁজুতি আবার তাকালো।মিষ্টি করে হেসে বলল
‘বলছিলাম যে বস আমাকে একটা কাজ দিয়েছেন। উইল ইউ প্লিজ এক্সিকিউজ মি?
একেবারে মুখের ওপর বলে দিলো? রুপকের চেহারায় ঘনিয়ে এলো অন্ধকার।সে বেশ অপমানিত বোধ করেছে।পেছন ফিরে একবার রুদ্রর কেবিন টাকে দেখলো।এরপর আবার সেঁজুতির দিক ফিরে মুখে হাসি টেনে বলল,
‘ নিশ্চয়ই!আপনি কাজ করুন।পরে কথা হবে।
রুপক চলে যেতেই সেঁজুতি মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল।তারপর ডুব দিলো ফাইলের কঠিন কঠিন ইংরেজিতে।
_____
রুদ্র চোখ সরিয়ে ল্যাবটবে রাখলো।ফিচেল হাসি তার ওষ্ঠে।মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা ব্যাপার তো নিশ্চয়ই আছে।মুখের ওপর কথা বলার কি দারুন ক্ষমতা!সেঁজুতিকে কাজের তীব্র চাপে রেখে একই সাথে বিরক্ত করার এক দুষ্টু বুদ্ধি ভর করেছিলো মাথায় ।অফিসের ড্যাশিং বয় হিসেবে আখ্যায়িত
রুপককে সেঁজুতির কাছে পাঠালো তাই।ছেলেটির সাথে খোশগল্প করতে করতে , কাজে ব্যাঘাত ঘটবে সাথে সময় মতো ফাইল জমাও হবেনা। এমনই ভেবেছিলো রুদ্র।আর সেই সুযোগে সেঁজুতি কে আবার কিছু কঁড়া কথা শোনাবে।তেঁজী মেয়েটার চুপসে যাওয়া চেহারাটা উপভোগ করবে মন ভরে।
অথচ তার কিছুই হলোনা। সেজুতি মুখের ওপর এমন ভাবে কথা টা বললো যে বেচারা রুপক থতমত খেলো।সন্মানের ভয়ে আর দাঁড়াতেই পারেনি।
কিন্তু কতক্ষন?
রুদ্র দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো এক ঘন্টা হতে আর কয়েক মিনিট বাকি।বাঁকা হাসলো,
দেখা যাক।কত দূর কি করতে পারেন উনি।
এক ঘন্টা পার হয়েছে অনেকক্ষন।সেঁজুতি ফাইলের মধ্যে নাকানিচুবানি খাচ্ছে তখনও।খানিক পর সব গুছিয়ে লম্বা শ্বাস ফেলল সেঁজুতি। এসির মধ্যেও চিন্তায় তার ঘাম ছোটার জোগাড়। রুদ্রর কেবিনের দরজায় নক করতেই ভেতরে আসতে বলল সে।সেঁজুতি ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা এসে ফাইল গুলো রুদ্রর টেবিলের ওপর রাখলো।নিঁচের দিক চেয়েই বলল ‘ চেকিং শেষ স্যার।
রুদ্র সরু চোখে দেখছে মেয়েটাকে।পিঠ সমান চুল গুলো ঝুঁটি করে বাঁধা।ক্রিম কালারে থ্রি পিস পড়নে।হাতে একটা কালো বেল্টের ঘড়ি,কানে কালকের দুল জোড়াই,আর ঠোঁটে লিপবাম।রুদ্র পরক্ষনেই নঁড়ে উঠলো।এই মেয়েটা সামনে এলে তাকে এত খুঁটিয়ে দেখে কেন? কী আছে এর মধ্যে?কিছু নেই।রুদ্র স্বাভাবিক হলো। কিয়ৎ সময়েও তার সাড়া না পেয়ে মুখ তুলল সেঁজুতি। স্পষ্ট কাটাকাটা অক্ষরে বলল ‘ স্যার!সব গুলো চেক করেছি আমি।
রুদ্র এবার দেয়াল ঘড়িতে চোখ ইশারা করে বলল,
— বাট ইউ আর টুয়েন্টি মিনিটস লেট।আমি এক ঘন্টা বলেছিলাম।
সেঁজুতির মেজাজ এমনিই খারাপ।রুদ্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে মন চাইছে তার।এত গুলো ফাইল যে সে এক ঘন্টা বিশ মিনিটে সলভ করলো সেটা দেখলোনা।সময় টাই বড়? ভদ্র ভাবে বলল
‘অনেক গুলো ফাইল তো তাই একটু সময় লেগে গেলো।
রুদ্র কঁড়া কন্ঠে বলল,
— এটা আপনার স্কুল নয় মিস সেজুতি।যে সর্দি জ্বরের অজুহাত দিয়ে আপনার হোম ওয়ার্ক না করার শাস্তি থেকে বেঁচে যাবেন।ইটস আ অফিস।এখানে প্রত্যেক টা কাজ টাইমলি হতে হবে মানে টাইমলি।গট ইট??
সেঁজুতি বাধ্যমেয়ের মতো মাথা ঝাঁকালো।মানে সে বুঝেছে।রুদ্র অবাক না হয়ে পারলোনা।সাথে ভালোও লাগলো। যে মেয়ে কাল এই কেবিনেই চাকরী করবেনা বলে চিৎকার চেঁচামেচি করলো সেই মেয়েই আজ কতটা নির্লিপ্ত,কতটা শান্ত।নিজেকে সামলানোর ক্ষমতা সত্যিই অসাধারন।
‘ গুড।
রুদ্রর কথা শেষ হতেই সেজুতি যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।পারলোনা।আটকে গেলো রুদ্রর গম্ভীর আওয়াজে,
‘আপনাকে যেতে বলেছি আমি??
সেঁজুতি ঘাঁড় ফেরালো।ভ্রু কুঁচকে বলল ‘ তো কী করব?
রুদ্র ক্ষেপে গেলো যেন,
‘ বসের মুখের ওপরে প্রশ্ন করছেন?ভদ্রতা বলতে কিছুই জানেন না?
সেঁজুতি দাত কপাটি পিষে ধরলো।কটমট করছে তার চোয়াল। বিপাকে ফেলে এখন কথা শোনাচ্ছেন তাইনা মিঃ বস?? কোনও ব্যাপার নয়,,কর্মচারী যখন,তখন সহ্য তো করবই।
আস্তে করে বলল ‘স্যরি!
রুদ্র তুষ্ট হেসে বলল,
— ভেরী গুড।একদিনেই ম্যানার্স শিখে গিয়েছেন দেখছি।এনি ওয়ে আপনাকে এখন এক জায়গায় যেতে হবে।
সেঁজুতি সহজ ভাবেই শুধালো,
‘ কোথায় যাব?
রুদ্র ল্যাবটবে চোখ দিলো।ব্যাস্ততা দেখালো হয়ত।জবাব দিলো ঠান্ডা স্বরে,
‘ উত্তরাতে!মিঃ নেহাল উদ্দিন এর অফিসে,ঠিকানা ম্যানেজারের থেকে নিয়ে যাবেন।
‘ ওখানে গিয়ে আমার কাজ?
রুদ্র চোখা চোখে চাইলো।দৃষ্টি বুঝে চোখ নামালো সেঁজুতি। মিনমিন করে বলল,
‘ স্যরি!
রুদ্র ঠোঁট বাঁকালো,অথচ গলা শক্ত করে বলল,
‘আগামী দু দিন আমাদের বোর্ড মিটিং রয়েছে। আপনাকে সেজন্যে ওনার শিডিউল নিয়ে আসতে হবে এবং সেটা দুপুর একটার মধ্যে।আর হ্যা শিডিউল নিয়ে তবেই আসা চাই।আপনি নিশ্চয়ই বুঝেছেন আমি কী বললাম?
সেঁজুতি ছোট করে বলল ‘ হু।
রুদ্রর দৃঢ় জবাব,
‘হু নয়। বলুন ‘ওকে স্যার।
সেঁজুতি দাঁত চিবিয়ে বলল
‘ ওকে স্যার।
”now go!
______
যানজট পেরিয়ে আসতে আসতে বারোটা বেজে গিয়েছে প্রায়।সহ্য শক্তি যেটুকু ছিলো সেটুকুও অবশিষ্ট রইলোনা এখানে আসার পর।রিসেপশনে গিয়ে জানলো নেহাল উদ্দিন ব্যাস্ত।এক্ষুনি দেখা হবেনা।অপেক্ষা করতে হবে।আগামী এক ঘন্টায়ও সে ব্যাস্ততা শেষ হলোনা।ওয়েটিং রুমে বসে থাকতে থাকতে সেঁজুতির হাতে পায়ে ঝিম ধরে গেলো।কতক্ষন পায়চারি করলো,কতক্ষন বসলো এভাবেই পার করলো সময় টুকু।আরেকবার,
রিসেপশনে গিয়ে দাড়ালো সেজুথি,,
— এক্সকিউজ মি!ওনার মিটিং আর কতক্ষন??
লোকটি এবার অধৈর্য হলো,ভ্রুয়ে দৃশ্যমান হলো দু তিনটে সূক্ষ্ম ভাঁজ।
— ম্যাম বললাম তো আপনি ওয়েট করুন,মিটিং শেষ হলেই আপনাকে ডাকবো আমি।
সেঁজুতি দীর্ঘশ্বাস ফেলল,
— ওকে।সেঁজুতি তিতিবিরক্ত।
সেই একই কথা মিটিং এ আছেন,মিটিং এ আছেন।এদিকে যে প্রায় ১ টা বাজতে চললো তার কি হবে? উফফ কি কুক্ষনে যে এই জব টা করতে এসেছিলো সে আল্লাহই জানে।দেরী করলে লোকটা আবার কথা শোনাবে। ব্যাগ থেকে ফোন বার করে বাবার নাম্বার এ ডায়াল করতে যাচ্ছিলো সেঁজুতি।কল ঢুকলোনা।এর আগেই ফোনের স্ক্রিনে অচেনা নম্বর জ্বলে উঠলো।চাপ লেগে রিসিভ ও হলো সঙ্গে সঙ্গে।
‘ আসসালামু আলাইকুম! কে?
ওপাশ থেকে উত্তর এলো সময় নিয়ে।গুমোট স্বরে কেউ বলল,
— কোথায় আপনি?আওয়াজ শুনেই
কান থেকে ফোন নামিয়ে স্ক্রিনে একবার চোখ বোলালো সেঁজুতি।ফোন আবার কানে ধরতেই কেউ ধৈর্য হীন কন্ঠে বলল,
‘শুনতে পাচ্ছেন না?
‘ স্যার,আমি নেহাল উদ্দিনের অফিসেই আছি। আসলে উনি…
রুদ্র থামিয়ে দিয়ে বলল,
‘আসল নকল রাখুন।১টা বেজে পাঁচ মিনিট অথচ আপনার ছায়াও অফিসে পরেনি।আদৌ কাজ টা করতে পেরেছেন তো?
সেঁজুতি যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে বলল,
‘স্যার উনি মিটিং রুমে রয়েছেন।আমাকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।ওনার মিটিং শেষ না হওয়া অব্দি ঢুকতে দেবেনা।মিটিং শেষ হলেই আমি…
” আমি কোনো এক্সকিউজ চাইনি।
সেঁজুতি অন্যদিক তাকিয়ে ঠোঁট গোল করে নিঃশ্বাস ফেলল।দাঁত চেপে বিড়বিড় করলো।লোকটাকে তার একদম সহ্য হয়না।রুদ্র কিছু একটা ভেবে বলল,
‘ বেশ ঠিক আছে, আপনাকে সময় দিলাম।শত হলেও আপনি আমার পি..এ, এইটুকু দয়া আপনাকে করাই যায়,,বাট আই ওয়ান্ট হিজ শিডিউল।এ্যাট এনি কস্ট।ওকে?
রুদ্র ফট করে লাইন কাটলো।
সেজুতির ইচ্ছে হলো ফোন টা কে আছাড় মারতে।
অসহ্য!দয়া করছেন আমাকে?? কে চেয়েছে ওনার দয়া?বারবার এসব বলে আমাকে ছোট করার কি আপ্রান চেষ্টা ওনার!এতো বড় একজন বিজনেস ম্যান এভাবে হাত ধুঁয়ে আমার পেছনে কেনো পরলো ?আর এই নেহাল উদ্দিন না বেহাল উদ্দিন?? ওনার মিটিং কি আজকেই পরতে হলো।ইচ্ছে করছে এক ঘুষিতে দুটোর নাক ই ফাটিয়ে দেই।
সেঁজুতির অপেক্ষার অবসান ঘটলো আরো কিছুক্ষন পর। মিটিং শেষ হলো।রিসেপশনিস্ট থেকে এলো কাঙ্ক্ষিত ডাক।সেঁজুতি তিরিক্ষ মেজাজ শীতল হলো মুহুর্তেই।নেহাল উদ্দিনের এসিস্ট্যান্ট এসে নিয়ে গেলেন সেঁজুতি কে।কেবিন দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলেন উনি।সেঁজুতি আলতো হাতে নক করলো।
— মে আই কাম ইন স্যার?
— ইয়েস,,
সেঁজুতি ভেতরে ঢুকলো।কাঁধে ব্যাগ।অন্য হাতে ফাইল।সামনে তাকিয়ে চেয়ারে বসা নেহাল উদ্দিন কে দেখলো একবার।একটু হেসে সালাম দিলে নেহাল ও হেসে জবাব দেয় সালামের।
একবার পা থেকে মাথা অব্ধি পর্যবেক্ষন করে নেয় সেঁজুতির।এইতো, এই চাউনীই ভয় পায় সেঁজুতি। এতক্ষন ধরে রাখা কনফিডেন্স গুলিয়ে গেলো মুহুর্তেই।এক ঝাঁক ভয়,অস্বস্তি বাসা বাঁধলো মনে।নেহাল সেঁজুতি কে বসতে বললেন।সেঁজুতি বসলো।নেহাল কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে।মনে হলো,মাপঝোঁক করছে শরীরের।সেঁজুতি দু চারবার করে ওড়না টানছে। লোকটা চোখ দিয়ে গিলছে তাকে।পেট ভরছে তো ওনার?
চলবে….